তাসফিয়া ফাতেমা অর্পণ। আমার বোন। জন্ম ৩০ নভেম্বর , ২০০৭। নাহ্ , ও আমার আপন বোন না। আমার মেজ ফুপুর মেয়ে।
অর্পন হবার দিনটার কথা আমার এখনো মনে আছে। সকাল বেলা থেকেই আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম। ফুপ্পিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। মনোয়ারা হাসপাতাল। হাতে পায়ে পানি চলে এসেছে। ফুপ্পিকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছিল , আমাদের ৪ চাচা আর ৫ ফুপু ওয়ালা দাদাবাড়ীর জন্য কারো বাচ্চা হওয়া খুবই সাধারন একটা ব্যাপার তারপরও কেন চোখের পানি আটকাতে পারছিলাম না কে জানে !
তারপর বিকাল ৫ টার দিকে ( মনেহয় ৫ টাই হবে ) খবর আসলো যে মেয়ে হয়েছে , দুইজনই সুস্থ আছে। সবাই খুব খুশি। আমিও চোখের পানি মুছেটুছে মিষ্টি কিনতে গেলাম।
প্রথম দর্শন। জন্মের পর দিন। দেখি একটা বাদামী রঙের মাংশের টুকরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠা ঠা করে কাঁদছে আর একটু পর পর তাকাচ্ছে। আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন চিন্তা করলো কয়েক সেকেন্ড , তারপর আবার ঠা ঠা।
অর্পণের জন্মের পর কিছু সমস্যা দেখা দিল। সামান্য নিউমোনিয়া বোধহয়, আমি শিওর না। ডাক্তার বললো রোদে শুইয়ে রাখতে। আমার ইচ্ছা করছিলো ডাক্তারকে কাঁচা খেয়ে ফেলি। এতটুকুন একটা বাচ্চা , একে রোদে শুইয়ে রাখা কতটা মানবিক ! কিন্তু তারপর ডাক্তারের প্রতি কৃতজ্ঞ হই , আসলে ওই সময় ওই সামান্য কষ্টটুকু না দিলে ওকে বাঁচিয়ে রাখা দুরূহ হত।
৭ দিনের দিন ওকে বাসায় নিয়ে আসা হল। আমার সাথে পিচ্চির প্রথম থেকেই কতটা ইন্টারঅ্যাকশন ছিলো সেটা একটা কথা না বললে বোঝানো যাবে না , ও আমার কোলে আসলেই পিশু করতো মতান্তরে পিশু দেওয়ার সময় হলেই আমার কোলে আসতো। এমনিতে আমি কোলে নিলে কান্নাকাটি করতো। একদিন আমি কোলে নিয়েছি , দেখি কাঁদছে না , আমি ফুপ্পিকে বললাম "দেখসেন , আপনের মাইয়া তো আমারে চিন্যা ফালাইলো" একটু পরে দেখি কালো কালো কি যেন কাথার ফাঁক দিয়ে পড়লো ( ওইটা হাকু ছিলো , অর্পণ জন্মের পর প্রায় প্রথম ৩-৪ মাস কালা হাকু দিত )
এখন একটু একটু কথা বলতে পারে। আমাকে ডাকে "উব্বো"। এর বোলিং স্টাইল অসাধারন , ২০৩০ সালের বাংলাদেশ প্রমীলা ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন হবার সমূহ সম্ভাবনা আছে ।
আরো কিছু জিনিস যেমন :
১. সে ছেলেদের খুবই অপছন্দ করে। ওর বাপ , আপন ভাই আর আমি ছাড়া মোটামুটি দুনিয়ার কোনো পুরুষকেই ও সহ্য করতে পারে না। বড় হলে যদি দেখতে সুন্দর হয় তাহলে সে খালি পায়ে মাটিতে নামবে কিনা ( বা মাটিতে পা পড়বে কিনা ) যথেষ্ট সন্দেহ আছে ।
২. সে দুনিয়ার আরেকটা জিনিস খুবই অপছন্দ করে তা হলো চুল। আমার ফুপুর মাথার চুল একটু আলগা ধরনের , প্রায় সময়ই বাসায় মেঝেতে চুল পাওয়া যায়। তখন সে নিজের ভ্রু কুচকে ফেলে আর বলে "উব্বো টুইল , বাইয়ে পালা" মানে "শুভ চুল , বাইরে ফালা"।
৩. অতি প্রয়োজনের সময় ( যেমন বাইরে ঘুরতে গেলে ) সে মানুষকে তুমি করে সম্বোধন করে , না হলে সবসময় তুই তুই।
৪. তার দিদু চাওয়ার টাইমিং প্রশংসনীয়। বাইরের কোনো মানুষ সামনে আসলেই সে "আম্মু দিদু" বলে মায়ের কোলে ঝাপিয়ে পড়ে , আর শাড়ি ধরে খামচা খামচি শুরু করে।
৫. সে এমনিতে সারাক্ষন মোবাইলে হেলো হেলো করে শুধু কারো সাথে কথা বলতে বললে বোকার মতোন চুপ করে থাকে।
৬. তার হাকুর গন্ধ উল্লেখ করার মতোন শক্তিশালী। আসেপাশের মানুষদের টেকা দায় হয়ে যায়।
অর্পনকে নিয়ে লিখতে গেলে অনেকগুলো পর্বে শেষ করতে হবে। বড় বিলাই আপুর ভাগ্নেসমগ্র দেখলে বুঝতে পারি উনি ওনার ভাগ্নেকে কতটা ভালবাসেন। অর্পনকে নিয়ে আমার অনুভূতিটা হয়তো ওই রকমই। ও কে হয় আমার ? ফুপাতো বোন ? শুধুমাত্র এতটুকুই তো। তারপরও কেন যেন ওকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ বলে মনে হয় , জানি না কেন ?
যদি আর কিছু লেখার মতোন পাই , বা লেখার মতোন মানসিকতা থাকে তাহলে লিখবো , নয়তো নয়।
অপর্নের কিছু ছবি :
অর্পন - ১
অর্পন - ২
অর্পন - ৩
উৎসর্গ : আমার আরো কিছু বোন গোল্লা কাঁকনাপু ,নুশেরা , ভেবে ভেবে বলি , সাদা কালো ধূসর , একলব্যের পূর্নজন্ম ( যে আমার ব্যানে পোস্ট দিয়ে এখন লজ্জিত ) , মেঘ , অগ্নিকন্যা , আর অগ্নিশিখা ( আমার আপন বোন )
===============================
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৭:৩০