
শুধু প্রমোশন, বদলী, দুর্নীতির সুযোগের জন্য মাদারচোদ পুলিশের কর্মকর্তারা অধিনস্ত পুলিশ বাহিনী দিয়ে কি করায় তার একটি নমুনা।
বিএনপি নেত্রী ডলির ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে ডিবি পুলিশ।বিএনপি নেত্রী রেহানা ইয়াসমিন ডলির ওপর মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে।ডলিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় গ্রেফতার করার পর ডিবি হেফাজতে থাকার সময় মেহেদী হাসান নামের এক পুরুষ পুলিশ সদস্য, শাহিনা নামের এক মহিলা পুলিশ সদস্য এবং অন্য আর একজন তাদের উধ্বর্তন কর্মকর্তার নির্দেশে তার শরীরের কাপড় খুলে উলঙ্গ করে।শাহিনা তখন তার গায়ের কাপড় ধরে টানাটানি করে।ডলি পানি চাইলে মেহেদী হাসান তাকে প্রস্রাব দিতে বলে। সে সময় ৪-৫ পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে তাকে পেটাতে থাকে। তিনি মাটিতে পড়ে গেলে শাহিনা তার এক হাতের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে দাঁড়ায় এবং তার মুখমণ্ডলে বুট দিয়ে লাথি মারতে থাকে। ডলিকে যখন পেটানো হচ্ছিল, তখন বার বার তাকে বোমা বিস্ফোরণের কথা আদালতে গিয়ে স্বীকার করতে বলা হয়। ডলি নির্যাতনের কারণে একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
ডলি জানান, গত ২৯ এপ্রিল রাত আনুমানিক ৯.৩০টায় তিনি তার শোয়ার ঘরে এশার নামাজ পড়ছিলেন। তখন ঘরের বাইরে তার মায়ের সঙ্গে অপরিচিত ব্যক্তিদের কথা বলতে শোনেন। হঠাৎ ঘরের মধ্যে ৮-১০ জন প্রবেশ করে তাদের ঘর তল্লাশি করতে থাকে। তিনি জানতে চান তারা কারা, কেন ঘর তল্লাশি করছে? তাদের একজন নিজেদের ওয়ারী থানার পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দেয় এবং ডলিকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। ডলি একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ওয়ারী থানায় যান। তাকে থানায় নিয়ে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন জানিয়ে বসিয়ে রাখা হয়।
এ সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম তাকে মোবাইল ফোনসেটে ৩টি নম্বর দেখিয়ে সে নম্বরগুলো চেনেন কিনা জানতে চান। তিনি ডলির কাছে আরও জানতে চান যে, তিনি ঢাকা মহানগরীর ৭০, ৭৪ এবং ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য নমিনেশন পেয়েছেন কিনা। কিছুক্ষণ পর মহানগর গোয়েন্দা শাখা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) হায়াতুল ইসলাম ওয়ারী থানায় আসেন এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।এসি হায়াতুল তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তার কাছে যে প্যাকেটগুলো আছে, তিনি সেগুলো কোথায় রেখেছেন? কিসের প্যাকেটের কথা জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে—ডলি তা জানতে চাইলে এসি হায়াতুল ইসলাম তাকে বলেন, ‘তোমাকে পেটানো শুরু করলেই সব বুঝতে পারবে।’ এরপর তাকে ওয়ারী থানা থেকে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কার্যালয়ে নেয়া হয়। রাত ১১টায় তাকে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সহকারী কমিশনার মহিউদ্দিনের কক্ষে নেয়া হয়।
এ সময় এসি মহিউদ্দিন তার মোবাইল ফোনের কললিস্ট দেখে প্রত্যেকটি নম্বরের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেন। ৩০ এপ্রিল রাতে ৭-৮ মহিলা ও পুরুষ পুলিশ সদস্য এসে তাকে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে কক্ষটি তালাবদ্ধ করে রাখে। ৩০ এপ্রিল পুলিশ সদস্য মেহেদী হাসানসহ আরেকজন এসে তাকে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তার নাম ও পূর্ণ পরিচয় একটি কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ করা হয়। এ সময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় এবং আদালতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বলতে বলা হয় যে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশেই তিনি ২৯ এপ্রিল সচিবালয় গেটে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান।
ডলির ছেলে আরিফুল ইসলাম সৌরভ (১৯) জানায়, ৩০ এপ্রিল বিকালে হারুন-অর-রশিদ নামে তার এক মামা মোবাইল ফোনে জানান তার মাকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (সিএমএম কোর্ট) একটি পুলিশ ভ্যানে করে আনা হয়েছে। এ খবর পেয়ে সৌরভ বিকালে আদালত প্রাঙ্গণে যায় এবং তার মাকে এজলাসের বেঞ্চে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় শোয়ানো দেখতে পায়। এ সময় সৌরভ তার মায়ের দু’হাত, মুখমণ্ডল এবং কোমরে জখমের কালো চিহ্ন দেখতে পায়।
ডলির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ৩০ এপ্রিল তিনি অ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেনের মাধ্যমে জানতে পারেন ডলিকে একটি পুলিশ ভ্যানে করে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে আনা হয়েছে। সে সময় তিনি দ্রুত পুলিশ ভ্যানের কাছে গিয়ে ডলিকে মুমূর্ষু অবস্থায় ভ্যান থেকে নামাতে দেখেন। ডলি এ সময় হাঁটতে পারছিলেন না। দুজন পুলিশ সদস্য ডলিকে ধরে ছিল।
পরে ডলিকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনানের আদালত নম্বর ৩২-এর এজলাসের বেঞ্চে নিয়ে শুইয়ে রাখা হয়। তখন ডলির মুখমণ্ডল, দু’হাতসহ কোমরের পেছনের অংশে রক্ত জমাট বাঁধা কালো চিহ্ন দেখতে পান। শুনানি চলাকালীন পুলিশ সদস্যরা ক’বার ডলিকে কাঠগড়ায় উঠানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ডলি ভীষণ অসুস্থ থাকায় তা করা সম্ভব হয়নি। ডলিকে এজলাসের বেঞ্চে শোয়ানো অবস্থায় শুনানি শুরু হলে শাহবাগ থানার পুলিশ সদস্যরা ডলিকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করে।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৬