বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা হয়েছে। কুষ্টিয়াতেও ছিলাম প্রায় ছয় বছরের মত। শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে এই শহরে। প্রায় বারো বছর পর আবার ঘুরতে গেলাম স্মৃতির শহরে। মোটামুটি সব দর্শনীয় স্থানেই ঘুরেছি তবে আজকের পোস্ট শুধুমাত্র রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ি নিয়ে।
কুষ্টিয়া শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে কুমারখালি উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের খোরেশদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়ি অবস্হিত ।
রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এ অঞ্চলের জমিদারি পান। পরবর্তিতে ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। এখানে তিনি ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনা করেন। তাঁর অবস্থানকালে নানা উপলক্ষে এখানে এসেছেন স্যার জগদীশচন্দ্র বসু (আচার্য), দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, লোকেন্দ্রনাথ পালিত প্রমুখ তৎকালীন বঙ্গের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী। এ সময় এখানে বসেই তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য, ইত্যাদি । এখানে বসেই কবি ১৯১২ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন, যা তাঁকে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কারের সম্মান এনে দেয়।
১৯৫৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ব্যবস্হাপনায় শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িটি গৌরবময় স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত আছে । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুঠিবাড়িটি গুরুত্ব অনুধাবন করে কবির বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহপূর্বক একে একটি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ।
জাদুঘরের গেটের পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার যেখানে জনপ্রতি টিকিটের দাম বিশ টাকা করে ।তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকিটের দরকার পড়েনা। সার্কভুক্ত বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য পঞ্চাশ টাকা এবং অন্যান্য বিদেশী দর্শকদের জন্য টিকেটের মূল্য একশত টাকা করে।
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সব সময়ের জন্যেই শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবিবার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা ২.০০ থেকে খোলা থাকে। এছাড়াও সরকারী কোন বিশেষ দিবসে জাদুঘর থাকে ।
পুরো ভবনটি এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শকদের জন্যে উম্মুক্ত । জাদুঘরের নীচ ও দ্বিতীয় তলায় রয়েছে নানা বয়সের বিচিত্র ভঙ্গির রবীন্দ্রনাথের ছবি । বাল্যকাল থেকে মৃতু্শয্যার ছবি পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে এখানে। তাছাড়াও রয়েছে শিল্পকর্ম এবং তাঁর ব্যবহার্য আসবাবপত্র।
রবি ঠাকুরের ব্যবহার করা আলমারি
ষোল বেহারার পালকি
আট বেহারার পালকি
হাত পালকি
আটকোণা বিশিষ্ট টেবিল
পানি বিশুদ্ধ করার যন্ত্র
পানি বিশুদ্ধ করার যন্ত্র রাখার স্ট্যান্ড
ঘাস কাটার যন্ত্র
সিন্দুক
মাটি মসৃণ করার যন্ত্র
খাজনা আদায়ের চেয়ার টেবিল
সোফা
টেবিল
দুই হাতল বিশিষ্ট দুটি বেঞ্চ
রবি ঠাকুরের পদ্মা বোটের প্রতীকী
হয়তো এই জানালার ধারে বসেই সাহিত্য চর্চা করতেন কবি
বারান্দায়
সিঁড়িঘর
ইঞ্জিন চালিত স্পীডবোট চপলা
পনটুনের সিঁড়ি
এখানেই থাকতো কুঠিবাড়ীর পাহারাদারেরা
রবির ব্যবহার করা চৌবাচ্চা এবং পাতকুয়া
কুঠিবাড়ির রান্নাবান্না এই হেঁশেলেই হত
পাঠশালা; রবি ঠাকুর বাচ্চাদের এখানে পড়াতেন
কবির রোপণ করা বকুল গাছ
স্মৃতি বিজড়িত পদ্মা বোট
আজ এ পর্যন্তই। আগামী পর্বে হাজির হব কুঠিবাড়িতে রক্ষিত রবি ঠাকুরের এবং তাঁর পরিবারের ছবি, পাণ্ডুলিপি এবং চিত্রাঙ্কন নিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:০৩