হ্যারিসন ফোর্ড অভিনীত 'witness' নামের এক টান টান থ্রিলারে প্রথম দেখি এই ব্যতিক্রমী জনগোষ্টির জীবন যাপন প্রনালী। আমেরিকা এবং কানাডার কয়েকটি রাজ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে র'য়েছে এঁদের পল্লী। শুধু নিরাড়ম্বর বললে কম বলা হয় এঁদেরকে। প্রযুক্তি , প্রাচুর্য এবং ভোগবাদী দর্শনের এই কেন্দ্রে বসবাস ক'রেও কোন আত্নশক্তির জোরে এঁরা শত শত বছর ধরে এমন সাদা মাটা মাটির মানুষের জীবন-সংস্কৃতি বাঁচিয়ে চলেছে ভেবে অবাক হ'তে হয়। মুভিটি দেখে আমার প্রথমে মনে হয়েছিলো, এটা একটা হলিউডি চাপাবাজি, একবিংশ শতকে এরকমও কি হওয়া সম্ভব?! তো গেলাম একদিন পেনসিলভেনিয়ার এক আমিশ পল্লীতে। না, হলিউড চাপা মারলেও, এই মুভিতে মারেনি। সত্যি, কোন যাদু মন্ত্রবলে যেনো সময় থেমে রয়েছে এখানে। সেই ঘোড়ায় টানা গাড়ি। বিদ্যুত নেই টেলিফোন, নেই টিভি, নেই কম্পিউটার। নেই পাইপবাহিত পানি , কুয়া থেকে পানি তোলা হয়, সেই আদি এবং অক্বত্রিম কপিকল , রশি আর বাইসেপ-ট্রাইসেপের সমন্বয়ে। বাজারে গেলাম, যা কিছুই কিনুন, এক ডজন ডিম থেকে একটি ঘোড়াগাড়ি- উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে কিনতে হবে। ছবি তুলতে চাইলাম, একজন শান্ত অথচ প্রবলভাবে বাধা দিলো। 'সভ্য(!)' জগতের ছোঁয়াচ বাচিয়ে এভাবেই এঁরা শতাব্দির পর শতাব্দি নিজেদের জগতে রয়েছে। শিশুরা যায় নিজেদের স্কুলে। যুদ্ধে বিশ্বাস করেনা, তাই কোন মার্কিন সরকারই এঁদেরকে সেনাবাহিনীতে যোগদানে বাধ্য করেনা । অপরাধ নেই, তাই যান না এঁরা প্রচলিত আইন-আদালতেও। কখনো সখনো কোন কৃষি বা কুটির শিল্পজাত দ্রব্য কেনা কাটার জন্য নিকটস্থ 'সভ্য' বাজারে গেলে 'সভ্য' সমাজের লোকজন অনেকে যেভাবে টিটকারি মারেন এঁদেরকে-তাতে আসলে সভ্য কারা-সে নিয়েই ধন্দে পড়তে হয়। ছেলে-মেয়ে সবারই সৌম্যকান্তি, কালো পোশাকে তা যেন আরো সমীহ জাগায়। দাঁড়িঅলা ছেলেগুলো আর মাথায় কাপড় দেয়া মেয়েদের সপ্রতিভ অথচ প্রশান্ত চাউনি দেখে মনে হলো ছেলে বেলায় পড়া শকুন্তলার তপোবনের পশ্চিমা সংস্করনে এসে পড়েছি।
দিনের শেযে 'সভ্যতার' দিকে ফিরে যেতে যেতে মনে হচ্ছিলো মুভিটির একটা দৃশ্যের কথা: যেখানে প্রাণ বাঁচাতে আমিশপল্লীতে আত্নগোপনকারী সভ্যজগতের হ্যারিসন ফোর্ড আর দশজন আমিশের সাথে একই রকম পোশাক পরে এক সভ্য বাজারের উপর দিয়ে যাবার সময় নিরীহ, শান্তিকামী আমিশদেরকে উপর 'সভ্য সমাজের মানুষদের' খামোখা হেনস্থা করার দৃশ্য দেখে মুহুর্তের জন্য নিজের ছদ্মবেশের কথা ভুলে প্রতিবাদ করেছিলো -উল্টা মার দিতে শুরু করেছিলো-যেটা দেখে উত্যক্তকারীদের চোখ কপালে উঠেছিলো (এ আবার কেমন আমিশ যে কিনা পাল্টা মারে!)।
আমি মাত্র কয়েক ঘন্টা এঁদের সাথে কাটিয়েই তেমন উত্যক্তকারীদের দ্যাখা পেলে ফোর্ডগিরি শুরু করতে অরাজি হবো না। নিরামিষাশী তো নই!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৯:২০