রাজন সজিব পাশাপাশি বসে আছে ,
দুজনের হাতেই জ্বলন্ত সিগারেট । আকাশে তখন হালকা মেঘ আর পুর্ণ শশী । মাঝে মেঘ খন্ড এসে ঢেকে দিচ্ছে চাঁদ কে । দুজনে সিগারেটে টান দেওয়া ভুলে গিয়ে সেদিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । তাদের সৎবিত ফিরলো সিগারেটের জ্বলন্ত ছাই যখন গায়ে পড়লো । কিছুক্ষন থাকার পর সজিব চলে গেলো , রাজন ও বাসার পথে হাটা শুরু করলো এখন ৮ টা বাজে আর এক ঘন্টা পর সুইসাইড নোট লেখা লাগবে ।
রাস্তায় হাটছে সে , হঠাৎ খেয়াল করলো একটা কালো কুকুর তার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে ।
স্ট্রিট ল্যাম্পের আলোয় চোখ দুটো ছল ছল করছে । কিছুক্ষন সেদিকে তাকিয়ে আবার হাটা শুরু করলো । আজ কেন জানি সবকিছু ভালো লাগতেছে । এই কুকুর টা , ড্রেনের পচা গন্ধ টা , স্ট্রিট ল্যাম্প পোস্ট টাতে লেগে থাকা সর্দিও চাদের আলোয় অন্যরকম লাগছে । রাজন বাসার দিকে আগাচ্ছে , হাটতে হাটতে পাশের বাসার কিছু কথোপোকথন কানে পড়লো । কথপোকথন টা হচ্ছিল হয়তো কোন এক স্বামী স্ত্রীর মাঝে।
স্ত্রী তার স্বামী কে বলছে - তুমি এত রাত পর্যন্ত বাইরে কি করো ?
- অফিসের কাজে ব্যাস্ত ছিলাম
- অফিসের কাজ না ছাই দেখ হয়তো কোন এক নস্ট পাড়ায় গিয়ে ছিলে
- কি যা তা বলছো ?
- নয়তো কি সেদিন দেখলাম পাশের বাসার রুমি ভাবীর দিকে কি রকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলা ।
ইতিমধ্যে রাজন তাদের শব্দসীমার বাইরে চলে এসেছে যদিও কথাগুলোর শোনার খুব ইচ্ছা করতেছিল ।
রাজন বাসায় পৌছে আগে খাইতে বসলো , শেষ খাওয়া ।
ভাতের সাথে শিং মাছের ঝোল । বাস্তবিক ভাবেই শেষ খাবার টা সুন্দর হয় । রাজনের ইচ্ছা করছিলো জিশু খ্রিষ্ট এর মত লাস্ট সাপার করতে । জিশু খ্রিষ্ট তার কয়েক জন প্রিয় সাথিদের সাথে নিয়ে করেছিলেন । রাজনের ও ইচ্ছা করতেছে তার প্রিয় বন্ধুদের সাথে নিয়ে লাস্ট ডিনার টা করতে । ইচ্ছাটা চাপা দিয়ে খেয়ে দেয়ে উঠে পড়লো ,
রুমে গিয়ে দেখে নয়টা প্রায় বেজে গেছে । অ্যাশ ট্রে , একটা সিগারেট , কলম আর প্যাড নিয়ে সে পড়ার টেবিলে বসে পড়লো , সুইসাইড নোট লিখতে ,
হে পৃথিবী বাসী ,
তোমাদের কাছে আমার অনেক কিছুই চাওয়ার ছিলো , কিন্তু তোমরা সেটা দেওয়া তো দূরে থাক বুঝেও উঠতে পারো নি আমি কি চেয়েছি । তোমরা কেবল আমার বাহির টাই দেখেছো ভেতর টা কখনো দেখো নি । তাই তোমাদের কাছ থেকে আজ বিদায় নিচ্ছি ।
রিনা ,
তুমি মেয়েটা আসলে অনেক ভালো কিন্তু আমার যোগ্য না । তোমার মধ্যে অদ্ভুত উচ্চাকাংখা রয়েছে । আমার সাথে প্রেম হওয়ার পরেও তুমি আরো বেটার কাউকে খুজতেছিলা । তো বলাই যায় আমার সাথে প্রেম নয় বিজনেস ডিল করতেছিলা । সুতরাং তোমাকে একটি যঘন্য নরকীট ব্যাতীত কিছুই বলবো না । তুমি হয়তো ভাবছো তুমি সুখি হতে পারবা তাহলে তুমি ভুল ভাবছ । আমি নিশ্চিত বর্তমান যার সাথে আছো তার চেয়ে বেটার কাউকে পেলে অবশ্যই তাকে ছেড়ে দিবা । একদিন দেখবা সবাই তোমাকে ছেড়ে যাবে । যাইহোক তুমি ভালো থাকো আর এভাবেই তোমার উচ্চাকাংখা বাড়িয়ে যাও ।
শাম্মি ,
তোমাকে আমি অনেক দিয়েছি , আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু মানতাম না । এই না মানার কারনেই হয়তো আজ এতো কিছু । যাই হোক পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও ।
আব্বু আম্মু ,
তোমরা আসলে খুব ভালো মানুষ । আমার দেখা সেরা দুইটি মানুষ । কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি খুব ভালো বাবা মা তোমরা নও । কখনই বুঝতে চাও নি ছেলের কি দরকার ।
আজকে তোমাদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম । আমাকে ক্ষমা করে দিও কারন তোমাদেওর জন্য কিছু করে যেতে পারলাম্ না ।
বন্ধুরা ,
তোদের কাছ থেকে ক্ষমা চাইতেও পারবো না । কিন্তু মরে গেলে ওপাড়ে বসে বসে সবচেয়ে মিস করবো তোদের । আচ্ছা বলতো ওপাড়েও কি সিগারেট পাওয়া যাবে । শুনেছি আত্তারা নাকি পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় । আমার আত্ত্বাও কি পৃথিবী ঘুরে বেড়াবে ?
তাহলে মনে সারাক্ষন তোদের সাথে থাকবো । এক সাথে যখন সিগারেট খাবি তখন আমাকে ভাগ দিস । আমি তোদের সবার ডান পাশের ফাকা জায়গাটাতে দ্বাড়িয়ে থাকবো সিগারেট ভাগ টুকু সেখানেই ফেলে দিস । আড্ডা দেওয়ার সময় মাঝে মাঝে হলেও আমাকে মনে রাখিস ।
পৃথিবীবাসী বিদায় আবার ।
নোটঃ আমার মৃত্যুর জন্য আমার আশেপাশের প্রকৃতি । তো কাউকিএ যদি শাস্তি দেওয়া লাগে তাহলে প্রকৃতিকে দিন । প্রকৃতিকে শাস্তি দেওয়া যায় না কারন প্রকৃতি ইশ্বরের অংশ ।
বিদায় ।