"আমি তোমাকেই ভালবাসি , তুমি ছাড়া কাউরে কুনুদিন কল্পনা ও করি নাই ... কিড়া কাইটা বলতেসি ............ " অতি কমন একটা ডায়লগ। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে , সরাসরি অথবা ফোনে , বেনামে মেইলে এই কথা আমরা সবাই কাউকে না কাউকে বলসি ( যারা ভীতুর ডিম , তারা ও বলসি ... মনে মনে )।
আমি জানি না কয়জনের ক্ষেত্রে কথাটা খাটে , তবে কই যেন পড়সিলাম মানুষ জীবনে গড়ে ৬ বার প্রেমে পড়ে । আমার এক বন্ধু এই কথা শুইনা আমারে কইলো "দোস্ত , তাইলে আমাগো কি হইবো , আমাগো এরশাদ চাচা তো নূন্যতম এককোটি লোকের ভাগের টুকু নিয়া গেল ... "। তার মানে এই কথাটা প্রত্যেকের ক্ষেত্রে মাত্র একবার খাটে , বাকি প্রত্যেকবার ই তা মিথ্যা ... তাতে কি ? EVERYTHING IS FARE IN LOVE & WAR ... ভালোবাসায় খুন করা পর্যন্ত জায়েজ আছে আর মিছা কথা কওয়া তো নস্যি ......
তো , কি যেন বলতেসিলাম !! ও আচ্ছা , আমার প্রথম প্রেমের কেচ্ছা-কাহিনী ..। আমি যখন প্রেমে পড়ি ( মানে প্রথমবার আরকি ... ) তখন ফুলকুঁড়ি কিন্টাগার্ডেনের ক্লাস ওয়ানে পড়তাম। বয়স ৬ বছর। অনেকে নিশ্চই মুখ টিপা হাসতেছেন , "কয় কি পুলায় , মাত্র ছয় বছর বয়সে আবার প্রেম হয় নাকি !!!" তাদের জ্ঞাতার্থে বলতেসি , ৬ বছর বয়সে শুধু হয়না , ৬ বছর বয়সেই হয় । আপনের ও হইসিলো , মনে কইরা দেখেন
না , আমি আমার কোনো টিচারের প্রেমে পড়ি নাই ( আমার জানামতে এইরকম অনেকে আছে যারা জীবনে প্রথম প্রেমে পড়সিলেন তার ম্যাডামের ) । ওই মাইয়া আমাদের ক্লাসের ফার্স্টগার্ল ছিলো। ধরা যাক ওর নাম ছিলো "পুটিশ বেগম"। পুটিশ বেগমের ব্যাপারে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে
তো তখন আমার অবস্থাটা একটু ব্যাখ্যা করি। আমি ছিলাম ক্লাসের সবচেয়ে মিনি সাইজের প্রোডাক্ট। ক্লাসের ছেলেদের কথা তো বাদই দিলাম , মেয়েদের চেয়েও অ্যাভারেজে চার-পাঁচ আঙ্গুল খাটো ছিলাম ( ভাগ্য ভালো , অতঃপর ১০ বছর পর একদা একদিন আল্লাহ আমার পানে তাকাইলেন )। আর গায়ে তেমন একটা মাংস ও ছিলো না। এককথায় আমি ছিলাম ক্লাসের টপমোস্ট অসহায় ছেলে , বেন্ঞ ভাগাভাগি থেইকা শুরু কইরা খেলাধুলা পর্যন্ত হেন কোনো ব্যাপার ছিলো না যেইটা নিয়া আমি আমার ক্লাসের ছেলেদের হাতে মাইর খাই নাই !!! ...
