মায়ের ঋণ
একদিন ছেলেটা তার মায়ের কাছে গিয়ে একটা বিল জমা দিলো...
মা ছেলের দেয়া চিরকুটটা পড়লেন...
ছেলে লিখেছেঃ
১) গাছে পানি দেয়াঃ ১০ টাকা
২) দোকান থেকে এটা-ওটা কিনে দেয়াঃ ১৫ টাকা
৩) ছোট ভাইকে কোলে রাখাঃ ৪০টাকা
৪) ডাস্টবিনে ময়লা ফেলাঃ ২০টাকা
৫) পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করাঃ ৫০টাকা
৬) মশারী টানানোঃ ৫ টাকা
... মোটঃ ১৪০ টাকা
মা বিলটা পড়ে মুচকি হাসলেন...
তারপর তার আট বছরের ছেলের মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন...
তার চোখে পানি চলে আসছে...
তিনি এক টুকরো কাগজ নিয়ে লিখতে লাগলেন....
১) তোমাকে ১০ মাস পেটে ধারণঃ বিনা পয়সায়
২) তোমাকে দুগ্ধপান করানোঃ বিনা পয়সায়
৩) তোমার জন্য রাতের পর রাত জেগে থাকাঃ বিনা পয়সায়
৪) তোমার অসুখ-বিসুখে তোমার জন্য দোয়া করা, সেবা করা, ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাওয়া, তোমার জন্য চোখের
পানি ফেলাঃ বিনা পয়সায়
৫) তোমাকে গোসল করানোঃ বিনা পয়সায়
৬) তোমাকে গল্প, গান, ছড়া শোনানোঃ বিনা পয়সায়
৭) তোমার জন্য খেলনা, কাপড়-চোপড় কেনাঃ বিনা পয়সায়
৮) তোমার কাঁথা ধোওয়া, শুকানো, বদলে দেওয়াঃ বিনা পয়সায়
৯) তোমাকে লেখাপড়া শেখানোঃ বিনা পয়সায়
১০) এবং তোমাকে আমার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসাঃ সম্পূর্ণ
বিনা পয়সায় …
অতঃপর সন্তান তার মার হাত থেকে বিলটা নিয়ে নিচে ছোট্ট করে লিখে দিলো=এ বিল জীবন দিয়েও পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
(২)
অনেক বড় এক কোম্পানী হঠাৎ করে ব্যবসায় লোকসান করে বসলো। এক দুপুরে সেই কোম্পানীর কর্মচারীরা বাইরের ক্যান্টিনে লাঞ্চ করে ফেরার সময় অফিসের প্রবেশমুখে একটা নোটিশ দেখতে পেলো। নোটিশে লেখা ছিলো, 'আমাদের কোম্পানীর লোকসানের জন্য যে ব্যক্তিটি দায়ী, সে গতকাল মারা গেছে। সেমিনার রুমে একটি কফিনে তার লাশ রাখা হয়েছে। যে কেউ তা দেখতে চাইলে আমন্ত্রিত।'
একজন সহকর্মীর মত্যুর খবর শুনে প্রথমে লোকেরা দুঃখ পেলো। তবে এরপর তারা কৌতুহলী হয়ে উঠলো এই ভেবে যে, আসলে কে হতে পারে সেই ব্যক্তি। তারা সবাই সেমিনার রুমে এসে একত্রিত হলো; সবাই ভাবতে লাগলো,'আসলে কে সেই লোক, যে আমাদের সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো? তবে সে যেই হোক, এখন অন্তত সে আর বেঁচে নেই।'
একে একে তারা যখন কফিনের কাছে গেলো এবং ভেতরে তাকালো, হঠাৎ তারা কেমন যেন বাকশূন্য হয়ে গেলো, হতভম্ভ হয়ে গেলো। যেন তাদের খুব আপন কারও লাশ সেখানে রাখা ছিলো।
কফিনের ভেতর আসলে রাখা ছিলো একটা আয়না। যেই ভেতরে তাকিয়েছিলো, সে তার নিজের চেহারাই দেখতে পাচ্ছিলো। আয়নার একপাশে একটা কাগজে লেখা ছিল, 'তোমার সাফল্যের পথে বাধা দিতে সক্ষম শুধুমাত্র একজনই আছে গোটা পৃথিবীতে, আর সে হচ্ছো 'তুমি' নিজে।'
তুমিই সেই একমাত্র ব্যক্তি, যে তোমার জীবন পরিবর্তন আনতে পারে, তোমাকে সুখী করতে পারে, তোমাকে সাহায্য করতে পারে, সুখী করতে পারে। তোমার জীবন তখন বদলে যায় না যখন তোমার অফিসের বস বদলায়, যখন তোমার অভিভাবক বদলায়, তোমার বন্ধুরা বদলায়; তোমার জীবন তখনই বদলায় যখন তুমি নিজে বদলাও। তোমার সক্ষমতা সম্পর্কে তোমার নিজের বিশ্বাসের সীমাটা যখন তুমি অতিক্রম করতে পারো, শুধু তখনই তোমার জীবন বদলায়, পূরণ হয় জীবনের লক্ষ্যগুলো। নিজের আলোয় আলোকিত করো চারপাশ।
