সামনে ভ্যালেন্টাইন'স ডে , চারিদিকে ভালবাসার ছড়াছড়ি। তার উপর আবার পহেলা ফাল্গুন , বিশ্ব হিমু দিবস , বাঙালী সমাজে উৎসবের আমেজ।
ভালবাসার কথা বলার জন্য অনেক আছেন। অবশ্য বিরোধিতা করার জন্য ও কেউ কেউ আছেন , "কে বলসে ভ্যালেন্টাইন'স ডে খালি প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য রিজার্ভ করা , বাপ-মা , ভাই-বোন , বন্ধু-বান্ধব এর মধ্যে থাকবো না ক্যান " , এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক তো চলতেই থাকবে। আমি তাদের কথা বলছি না যারা ভ্যালেন্টাইন'স ডে মানেই শুধুমাত্র প্রেমিক-প্রেমিকাদের সম্পত্তি মনে করেন , তাদের ও না যারা এর মধ্যেও বাপ-মা নিয়ে আসছেন। তাদের কথা বলছি যারা ভালবাসতে পারেনা , যাদেরকে ভালবাসার অধিকার সমাজ , জাতি , ধর্ম সম্ভবত সৃষ্টিকর্তা নিজে ও দেন নি।
আমি তাদের কথা বলছি যারা আমাদের মাঝে থেকে ও আমাদের না। যাদের জন্ম হয়েছে ভদ্রলোকের ঘৃনা পাবার জন্য। তার প্রয়োজন ও অবশ্য আছে , ভালবাসা ছড়ানোর এত্তো-এত্তো জায়গা আছে , ঘৃনাগুলো রাখার জন্য ও তো কেউ না কেউ থাকা লাগবে। সমাজ , জাতি , ধর্ম এমনকি উপরওয়ালা পর্যন্ত তাদের আলাদা করে রেখেছেন ভোগ করার জন্য , ছুড়ে ফেলে দেবার জন্য , গালি দিয়ে সুখ মেটানোর জন্য। তাদের কথা বলছি , পতিতাদের কথা।
একটি মেয়ে , কতটা কষ্ট নিয়ে , ছোট্ট একটা বুকে কতখানি জ্বালা নিয়ে শরীর বেচতে নামে তা হয়ত আমরা ভদ্রলোকেরা কল্পনা ও করতে পারব না। একমুঠো ভাতের জন্য। হয়ত নিজের জন্য ও না , নিজের জীবনের জন্য মানুষ এতকিছু করে না , বুড়িগঙ্গার উপর থেকে ঝাপ দিয়ে পড়লেই কি , কিন্তু বাড়ির লোকগুলি ?? বাড়িতে হয়ত সন্তান অাছে , ছোট-ছোট ভাইবোন আছে , মা আছে , তাদের জন্য। হয়ত অাজকে রাতে চুলা জ্বলবে না টাকার ব্যাবস্থা না করতে পারলে , বাচ্চাটা দুধের জন্য কাদছে , ছোট ভাইবোন গুলি পরীক্ষা দিতে পারছে না ফি না দিতে পারার জন্য , কত চিন্তা। একদিন হয়ত বাচ্চাটা বড় হবে , লেখাপড়া শিখবে , কোনো দিন পরিচয় দিতে ও লজ্জা পাবে "উনি আমার মা" বলে। ভাইবোন গুলি "মানুষ" হবে , তার ই মতো একজন "মানুষ" বিয়ে করে সংসারী হবে , বেমালুম ভুলে যাবে একজন অমানুষের রক্ত পানি করা টাকায় সে বড় হয়েছে , লজ্জা পাবে এই কথা মনে করে যে একজন দেহপসারিনীর নষ্ট রক্তের সাথে তার রক্তের সম্পর্ক আছে।
মানুষ পৃথিবীর পাপের জন্য পরকালে শাস্তি পাবে। আমার জানতে বড় ইচ্ছা করে এরা আগের জীবনে এমন কি পাপ করেছে যার জন্য এই জীবনে এতো কষ্ট পাচ্ছে। আপনারা যারা পুর্নজন্মে বিশ্বাস করেন না , তারা এটাতো মানেন যে প্রত্যেক নবজাতক নিষ্পাপ অবস্থায় পৃথিবীতে আসে। তাহলে তারা ঠিক জন্ম নেবার মুহুর্তে এমন কি পাপ করে যার জন্য তাকে সারাজীবন এই নরকের জীবন বহন করতে হয়।
ব্যাভিচারী নরকে যাবে , কে না জানে ! একটা মেয়ে লেখাপড়া জানেনা , বাবা অর্থ-সম্পত্তি রেখে দিয়ে যাননি , কারিগরি শিক্ষা ও নেই। আছে শুধু শরীরটা। মাথার উপর ছাদ নেই , দুদিন ধরে না খাওয়া , দুধের বাচ্চাটা না খেতে পেরে চোখের সামনে মারা যাচ্ছে , সে এমন অবস্থায় কি করবে ? সে আর কি করতে পারে ? আমি এর উত্তর জানিনা , সম্ভবত সৃষ্টিকর্তা জানেন। আমার খুব ইচ্ছে যেদিন সৃষ্টিকর্তার সামনে গিয়ে দাড়াব সেদিন এই একটা প্রশ্ন করার। আমি হয়ত সরাসরি দোযখে যাব , এই ঔদ্ধৃর্তপূর্ন প্রশ্ন করলে শাস্তির সময়সীমা হয়ত আরো কয়েকশ বছর বাড়বে , তারপর ও করব।
অনেকে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখেন। ক্ষুধার তো আর বাংলাদেশ-আমেরিকা নেই। ক্যামেরার সামনে যে মেয়েটা ধীরে ধীরে কাপড় খুলছে ,হাসি মুখে নিজের "দর্শক-শ্রোতাদের" খুশি করার প্রানান্ত চেষ্টা করছে , তার ভেতরের কষ্টের কথাটা কয়জন চিন্তা করে জানিনা , আমি কখোনো করিনি। বাড়িতে লোকগুলি পথ চেয়ে আছে , কয়েকটা "ডলার" যোগাড় করা খুব জরুরি। কোটি কোটি মানুষের সামনে সম্ভ্রম বিক্রি করে দিয়ে গেল কয়েকটা ডলারের জন্য , ইশ্ কি জীবন !!
আমি একটা ফুটফুটে মেয়ের স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখি , আমি ওকে বুকে নিয়ে ঘুরছি , পরম আদর-ভালবাসা নিয়ে বড় করছি। সব বাবা-মা ই হয়ত এই স্বপ্ন দেখে। কিন্তু তাদের মধ্যে ও তো অনেকে নির্মম বাস্তবতার স্বীকার হয়ে সমাজে পতিত হয়। আমার মেয়েটা ও যদি কোনো একদিন ... নাহ্ আর পারছি না।
আমি মহাপুরুষ নই। ব্লগে এসে মহাপুরুষ তৈরি করা ও আমার লক্ষ্য না। আমি শুধু
বলতে চাই , আচ্ছা আমরা ভালবাসা দিবসে একদিনের জন্য কি ওদেরকে
"পতিতা" হিসেবে না দেখে "মানুষ" হিসেবে দেখতে পারিনা ? সামান্য একটু ও
ভালবাসা দিতে পারিনা , মাত্র একদিনের জন্য ?
( অনেক লম্বা একটা পোষ্ট দিয়ে দিলাম। আমার অখাদ্য লেখাগুলো আপনারা আগে
ও অনেক ভালবাসা দিয়ে দেখেছেন , সেই ভরসাতেই দিলাম। )
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৫৮