প্রথম পোষ্টের লিংকঃ Click This Link
রাতে এখন তিনি শুয়ে শুয়ে ভাবেন, তবে কি নাবিলার মৃত্যু বৃথা যাবে? এত ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নিয়ে যার মৃত্যু হয়েছে তার অপরাধীদের কিছুই হবে না? তাহলে তো পিতা হিসেবে তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না কোনদিন। মেয়েকে বখাটে ছেলেদের কাছ থেকে রক্ষা করতে পারেন নি তিনি, এবার যদি তাদের শাস্তিরও ব্যবস্থা করতে না পারেন, তাহলে তিনি কেমন বাবা? তিনি অনেক কথাই ভাবলেন মনে মনে। তারপর একটা সিদ্ধান্ত নিলেন। ভাল হয়ে থাকার দিন শেষ! অনেক কাজ পড়ে আছে সামনে।
পরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলেন নতুন এক ওমর সাহেব। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দৃঢ় চোয়াল আর দু চোখে ধারাল দৃষ্টি বলে দিচ্ছে তিনি আর আগের মত নেই। ধীরে সুস্থে সকালের নাস্তা বানালেন তিনি। কাজের মহিলাকে ছুটি দিয়েছেন কিছুদিনের জন্য। এখন একাকী থাকতে চান কিছুদিন। নাস্তা শেষ করে বাসায় নাবিলার নিজের রুম বাদে অন্য তিনটা রুম আর স্পেস থেকে লুকানো কয়েকটা ছোট মাইক্রোফোন বের করলেন তিনি। নাবিলার কথা তার এতই ভাল লাগত যে তিনি তার অজান্তে ছোট মাইক্রোফোন বসিয়েছিলেন। কথা রেকর্ড করতেন দুইজনের। শুধু যখন দুইজনে কথা বলতেন তখন। মেয়ের প্রাইভেসির অমর্যাদা তিনি করেন নি। একাকী থাকার সময়, অফিসের কাজের ফাঁকে নিজেদের কথোপকথন শুনতেন কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে। এটা তার কাছে একটা নেশার মত ছিল।
এরপর ছবির এলবাম খুললেন তিনি সব কয়টা। প্রচুর ছবি তুলেছিলেন তিনি মেয়ের। নাবিলার পুরো জীবনটা ফ্রেমে তুলে রেখেছেন তিনি। বেছে বেছে তার বিভিন্ন বয়সের ছবি বের করলেন। একাকী তোলা ছবি, তার সাথে তোলা ছবি সব। ক্যামেরা থেকেও মেমোরি কার্ড ভর্তি ছবি নিলেন। সবকিছু একটা ব্যাগে ভরলেন তিনি। এরপর অফিসে চললেন।
কলিগদের অবাক দৃষ্টি উপেক্ষা করে অফিস করলেন দুপুর পর্যন্ত। এরপর ব্রেকে বস এর কাছ থেকে ছুটি মঞ্জুর করিয়ে নিয়ে ব্যাংকে গেলেন তিনি।
মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাচ্ছিলেন তিনি ব্যাংকে। এমাউন্টটা বেশ বড় হয়ে গেছে। বেশ কিছু টাকা তুললেন ওমর সাহেব। সেখান থেকে বেরিয়ে ছবিগুলো কে এনলার্জ করার জন্য একটা কালার ল্যাবে দিয়ে এলেন। ছবিগুলো ফ্রেমে বাধাই করার জন্য টাকা দিয়ে এলেন পাশের আরেক দোকানে। তারপর বিভিন্ন মার্কেট থেকে টুকিটাকি কিছু জিনিস কেনাকাটা করলেন। তার ভিতর কিছু ইলেকট্রনিক সামগ্রী, বই, নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য, মেডিক্যাল নিডল, স্ক্রু ড্রাইভার, ড্রিল মেশিন, করাত, পেরেক, আঠা, মেজারিং টেপ ছিল। এরপর তিনি গেলেন এক রেন্টাল কার এর দোকানে। তবে যাবার আগে একটুখানি ছদ্মবেশ নিতে ভুললেন না। কলেজে থাকতে নাটকের একটা দলের সাথে তিনি ছিলেন, তাই এ ব্যাপারে একটু আধটু জ্ঞান ছিল।
রেন্টাল কার এর দোকান থেকে একটা ছোট পিক আপ ভাড়া করলেন তিনি দুইদিনের জন্য। শপিং এর জিনিসগুলো গাড়িতে নিয়ে তুললেন। তারপর নিজে ড্রাইভ করে চললেন এক কাঠের আড়তে। বিদ্যাটা যুবক বয়সে আয়ত্ব করা ছিল। বেছে বেছে বিভিন্ন সাইজের বেশ কিছু শক্ত কাঠ কিনলেন। এরপর গেলেন তুলোর দোকানে। মোট দশটা বড় বড় আর মোটা তোষকের অর্ডার দিয়ে এলেন। পুরু কয়েকটা বিশাল পলিথিন শিট কেনার ভিতর দিয়ে প্রথম দিনের কেনাকাটা শেষ হল তার।
এরপর তিনি পিক আপটা নিয়ে তার এক পুরানো বন্ধুর বাড়ি চলে এলেন। বন্ধু এখন বিদেশে থাকে। বহুদিন হল দেশে আসে না। বাড়িটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তার কাছে চাবি আছে। মাঝে মাঝে এসে দেখা শোনা করে যান। বন্ধু তাকে যাবার আগে বলেছিল এখানে থাকতে, কিন্তু তিনি রাজি হননি। বাড়িটা শহর থেকে খানিকটা দুরে নির্জন একটা জায়গায় অবস্থিত। লোকজনের আনাগোনা নেই তেমন একটা। বিশাল উঁচু কাচ বসানো সীমানা প্রাচীর বাড়িটার। তিনি তালা খুলে ভিতরে ঢুকলেন। কেমন যেন একটা গা ছমছম করা পরিবেশ। তোয়াক্কা করলেন না তিনি। সোজাসুজি বাড়ির গোপন বেজমেন্টে চলে গেলেন। যার খোঁজ শুধু তিনি আর তার বন্ধুই জানেন। বন্ধু বাড়িটা বিদেশী কায়দায় বানিয়েছিল।
