হৃদয়জয়ী নেতৃত্বের পথ বইটিতে বলা হয়েছে- পরের কল্যাণে নিবেদিত মানবপ্রেমী নেতাদের কথা। ভবিষ্যত বাংলাদেশের স্বপ্নীল নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেলিত তরুণদের কথা। স্বপ্ন প্রয়াস উৎকর্ষ সার্থকতার কথা। বইটিতে নতুন নেতৃত্বের আশায় বসে না থেকে জনগণের জন্য নেতৃত্ব চর্চায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে আগে নিজের আখের গুছিয়ে পরে দেশের চিন্তা করার নেতৃত্বের প্রচলন বদলে ফেলার কথা। পরের জন্যে কিছু করলে যে, নিজের জন্যই করা হয়- এই মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হবার কথা। চিন্তার কেন্দ্রস্থল থেকে ‘আমি’ শব্দটি সরিয়ে সেখানে ‘আমরা’ রাখার কথা।
বইটিতে বলা হয়েছে- প্রকৃত নেতা পরিবর্তনের অনন্য রূপকার। অর্থবহ নেতৃত্বের বদৌলতে জয়ের মুখ দেখা যায়, বিজয়ের হাসি হাসা যায়। অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে পতন ত্বরান্বিত হয়। নেতৃত্বে মরিচা ধরা মানেই মুখ থুবড়ে পড়া। নেতা ঘুমালে পুরো সমাজ ঘুমায়। নেতা নিথর-নিস্তব্ধ হলে প্রতিষ্ঠানও হয় নিথর-নিস্তব্ধ। নেতা দেখেও না দেখার ভান করলে সংগঠন অন্ধত্ব ধারণ করে। নেতৃত্বের সংকটে জাতি ধ্বংসের মুখোমুখি হয়। নেতৃত্বের অসচেতনতায় সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়। নেতা ভালো-মন্দ পার্থক্য করার শক্তি হারালে বধিরের সংখ্যা বেড়ে যায়। নেতা ভুল করলে সব উদ্যোগই পণ্ড হয়। নেতা আত্মকেন্দ্রিক হলে কর্মীরা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে নিমগ্ন হয়।
হৃদয়জয়ীরাই কালোত্তীর্ণ হয়। কালজয়ী, ভূবনজয়ী ও দ্বিগীজয়ী নেতাও হৃদয়জয়ী না হওয়ায় কালের ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে যেতে পারে। হৃদয় জয় করা যায়- কর্তৃত্বের চেয়ে সেবা করে, পাওয়ার চেয়ে ত্যাগ স্বীকার করে। সমাজ জীবনের প্রতিটি স্তরেই অর্থবহ নেতৃত্বের প্রয়োজন। নেতৃত্ব কোনো পদবী নয় বরং একটি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে মানুষকে অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত করা হয়। ক্ষমতা থাকুক কিংবা না থাকুক প্রতিটি মানুষই নেতৃত্ব চর্চা করতে পারে। তরুণরা নেতৃত্ব চর্চার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। নেতৃত্ব সবার ভেতরেই থাকে, বেরিয়ে আসে কেবল সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে। যোগ্য-সঠিক নেতৃত্বই সামগ্রিক সফলতার চাবিকাঠি। সত্যিকারের নেতা সাফল্য অর্জনের চেয়ে সার্থকতা অর্জনে আগ্রহী, সার্থক জীবনের স্বপ্ন দেখাই তার জীবনের লক্ষ্য।
অর্থবহ নেতৃত্ব আলোকিত নেতায় শীর্ষক প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে- নেতার পরিচয়, নেতৃত্বের ধারণা, নেতৃত্বের প্রকারভেদ, নেতার প্রয়োজনীয় গুণাবলি, নেতার কার্যাবলি ও দায়িত্ব, নেতৃত্বের তত্ত্ব, নেতৃত্বের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, নেতৃত্ব প্রসঙ্গে অযৌক্তিক বিবেচনা ও নেতৃত্বের শৈলী।
সার্থক নেতায় টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে- নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব ও যোগাযোগ, নেতৃত্ব ও জনরায়, নেতৃত্ব ও দল, নেতৃত্ব ও জনগণ, নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্ব, নেতৃত্বের বৈধতা, নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব ও উন্নয়ন, নেতৃত্ব ও ক্ষমতা, নেতৃত্ব ও গণতন্ত্র, নেতৃত্ব ও সংগঠন, নেতৃত্ব ও পরিবার, নেতৃত্ব ও রাজনীতি, নেতৃত্ব ও কর্মী-অনুসারী, নেতৃত্ব ও আবেগ, নেতৃত্ব ও কর্মসূচি ও নেতৃত্বের শিল্পকলা।