আর স্টুডেন্ট হিসেবে ছিলাম টপমোস্ট খারাপ। মুখস্থ বিদ্যা আমার কোনো কালেই ছিলো না , খালি অংকটা পারতাম। বাংলা-ইংরেজিতে আমাদের ক্লাসের পোলাপান অহরহ ১০০ তে ৯৫-৯৬ পাইত ( ছোট ক্লাস তো , লিখলেই নাম্বার ) , সেইখানে আমার নম্বর আসতো সাকুল্যে ৭৫-৭৬ কইরা। ২৫ জনের সেকশনে ২২-২৩ তম হইতাম।
তবে একটা কারনে আমি স্কুলে বিখ্যাত ছিলাম , স্টুডেন্ট সবাই না হইলেও টিচারদের মধ্যে সবাই আমারে একনামে চিনতো। তার কারন ছিলো , আমি ক্লাসে প্রতিদিন ইউনিফর্ম পড়া অবস্থাতেই হাক্কা করতাম ( অতি অতি অতি দুঃখিত , আসলে এর চেয়ে সুইটাবল ওয়ার্ড আর পাইলাম না )। আর তার পরিমান .... আর বললাম না। যখন বুয়া আমারে কলার ধইরা ব্যালকনি থেইকা হাটাইয়া বাড়িতে নিয়া আসতো , তখন আসেপাশের ক্লাসের সবাই নাক চাইপা ধরতো ( মানষেরে দোষ দিয়া লাভ নাই , আমি নিজেই মাঝেমাঝে গন্ধ সহ্য করতে পারতাম না )। তবে এইখানে আমার কোনো দোষ ছিলো না , মা আমারে প্রত্যেকদিন এক ফিডার গরম দুধ খাওয়াইয়া স্কুলে পাঠাইতো , আমার ছোটো মানুষ , আমার পেট যদি দুধ সহ্য না করতে পারে তো আমার কি দোষ !!! এইবার বুঝেন ক্লাসে ছিলো আমার এমনই ইমেজ !!!
এইবার পুটিশ বেগমের কথা বলি। ও ছিলো আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ট্যালেন্টেড মেয়ে , ম্যাডাম ক্লাসে কোনো পোয়েম পড়ানো আগের দিন ওর মা ( মানে আমার শ্বাশুড়ি .. ) ওরে সেইটা শিখাইয়া নিয়া আসতো। মেয়ে ছিলো অসম্ভব ধরনের মোটা , গায়ের রং শ্যামলা , চোখগুলি ইয়া বড়বড় , চেহারা অসম্ভব ধরনের সুন্দর () আর মাত্রতিরিক্ত ধরনের রিজার্ভ। "সুন্দর মেয়েদের ভাব নিয়া চলতে হয় , না হইলে সৌন্দর্যের দাম থাকে না" এই সহজ এবং একই সাথে দুর্বোধ্য কথাটা এই ৫-৬ বছরের মেয়েটা কিভাবে করে বুঝে ফেলছিলো সেই কথা ভাবলে আমার এখনো অবাক লাগে। ভাবের চোটে মাইয়া দিশাহারা , মোটের উপর কারোর সাথে সে কথাই বলতো না । তবে দুইটা জিনিস ওর মধ্যে ছিলো যা আমি ওই বয়েসী কোনো মেয়ের মধ্যে দেখি নাই , এক ও তখনই কানে দুল পড়তো , দুল মানে পাতলা একটা রিং এর মতো কি জানি , আর দুই , এতটুকুন মেয়ের চুল ছিলো কোমড় পর্যন্ত লম্বা , আমি এতো ছোটো বয়সে কোনো মেয়ের এতো বড় চুল আজ পর্যন্ত দেখি নাই।
ওই মেয়ের পিছনে আমি কেন , আমার মতো মিনমাম ৫ জন আরো ঘুরতো। আমাদের মধ্যে ওই মাইয়ারে ইমপ্রেস করা নিয়া বেশ প্রতিযোগীতা ও হইতো। অনেকে অবিশ্বাসের মতো তাকাইয়া তাকাইয়া ভাবতেসেন যে "পুলায় কয় কি ??" আসলে ভাই বাচ্চারা যে কি পরিমান পাঁকা এবং তারা আসলে কতো কিছু বোঝে এইটা চিন্তা করতে গেলে আমরা বড়রা টাশকি খাইয়া যাবো। প্রতিযোগীতায় আমার অবস্থা ছিলো বরাবরের মতো সবচেয়ে খারাপ , মাইর টাইর খাইয়া অবস্থা ছ্যাড়াবেড়া। মেইন কম্পিটিশনটা যারা লম্বা আরা যারা মেধাবী তাদের মধ্যেই হইতো , আমি দর্শক ছিলাম আরকি।
বাংলা সিনেমা দেখতে দেখতে প্রেমট্রেম নিয়া বিদ্যা ভালোই কামাইসি। প্রেম করতে চাইলে মেয়ের বই নিচে পড়তে হয় , যে দৌড়াইয়া আগে বই উঠাইয়া দিতে পারে তার সাথেই "ভাব" হয়। তারপর একসময় হাত ধরতে হয় , আর সবশেষে একটা চুমা দিতে হয় , অনেককিছু শিখা ফালাইসি , এখন জাস্ট এপ্লাই করা বাকি । তো আমি ও তাকে-তাকে ছিলাম কেমনে কইরা শুরু করা যায় .......