বাড়িতে আগে ইলেকট্রিসিটি ছিল। এখন লাইন কাটা। বেসমেন্টে একটা জেনারেটর আছে। সঙ্গে লাইট এনেছিলেন। সেটা জ্বালিয়ে জেনারেটর টা দেখলেন। ঠিক আছে ওটা। পাশে কয়েকটা তেলের ক্যান রাখা ছিল। ট্যাংকিতে তেল ঢেলে জেনারেটরটা স্টার্ট দিলেন। দুইবারের প্রচেষ্টায় চলতে শুরু করল সেটা। মাথার উপর লাইট এর দড়ি ঝুলছিল। সেটা ধরে টান দিতেই হলুদ আলোয় ঝলমল করে উঠল বেজমেন্টটা। কাজ শুরু করলেন তিনি।
বাইরে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ঝিঝি পোকা ডাকছে চারপাশে। অন্ধকারে বাড়ির আঙিনার গাছগুলোর শাখা প্রশাখা বিভিন্ন ভীতিকর আকার নেয়ার চেষ্টা করছে। আলো জ্বাললেন না তিনি। অন্ধকারের ভিতরই পিক আপ থেকে মালামাল নিয়ে বেজমেন্টে জড় করতে লাগলেন। সবকিছু ভেতরে নেয়া হয়ে গেলে তারপর মেজারিং টেপ বের করে একটা মাপ নিলেন তিনি বেজমেন্টটার। ছোট একটা নোটবুকে টুকে নিলেন বিভিন্ন মাপ। একটা স্কেচ করলেন রুমটার। এরপর জেনারেটর বন্ধ করে ফিরে চললেন নিজের বাসার দিকে।
ফেরার পথে এক সাইবার ক্যাফেতে ঢুকে প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য জোগাড় করলেন নেট থেকে। পিক আপটা একটা নির্মানাধীন রিয়েল এস্টেট প্রজেক্ট এর গ্যারেজ এক রাতের জন্য ভাড়া করে সেখানে রেখে বাসায় ফিরে এলেন। রাতের খাবার কিনে নিয়ে এসেছিলেন। সেটা খেয়ে নিয়ে নিজের স্টাডি তে গিয়ে বসলেন তিনি। এরপর বড় একটা আর্টপেপারে স্কেচ করতে আরম্ভ করলেন। একের পর এক স্কেচ করে গেলেন তিনি। কাগজে ছোট ছোট নোট ও লিখে রাখছিলেন। গভীর রাতে চোখ জ্বালাপোড়া করতে শুরু করলে ক্ষান্ত দিলেন তিনি।
পরদিন অফিস শেষে আবার বেরুলেন পিক আপটা নিয়ে। ছোট ছোট চারটা সাউন্ডবক্স আর সেকেন্ড হ্যান্ড কিছু ডাক্তারি যন্ত্রপাতি কিনলেন। নাবিলার ফ্রেমে বাধাই করা ছবি দোকান থেকে ছাড়িয়ে আনলেন। বিভিন্ন সাইজের ছবিগুলো। তারমধ্যে সবচেয়ে বড়টা প্রমান মানুষ সাইজের। এরপর আরও কিছু কেনাকাটা শেষ করে চললেন নতুন এক দোকানে। কিনলেন তার লিস্টের সবচেয়ে অদ্ভুত জিনিসটা। একটা বিশাল কুকুর। জার্মান শেফার্ড ব্রিড। অনেকগুলো টাকা বেরিয়ে গেল প্রাণীটা কিনতে গিয়ে। দোকানদার প্রাণীটাকে কি বলল কে জানে। ওমর সাহেব দেখলেন সেটা সুড়সুড় করে তার সাথে গিয়ে পিক আপ এ উঠল। গলার বেল্টটা একটা আংটার সাথে বেঁধে দিলেন তিনি। তারপর সেটার গলা চুলকে আদর করে স্টিয়ারিং এ বসলেন।
সন্ধ্যার ভিতর পৌঁছে গেলেন বন্ধুর বাড়িতে। আজও সোজা বেজমেন্টে চলে গেলেন। কুকুরটাকে এক কোনায় বেঁধে রেখে কাজ শুরু করলেন তিনি। প্রথমে পেপার হোল্ডারে করে নিয়ে আসা নকশাটা মেঝেতে বিছালেন। এরপর সেটা অনুযায়ী কাজ শুরু করলেন তিনি। জাহাজের ট্রেইলার এর মত কাঠের তৈরি একটা চেম্বার বানাতে শুরু করলেন ড্রিল মেশিন আর হাতুরি-পেরেক এর সাহায্যে। একা বিধায় কাজটা খুব ধীরে এগুচ্ছিল। কয়েক ঘণ্টা পরিশ্রমের পর দেখলেন প্রায় হয়ে এসেছে জিনিসটা। কাঠগুলো আগে থেকে সাইজ করা থাকায় কাজটা তুলনামূলক দ্রুতই সম্পন্ন হয়েছে।
পরের দুইটা দিন অফিসের পর একটানা কাজ করে গেলেন তিনি। এর মাঝে পিক আপটা ফেরত দিয়ে এসেছেন। তোষকগুলো দোকান থেকে ছাড়িয়ে বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে তুলেছেন। অন্য রেন্টাল থেকে আরেকটা পিক আপ ভাড়া করেছেন। চেম্বারটা তৈরি একদম শেষ। এরপর তিনি তোষকগুলোকে বিশাল চেম্বারটার ভিতর দিকের দেয়ালে আঠা আর কাঠের বেড় দিয়ে লাগিয়ে দিলেন। শুধু মেঝেটা বাদ রইল। একটা ছোট দরজা রয়েছে যেটা দিয়ে চেম্বারটার ভিতরে ঢোকা যায়। অনায়েশে পাঁচজন মানুষের থাকার জায়গা হয়ে যাবে ওটার ভিতর।
এরপর তিনি তার কেনা বিভিন্ন জিনিস ভিতরে নিয়ে সাজালেন। প্রথমে শুরু করলেন নাবিলার ছবিগুলো দিয়ে। শৈশব থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের ছবি ক্রমানুসারে সাজালেন দেয়ালে। চেম্বারটার ছাদে লাগালেন সবচেয়ে বড় ছবিটা। নিম্নমুখী করে। সাউন্ডবক্স গুলোকে চারকোনায় স্থাপন করলেন। তারপর একটা ডিভিডি প্লেয়ারের সাথে লাইন দিলেন। ডাক্তারি জিনিসগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখলেন একপাশে কয়েকটা স্টেইনলেস ষ্টীলের তৈরি ট্রের উপর। পলিথিন শিটগুলো মেঝেতে বিছিয়ে দিলেন। তার উপর আগে থেকে তৈরি করে রাখা বিশেষ একটা টেবিল এনে পাতালেন। ইলেকট্রনিক সামগ্রীগুলো টেবিলটার চারপাশে সেট করলেন সময় নিয়ে।
