somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাওয়া হাওয়া ....

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'Gone With the Wind' ম্যুভিটা দেখেছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে। উনিশ শতকের মার্কিন গ্বহযুদ্ধের পটভুমিতে লেখিকা মার্গারেট মিশেল-এর এই শিরোনামের বইটা যে সিনেমা বানিয়ে ছাড়লে পাঠকেরাই দর্শক হয়ে বক্স অফিস মাত করবে সেটা বুঝতে হলিউডের প্রযোজকদের দেরী হয় নি। চুটিয়ে ব্যবসা করার পর এখন ক্লার্ক গ্যাবল আর ভিভিয়ান লি অভিনীত এই ম্যুভিটি হয়ে গ্যাছে একটা সময়ের আয়না। বিনোদনের লেবেল ছাড়িয়ে এটা হয়ে উঠেছে একাডেমিক আলোচনার উপলক্ষ্য।

আমেরিকার গ্ হযুদ্ধের সময় টা বুঝতে, বিশেষ ক'রে দেশটির ক্বষিপ্রধান দক্ষিনের আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্ক্বতিক জীবনের উপরে এই যুদ্ধের প্রভাব বুঝতে চান? হাওয়ায়.. দেখুন। আমেরিকার দক্ষিনের রাজ্যগুলোতে একদা উণ্ণয়নশীল দেশগুলোর মতোই ঘরকন্না করা গৃ হিনীর সংখাধিক্য ছিলো। তারা সব কখন, কি ভাবে, জীবনের কোন টানে ঘরে-বাইরে সবখানেই কাজ করতে আরম্ভ করলো জানতে চান? হাওয়ায়..দেখুন । আমেরিকার দাস প্রথা কিভাবে দক্ষিনের রাজ্যগুলোর (confederate states) ক্বষিখাতের জন্য সস্তা শ্রম যুগিয়ে যেতো জানতে চান? গন উইথ..দেখুন। কিছুই 'ঝানতে' চান না, স্রেফ বিনোদন খুঁজছেন? নো প্রবলেম, এই ম্যুভিতে সেই মশলারও অভাব নেই খুব একটা।

উত্তরের শিল্পোন্নত রাজ্যগুলোর জন্য চাই অনেক শ্রমিক, কিন্তু শ্রমিকেরা সব দক্ষিনের ক্বষি জমিতে বাঁধা। উত্তুরে রাজ্যগুলো (union states) চাইলো শ্রমিকের চলাচলের স্বাধীনতা-যার যেখানে ভালো লাগবে সেখানে নিজ শ্রম বিক্রি করতে পারবে। দক্ষিন তাতে রাজি না। জমিতে বিনা পয়সায় (শুধু থাকা খাওয়ার বিনিময়ে) লাংগল চালাবে কে? এনিয়েই গ্বহযুদ্ধ।

আমি রাত জেগে দেখি। ইতিহাসের পটভূমিতে বিশাল কাহিনি (প্রায় চার ঘন্টা) । জর্জিয়ার টারা ( Tara) নামের সেই ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা গ্রামে গল্পের শুরু। সম্পন্ন সামন্ত মার্কা গেরস্ত ঘরে বেড়ে ওঠা মেয়ে স্কারলেট ও' হারা। প্রেমিক ছেলেটা গ্ হযুদ্ধে চলে গেলে মেয়েটা খুব কস্ট নিয়ে অপেক্ষা করে 'সব কিছু' ঠিক হয়ে যাবার। কিছুই ঠিক হয়না। এই যুদ্ধ বরং আমেরিকার দক্ষিনের শতাব্দী প্রাচীন ভিত্তিকেই চিরতরে নাড়িয়ে দ্যায়। ঘরের মেয়েরা জীবনের টানে জীবিকা খুঁজতে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। স্রেফ জীবন বাঁচাতে অনেক মেয়ে বিয়ে করে। অনেকে নাম লেখায় অন্যান্য ব্যবসায়।

