সেই যে প্যারিসে গিয়ে একবার আইফল টাওয়ারে এলিভেটরে উঠে সিঁড়ি দিয়ে নেমেছিলাম! আশে পাশে একটু সময় নিয়ে ঘোরাঘুরি করেছিলাম। মনে আশা, যদি বাধে..যদি লাইগ্যা যায়...। সেবারে কিছুই হয় নাই। আমি মুখিয়ে ছিলাম, কিন্তু এক হাতে তো তালি বাজে না! সুযোগ এসেছিলো পরের বছরেই। এক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এ্যাপার্টমেন্ট-টায় উপর-নিচে মিলিয়ে মোট চার কামরা। দুতলা মিলে মোট দুটি বাথরুম। উপরে থাকে আমার মার্কিন আর রাশান রুমমেট। নিচে থাকি আমি আর আমার এক ফরাসি রুমমেট। ভালোই হলো, মনে মনে আশায় বুক বাঁধি। এই বার পুরা দুই সেমিস্টারের লীজ সই করা আছে, 'সময় অঢেল, বসুধা বিপুল'। সুযোগ আসবেই।
একদিন সত্যি সুযোগ এলো। আমার পাশের কামরার ফরাসি ছেলেটি বল্লো ওর বাবা-মা ভারতে বেড়াতে যাচ্ছে। কিছুদিন পরে একরাতে খাবার টেবিলে আমরা সব রুমমেট মিলে গল্প করছি। গল্পে গল্পে মধ্যরাত।
নাকউঁচু ফরাসী অবশেষে থলির বেড়াল বের করলো।
'বাংলাদেশ-টা এশিয়ার ঠিক কোথায়? ভারতের পাশেই? আমার আব্বু লিখেছে ভারত খুব গরীব দেশ। বাংলাদেশ কি সেরকমই, নাকি ভারতের থেকেও গরীব?'
আমি তো এই সুযোগটাই চাচ্ছিলাম। সত্যি কথাই বল্লাম:
'ভারত একটা ফেডারেল দেশ, ওদের কোন কোন রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের থেকে ভালো, কোন কোনটার অবস্থা আমাদের মতো কিম্বা তার থেকে খারাপ। কিন্তু তুমি কিছু মনে না করলে একটা কথা জানতে খুব ইচ্ছা করছে। আমার নেটিভ ভাষার এক প্রিয় লেখকের বই্য়ে (ছবির দেশে কবিতার দেশে) পড়েছি তোমাদের এলিসি প্রাসাদে শতাধিক বেডরুম থাকলেও গোছলখানা নাকি মাত্র দু'তিনটি? আরো পড়েছি, বেডরুম-বাথরুমের এই অসম অনুপাত নাকি সারা দেশেই? সে জন্যই নাকি ব্যাপক জাতীয় চাহিদা মেটাতে গিয়ে তোমাদের দেশের প্রসাধন এবং সুগন্ধী শিল্প এতো উন্নত হয়ে উঠেছে?'
সবাই চুপ। বলা বাহুল্য সে নিস্তব্ধতা খুব হিরন্ময় ছিলো না।
[স্বীকারোক্তি, বাছুরের প্রথম শিং উঠলে যেখানে সেখানে গুঁতিয়ে বেড়ায়। প্রথম প্রথম পশ্চিমে এসে আমারো অবস্থা হয়েছিলো তাই। আসলে কিন্তু অন্যকে ছোট করে কোন ব্যক্তি, দেশ, বা সভ্যতা কেউ বড় হতে পারে না। এটিকে নিছক একটি মজার ঘটনা হিসেবে পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো।]
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:১৮