বেরিয়ে এসে এরপর জার্মান শেফার্ডটার কাছে গেলেন। গত কয়দিন কাঁচা মাংস খাওয়াচ্ছেন কুকুরটাকে। কুকুরটার সামনে আরও কিছু কাঁচা মাংশ দিয়ে বেজমেন্টটার ফার্নেস চেক করলেন। ঠিক আছে। এরপর একটা পরিক্ষা করার জন্য কুকুরটাকে কাঠের চেম্বারটার ভিতর ঢুকিয়ে দরজা আটকে দিলেন। ভিতরের লাইট বন্ধ করে দিয়ে কান পাতলেন কাঠের দেয়ালের গায়ে। অন্ধকারে নিশ্চয়ই কুকুরটা চিৎকার করতে শুরু করবে। বাইরে থেকে শব্দ পাওয়া যায় কিনা দেখতে চাইছেন। কিছু সময় পর অস্পষ্টভাবে শুনতে পেলেন জার্মান শেফার্ডের চিৎকার। বেজমেন্ট এর দরজায় গিয়ে দাঁড়ালেন আবার। এবার কিছু শোনা যাচ্ছেনা। ফিরে গিয়ে তাড়াতাড়ি বের করলেন সেটাকে চেম্বার থেকে।
বাসায় ফিরে শেষে লম্বা একটা ঘুম দিলেন ওমর সাহেব। তিনি একদম প্রস্তুত এখন। এবার শুধু সুযোগের অপেক্ষা। গত কয়েকদিনের কাজের মধ্য দিয়েও খোঁজ রেখেছেন তিনি রনির। জানেন তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেবার বন্দোবস্ত হচ্ছে। জানেন পুলিশের এক অফিসার বিশাল অংকের টাকা খেয়ে বসে আছে। রিমান্ডে রনিরা কিছুই স্বীকার করেনি তারই কারণে। লোক দেখান বিচার চলেছে সামনে আর আড়ালে চলেছে টাকার খেলা। ওমর সাহেব মনে মনে হাসলেন। তিনিও একটা খেলা শুরু করতে যাচ্ছেন। ভয়ানক এক খেলা। প্রতিশোধের খেলা। পশুত্বের খেলা। আর তাকে সেই খেলায় জয়ী হতেই হবে।
দুইদিন অপেক্ষা করলেন তিনি। থানা থেকে ঘুরে আসলেন একবার। আর লক্ষ্য রাখলেন রনির গতবিধির উপর। উইক পয়েন্ট খুঁজছেন। কথায় আছে সবুরে মেওয়া ফলে। তার ক্ষেত্রেও মেওয়া ফলল। রনির রাত্রিকালীন আখড়ার খোঁজ পেয়ে গেলেন। তার দুই সাঙ্গপাঙ্গও থাকে তার সাথে। এবার তিনি আসল প্লান এক্সিকিউট করবেন। তার আগে সেটাকে ফুলপ্রুফ করতে হবে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন প্রমান ছাড়া আইনিপক্ষের কেউ কাজ করতে পারেনা। তাই প্রমান রাখা চলবে না। অনেক সময় নিয়ে আগাগোড়া চিন্তা করে দেখলেন পুরো বিষয়টা। এরপর শনিবার দিনটাকে বেছে নিলেন তার কাজের জন্য। তিনি প্রস্তুত, এবার বাকিটুকুর জন্য একটু ভাগ্যের সহায়তা প্রয়োজন। তার কেন জানি মনে হচ্ছে সেটা তিনি পাবেন।
অবশেষে শনিবার সকালে কাজ শুরু করলেন তিনি। তৃতীয় আরেকটা রেন্টাল কার থেকে একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করলেন। সেটা নিয়ে সন্ধ্যাবেলায় বেরিয়ে পড়লেন। রাত কয়টার দিকে রনি ওখানে যায় তিনি জানেন। সময়মত মাইক্রোবাস টা নিয়ে তিনি এক মোড়ে অবস্থান নিলেন। নম্বরপ্লেটটা খুলে রাখতে ভোলেন নি তার আগে। এই এলাকাটা নেশাখোরদের আড্ডা বলে পরিচিত। একটা ইলেকট্রিক খুটিরও বাতি অবশিষ্ট রাখেনি তারা। লোকজন সন্ধ্যা হলে এই জায়গাটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। রনি এই পথ দিয়েই যাতায়াত করে সবসময়। অস্থির হয়ে হাতঘড়ি দেখলেন তিনি কয়েকবার। এতক্ষণে তো এসে যাবার কথা!
মাঝে মাঝে কিছু লোক ঢুলতে ঢুলতে যাচ্ছিল। তার দিকে তেমন একটা খেয়াল দিল না। তিনি নকল দাড়িগোঁফের জঙ্গলের আড়ালে নিজেকে লুকিয়েছেন। দেখতে মনে হয় কোন গডফাদার এর মত লাগছে। মনে মনে হাসলেন তিনি কথাটা ভেবে। যখন চিন্তায় একেবারে অধৈর্য্য হয়ে উঠছিলেন তখন দেখতে পেলেন রনি আসছে। বরাবরের মতই পায়ে হেটে আসছে। এই এলাকায় বাইক ঢোকায় না সে কখনো।
ওমর সাহেব নিজেকে প্রস্তুত করে নিলেন। একটা রুমালে সাথে করে আনা ক্লোরোফরম ঢেলে নিলেন কিছুটা। তারপর সেটা হাতে রেখে মাইক্রোবাসের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন কেউকেটা একটা ভঙ্গিতে। যস্মিন দেশে যদাচার। রনি প্রায় কাছে চলে এসেছে। বেশ একটা ভারী কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘এই ছেলে, কানা জাহাঙ্গীর এর আখড়া টা কোনদিকে বলতে পারবে?’
‘কে আপনি?’
‘তা দিয়ে তোমার কোন কাজ নেই,’ তিনি একটু একটু করে এগুচ্ছিলেন রনির দিকে। ‘ওর সাথে আমার একটা পুরানো লেনদেন ছিল।’
রনি কিছুটা উৎসুক হয়ে উঠেছে। জাহাঙ্গীর এর আখড়াতেই যায় সে। সে খানিকটা এগিয়ে এল। ওমর সাহেব দেখলেন তার হাতের আওতায় চলে এসেছে সে। আর দেরি না করে বিদ্যুতগতিতে রনির একটা হাত কব্জির কাছে ধরলেন তিনি। নিজের দিকে টানলেন তাকে, সাথে সাথে হাতটা মুচড়ে পিঠের কাছে নিয়ে এলেন। আর অন্য হাতে রুমালটা চেপে ধরলেন তার নাকে। সামান্য টু শব্দটি করার সুযোগ পেল না সে। হাত বেকায়দা অবস্থায় পড়াতে নড়াচড়াও করতে পারল না। কিছুক্ষনের মধ্যেই সে নেতিয়ে পড়ল। দেরি না করে খোলা দরজা দিয়ে অজ্ঞান রনিকে মাইক্রোবাসের ভিতর ছুড়ে দিলেন তিনি। দুই সিটের মাঝে গিয়ে পড়ল সে। একটা মোটা কাল চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে দিলেন। জানেন ঘণ্টা দুয়েকের আগে তার জ্ঞান ফিরবে না। এরপর তাড়াতাড়ি ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলেন। স্টার্ট দিয়ে দ্রুতগতিতে এলাকা ছাড়লেন তিনি। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর পৌঁছালেন বন্ধুর বাড়িতে। শহর ছাড়ানোর পর গাড়ির হেডলাইট বন্ধ করে আস্তে আস্তে চালিয়েছেন। পথে কোন সমস্যা হয় নি।