দেখি আব্রাহাম লিংকন নির্বাচনে জয়লাভ। দাস প্রথা উচ্ছেদ তথা শ্রমের অবাধ চলাচলের অধিকারের পক্ষে তার অবস্থান। দক্ষিনের জেনারেল লী হারলো গ্যাটিসবার্গের যুদ্ধে। অশ্রুসিক্ত চোখে স্কারলেট ও' হারা যুদ্ধের নিহতদের তালিকা থেকে খুঁজে ফিরছে প্রেমিকের নাম। উত্তরের বাহিনি ঘিরে ফেলেছে আটলান্টা- দক্ষিনীরা পিছু হটার আগে জ্বালিয়ে দিয়ে যায় গোটা শহর-পোড়া মাটি নীতির ফর্মুলায়। আমি ঘটনার সাথে একাত্ন হয়ে যাই। কাল আমি দক্ষিনের একটা ইউনিতে যাবো একটা কনফারেন্সে। টারা গ্রামটা একবার না হয় দেখেই আসবো।

দেখি স্কারলেট (ভিভিয়ান) আর রেট বাটলারের (ক্লার্ক গ্যাবল) এর ভালোবাসা। ওদের ফুটফুটে মেয়েটা ঘোড়ায় চড়া শিখতে গিয়ে বাড়ির আংগিনাতেই মারা যায়। লিংকন মারা যান আততায়ীর হাতে। সেই কস্ট আমাকেও ছুঁয়ে যায়। আমি উত্তেজনায় অধীর হয়ে আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করি। কাল আমি জর্জিয়া যাবো।

আটলান্টা এয়ার পোর্টে নেমে ক্যাবচালককে জিগ্যেস করি টারা যাবার উপায়। আমাকে হতাশ করে দিয়ে সে বলে টারা একটা কাল্পনিক জায়গা। তবে বইটির লেখিকা মার্গারেট মিশেলের বাসা, যেটা কিনা এখন যাদুঘর, সেটা এই শহরেই অল্প কিছুটা পথ।

আমি ভেবে পাই না, যে কাহিনীর অনেকগুলো চরিত্র জীবন থেকে নেয়া-(যেমন লিংকন, জেনারেল গ্রান্ট, লী, শেরম্যান), সেখানে একটা গ্রামের নাম জীবন থ্বেকে নিলে কি এমন ক্ষতি হতো? আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমি যে নিজের অজান্তেই সত্যি টারা নামের একটি গ্রামের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেছিলাম!

পুনশ্চ:
১. শুনেছি জর্জিয়ার পর্যটন দপ্তর সম্প্রতি এদের একটা গ্রামের নাম দিয়েছে টারা।

২. শুনেছি লেখিকা মার্গারেট মিশেলের বাড়িটা , যেটা এখন যাদুঘর, তিন তিনবার রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে পুড়ে যায় এবং পুনর্নির্মিত হয়।



সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১১:২৬
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নামাজের দায়ভার!

লিখেছেন জাদিদ, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:০১

'নামাজ' - শব্দটা আমার মত বেশ কিছু মানুষের জন্য বেশ বিব্রতকর। কারন একজন মুসলিম হিসাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা অনেক সময় আমরা পালন করতে পারি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে "রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ": পুনর্বাসন নাকি নতুন ষড়যন্ত্র?

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৫৬


বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে এক অনিশ্চিত ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ গত ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারিয়েছে, এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার একটা ব্যক্তিগত সমুদ্র থাকলে ভালো হতো

লিখেছেন সামিয়া, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৭


আমি এসে বসছি
নরম বালুর উপর,
সামনে বিশাল সমুদ্র,
ঢেউগুলা আমারে কিছু একটা বলতে চাইতেছে,
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।

আমার মাথার উপর বিশাল আকাশ,
আকাশের নিচে শুধু পানি আর পানি,
আমি একলা,
আমার সামনে সমুদ্রের একলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে... সাজাই এ ঘর ফুলে ফুলে ...

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল দ্বার খোল, দ্বার খোল....
বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে লাগে দোল। সাথে সাথে দোলা লাগে বুঝি আমাদের অন্তরেও। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজড ! নতুন করে ওপেন করার সুযোগ নেই......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৪৫


..বলে মনে করেন জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান। বাংলাদেশের রাজনীতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্বনামধন্য থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রধানের সাথে বৈঠকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×