হযরত রাসূল (স) ফরমান
" হযরত আলী (র) হতে বর্ণিত আছে যে , রাসূলে (স) করীম বলেছেন, শেষ জামানায় আহমক ও অপরিণামদর্শী একটি দল বের হবে যারা খুব ভালো ভালো কথা বলবে কিন্তু ঈমান তাদের অন্তরে থাকবেনা। তীর যেভাবে শিকারকে বিদ্ধ করে অপরদিকে বের হয়ে যায় তারাও দ্বীন হতে সেরুপই বের হয়ে যাবে"( বুখারী)
বর্তমান যুগের প্রচলিত তাবলীগ পন্থীদের বেলায় এ হাদীসটি প্রযোজ্য। কেননা যেখানে রাসূল (স) ইসলামের ৫টি মূলনীতির কথা ঘোষনা করেছেন এবং স্বয়ং সাহাবায়ে কেরামগন অমুসলিমদের মধ্য ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন,পক্ষান্তরে প্রচলিত তাবলীগ পন্থিরা ৬ উছুলের মধ্য তাবলীগ করছেন। আর তা মুসলমানদের মধ্যই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। এটা একটা ভ্রান্ত পথ।
প্রসংগত উল্লেখ্য যে, ৬১ হিজরীতে হযরত ইমাম হোসাইন (র) এর শাহদাৎ লাভের পর থেকে এজিদের মাধ্যমে যে শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল তার ধারা ও রীতি-নীতি আরব মুলুকে এখনো বিদ্যমান আছে। এর প্রকাশ ঘটেছিল ওহাবী মতবাদের জনক জনাব আব্দুল ওহাব নাজদীর ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে। আর যেহেতু প্রচলিত তাবলীগ প্রথার উদ্ভাবক জনাব মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস আরবের তৎকালীন বাদশাহর পরামর্শে ও যোগসাজশে এই প্রথা চালূ করেছেন, সেহেতু এটা প্রকৃত ইসলাম কিনা এটা ভাব বার যথেষ্ট অবকাশ সুধী মহলে রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, মাওলানা ইলিয়াস সৌদি বাদশাহর সাথে এই নতুন মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করার পরে দেশে ফিরে এসে একটি মিথ্যা স্বপ্ন প্রকাশ করলেন। মাওলানা ইলিয়াস জানালেন-একদা তিনি নাকি রাতে স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে, হযরত রাসূল (স) তার নিকটে এসে তাবলীগ জামাত প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। এরপর থেকে এই জামাত প্রতিষ্ঠা করেন। মূলে এই স্বপ্ন ছিল সম্পুর্নই মনগড়া ও বানোয়াট।
প্রচলিত তাবলীগ ও ওহাবী মতবাদের সম্পর্ক
প্রচলিত তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাকারী মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস জনাব রশীদ আহমদ গাংগুহির একজন ভক্ত বা মুরীদ ছিলেন। তাবলীগ দর্পন নামক কিতাব হতে জানা যায় যে, বাল্য বয়সেই মাওলানা ইলিয়াস শিক্ষা লাভের জন্য মাওলানা রশীদ আহমদ গাংগুহীর দরবারে হাজির হন। দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ তার নিকট হতে শিক্ষা লাভ করেন এবং ছাত্র জীবনেই তিনি গাংগুহির নিকট মুরীদ হন। তাবলীগ জামাতের একজন মোবাল্লেগ (প্রচারক) মৌ আলী হাসান সংকলিত-" হযরত মাওলানা ইলিয়াস আওর উনকি দাওয়াত" নামক গ্রন্থের ৪৫ পৃষ্ঠায় লেখেন-'হযরত মাওলানা ইলিয়াস সাহেব জনাব গাংগুহী সাহাবের সোহবত এবং তার মজলিশ সম্পদ রাত দিন লাভ করেন"
'তবলীগ দর্পন' কিতাবের ৫৯ পৃষ্ঠায় আছে '১০ বৎসর বয়স হতে ২০ বৎসর বয়স পর্যন্ত তিনি গাংগুহি সাহেবের সোহবত লাভ করেন। তার নিকট থেকেই তিনি বালেগ হন, পুর্ণতা লাভ করেন, যৌবনে পদার্পন করেন"