রনির হালকা পাতলা শরীরটা কাঁধে ফেলে বাড়ির ভিতর নিয়ে চললেন। কুকুরটাকে কাঠের সাউন্ডপ্রুফ চেম্বার থেকে বের করে রনিকে ভিতরে নিয়ে শোয়ালেন টেবিলের উপর। ভাল করে এরপর হাত-পা বাঁধলেন দড়ি দিয়ে। জানেন এই চেম্বার থেকে কোন শব্দও বাইরে যাবে না। তারপরও তিনি তার মুখে একখন্ড কাপড় গুজে দিলেন। তারপর দরজা বন্ধ করে বাতি নিভিয়ে চলে এলেন। ফিরে চললেন বাড়ির দিকে। ভাবলেন জ্ঞান ফিরে পেয়ে কতটা আতঙ্কিত হয়ে পড়বে রনি! ঠিক নাবিলার মত। ভাবনাটা তার মনে একটা পৈশাচিক আনন্দ ছড়িয়ে দিল। নাবিলার মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তি শুরু হল আজ থেকে।
বাড়ি ফিরে আয়েশ করে শুয়ে পড়লেন ওমর সাহেব। রনিকে খুঁজে না পেলে পুলিশে খবর দেয়া হবে। পুলিশের ছুটাছুটির প্রাথমিক পর্যায়ে বাড়িতেই থাকতে চান তিনি। ঘরের বাতি নিভিয়ে তিনি চুপচাপ শুয়ে রইলেন। মনের একটা অংশ পুলিশের আগমন কামনা করছে আর অন্য অংশ বলছে, না আসলেই ভাল হয়। অবশেষে রাত গভীর হয়ে গেলেও কেউ আসল না বাড়িতে। বরাবরের মতই নিশ্চুপ আঁধারে ডুবে রইল।
রাত দুইটার দিকে বাড়ি থেকে বেরোলেন তিনি পুরানো বাইসাইকেলটা নিয়ে। সোজা চললেন বন্ধুর বাড়ির দিকে। বুক ঢিব ঢিব করছিল কিছুটা কিন্তু পাত্তা দিলেন না তিনি। শহর ছেড়ে বেরিয়ে জোরে প্যাডেল চালিয়ে রাতের আঁধারে চললেন গন্তব্যের দিকে। এতক্ষণে রনির জ্ঞান ফিরে এসেছে নিশ্চয়ই। আঁধারে ডুবে থাকা বাড়িটার বেজমেন্টে ঢুকে জেনারেটর চালালেন তিনি। জার্মান শেফার্ডটাকে গতদিন ভাল করে খেতে দেননি। সামনের আরও দুইদিনও দেবেন না। ইতোমধ্যে রেগে গেছে বিশালদেহী কুকুরটা। তাকে দেখে ধারালো শ্বদন্ত বের করে খিঁচিয়ে উঠল। তিনি পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে ঢুকে পড়লেন কাঠের চেম্বাটায়।
ভিতরে হঠাত জ্বলে ওঠা বাল্বের আলোয় চোখ পিট পিট করছে রনি। চোখে মুখে একরাশ আতঙ্ক। ওমর সাহেবকে দেখে চিনতে পেরে গো গো করে উঠল। শরীর ঝাকাতে লাগল প্রাণপণে।
‘শুধু শুধু কষ্ট করে কোন লাভ নেই। ছুটতে পারবে না,’ একদম স্বাভাবিক গলায় বললেন ওমর সাহেব। এগিয়ে গেলেন রনিকে বেঁধে রাখা টেবিলের পাশে সাজানো ডাক্তারি যন্ত্রপাতির দিকে। পকেট থেকে জলরঙ্গের তরলপুর্ন একটা এম্পুল বের করলেন। এরপর একটা হাইপোডার্মিক সিরিঞ্জে তরলটুকু ভরলেন। রনির চোখ দেখে মনে হল কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসবে আতঙ্কে।
ব্যাপারটা উপভোগ করতে শুরু করেছেন ওমর সাহেব। রনির দিকে তাকিয়ে হাসলেন। ‘না না খারাপ কিছু নয় এটা।’, বললেন তিনি। ‘তোমার হাত পা ছুড়াছুড়ি দেখতে ভাল লাগছে না। এটা দিয়ে তোমাকে সাময়িক প্যারালাইজড করে দেব। সবকিছু উপলব্ধি করতে পারবে কিন্তু নড়াচড়া করতে পারবে না। ওহ, আরেকটা কথা। এখন আমি তোমার মুখের কাপড় সরিয়ে নেব। চিৎকার করে কোন লাভ হবে না এখানে, বুঝেছ? এমনভাবে এই চেম্বারটার ডিজাইন করা যে, একজন মানুষের ভোকাল কর্ড সর্বোচ্চ যত ডেসিবেল শব্দ উতপন্ন করে তার সম্পুর্ন টা শুষে নিতে পারবে। সুতরাং শুধু শুধু শরীরের শক্তি খরচ করে কি হবে বল? তার থেকে সেটা সঞ্চয় করে রাখা ভাল, সামনে কাজে লাগবে।’
রনির মুখে থেকে কাপড়ের টুকরোটা সরিয়ে নিলেন। সাথে সাথে কেশে উঠল সে। ‘আমাকে ছেড়ে দেন, প্লিজ।,’ কেঁদে ফেলল ও।
ঘাড় বাঁকা করে সামনের দিকে একটু ঝুকলেন ওমর সাহেব, ভাবটা এমন যেন রনির কথা ঠিকমত শুনতে পাননি। ‘কি বললে?’
‘আমাকে মাফ করে দেন। ভুল করে ফেলেছি আমি।’
ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন উঠলেন তিনি। ‘বলে কি পাগল ছেলে!’, কপট কৌতুকের সুরে বললেন। ‘তোমাকে কি ছেড়ে দেবার জন্য এত কাঠখড় পুড়িয়ে এখানে আনলাম! মাথা খাটাও ইয়াংম্যান। তুমি এখান থেকে কোথাও যাচ্ছ না। তোমার জন্য অনেক কষ্ট করে রুমটা সাজিয়েছি আমি। তাকাও।’
চারপাশের দেয়ালের দিকে ইঙ্গিত করলেন তিনি। রনিও তাকাল। ‘নাবিলাকে দেখতে পাচ্ছ?’, আনমনে বলতে লাগলেন। চোখে তার আদুরে দৃষ্টি। ‘কি সুন্দরই না ছিল আমার মেয়েটা! কত গুনসম্পন্না, দয়ালু! তুমি তার নখের সমানও ছিলেনা। অথচ কি করলে?’
