যখন ক্লাশ নাইনে উঠি, তখন থেকে শুনে আসছি, মেট্রিক পরীক্ষায় যদি ভাল রেজাল্ট করা যায় তো লাইফে আর কোন চিন্তা থাকে না, জীবনটা অনেক সুন্দর হয়ে যায়, অনেক সহজ হয়ে যায়। শুধু মেট্রিক পরীক্ষার উপর পুরা লাইফ নির্ভর করে, এটা আমিও তখন মেনে নিলাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যে খুব ভাল করে এই পরীক্ষাটা দিয়ে লাইফটা সুন্দর, সহজ করে নিই। বলে রাখা ভাল যে, আমি কোন কালে ভাল বা পড়ুয়া ছাত্র ছিলাম না। পড়তে আমার কোন কালেই ভাল লাগত না। তো যাই হোক, ভাল করে মেট্রিক পরীক্ষা দেয়ার জন্য উঠেপরে লাগলাম, ভাল আমাকে করতেই হবে, এখন একটু কষ্ট করি, বাকি জীনটা তো আরামেই কাটাব, মনে মনে এই ভাবি আর রাত জেগে পড়াশুনা করি।
তো যথারীতি মেট্রিক পরীক্ষা দিলাম, পরীক্ষা দেয়ার পর আমাকে আর পায় কে, পুরা পাংখা হয়ে ঘুরাঘুড়ি শুড়ু করে দিলাম। আজকে এই আত্নীয়ের বাড়ি তো পড়শু ঐ আত্নীয়ের বাড়ি ঘুরে সময়টা ভালই কাটছিল। মনে মনে তখন ভাবতাম, আসলেই তো মেট্রিক পরীক্ষাই তো সব, পরীক্ষা শেষ, এখন আমি কত আরামে আছি, ঘুরছি, ফিরছি, হেব্বি মৌজেই ছিলাম। একে একে দিন চলে গিয়ে রেজাল্ট দেয়ার দিন আসল, মনে মনে একটু ভয় পাচ্ছিলাম, কি না কি হয়, আগে তো আর কোনদিন মেট্রিক পরীক্ষা দিই নাই।
যাই হোক, রেজাল্টের দিন স্কুলে গেলাম। স্কুলে দেয়ালে ৪:৩০ এর দিকে রেজাল্ট টানানো হল। সেই রকম ভিড় পোলাপাইনের, পারাপরি করে সামনে গেলাম। নিজের রোল নাম্বার মিলানোর চেষ্টা করে করে অবশেষে পাইলাম প্রথম বিভাগ প্রাপ্তদের তালিকায়, একটু অবাক হইলাম যে আমার রোল নাম্বারের পাশেই একটা তারকা চিন্হ দেয়া আর ব্রেকেটে সংক্ষিপ্ত আকারে কি কি জানি লিখা (পরে জানতে পারছিলাম ঐগুলো ছিল লেটার প্রাপ্ত বিষয় গুলোর লিষ্ট)। তারকা চিন্হ দেখে মনে মনে আন্দাজ করলাম যে আমি মনে হ্য় স্টার মার্ক পাইছি। মনে মনে আনন্দ অনুভব করলাম, আমি লাইফটা সুন্দর, সহজ করে ফেললাম, আমারে আর পায় কেডা।
ভিড় থেকে বের হতেই স্কুলের স্যারদের সাথে দেখা হইল, সবারই একই কথা, মেট্রিক ভাল ভাবে শেষ করলা, এইবার ভাল কলেজে ভর্তি হইতে হবে, ভার্সিটি অথবা বুয়েটে চান্স পাইতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার মাথায় তো আকাশ ভাইঙ্গা পড়ল, কয় কি, আরো পড়াশুনা করতে হবে। আমার লাইফ তো মেট্রিকের রেজাল্ট দিয়াই সুন্দর, সহজ হয়ে গেছে, আর পড়াশুনা করে কি হবে? কিন্তু না, তখন সবাই বলল যে ইন্টারটা ভাল করতে পারলেই কেল্লা ফতে, ভাল জায়গায় চান্স পাব, লাইফে আর কোন চিন্তা থাকবে না!
ঠিক আছে, সবার কথা শুনে মনকে বুঝাইলাম, মাত্রতো দুইটা বছর, দেখতে দেখতে চলে যাবে, করেই ফেলি আর একটু পড়াশুনা। যাই হোক, মনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ভর্তি হলাম ঢাকার নটর ডেম কলেজে। জীবনে প্রথম ঢাকা আসলাম কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে, পরীক্ষা দিলাম, কেমনে কেমনে জানি চান্সও পেয়ে গেলাম। শুরু হল ঢাকার জীবন, আর মনকে বুঝাইতে থাকলাম এই বলে যে, এই তো আর মাত্র ২৩ মাস, দেখতে দেখতে চলে যাবে।
চলবে........................
[ আমি খুব ভাল লেখক না, নিয়মিত লিখিও না, আমার লেখা পড়ে ভালো লা লাগলে আপনার সময় নষ্ট করার জন্য দু:খ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারব না। ]