(৩)
রূপকথার এক গ্রামের নদীর ধারে একটা ঘর ছিলো, যার নাম ছিল "এক হাজার আয়নার ঘর"।
সেই গ্রামে সুন্দর হাসি মাখা মুখের একটা ছোট্ট মেয়ে ছিলো। মেয়েটা একদিন তার বাবা মা'র মুখে শুনতে পায়, তাদের গ্রামের "আয়না ঘর" এর কথা। এর আগে মেয়েটা কোনদিন ঘর থেকে বের হয় নি। সে প্রকৃতি দেখে নি, দেখে নি কোনও বাস্তবতা। তো সে একদিন চিন্তা করলো যে সে ঐ আয়নার ঘর দেখতে যাবে। কিন্তু একা একা যেতে সাহস না হওয়ায় সে তার সমবয়সী আরেকটি মেয়েকে সাথে নিয়ে গেলো। আয়নার ঘরের সামনে হাজির হয়ে প্রথম মেয়েটা ভাবলো যে আগে সে ঐ ঘরে ঢুকবে আর সব কিছু দেখে এসে বাইরে এলে তবেই ঐ দ্বিতীয় মেয়েটা ঢুকবে।
কথামতো প্রথম মেয়েটা ঐ ঘরের ভেতর ঢুকলো। ঘরে ঢোকার সাথে সাথে আশ্চর্য সব রঙ্গিন কারুকাজ দেখে মেয়েটার মুখ আনন্দে ভরে উঠলো। সে আস্তে আস্তে এগোতে এগোতে সেই একহাজার আয়নার ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরে ঢুকেই তার চোখ ছানাবড়া। মেয়েটা দেখলো সেখানে ঠিক তারই মতো দেখতে আরও এক হাজার মেয়ে হাসোজ্জল মুখে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সে যা করছে বাকিরাও ঠিক তাই তাই করছে।
মেয়েটা এবারে সব কিছু দেখে অনেক মজা পেয়ে বাইরে চলে এলো এবং তার সাথীকে সব ব্যাপারে খুলে বললো এবং বললো যে "এমন সুন্দর জায়গা আমি আগে কখনো দেখিনি। সুযোগ পেলেই এবার থেকে আমি এই জায়গায় চলে আসবো।"
সব কথা শুনে এবারে দ্বিতীয় মেয়েটা কিছুটা ভয় ভয় মন নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকলো। ঘুরতে ঘুরতে আতংকিত মনে সেও এবারে সেই "এক হাজার আয়নার" ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরে ঢোকার সাথে সাথে মেয়েটা ভয় পেয়ে উঠলো। ভয়ে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো, আতঙ্কিত হয়ে উঠলো চোখ। সে খেয়াল করলো, ঠিক তারই মতো দেখতে আরও এক হাজার মেয়ে আতঙ্কিত আর ভয়ার্ত চোখ তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মেয়েটি যেই ভয়েতে দুই হাত তুলে বলছে, তোমরা কারা? সাথে সাথে বাকী এক হাজার মেয়েও দুই হাত তুলে ওর দিকে নজর দিচ্ছে। এবারে মেয়েটা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো এবং প্রথম মেয়েটাকে বললো, "শীগগিরই বাড়ি চলো, এটা খুব বাজে জায়গা। আমি আর কোনোদিন এই জায়গায় আসব না"।
শিক্ষাঃ জীবনটাও একটা আয়নাস্বরূপ। আপনি যেভাবে জীবনকে দেখবেন, সেও ঠিক সে ভাবেই আপনার কাছে ধরা দেবে। যারা সাহসিকতা, ভালোবাসা, উৎসাহ, জয় করার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, জীবন তাদের কাছে অনেক সহজ ও আনন্দময় হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু যারা, হতাশা, ভয়, মানসিক অবসাদ নিয়ে সামনে এগুতে চায়, তাদের চোখে সাফল্য যেন মরীচিকা । জীবন হয়ে উঠে ক্লান্তিকর, বিষণ্ণময়। বাস্তবতাকে আপনি যেভাবে দেখবেন, আপনার সামনে তা সেভাবেই ধরা দেবে।
(৪)
একদিন এক প্রসিদ্ধ ডাক্তার এক গ্রামে রোগী দেখতে গেলেন। খুব অসুস্থ একজন লোক হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলেন। তাকে পরীক্ষা শেষে বের হয়ে আসার সময় লোকটি ডাক্তারের হাত ধরলো; বললো, 'ডাক্তার, আমি মৃত্যুকে ভয় পাই। মৃত্যুর পরে কী আছে তুমি জানো?