ওমর সাহেবের দৃষ্টিটা বদলে এবার ঘৃণায় পরিণত হল। ‘আমার মেয়েটাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলে তুমি। অত্যাচারে অত্যাচারে শেষ করে দিলে। এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা তাকে দিলে যা কোন মেয়ের পক্ষে বহন করা সম্ভব না। এবার নিজে প্রস্তুত হও। কড়ায় গণ্ডায় বুঝে পাবে তুমি সবকিছু। আমার মেয়ে যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছে কয়দিন তার কোন অংশে কম তুমি পাবে না। বরং একটু বেশিই পাবে।’
লেকচার মুডে আছেন যেন তিনি, বলেই চলেছেন, ‘আমাদের দেশের একজন বিখ্যাত লোকের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে। When you play with gentlemen, you play like a gentleman. But when you play with bastards, make sure you play like a bigger bastard. Otherwise you will lose. বুঝতেই পারছ আমি কোন ভূমিকায় আছি এখন। আমি তোমার লেভেলের চেয়েও অনেক নিচের লেভেলে আছি সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে কোন লাভ নেই। পারলে ওর কাছে ক্ষমা চাও।’ নাবিলার ছবিগুলো দেখালেন তিনি।
এরপর সিরিঞ্জের সুচটা ঢুকিয়ে দিলেন রনির শরীরে। সবটুকু তরল ঢুকে যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই নেতিয়ে পড়ল সে। একটা পেনলাইট মেরে তার চোখ দেখলেন ওমর সাহেব। ঠিকমতই সাড়া দিচ্ছে। দেহের মোটর নিউরনের কাজ সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু সেনসরিগুলো পরিপুর্ন কার্যক্ষম। তারমানে রনির শরীর এক্সটার্নাল স্টিমুলির প্রতি সংবেদী কিন্তু তদানুযায়ী সাড়া দিতে অক্ষম।
ওমর সাহেব রনির হাত পায়ের দড়ির বাধন খুলে নিলেন। সে যেভাবে ছিল ওভাবেই পড়ে রইল। এবার আন্ডারওয়ার বাদে সবকিছু খুলে নিলেন তিনি। তারপর তার চার হাত পা চারদিকে ছড়িয়ে নতুন করে বাঁধলেন লোহার কাফ দিয়ে যা টেবিলের সারফেসের সাথে আটকানো ছিল। কাজের সাথে সাথে মুখ চলছে তার, ‘জানি আমার কথা শুনতে পারছ। তোমাকে কিছু কথা বলি শোন। রাশিয়ার স্পাইরা একটা কথা বলে মৃত্যু নিয়ে, যখন অন্যদেশের এজেন্টদের কাছ থেকে কথা আদায় করার জন্য ইন্টারোগেশন চালায়। Death is easy. It’s not about the destination. It’s about the journey. সহজ কথায় তুমি এই চেম্বারেই মরতে চলেছ। কিন্তু মৃত্যুটা হবে অসম্ভব ধীর আর যন্ত্রনাদায়ক। তখন আর প্রানে বাঁচার জন্য অনুনয় বিনয় করবে না। বরং ভাববে আগে মরে গেলেই ভাল হত। আমার মেয়েটা যেমন নিজের মৃত্যু কামনা করেছিল সেমনভাবে বা তার থেকেও বেশি করে মৃত্যু কামনা করবে তুমি।’
রনি নড়তে চড়তে পারছিল না, কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল ওমর সাহেবের প্রতিটা কথা বুঝতে পারছে। দুই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল তার। দেখে ওমর সাহেবের মনে হল এত ভাল দৃশ্য আগে কখনো দেখেননি আগে! এবার স্টেইনলেস ষ্টীল এর ট্রে থেকে কতগুলো ৫ ইঞ্চি লম্বা নিডল নিলেন তিনি। বসলেন রনির ডানহাতের কাছে। তারপর একটা নিডল নিয়ে রনির বৃদ্ধাঙ্গুলের চাড়ির নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিলেন। আস্তে আস্তে চাড়ির একেবারে গোঁড়া পর্যন্ত ঢুকিয়ে দিলেন। চোখের তারা বিস্ফোরিত হল তার। দ্বিতীয়টা নিডলটা তর্জনীর চাড়ির নিচ দিয়ে পথ করে চলে গেল। প্যারালাইজ না করে নিলে এতক্ষণে টেবিল নড়ে যেত হাত পা ছোঁড়ার কারণে।
ওমর সাহেব একের পর এক নিডল ঢুকিয়ে চললেন। সাথে মুখও চলছে। যেন রনিকে জ্ঞান দিচ্ছেন এমনভাবে বলতে লাগলেন, ‘ব্যাথার একটা স্কেল আছে, বুঝেছ। এক থেকে দশ পর্যন্ত রেঞ্জ। তোমাকে আমি কনস্ট্যান্ট আট এর মধ্যে রাখব বা তার বেশি। হাইপারভলিউমিক শক ইনডিউর করতে হবে তোমাকে যতক্ষন বেঁচে থাকবে। আমার প্লান অনুযায়ী যতসময় ধরে তুমি আমার মেয়েকে আটকে রেখেছ ঠিক ততসময় তোমাকে মরতে দেব না আমি। এরপরের প্লান আরও এক্সাইটিং। নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য না, বরং সত্যিই যখন মনপ্রান দিয়ে উপলব্ধি করবে যে, তুমি নাবিলার সাথে যা করেছ তা খুবই খারাপ এবং এর জন্য তুমি সর্বোচ্চ শাস্তির যোগ্য, স্বীকার করবে নিজের মুখে, তারপর তোমাকে মরতে দেব আমি। তার একমুহুর্ত আগেও নয়।’
দুইহাতের দশ আঙ্গুলেই একই কাজ করেছেন তিনি। ‘এই ধরনের ব্যাথায় মানুষের ব্রেইন একটিভিটি ডিক্রেজ করে, বুঝেছ? মানে ব্যাথা থেকে দেহকে রক্ষা করার চেষ্টা আর কি। হার্টরেট কমে আসে, ফেইন্ট হয়ে যায় মানুষ। তোমার ব্রেইনকে সে সুযোগ আমি দেব না।’ একটা মেডিক্যাল যন্ত্র সামনে নিয়ে এলেন তিনি। ‘হার্ট মনিটর আর ব্যাটারি আছে আমার কাছে।’
রনির খোলা বুকে কয়েকটা জিনিস লাগালেন তিনি যেগুলোতে লাগানো তার বেরিয়ে এসেছে যন্ত্রটা থেকে। ‘হার্টরেট একটা নির্দিষ্ট লেভেলের নিচে চলে আসলে যন্ত্রটা তোমাকে একটা ‘ওয়েক আপ কল’ দেবে ইলেকট্রিক শক দিয়ে। তারমানে বুঝেছ? প্রতি আউন্স ব্যাথা সহ্য করতে হবে তোমাকে।’
এবার তিনি ডিভিডিটা চালিয়ে দিলেন। সাথে সাথে সারাঘর ছোট একটা বাচ্চার নিস্পাপ হাসির শব্দে ভরে গেল। সেই হাসি শুনলে যে কারও মন ভাল হয়ে যেতে বাধ্য। ‘শুনেছ, আমার মেয়েটা ছোটবেলায় কত সুন্দর করে হাসত,’ প্রচণ্ড যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকা রনির কানের কাছে গিয়ে ফিসিফিসিয়ে বললেন তিনি। ‘ও আমার জীবনের সবকিছু ছিল। ওর আমার সাথে বলা প্রচুর কথা আমি ধরে রেখেছি। তোমাকে শোনাতে চাই আমি। তোমাকে দেখাতে চাই আমি। বোঝাতে চাই নাবিলা আমার কাছে কি ছিল! তুমি আমার কাছ থেকে কি কেড়ে নিয়েছ! আমি এখন তোমাকে একা রেখে চলে যাব। আমার মেয়ের ছবি আর স্বর তোমাকে পুরানো ভুতের মত ঘিরে রাখবে। ওই দেখ, তোমার ঠিক উপরে আমার মেয়ের একটা ছবি টানানো রয়েছে। সরাসরি তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে তোমার অবস্থা দেখে। যেমন ওর অবস্থা দেখে মজা পেয়েছিলে। আমার মেয়ের কথা আর ছবির জেলখানায় আটকে থাকবে তুমি। তার পাওয়া কষ্ট উপলব্ধি করবে নিজে। প্রায়শ্চিত্য করবে নিজের পাপের।’
টর্চার চেম্বার থেকে বের হয়ে এলেন তিনি রনিকে ওই অবস্থায় রেখে। আবার তাকে দেখে দাত খিচাল কুকুরটা। পরদিন সকালে তিনি যখন নাস্তা করছিলেন তখন একজন পুলিশ এল থানা থেকে। তিনি কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে জানাল তার করা মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামী রনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুনে তিনি এমন প্রতিক্রিয়া দেখালেন যে মনে হল অভিনয় লাইনে গেলে অস্কারও জুটে যেতে পারত কপালে। পুলিশের পরের কথায় মনে হল অভিনয়ে সফল তিনি। ‘হারামজাদা মনে হয় কোথাও লুকিয়েছে। আমরা তাই ধারনা করছি।’, বিড়বিড় করে বলল সে। তারপর টুকিটাকি কিছু কথা বলে, নাবিলার ঘটনার জন্য সমবেদনা জানিয়ে চলে গেল।
স্বাভাবিকভাবে অন্যদিনের মত অফিস করলেন তিনি। দেখলেন অফিসে তার প্রতি প্রায় প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে। বেশ আগ্রহ নিয়ে কথা বলছে তার সাথে। ভাল লাগল তার ব্যাপারটা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তার মন চলে গেল বেজমেন্ট এর চেম্বারটাতে। তার আশেপাশের কেউ কল্পনাও করতে পারবে না কি করছেন তিনি!
