somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ুন আহমেদঃ একজন বাজারি লেখক এর গল্প

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কি সব ছাতার মাথা লিখেছিলেন হুমায়ুন আহমেদ ? উনি তো সাহিত্যের মান বজায় রেখে কিছুই লিখেন নাই । লিখেছেন বাজার ধরার জন্য ।

আসুন আজকে এই বাজারি লেখক টির মুখোশ খুলে দেই ,

এই হুমায়ুন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার তৎকালীন নেত্রোকোনা মহকুমার কুতুবপুরে জন্ম গ্রহন করেন ।সেটি ছিলো তার নানার বাড়ি । হুমায়ুন আহমেদ এর বাবার নাম ফয়জুর রহমান আহমেদ , মা আয়েশা ফয়েজ । ফয়জুর রহমান পুলিশে চাকুরী করতেন পাশাপাশি উপরি কামাই করার জন্য পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন । মা আয়েশা ফয়েজ নিজেও লেখালেখি করতেন ।

এমন এক পরিবারে জন্ম এই বাজারি লেখক এর ।



চলুন এখন দেখে আসি হুমায়ুন আহমেদের কিছু বাজারি লেখার নমুনাঃ

নন্দিত নরকেঃ মাত্র ২২ বছর বয়সে হুমায়ুন আহমেদ তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময়ে এই উপন্যাস রচনা করেন । এই উপন্যাস খানা এত বেশি বাজারি ছিলো যে স্বয়ং আহমেদ ছফা এই উপন্যাস টা ছাপার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেন , এবং কাইয়ুম চৌধুরী এর প্রচ্ছদ আঁকেন । এবং সেই সময়ের অনেক জ্ঞানী গুনী ব্যাক্তি এই বইয়ের ভুমিকা লিখে দেন । কারন তারা জানতেন হুমায়ুন আহমেদ একজন বাজারি লেখক ।

আগুনের পরশমনিঃ এই বইটা নিয়ে অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছা করে । থাক সেগুলো বললাম না । আচ্ছা আপনি সত্যি করে বলেন তো বইটা কি আপনি পড়েন নাই ?

জোসনা ও জননীর গল্পঃ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক উপন্যাস আছে কিন্তু এত সুন্দর ভাবে একেবারে মানুষের মাথায় মুক্তিযুদ্ধ ঢুকে দেওয়া সেরা বই আমার মতে সম্ভবত এটাই ।

হিমুঃ কি সব ছাতার মাথা । রাস্তায় খালি পায়ে হাটা, রাত্রে জোসনা দেখা , দাড়ি রাখা এইগুলা আবার ফ্যাশন হইলো । যত্তসব বাউন্ডুলে পোলাপাইনের কারবার । হ্যা বাউন্ডুলে ব্যাপার স্যাপার বটে । কিন্তু এক বারও কি মনে পরে না ? যে আপনি একস্ময় এই হিমুর মতই ছিলেন । কোন এক কোণ থেকেও আপনি হিমু টাইপ আচরন করেন নাই ? নাহ করেন নাই কারন আপনি ভালো মানের সাহিত্য বিশারদ আর শুধুমাত্র হুমায়ুন আহমেদই বাজারি লেখক । অথচ আপনার বাসার বইয়ের র‍্যাকে এখনো হিমু সিরিজের বইগুলো যত্ন করে গুছিয়ে রাখা ।

মিসির আলীঃ সাইকোলজিকাল কোন থ্রিলার বলতে আমার কাছে মিসির আলিই মনে হয় । এত সহজ ভাবে গভীর বিষয় গুলা মনে হয় এই বাজারি লেখক টিই তুলে ধরতে পেরেছিলেন ।

হুমায়ুন স্যার বাজারি লেখক কারন হচ্ছে এনার লেখা পড়ে খুব সহজে বুঝা যায় । আচ্ছা কোন লেখা পড়ে যদি আমি বুঝতেই না পারি তাহলে কি লাভ সেই লেখার । সেই লেখা তাহলে বাজারে প্রকাশ না করে খাতা ভর্তি করে নিজের আলমারিতে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখাই শ্রেয় । কারন সেগুলো সর্বস্তরের মানুষের জন্য না । আমি যদি বুঝতে না পারি তাহলে সেটার আমার কাছে ভ্যালু কি ? ব্যাপার কেমন দ্বাড়ায় জানেন ?

একজন ইংরেজ গেছে গ্রামে , সে ইংরেজিতে গ্রামের লোকদের গালি দিচ্ছে অথচ গ্রামের মানুষ সেগুলো বুঝতেই পারতেছে না । তারপরেও সেই ইংরেজকেই সম্মান দেখাচ্ছে । কারন সেই গ্রামের মানুষ গুলো দেখতে পাচ্ছে সেই লোক টি ইংরেজী তে কথা বলতেছে ।

বঙ্কিম চন্দ্র বলেছিলেন আমরা আগুন কে অগ্নি বলতে পারি তাই বলে একটু নিজের সাহিত্যের জ্ঞান জাহির করতে গিয়ে আগুনকে হুতভুক বলার কোন কারন নাই ।