তাবলীগ জামাতের জনৈক আমীর মাওলানা মজনূর নোমানী কর্তৃক সংকলিত 'মলফুজাতে মাওলানা ইলিয়াস" নামক গ্রন্থের ৫০ নং দরসে রয়েছে যে তিনি (ইলিয়াস) বলেন-" এই তাবলীগের পদ্ধতি আমি স্বপ্নযোগে পাইয়াছি। তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদিগকে মানুষের উপকারের জন্য বাহির করা হইয়াছে, তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দিবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে ও আল্লাহর উপরে ঈমান আনবে। এই আয়াতের তফসীরেও স্বপ্নে আমার প্রতি এইরূপ উদঘাটিত হইয়াছে যে, তোমরা মানুষের জন্য নবীদের মত আবির্ভুত হইয়াছ- এই শব্দ দ্বারা বিবৃত করার মধ্য ইহার প্রতি ইংগিত রয়েছে যে, একস্থানে বসে এই কাজ হবেনা বরং দ্বারে দ্বারে পৌছে করতে হবে।"
'তবলীগ দর্পন' কিতাবের ৬৩ পৃষ্ঠায় এ প্রসংগে বলা হয়েছে " এই স্থলে ইলিয়াস সাহেব আকার ইংগিতে নবুয়তের গুনাবলীর ব্যখ্যায় নবীদের মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ার দাবী করিয়াই ক্ষান্ত হন নাই, আয়াতের ব্যখ্যায় স্পষ্টভাবে সমকক্ষ হওয়ার দাবী করিয়াছেন। আয়াত অবতীর্ন হইয়াছে নবী (স) এর উপর আর উহার তফসীর স্বপ্নের মাধ্যমে প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে ইলিয়াস সাহেবের উপর। অথচ এইরূপ তাফসীর চৌদ্দশত বৎসর যাবৎ কোন তফসীরকার করেন নাই। শুধু তাহাই নহে নবীদের দ্বারা আল্লাহ যে কাজ সমাধা করেন নাই তিনি তাবলীগিদের দ্বারা তদপেক্ষা গুরুত্বপুর্ন কাজ সমাধা করিতে পারেন বলিয়া ইলিয়াস সাহেব অভিমত ব্যক্ত করেন"
'মাকাতীবে ইলিয়াসে' রয়েছে-মুসলমান ৩ প্রকার, চতুর্থ প্রকার কোন মুসলমান নাই, যাহারা তাবলীগে বাহির হইয়াছে, যাহারা তাবলীগিদের কথা শুনে এবং যাহারা তাবলীগিদের সাহায্য করে"
মাওলানা ইলিয়াসের মতে যারা তাবলীগ জামাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ন্য়, তারা মুসলমানই নয়। অথচ সেই ব্যক্তিকেই অন্যত্র ভিন্ন কথা বলতে শোনা যায়।
'তাবলীগ দর্পন' কিতাবের ৬৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে।
মাওলানা ইলিয়াস তার জনৈক শিষ্য জহিরূল হাসানকে লক্ষ্য করে বলেন'
মিয়া জহিরূল হাসান, আমার উদ্দেশ্য কেহই বুঝেনা। মানুষ মনে করে যে ইহা (তাবলীগ) নামাজের আন্দোলন। আমি কসম করিয়া বলিতেছি যে, ইহা নামাজের আন্দোলন নয়।একদিন আফসোস করিয়া বলিলেন-আমার একটি নতুন দল সৃষ্টি করিতে হইবে
এ প্রসংগে তাবলীগ দর্পন কিতাবে বলা হয়েছে-"তবলীগ জামাতের প্রবর্তক মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের মনোবাসনা উল্লেখিত আয়াতে স্পষ্ট হইয়া পড়িয়াছে। তিনি একটি দল সৃষ্টি করিতে চান। ধর্মের সংস্কারের নামে আব্দুল ওহাব নাজদিও একটি দল সৃষ্টি করিয়াছিলেন এবং উক্ত দলকে যে সমস্ত কাজে নিয়জিত করা হইয়াছিল তাহার ইতিহাস অতি করূন ও মর্মান্তিক।
প্রসংগত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের পীর জনাব মাওলানা রশীদ গাংগুহি ওহাবী মতবাদের একজন উচ্চ পর্যায়ের সমর্থক ছিলেন। তিনি ওহাবী মতবাদের জনক আব্দুল ওহাব নাজদী সম্পর্কে খুব ভাল ধারনা পোষণ করতেন।তার স্বরচিত গ্রন্থ ফতুয়ায়ে রশীদিয়া এর ২৩৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন" আব্দুল ওহাবকে মানুষ ওহাবী বলে, সে ভাল লোক, শুনিয়াছি সে হাম্বলি মাঝাবের অনুসারী ছিল এবং হাদীস মোতাবেক আমল করিত"
উক্ত কিতাবের ৯৬ পৃষ্ঠায় ওহাবী মাজহাব সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন" আজকাল এবং এতদ্দেশে শরীয়তের অনুসারী এবং দীনদারকে ওহাবী বলা হয়"