রাতে আবার তিনি গেলেন বন্ধুর বাড়ির বেজমেন্টে। টর্চার চেম্বারের ভিতর তখন তার আর নাবিলার কণ্ঠে গমগম করছিল, আর তার সাথে মিশে ছিল রনির গলা থেকে বের হওয়া পশুর মত আওয়াজ। পাগলের মত হাত পা ছুড়ছিল সে। দুই হাতের আঙ্গুল অস্বাভাবিকরকম ফুলে গেছে। রঙ বদলে কাল হয়ে গেছে প্রায়। শরীর ফ্যাকাশে হয়ে গেছে রনির। মুখ থেকে লালা গড়াচ্ছে। ইউরিনের গন্ধও পেলেন ওমর সাহেব। তাকে দেখে চিৎকারের সুর পাল্টে গেল তার। শক্তির শেষ সীমায় চলে এসেছে সে প্রায়।
তিনি ধীরে ধীরে নিডলগুলো বের করে নিলেন। ‘খুব ব্যাথা, তাই না? ভয় করছে বুঝি অনেক? নাকি অনুভূতি শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে ইতোমধ্যে?’
একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিলনা রনি। শুধু কেঁদেই চলেছে পাগলের মত। তাকে একটা মরফিন ইঞ্জেকশন দিলেন তিনি। ‘পরবর্তি ডোজ পড়ার আগে একটু রেস্ট নাও।’, বললেন তিনি। ‘অনেকক্ষণ পেটে কোন দানাপানি পড়েনি তোমার। দাড়াও, খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছি।’ রনির নাকের মধ্য দিয়ে একটা নল ঢুকিয়ে দিলেন তিনি। ধনুকের মত বাঁকা হয়ে গেল তার শরীরটা। এরপর ক্যানোলার মাধ্যমে লিকুইড খাবার দিলেন তাকে। ব্যাথা সহ্য করার জন্য এনার্জি দরকার।
ঘণ্টা দুয়েক পর দ্বিতীয়বারের মত শুরু করলেন তিনি। এবার হাতুড়ি আর লোহার একটা সরু-লম্বা রড নিলেন তিনি। রনির হাঁটুর জয়েন্টে রডটা ঠেকিয়ে অন্য মাথায় বাড়ি লাগালেন হাতুড়ি দিয়ে। মাংশ ভেদ করে হাড় পর্যন্ত গিয়ে ঠেকল রড এর সরু মাথা। রনির চিতকারে মনে হল কানের পর্দা ফেটে যাবে তার। দ্বিতীয় বাড়ি কষালেন আবার হাতুড়িতে। হাঁটুর সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধির মাঝ বরাবর ঢুকে গেল রডটা। তৃতীয় বাড়িতে অন্যপাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল। কয়েকটা শিরা ছিঁড়ে যেতে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটল। নিচে বিছানো পলিথিন শিট রক্তে মাখামাখি হয়ে গেল। রডটা বের করে নিলেন তিনি। এরপর অন্য হাঁটুতে একই কাজ করলেন। এখানেই থামলেন না ওমর সাহেব। ধারাল একটা ছুরি দিয়ে কয়েকটা মাপা স্ট্যাব করলেন তিনি, যেগুলো মৃত্যু ঘটাবে না, কিন্তু মারাত্মক যন্ত্রনা দেবে।
নিজের জোরের সর্বোচ্চ সীমায় চিৎকার করছে রনি। ‘আমাকে মেরে ফেলুন। দোহাই লাগে, আমাকে মেরে ফেলুন। আমি ভুল করেছি।’
‘উহু, এখনো নিজেকে ব্যাথা থেকে বাঁচাবার জন্য ওই কথা বলছ। মন থেকে বলনি। আমি বাইরে আছি। শরীরে শক্তি অবশিষ্ট থাকতে থাকতে নিজের কাজের জন্য মন থেকে ক্ষমা চাও। নাহলে পরে বলার মত কোন জোর আর গলায় অবশিষ্ট থাকবে না।’
বাইরে চলে আসলেন ওমর সাহেব। পিছে ‘আমাকে মেরে ফেলুন’ বলে ক্রমাগত চিৎকার করে যাচ্ছে রনি। তিনি আবার ডিভিডি প্লেয়ারটা ছেড়ে রেখে এসেছেন। দরজা বন্ধ করে দিলে চারপাশ শুনশান হয়ে পড়ল। হাতঘড়িতে দেখলেন রাত একটা বাজে। সিদ্ধান্ত নিলেন এক ঘণ্টা অপেক্ষা করবেন তিনি।
ঠিক একঘণ্টা পর রনির ডেথ চেম্বারএ ঢুকলেন তিনি। টেবিলের নিচ রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পুরানো রক্ত জমাট বেঁধে আছে, তার উপর নতুন গড়িয়ে আসা রক্ত আরেকটা লেয়ার তৈরি করেছে। আর চিৎকার করছেনা সে এখন। হয়তোবা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য বা অন্য কিছু। তিনি ডিভিডি প্লেয়ারটা বন্ধ করে রনির পাশে গিয়ে বসলেন। তার দিকে তাকালও না সে। একদৃষ্টিতে উপরের ছবির দিকে তাকিয়ে আছে, যে ছবিতে হাস্যোজ্জ্বল নাবিলাকে দেখা যাচ্ছে একটা টেডি বিয়ার নিয়ে বসে আছে। বিড়বিড় করছিল রনি কি বলে যেন। ওমর সাহেব শোনার জন্য তার মুখের কাছে কান নিয়ে গেলেন। সে বলছিল, ‘আমাকে মাফ করে দাও নাবিলা। অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমি। আমাকে মাফ করে দাও।’
ওমর সাহেবকে বলে দিতে হল না। তিনি জানেন মন থেকেই কথাগুলো বলছে রনি। ‘ভেবেছিলাম আরও একদিন তোমাকে বাঁচতে দেব আমি। কিন্তু সে সুযোগ দিলে না তুমি। গুড ফর ইউ। একটা কথা তোমাকে জানিয়ে রাখি। মানুষের দুইধরনের সত্তা আছে। মনুষ্যত্ব আর পশুত্ব। তুমি নিজের ইচ্ছাতেই তোমার পশুত্বকে লালনপালন করেছ জীবদ্দশায় আর আমার পশুত্ব বিভিন্ন কারণে জোর করেই আমার ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখানেই তোমার আর আমার ভিতর ফারাক। তুমি তো এখন মরে গিয়ে বেঁচে যাবে, কিন্তু আমার পশুত্ব নিয়েই কি আমাকে বাকি জীবন পার করতে হবে?’ মাথা দোলালেন তিনি, ‘না, আমি তা পারব না। আমার একটা প্লান আছে বুঝেছ। আমার পরিচিত এক সাইকিয়াট্রিস্ট আছে। সাইকিয়াট্রির আধুনিক সব জ্ঞান তার জানা আছে। আমেরিকাতে বহুদিন যাবত ছিলেন। এখন বাংলাদেশে প্র্যাকটিস করেন। আর কয়েকটা কাজের পর তার কাছে গিয়ে আমার গত কয়েকদিনের স্মৃতির চারপাশে দেয়াল তুলে দেব। মানে বুঝতে পারছ? তোমার সাথে যা করেছি তার কিছুই আমার মনে থাকবে না। সুতরাং অনুশোচনা করার আর কিছুই থাকবে না।’
কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। সময় হয়ে গেছে। ব্লাড ডোনেট করার সময় যে নিডল ব্যবহার করা হয় সেরকম দুইটা নিলেন তিনি হাতে। সেগুলোর পাইপের সামনে কোন ব্যাগ লাগানো নেই। ফাঁকা। তিনি এবার সেগুলো একে একে রনির দুই হাতের ধমনীতে ঢুকিয়ে দিলেন। সাথে সাথেই রক্তে ভরে উঠল দুই পাইপ। সেগুলো বেয়ে মেঝেতে রাখা দুইটা ছোট বালতিতে পড়তে শুরু করল রক্ত। এমনিতেই প্রচুর রক্ত বেরিয়ে গেছে রনির শরীর থেকে। আর বেশি সময় লাগবে না অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণে রক্তশূন্যতায় হৃৎপিণ্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে।
রনির ডেথ চেম্বার থেকে বেরিয়ে হঠাত করেই যেন বিষাদে আক্রান্ত হলেন তিনি। কিন্তু চিন্তাটা বের করে দিলেন মাথা থেকে। তিনি তো জানতেনই এরকম হবে। অনেক চিন্তা করেই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জার্মান শেফার্ড টা কুই কুই করছিল ক্ষুধাতে। ওমর সাহেব এবার একটা সিনথেটিক রোব পরলেন গায়ে। মাথায় একটা টুপি লাগিয়ে চুল ঢেকে ফেললেন। তারপর একটা ব্যাগ থেকে কশাইদের ব্যবহার করা ধারালো কয়েকটা অস্ত্র বের করলেন। সেগুলো দেখে কুকুরটা শব্দ করা বন্ধ করে দিল। তিনি চোখ দিয়ে অভয় দিলেন তাকে। যেন বোঝাতে চাইলেন, এগুলো তোর জন্য নয়!
শেষে আবার গিয়ে ঢুকলেন ডেথ চেম্বারে। দুচোখ মেলে টর্চার টেবিলের উপর পড়ে আছে রনি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে জীবনের কোন চিহ্নই নেই শরীরে। দুই পাইপ বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় কিছু রক্ত তখনো পড়ছিল। ওমর সাহেব তার শরীর থেকে সবকিছু সরিয়ে নিলেন। লোহার কাফগুলো খুলে ফেললেন। রনির উপর তার তীব্র রাগ থাকলেও মৃতদেহের উপর তা নেই। কিন্তু নিজের কাজের কোন চিহ্ন রাখা চলবে না। তাই বাধ্য হয়ে সবচেয়ে খারাপ কাজটা তাকে করতে হবে এখন। রনিকে স্রেফ গায়েব করে দেয়া। একেবারে ডি এন এ লেভেল পর্যন্ত।
শুরু করলেন তিনি। সময় নিয়ে রনির দেহটাকে খণ্ড খণ্ড করতে শুরু করলেন চাপাতি দিয়ে। ইচ্ছা ছিল ২০৬ টা হাড়কেই আলাদা করে ফেলবেন, কিন্তু এখন আর ইচ্ছা হচ্ছে না। তারপরেও বেশ কয়েক খণ্ড করলেন তিনি। পাঁজরগুলোকে মেরুদণ্ড থেকে আলাদা করে ফেললেন। মেরুদণ্ডের কক্কিস পেলভিক বোন থেকে আলাদা করে ফেললেন। ফিমার, টিবিও-ফিবুলা হিউমেরাস, রেডিও-আলনা কিছুই চাপাতির কোপ থেকে বাদ গেল না। কাজ শেষে দেখলেন দিন হতে বেশি বাকি নেই। এবার তিনি খণ্ড গুলোকে জার্মান শেফার্ডের সামনে রেখে পোশাক বদলে ফিরে এলেন বাড়িতে। পিছন ফিরে দেখলেননা কি করছে দুইদিনের অভুক্ত কুকুরটা।
রাতে আবার সেখানে গিয়ে দেখলেন কুকুরটার সামনে শুধু হাড়গুলো অবশিষ্ট আছে। গত সতের ঘণ্টায় রনিকে পুরো খেয়ে নিয়েছে বিশাল কুকুরটা। তিনি বেজমেন্ট এর ফার্নেসে আগুন জ্বালালেন এরপর। হাড়গুলোকে ফার্নেসের আগুনে নিক্ষেপ করলেন। এরপর বিভিন্ন ফ্লেমেবল জিনিস যেগুলো তিনি কাজে লাগিয়েছেন, সব এক এক করে পুড়িয়ে ফেলতে লাগলেন। টর্চার টেবিলের কাঠগুলো ফার্নেসের জ্বালানী হিসেবে ভালই কাজ দেখাল! রক্তমাখা পলিথিন শিট চোখের সামনে গলে গিয়ে আগুনের দলায় পরিণত হল। পানি গরম করে মেডিক্যাল এপারাটাসগুলো তার মধ্যে ডুবিয়ে দিলেন। ফার্নেসের ভিতর সমস্ত জিনিসগুলো ধোঁয়া আর ছাইতে পরিণত হল।
ডেথ চেম্বারটার আর কোন প্রয়োজন নেই। তিনি নাবিলার ছবিগুলো এক এক করে খুলে এক জায়গায় জড় করলেন। তোষকগুলো ছাড়িয়ে নিলেন দেয়াল থেকে। চেম্বারটাকে যখন ভেঙ্গে ফেলছিলেন, তখন ফার্নেসের গনগনে আগুনে রনির হাড়গুলো ভস্মীভূত হচ্ছিল। আগুন নিভে গেলে তিনি ছাইগুলো সংগ্রহ করলেন ফার্নেস থেকে। বড় যে হাড়গুলো তখনো নিজেদের আকৃতি ধরে রেখেছিল সেগুলোকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে চুর্ন বিচুর্ন করে ফেললেন। তারপর সেগুলোকে একটা ব্যাগে করে নিয়ে চলে এলেন একটা স্লুইস গেট এর কাছে, যেখানে একটা নদী থেকে পানি খালে গিয়ে ঢোকে। গেটটা পথে যাবার সময় দেখেছেন তিনি। সবসময় সেখানে পানির এলোপাথাড়ি স্রোত বয়ে চলে। ওমর সাহেব ব্যাগটাকে উপুড় করে ধরলেন সেখানে। ক্রমাগত পাক খেতে থাকা ঘোলা পানির সাথে কিছুক্ষনের মধ্যেই মিশে গেল ছাই আর হাড়চুর্নগুলো।