আমি একটা প্রশ্নের উত্তর এখনো খুজে পাই না , আসলে সাহিত্য মানে কি ? এর মানে কি কিছু উচুশ্রেনীর মানুষের আড্ডার বস্তু ? তাহলে উচু শ্রেনীর মানুষগুলো আমাদের গ্রাম বাংলার মৈমনসিংহ গিতিকা পড়ে কেন ? যদি সাহিত্য সর্বশ্রেনীর মানুষ দের জন্য হয় তাহলে সেটা সব মানুষের কথা মাথায় রেখেই লেখা উচিত । চেয়ার এর খাটি বাংলা শব্দ হচ্ছে কেদারা । আমি জানি মানুষ কেদারা না বলে চেয়ার বললেই তারাতারি বুঝবে । তাহলে কেন আমি কেদারা লিখবো । হুমায়ুন আহমেদ স্যার সম্ভবত সেই কাজ টাই করেছেন । সরাসরি সহজ ভাষায় নিজের মনের কথাগুলো , মানুষের কথাগুলো মানুষের কাছে সহজ ভাষায় লিখে গেছেন । এটাই সম্ভবত উনার প্রধান দোষ ।

উনার কিছু সহজ ভাষার কঠিন উক্তিঃ
কল্পনা শক্তি আছে বলেই
সে মিথ্যা বলতে পারে ।
যে মানুষ মিথ্যা বলতে পারে না,
সে সৃষ্টিশীল মানুষ না, রোবট টাইপ মানুষ ।

মানব জাতির স্বভাব হচ্ছে
সে সত্যের চেয়ে মিথ্যার
আশ্রয় নিরাপদ মনে করা..
যে নারীকে ঘুমন্ত অবস্থায় সুন্দর দেখায় সেই প্রকৃত রূপবতী।
মানব জীবন হলো অপেক্ষার জীবন… !

মধ্যবিত্য পরিবারের মানুষগুলোই পৃথিবীর আসল রূপ
দেখতে পায়।

যুদ্ধ এবং প্রেমে কোনো কিছু পরিকল্পনা মতো হয় না।
বাজারি শব্দ টার অর্থ কি ?

যে জিনিস টা সর্বস্তরের মানুষের পছন্দ । এই বাজারি লেখক কথাটা এখন অনেকে বাজারি মেয়ে কথাটার মতই ব্যাবহার করে থাকে । সব জিনিস এক রকম না । সব কথার অর্থ এক রকম হয় না হতে পারেও না । হুমায়ুন আহমেদ বাজারি লেখক কারন উনার লেখা বাজারে ভালো বিক্রি হয় । এই হিসেবে আমি বলতে পারি পাওলো কোহেলহো ও বাজারি লেখক কারন উনার আলকেমিস্ট বই বিশ্ববাজারে এখনো বেস্ট সেলারের তালিকায় তিন নম্বরে আছে । আর হ্যা এরা সবাই যদি বাজারি লেখক হয় তাহলে আপনিও বাজারি পাঠক , কারন বইটা আপনি বাজার থেকেই কিনেন । আর বাজারে যে বইটার নামডাক আছে সেটাই আগে কিনতে দৌড় দেন ।
এত কিছু লেখার মানে কি ?

হুমায়ুন আহমেদ এমন একজন লেখক যিনি একটা পাঠক সমাজ তৈরী করে গেছেন । অধিকাংশ বইপোকার বইপড়ার সুচনা হয় তিন গোয়েন্দা,হুমায়ুন আহমেদ,অথবা মাসুদ রানা দিয়ে । অথচ কোন এক সময় দেখা যায় আমরা এই তিন ধরনের লেখাকেই কম দামি সাহিত্য বলে বেড়াই । হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বইগুলি হয়তো উচু মানের ভাবগম্ভীর টাইপ কথাবার্তায় ভর্তি নয় , কিন্তু সহজ কথার গভীর ভাবের এক বিশাল ভান্ডার হচ্ছে এই এই বাজারি লেখকের বইগুলি ।
কারা হুমায়ুন আহমেদ কে বাজারি লেখক বলে থাকেন ?

দুই শ্রেনির লোকঃ

এক দল যারা হুমায়ুন সমসাময়িক , যারা হুমায়ুন এর সাফল্যের কারনে চাপা পরে গেছেন তারা । তারা বলে বেড়াবে এটা স্বাভাবিক কারন হুমায়ুন আহমেদের কারনে তারা নিজেদের সেরা লেখক হিসেবে আত্ত্বপ্রকাশ করতে পারেন নাই । কারন এর মধ্যেই সেরাদের সেরা একজন তাদের থেকে কয়েক স্তর উচুতে বসে আছে ।

আরেকদল হচ্ছে ইচড়ে পাকা , আমার ভাষায় বালপাকনা । এরা হয়তো কিছুদিন হয় বই পড়া শুরু করেছে । হুমায়ুন আহমেদ , মাসুদ রানা শেষ করে সদ্য একটু বঙ্কিম টাইপ লেখা পড়া শুরু করেছে । এদের ধারনা আমি যদি হুমায়ুন স্যারের নাম বলি তাহলে সবাই ভাববে আমি ভালো মানের সাহিত্য পাঠক না । তাই নিজেকে ভালো মানের একজন সাহিত্য পাঠক , সাহিত্য বোদ্ধা প্রমান করার জন্য বলে থাকে হুমায়ুন আহমেদ একজন বাজারি লেখক ।

শেষ কথাঃ আঙ্গুর ফল টক তখনই হয় যখন সেটা আমাদের নাগালের বাইরে থাকে

বইহাট ব্লগের সৌজন্যে
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ রাত ১২:১২
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×