-আমি আসলে জানি না।
লোকটি বললো, 'তুমি জানো না? তুমি কি ধর্ম মানো না?'
ডাক্তার চুপ করে রইলো। এরপর সে মাথা ঘুরিয়ে কেবিনের দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। দরজা খুলতেই দরজার ওপাশ থেকে ডাক্তারের পোষা এস্কিমো জাতের সাদা লোমের কুকুরটা লাফ দিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়লো। এসেই আনন্দে তার লেজ নাড়াতে লাগলো। জিভও বের করে রইলো।
এবার ডাক্তার তার রোগীর দিকে তাকালো; বললো, "তুমি কি আমার পোষা কুকুরটিকে দেখলে? সে এই রুমটিকে এর আগে কখনো দেখে নি। সে জানতোও না ভেতরে কী আছে। সে শুধু জানতো ভেতরে তার মালিক আছে। তাই আমি দরজা খোলার সাথে সাথে সে ভেতরে ছুটে আসে নির্ভয়ে। মৃত্যুর ওপারে কী আছে, তা আমিও খুব কম জানি, কিন্তু আমি একটা ব্যাপার জানি। আমি জানি আমার মালিক সেখানে রয়েছেন, এবং সেটাই আমার জন্য যথেষ্ট।"
(৫)
এক লোক চুল কাটতে গেলো সেলুনে। সেলুনে চুল কাটার সময় সাধারণত যেমনটা হয়, তেমনি নরসুন্দরের সাথে লোকটির গল্প জমে গেলো। এ গল্প থেকে সে গল্প, এমন করে স্রষ্টা আছেন কী নেই, এমন আলোচনায় চলে গেলো তারা।
হঠাৎ করে নরসুন্দর বলে উঠলো, "আমি বিশ্বাস করি স্রষ্টা বলে কেউ নেই।"
লোকটা তখন অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি এমনটা বললে কেন?"
নরসুন্দর লোকটি বললো, "তুমি অন্ধ নাকি? শুধু এখান থেকে রাস্তায় গিয়ে দেখো, দেখবে স্রষ্টা বলে কেউ নেই। যদি এমন কেউ থাকতোই, তবে এতো মানুষ অনাহারে কষ্ট পেতো না। আমাকে বল, স্রষ্টা বলে যদি আসলেই কেউ থাকতো, তবে কি এতো মানুষ অসুখে কষ্ট পেতো? এমনকি দুধের শিশুরাও বাদ যায় না। যদি স্রষ্টা বলে আসলেই কেউ থাকতো, তবে কেউ কষ্টে থাকতো না। কষ্ট পেতো না। আমি বুঝি না, যদি স্রষ্টা বলে কেউ থাকতোই, তবে নিজের সৃষ্টিকে এমন কষ্ট কেউ দিতে পারে কী করে?"
চুল কাটাতে আসা লোকটা একটু ভাবলো এবং চুপ করে থাকলো। সে কোন যুক্তি তর্কে যেতে চাইলো না। চুল কাটা শেষ হলে লোকটা দোকানের বাইরে এলো।
বাইরে আসার পর উসকো-খুসকো লম্বা জট পাকানো ময়লা চুলের-দাড়ির এক লোককে দেখতে পেলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে। দোকানে ফিরে লোকটি নরসুন্দরকে বললো, "তুমি কি জানো এ এলাকায় কোন নরসুন্দর নেই?"
নরসুন্দর অবাক হয়ে বললো, "কী সব বাজে বকছো? এ এলাকায় নরসুন্দর থাকবে না কেন? এই মাত্রই তো আমি তোমার চুল কেটে দিয়েছি।"
এবার লোকটি বাইরের লম্বা জট পাকানো লোকটাকে দেখিয়ে বললো, "তাহলে নরসুন্দর থাকার পরও কীভাবে এমন নোংরা লম্বা জট পাকানো চুল নিয়ে এ এলাকায় কেউ থাকে?"
নরসুন্দর লোকটি জবাব দিলো, "তাকে তো আমার কাছে আসতে হবে চুল কাটাতে। নাকি?"
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:২৯