কি সব ছাতার মাথা লিখেছিলেন হুমায়ুন আহমেদ ? উনি তো সাহিত্যের মান বজায় রেখে কিছুই লিখেন নাই । লিখেছেন বাজার ধরার জন্য ।
আসুন আজকে এই বাজারি লেখক টির মুখোশ খুলে দেই ,
এই হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার তৎকালীন নেত্রোকোনা মহকুমার কুতুবপুরে জন্ম গ্রহন করেন ।সেটি ছিলো তার নানার বাড়ি । হুমায়ুন আহমেদ এর বাবার নাম ফয়জুর রহমান আহমেদ , মা আয়েশা ফয়েজ । ফয়জুর রহমান পুলিশে চাকুরী করতেন পাশাপাশি উপরি কামাই করার জন্য পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন । মা আয়েশা ফয়েজ নিজেও লেখালেখি করতেন ।
এমন এক পরিবারে জন্ম এই বাজারি লেখক এর ।
চলুন এখন দেখে আসি হুমায়ুন আহমেদের কিছু বাজারি লেখার নমুনাঃ
নন্দিত নরকেঃ মাত্র ২২ বছর বয়সে হুমায়ুন আহমেদ তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময়ে এই উপন্যাস রচনা করেন । এই উপন্যাস খানা এত বেশি বাজারি ছিলো যে স্বয়ং আহমেদ ছফা এই উপন্যাস টা ছাপার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেন , এবং কাইয়ুম চৌধুরী এর প্রচ্ছদ আঁকেন । এবং সেই সময়ের অনেক জ্ঞানী গুনী ব্যাক্তি এই বইয়ের ভুমিকা লিখে দেন । কারন তারা জানতেন হুমায়ুন আহমেদ একজন বাজারি লেখক ।
আগুনের পরশমনিঃ এই বইটা নিয়ে অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছা করে । থাক সেগুলো বললাম না । আচ্ছা আপনি সত্যি করে বলেন তো বইটা কি আপনি পড়েন নাই ?
জোসনা ও জননীর গল্পঃ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক উপন্যাস আছে কিন্তু এত সুন্দর ভাবে একেবারে মানুষের মাথায় মুক্তিযুদ্ধ ঢুকে দেওয়া সেরা বই আমার মতে সম্ভবত এটাই ।
হিমুঃ কি সব ছাতার মাথা । রাস্তায় খালি পায়ে হাটা, রাত্রে জোসনা দেখা , দাড়ি রাখা এইগুলা আবার ফ্যাশন হইলো । যত্তসব বাউন্ডুলে পোলাপাইনের কারবার । হ্যা বাউন্ডুলে ব্যাপার স্যাপার বটে । কিন্তু এক বারও কি মনে পরে না ? যে আপনি একস্ময় এই হিমুর মতই ছিলেন । কোন এক কোণ থেকেও আপনি হিমু টাইপ আচরন করেন নাই ? নাহ করেন নাই কারন আপনি ভালো মানের সাহিত্য বিশারদ আর শুধুমাত্র হুমায়ুন আহমেদই বাজারি লেখক । অথচ আপনার বাসার বইয়ের র্যাকে এখনো হিমু সিরিজের বইগুলো যত্ন করে গুছিয়ে রাখা ।
মিসির আলীঃ সাইকোলজিকাল কোন থ্রিলার বলতে আমার কাছে মিসির আলিই মনে হয় । এত সহজ ভাবে গভীর বিষয় গুলা মনে হয় এই বাজারি লেখক টিই তুলে ধরতে পেরেছিলেন ।
হুমায়ুন স্যার বাজারি লেখক কারন হচ্ছে এনার লেখা পড়ে খুব সহজে বুঝা যায় । আচ্ছা কোন লেখা পড়ে যদি আমি বুঝতেই না পারি তাহলে কি লাভ সেই লেখার । সেই লেখা তাহলে বাজারে প্রকাশ না করে খাতা ভর্তি করে নিজের আলমারিতে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখাই শ্রেয় । কারন সেগুলো সর্বস্তরের মানুষের জন্য না । আমি যদি বুঝতে না পারি তাহলে সেটার আমার কাছে ভ্যালু কি ? ব্যাপার কেমন দ্বাড়ায় জানেন ?