জনাব আব্দুর রশীদ গাংগুহি কতৃক আবদুল ওহাব নজদির সমর্থন মুলক বক্তব্যর পরিপ্রেক্ষিতে 'তবলীগ দর্পন' কিতাবে বলা হয়েছে।' ইনি হইতেছেন সেই ওহাব নজদী, যিনি রাসূলে পাক অবমাননাকারীদের লইয়া দল গঠন করিয়া মক্কা মদীনায় আক্রমন চালাইয়াছেন।মক্কা-মদীনা বাসীদের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালাইয়াছেন, রাসুলে পাক (স) এর রওজা মোবারকের ফরাস, মুল্যবান চাদর ওঝাড় ফানূস লূট করিয়া নজদে লইয়া গিয়াছেন এবং যাহার রচিত গ্রন্থ "কিতাবুত তাওহীদ" অদ্যাবধি ওহাবী-সুন্নি ঝগড়ার খোরাক হইয়াছে
আব্দুল ওহাব নজদী তার রচিত 'কিতাবুত তাওহীদে' লিখেছেন
" কেহ নবী ও তার অনুসারীদের ইবাদত করে এইভাবে যে তাদেরকে অভিভাবক ও সুপারিশকারী মনে করে। ইহা অতি জঘন্য শিরক"
"যে ব্যক্তি নবী ও অন্যান্যকে নিজের অভিভাবক মনে করে এবং আবু জাহেল মুশরিক হিসেবে এক সমান অর্থাৎ একই পর্যায়ের মুশরিক"
মুসলমান গন যদি হযরত রাসূল (স) কে নিজেদের অভিভাবক মনে করে তাহলে ওহাব নাজদীর মতে তারা আবু জাহেলের মত মুশরীক হয়ে যাবে।
আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারীরা মনে প্রানে বিস্বাস করে যে রাসূলের (স) মাজার জিয়ারত করা শিরক এবং রাসুল (স) কে সুপারিশকারী মনে করলে সে মুশরিক হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহ তাকে মানুষের অভিভাবক করে পাঠিয়েছেন।
যে নবীকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি হতোনা তাছাড়া যিনি উম্মতের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন, অথচ তার সম্মন্ধে ওহাব নজদীর এ ধরনের উক্তি চরম ধৃষ্টতা বৈ কিছু নয়।
মাওলানা রশীদ আহমদ গাংগুহি ফতোয়ায়ে রশীদিয়ার ২য় খন্ডে ১১ পৃষ্ঠায় তার সমসাময়িক ওহাবিদের গুনকির্তন করে বলেন " বর্তমানে এতদ্দেশের দ্বীনদার ও সুন্নতের অনুসারীদের ওহাবী বলা হয়"
মাওলানা গাংগুহি ইসমাইল দেহলভী রচিত তানভিয়াতুল ইমান ( যেটি ওহাব নাজদীর কিতাবুত তঅহীদ গ্রন্থের সারমর্ম) গ্রন্থের প্রশংসা করে লিখেছেন " তাকভিয়াতুল ঈমান একটি উৎকৃষ্ট কিতাব। শিরক ও বিদআত দুরীভূত করার ক্ষেত্রে ইহা অদ্বিতিয়। ইহাতে বর্ণিত সমস্ত বিষয় কোরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিট ইহা নিজের নিকট রাখা ও পড়া প্রকৃত ইসলাম"
অথচ তবলীগ দর্পন কিতাবে ৪৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে " তাকভিয়াতুল ইমানের মধ্য আম্বিয়া ও আউলিয়া কেরামের শানে দিবালোকের মতো স্পষ্ট ভাবে বেয়াদবী ও গোস্তাকী করা হইয়াছে অথচ তারপরেও গাংগুহি সাহেব উহাকে নিজের নিকট রাখা ও তিলাওয়াত করা প্রকৃত ইসলাম বাতাইয়াছেন।
মাওলানা মুফতি আহমদ ইয়ার খান সাহেব স্বরচিত কিতাব 'জা-আল হক' এর ৪১৮ পৃষ্ঠায় একটি বর্ননা উদ্ধৃত করেছেন গাংগুহি সাহেবের জনৈক সাগরেদ মৌ হোসাইন আলীর স্বরচিত গ্রন্থ। এতে টিনি একটি স্বপ্নের বর্ননা দিয়েছেন " নবী করিম (স) আমাকে (হোসাইন আলিকে) পুলসিরাতের উপর নিয়ে যান। অতপর আমি নবী করিম (স) কে পুলসিরাতের উপর হতে পড়ে যেতে দেখে তাকে রক্ষা করলাম"
তবলীগ দর্পন কিতাবে বলা হয়েছে যে " এইবার লক্ষ্য করুন গাংগুহি সাহেবের সাগরেদ তাকভিয়াতুল ঈমান কে প্রকৃত ইসলাম মনে করার কারনে এমনই উপযুক্ত হয়েছেন যে, পুলসিরাতের উপর হইতে নবী করিম (স) পড়িয়া যাইতাছেন দেখিয়া তিনি তাকে রক্ষা করিলেন"(নাউজুবিল্লাহ)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ভোর ৪:৩৮