তারপর একদিন খোদাপাক আমার মুখ তুইলা তাকাইলেন। এমনি সময় আমি বেন্ঞ ভাগাভাগি করা নিয়া মাইরটাইর খাইতাম , কিন্তু ওইদিন কেমনে কইরা জানি গোল্ডেন সিটটা পাইয়া গেলাম। গোল্ডেন সিট মানে পুটিশ বেগমের ঠিক পিছনের সিট। আমি ও আল্লাহ করতেসি , আল্লাহ যেনো আজকে ওর ব্যাগটা ফালাইয়া দেয়। ঠিক এমন সময় ব্যগটা পইড়া গেল। আমি চোখ বড়বড় কইরা তাকাইয়া ছিলাম , আল্লাহ আমার দিকে তাকাইলো , এমন কইরাই তাকাইলো , একদিনে এতকিছু হইবো কে কল্পনা করছিলো ... । আমি তাড়াহুড়া কইরা ব্যাগটা ওর দিকে আগাইয়া দিলাম। মাইয়া আমারে থেঙ্কস দিবো কি , এমনভাবে চোখ গরম দিয়া তাকাইলো যেন ব্যাগটা পড়সে আমার দোষে .. । তারপর রীতিমতো ছিনাইয়া আমার হাত থেইকা ব্যাগটা নিয়া নিলো .. ।
সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলতাসিলো। কিন্তু বিধি আমার ফেভার নিলো না। ক্লাস টুতে উঠার তিন মাসের মাথায় আমার বাপ আমারে নিয়া অন্য স্কুলে ভর্তি করলো। এরপর ওরে আমি আরো কয়েকবার দেখসি। তখন ক্লাস নাইন-টেনে পড়তাম , একদিন ইত্তেফাকের মোড়ে দেখলাম , স্বাস্থটাস্থ আর আগের মতো নাই , শুকাইয়া গেসে। দেখতে হুড়পরীর মতো লাগতেসিলো , এই মেয়ের পিছনে আমি ক্যান আমার মতো আরো পন্ঞাশটা ছেলে ঘোরে এই কথা কেউ চোখ বন্ধ কইরা ও বলতে পারবো। তারপর একদিন দেখলাম কলেজে পড়ার সময় , সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ পড়নে , সৌন্দর্য এক্সপোনেন্সিয়ালি বাড়তেসে। দেখি আমার দিকে তাকাইয়া আছে , মনে হয় একটু একটু চিনতে পারতেসে। আমি মাথা নিচু কইরা দ্রুত ওইখান থেইকা এক অর্থে পালাইয়া বাইর হইলাম। আমি ছোটবেলায় দেখতে সুন্দরই ছিলাম। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে লম্বা হইলাম ঠিকই , তার সাথে চাপা ভাঙতে শুরু করলো আর গায়ের রং হইয়া গেলো শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারগো মতোন। ওই মেয়ে যদি ঘুনাক্ষরেও টের পায় এই কালা নিগ্রোটা আমারে একসময় ভালোবাসতো , তাইলে হয়তো নিজের উপরই রাগ করবো , সুন্দরী মাইয়াগো সাইকোলজি , বড়ই জটিল জিনিস। আমিও তাই পালাইয়া বাঁচলাম। এরপর থেইকা আমি আর ওরে কোনোদিন দেখি নাই।
আমার মাঝেমাঝে মনে হয় "আচ্ছা , আমি কি ওরে এখনও ভালবাসি ??" উত্তরটা হ্যা/না কিছুই আসে না। আমার কাছে এই প্রশ্নগুলির এখনও কোনো উত্তর নাই।
অনেকদিন ধরে দেখি না। মনেহয় বিয়ে হয়ে গেসে। আম্রিকা-টাম্রিকা চইলা গেলেও বিচিত্র কিছু না। ওইটার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। বিদেশী O.C D.C ( Onion Cutter , Dish Cleaner ) রা প্রথমে আইসা সুন্দর মেয়েদের টার্গেট করে সবার আগে। তারপর নিজের চেয়ে বয়সে ১৮-২০ বছরের ছোটোমেয়েরে বিয়া কইরা কি খুশি !! মেয়ের বাপ-মা ও খুশি , সোনার টুকরা পোলার হাতে মেয়েরে তুইলা দিয়া। ওই মেয়ে জীবনেও আমার হবে না , কোনোদিন না , তারপরও চাই ও যেখানেই থাকুক , ভালো থাকুক। যেন বাপের বয়েসী কোনো সোনার টুকরা পোলার হাতে জীবন নষ্ট না হয় , তাকেই যেন পায় যাকে ও ভালবাসে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:০০