আমেরিকার গ্ হযুদ্ধের সময় টা বুঝতে, বিশেষ ক'রে দেশটির ক্বষিপ্রধান দক্ষিনের আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্ক্বতিক জীবনের উপরে এই যুদ্ধের প্রভাব বুঝতে চান? হাওয়ায়.. দেখুন। আমেরিকার দক্ষিনের রাজ্যগুলোতে একদা উণ্ণয়নশীল দেশগুলোর মতোই ঘরকন্না করা গৃ হিনীর সংখাধিক্য ছিলো। তারা সব কখন, কি ভাবে, জীবনের কোন টানে ঘরে-বাইরে সবখানেই কাজ করতে আরম্ভ করলো জানতে চান? হাওয়ায়..দেখুন । আমেরিকার দাস প্রথা কিভাবে দক্ষিনের রাজ্যগুলোর (confederate states) ক্বষিখাতের জন্য সস্তা শ্রম যুগিয়ে যেতো জানতে চান? গন উইথ..দেখুন। কিছুই 'ঝানতে' চান না, স্রেফ বিনোদন খুঁজছেন? নো প্রবলেম, এই ম্যুভিতে সেই মশলারও অভাব নেই খুব একটা।
উত্তরের শিল্পোন্নত রাজ্যগুলোর জন্য চাই অনেক শ্রমিক, কিন্তু শ্রমিকেরা সব দক্ষিনের ক্বষি জমিতে বাঁধা। উত্তুরে রাজ্যগুলো (union states) চাইলো শ্রমিকের চলাচলের স্বাধীনতা-যার যেখানে ভালো লাগবে সেখানে নিজ শ্রম বিক্রি করতে পারবে। দক্ষিন তাতে রাজি না। জমিতে বিনা পয়সায় (শুধু থাকা খাওয়ার বিনিময়ে) লাংগল চালাবে কে? এনিয়েই গ্বহযুদ্ধ।
আমি রাত জেগে দেখি। ইতিহাসের পটভূমিতে বিশাল কাহিনি (প্রায় চার ঘন্টা) । জর্জিয়ার টারা ( Tara) নামের সেই ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা গ্রামে গল্পের শুরু। সম্পন্ন সামন্ত মার্কা গেরস্ত ঘরে বেড়ে ওঠা মেয়ে স্কারলেট ও' হারা। প্রেমিক ছেলেটা গ্ হযুদ্ধে চলে গেলে মেয়েটা খুব কস্ট নিয়ে অপেক্ষা করে 'সব কিছু' ঠিক হয়ে যাবার। কিছুই ঠিক হয়না। এই যুদ্ধ বরং আমেরিকার দক্ষিনের শতাব্দী প্রাচীন ভিত্তিকেই চিরতরে নাড়িয়ে দ্যায়। ঘরের মেয়েরা জীবনের টানে জীবিকা খুঁজতে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। স্রেফ জীবন বাঁচাতে অনেক মেয়ে বিয়ে করে। অনেকে নাম লেখায় অন্যান্য ব্যবসায়।
দেখি আব্রাহাম লিংকন নির্বাচনে জয়লাভ। দাস প্রথা উচ্ছেদ তথা শ্রমের অবাধ চলাচলের অধিকারের পক্ষে তার অবস্থান। দক্ষিনের জেনারেল লী হারলো গ্যাটিসবার্গের যুদ্ধে। অশ্রুসিক্ত চোখে স্কারলেট ও' হারা যুদ্ধের নিহতদের তালিকা থেকে খুঁজে ফিরছে প্রেমিকের নাম। উত্তরের বাহিনি ঘিরে ফেলেছে আটলান্টা- দক্ষিনীরা পিছু হটার আগে জ্বালিয়ে দিয়ে যায় গোটা শহর-পোড়া মাটি নীতির ফর্মুলায়। আমি ঘটনার সাথে একাত্ন হয়ে যাই। কাল আমি দক্ষিনের একটা ইউনিতে যাবো একটা কনফারেন্সে। টারা গ্রামটা একবার না হয় দেখেই আসবো।
দেখি স্কারলেট (ভিভিয়ান) আর রেট বাটলারের (ক্লার্ক গ্যাবল) এর ভালোবাসা। ওদের ফুটফুটে মেয়েটা ঘোড়ায় চড়া শিখতে গিয়ে বাড়ির আংগিনাতেই মারা যায়। লিংকন মারা যান আততায়ীর হাতে। সেই কস্ট আমাকেও ছুঁয়ে যায়। আমি উত্তেজনায় অধীর হয়ে আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করি। কাল আমি জর্জিয়া যাবো।
আটলান্টা এয়ার পোর্টে নেমে ক্যাবচালককে জিগ্যেস করি টারা যাবার উপায়। আমাকে হতাশ করে দিয়ে সে বলে টারা একটা কাল্পনিক জায়গা। তবে বইটির লেখিকা মার্গারেট মিশেলের বাসা, যেটা কিনা এখন যাদুঘর, সেটা এই শহরেই অল্প কিছুটা পথ।
আমি ভেবে পাই না, যে কাহিনীর অনেকগুলো চরিত্র জীবন থেকে নেয়া-(যেমন লিংকন, জেনারেল গ্রান্ট, লী, শেরম্যান), সেখানে একটা গ্রামের নাম জীবন থ্বেকে নিলে কি এমন ক্ষতি হতো? আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমি যে নিজের অজান্তেই সত্যি টারা নামের একটি গ্রামের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেছিলাম!
পুনশ্চ:
১. শুনেছি জর্জিয়ার পর্যটন দপ্তর সম্প্রতি এদের একটা গ্রামের নাম দিয়েছে টারা।
২. শুনেছি লেখিকা মার্গারেট মিশেলের বাড়িটা , যেটা এখন যাদুঘর, তিন তিনবার রহস্যজনক অগ্নিকান্ডে পুড়ে যায় এবং পুনর্নির্মিত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ১১:২৬