এরপর আরও কিছু কাজ বাকি ছিল তার। কুকুরটার একটা বিহিত করলেন। সেটা পাঠকের না জানলেও চলবে। দুইদিন পর এক সকালে দুইছেলেকে মাদকপাড়া বলে পরিচিত এক বস্তিতে মৃত অবস্থায় পেল পুলিশ। সনাক্ত করতে পারল তারা তাদের। এক তরুণী হত্যা মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামী তারা। হাতের দাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল নিয়মিত মাদক নিত তারা শরীরে। মৃতদের দুইজনের হাতেই দুটো সিরিঞ্জ ধরা ছিল। পুলিশ ধারনা করল মাদকের ওভারডোজ এর কারণে মৃত্যু হয়েছে তাদের। কিন্তু তারা জানল না ঠিক কি হয়েছিল। এক মাদকের ডিলার এর কাছ থেকে সিরিঞ্জ দুটো পেয়েছিল তারা। তার কথামত সেটা ছিল খুব দামী মাদক, যা কেনার সামর্থ্য ছিল না তাদের। মাদকের লাইনে নতুন বলে পরিচিতি বাড়ানোর জন্য তিনি উপহার দিয়েছিলেন তাদের। কিন্তু তারা টের পায়নি কি ঢুকাতে চলেছে শরীরে। জিনিসটা আসলে ছিল ক্রোমিয়াম সায়ানেট। শরীরে বিভিন্ন তরল পদার্থের ভারসাম্য রক্ষা করে যে কো-এনজাইম তার কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয় সেটা। রক্তে হাইড্রক্সিল আয়নের বন্যা বইয়ে দেয়। ফলাফল পানিতে ডুবে যাবার মত মৃত্যু। ছেলে দুইটা মৃত্যুপথযাত্রী এক মেয়েকে ডুবিয়ে দিতে গিয়েছিল নদীতে। কপালের কি লিখন! নিজের দেহের পানিতেই ডুবে মরল তারা।
আর তার কিছুদিন পর ডিউটি শেষ করে গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টে স্পাইনাল কর্ড ভেঙ্গে গেল সদ্য বিবাহিত এক পুলিশ অফিসারের, আর কোনদিন উঠে দাঁড়াতে পারবে না সে। এক তরুণী হত্যা মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিল সে। কিন্তু হত্যাকারীরা প্রমানের অভাবে জামিন পেয়ে যায়, যার পিছনে তার দুর্নীতির হাত আছে বলে মনে করা হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এমন এক্সিডেন্টে নতুন স্ত্রী সহ পরিবারের লোকেরা তার বিছানার পাশে বসে চোখের পানি ফেলতে লাগল।
অজানা এক সোর্স এর কাছ থেকে পাওয়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে প্রচুর পরিমান মাদক উদ্ধার করল পুলিশ। গ্রেফতার করা হল তাকে হাতেনাতে। রাজনৈতিক ক্ষমতা আর টাকা কিছুই করতে পারল না তার। অনেক বছরের জেল হয়ে গেল। ব্যবসায়ীর ছেলে এক হত্যা মামলার প্রধান আসামী এবং গত কিছুদিন ধরে নিখোঁজ। অল্পদিনের ভিতরই স্বামী আর সন্তানকে হারিয়ে মস্তিস্কবিকৃতি ঘটল ব্যবসায়ীর স্ত্রীর। ধ্বংস হয়ে গেল পরিবারটা।
পরিশিষ্ট........................
নাবিলার মৃত্যুর পর দুইমাস পেরিয়ে গেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন ওমর সাহেব। মাঝে মাঝে ধোঁয়াটে কিছু স্মৃতি ফিরে আসে তার মনে। মনে হয় কিছু ভুলে গেছেন। তার সাইকিয়াট্রিস্ট অবশ্য বলেছে যে, ও কিছু না। মনের কল্পনামাত্র। সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে। কলেজে তার মেয়ের একটা স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়েছিল এর মাঝে। সেখানে এক হৃদয়স্পর্শি আলোচনা করে সাবাইকে কাঁদিয়ে এসেছেন। নিজের মনের দুঃখ অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে এসেছেন। সবাই নিজের ঘরের মেয়ে-বোন বলে ভেবেছে তার মেয়েকে। মৃত্যুর আগে যতটা না পছন্দ করত নাবিলাকে, মৃত্যুর পরে তাকে আরও বেশি পছন্দ করে ফেলল সবাই। নাবিলার ব্যবহার্য্য কিছু জিনিস স্যুভেনির হিসেবে নিয়ে গেছে তার ক্লাসমেটরা। অনেকের কাছে ভাল কিছু করার ইন্সপিরেশন হয়ে গেল সে।
নাবিলার নামে অটিস্টিক শিশুদের জন্য একটা শিশুসদন খুলেছেন তিনি ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে। টেডি বিয়ার হাতে বিশাল একটা হাস্যোজ্জল ছবি টানানো রয়েছে সেটার দরজায়। শিশুসদনের কেউই তাকে চর্মচক্ষে দেখেনি কিন্তু সবার কাছেই সে বড়বোন বলে পরিচিত। তার বাড়িতে এখন লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এবং যারা আসে তারা সবাই ভাল মনের মানুষ।
ইদানিং ওমর সাহেবের অন্তর সবসময়ই যেন কেমন একটা আনন্দে পরিপুর্ন হয়ে থাকে। শুধু দুঃখ লাগে সেইসময় যখন স্টাডিতে বসে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে বসে থাকেন, কিন্তু একটা মেয়েলি কণ্ঠস্বর কপট অভিমানে বলে ওঠে না, ‘বাবা, আমাকে সময় না দিয়ে আবার বই পড়া শুরু করেছ?’
(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৩