মানুষ মানুষের জন্য শীর্ষক তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে- মানবাধিকার, নারীর অধিকার, মৌলিক অধিকার, নাগরিক অধিকার, শিশু অধিকার, ন্যায়বিচার, মৌলিক চাহিদা ও দারিদ্র বিমোচন।
চর্চা থেকেই নেতৃত্বের বিকাশ শীর্ষক চতুর্থ অধ্যায়ে রয়েছে- সেবক থেকেই নেতা, সাধারণ থেকেই অসাধারণ, পেশাদারিত্বে নেতৃত্বের উন্নতি, কর্মক্ষেত্রে ঈর্ষা নেতৃত্বে বেমানান, নেতৃত্বে প্লাসপয়েন্ট লেখালেখি, কথা হবে যেমন, বক্তৃতা দেয়ার কৌশল ও নেতৃত্ব বিকাশে সমস্যা ।
স্বপ্নের পথে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম শীর্ষক ৫ম অধ্যায়ে রয়েছে- যা-ই হও না কেন ভালো কিছু হও। আপনার অভ্যাসই আপনার মূল্য। সময়কে বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার। মন যেটা সায় দেয়, তা-ই করো। কাজ, খাদ্য, পানি ও লবণের নিশ্চয়তা। নিরবচ্ছিন্ন জ্ঞান অর্জন। যত দ্রুত সম্ভব শুরু করে দিন।
সঠিক পরিশ্রম আনবে সফলতা। পথ ও উপায় বের করতে হবে। প্রচারের চেয়ে উন্নয়ন জরুরি। অজুহাত যেন লক্ষ্যচ্যুত না করে। লক্ষ্য স্থির করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেটাই করো, যা মন চায়। মানুষের চাহিদাকে গুরুত্বদান। দুর্দান্ত কী করা যায় তা নিয়ে ভাবুন। লেগে থাকতে জানতে হবে। যা পারেন তার সবই করতে হবে। বিনিয়োগের অর্থ হারানো যাবে না। সত্য কথা বলবেন। স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।
মানুষের গল্পটা শোনো। ভালোবাসার কাজটি বেছে নাও। কাজে মনোযোগী হতে হবে। আমি মানি না বলতে শিখুন। চারপাশের মানুষের জন্য কিছু করো। অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান। যা আছে তা থেকেই ভালো কিছু বের করে আনতে হবে। জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে হবে। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সংকল্প। অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম হতে হবে।
উজ্জীবন উদ্ভাবন উন্নতিসাধন শীর্ষক ষষ্ঠ অধ্যায়ে রয়েছে- উদ্যোগ নিন, সংগঠক হোন। পরিচয় যোগাযোগ বন্ধন। পার্সোনাল ব্রান্ডিং। প্রাতিষ্ঠানিক ব্রান্ডিং। কান্ট্রি ব্রান্ডিং।
গণভিত্তি গণজোয়ার গণমুক্তি শীর্ষক সপ্তম অধ্যায়ে রয়েছে- কখনো হাল না ছাড়া। বদলালে নেতা বদলায় কর্মী। কঠিনেরে ভালোবাসেন নেতা। নেতা কী করবেন, কী করবেন না। সুশিক্ষা। আদর্শ নেতা হয়ে উঠুন। স্বপ্ন ও পরিবর্তন।
গণআস্থা ও আগামীর নেতৃত্ব শীর্ষক অষ্টম অধ্যায়ে রয়েছে- ক্রমোন্নতির প্রয়াস, জীবন ব্যবস্থাপনা, ভোগবাদী মানসিকতা পরিহার, নেতৃত্ব চর্চার সুযোগ নেয়া, নেতৃত্ব চর্চার বাঁধা দূর করা, সমস্যার সমাধান করা, কলুষতামুক্ত হওয়া ও দ্বিধা-দ্বন্ধ দূর করা।
জননেতা থেকে প্রিয়নেতা শীর্ষক নবম অধ্যায়ে রয়েছে- অপরের জন্য কষ্ট করায় মহত্ব। তারতম্য করার অধিকার নেই। নিজের বোঝা অন্যের ওপর না চাপানো। যা ভালো-লাগে তাই দান করো। যে দিকে এগুচ্ছেন, সেটাতে মনোযোগ দিন। দক্ষ না হতে পারাই আসল ব্যর্থতা। মানবিক মর্যাদার অবনমন করা যাবে না। কাজের জন্য চড়া মূল্য হাকাবেন না। পরিবর্তন নিজেকে দিয়েই শুরু করতে হয় । প্রাসঙ্গিক চিন্তাধারা। গুণগত পরিবর্তন। আপনার পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। নেতার যা না করলেই নয়।
সবশেষে রয়েছে তথ্যসূত্র।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২০