একজন ইংরেজ গেছে গ্রামে , সে ইংরেজিতে গ্রামের লোকদের গালি দিচ্ছে অথচ গ্রামের মানুষ সেগুলো বুঝতেই পারতেছে না । তারপরেও সেই ইংরেজকেই সম্মান দেখাচ্ছে । কারন সেই গ্রামের মানুষ গুলো দেখতে পাচ্ছে সেই লোক টি ইংরেজী তে কথা বলতেছে ।
বঙ্কিম চন্দ্র বলেছিলেন আমরা আগুন কে অগ্নি বলতে পারি তাই বলে একটু নিজের সাহিত্যের জ্ঞান জাহির করতে গিয়ে আগুনকে হুতভুক বলার কোন কারন নাই ।
আমি একটা প্রশ্নের উত্তর এখনো খুজে পাই না , আসলে সাহিত্য মানে কি ? এর মানে কি কিছু উচুশ্রেনীর মানুষের আড্ডার বস্তু ? তাহলে উচু শ্রেনীর মানুষগুলো আমাদের গ্রাম বাংলার মৈমনসিংহ গিতিকা পড়ে কেন ? যদি সাহিত্য সর্বশ্রেনীর মানুষ দের জন্য হয় তাহলে সেটা সব মানুষের কথা মাথায় রেখেই লেখা উচিত । চেয়ার এর খাটি বাংলা শব্দ হচ্ছে কেদারা । আমি জানি মানুষ কেদারা না বলে চেয়ার বললেই তারাতারি বুঝবে । তাহলে কেন আমি কেদারা লিখবো । হুমায়ুন আহমেদ স্যার সম্ভবত সেই কাজ টাই করেছেন । সরাসরি সহজ ভাষায় নিজের মনের কথাগুলো , মানুষের কথাগুলো মানুষের কাছে সহজ ভাষায় লিখে গেছেন । এটাই সম্ভবত উনার প্রধান দোষ ।
উনার কিছু সহজ ভাষার কঠিন উক্তিঃ
কল্পনা শক্তি আছে বলেই
সে মিথ্যা বলতে পারে ।
যে মানুষ মিথ্যা বলতে পারে না,
সে সৃষ্টিশীল মানুষ না, রোবট টাইপ মানুষ ।
মানব জাতির স্বভাব হচ্ছে
সে সত্যের চেয়ে মিথ্যার
আশ্রয় নিরাপদ মনে করা..
যে নারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর দেখায় সেই প্রকৃত রূপবতী।
মানব জীবন হলো অপেক্ষার জীবন… !
মধ্যবিত্য পরিবারের মানুষগুলোই পৃথিবীর আসল রূপ
দেখতে পায়।
যুদ্ধ এবং প্রেমে কোনো কিছু পরিকল্পনা মতো হয় না।
বাজারি শব্দ টার অর্থ কি ?
যে জিনিস টা সর্বস্তরের মানুষের পছন্দ । এই বাজারি লেখক কথাটা এখন অনেকে বাজারি মেয়ে কথাটার মতই ব্যাবহার করে থাকে । সব জিনিস এক রকম না । সব কথার অর্থ এক রকম হয় না হতে পারেও না । হুমায়ুন আহমেদ বাজারি লেখক কারন উনার লেখা বাজারে ভালো বিক্রি হয় । এই হিসেবে আমি বলতে পারি পাওলো কোহেলহো ও বাজারি লেখক কারন উনার আলকেমিস্ট বই বিশ্ববাজারে এখনো বেস্ট সেলারের তালিকায় তিন নম্বরে আছে । আর হ্যা এরা সবাই যদি বাজারি লেখক হয় তাহলে আপনিও বাজারি পাঠক , কারন বইটা আপনি বাজার থেকেই কিনেন । আর বাজারে যে বইটার নামডাক আছে সেটাই আগে কিনতে দৌড় দেন ।
এত কিছু লেখার মানে কি ?
হুমায়ুন আহমেদ এমন একজন লেখক যিনি একটা পাঠক সমাজ তৈরী করে গেছেন । অধিকাংশ বইপোকার বইপড়ার সুচনা হয় তিন গোয়েন্দা,হুমায়ুন আহমেদ,অথবা মাসুদ রানা দিয়ে । অথচ কোন এক সময় দেখা যায় আমরা এই তিন ধরনের লেখাকেই কম দামি সাহিত্য বলে বেড়াই । হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বইগুলি হয়তো উচু মানের ভাবগম্ভীর টাইপ কথাবার্তায় ভর্তি নয় , কিন্তু সহজ কথার গভীর ভাবের এক বিশাল ভান্ডার হচ্ছে এই এই বাজারি লেখকের বইগুলি ।
কারা হুমায়ুন আহমেদ কে বাজারি লেখক বলে থাকেন ?
দুই শ্রেনির লোকঃ
এক দল যারা হুমায়ুন সমসাময়িক , যারা হুমায়ুন এর সাফল্যের কারনে চাপা পরে গেছেন তারা । তারা বলে বেড়াবে এটা স্বাভাবিক কারন হুমায়ুন আহমেদের কারনে তারা নিজেদের সেরা লেখক হিসেবে আত্ত্বপ্রকাশ করতে পারেন নাই । কারন এর মধ্যেই সেরাদের সেরা একজন তাদের থেকে কয়েক স্তর উচুতে বসে আছে ।
আরেকদল হচ্ছে ইচড়ে পাকা , আমার ভাষায় বালপাকনা । এরা হয়তো কিছুদিন হয় বই পড়া শুরু করেছে । হুমায়ুন আহমেদ , মাসুদ রানা শেষ করে সদ্য একটু বঙ্কিম টাইপ লেখা পড়া শুরু করেছে । এদের ধারনা আমি যদি হুমায়ুন স্যারের নাম বলি তাহলে সবাই ভাববে আমি ভালো মানের সাহিত্য পাঠক না । তাই নিজেকে ভালো মানের একজন সাহিত্য পাঠক , সাহিত্য বোদ্ধা প্রমান করার জন্য বলে থাকে হুমায়ুন আহমেদ একজন বাজারি লেখক ।
শেষ কথাঃ আঙ্গুর ফল টক তখনই হয় যখন সেটা আমাদের নাগালের বাইরে থাকে
বইহাট ব্লগের সৌজন্যে
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ১২:১২