ধর্ম হল বিশ্বাস। তাই কোন ধার্মিক নির্দিধায়, কোন প্রশ্ন না করেই তার ধর্মের সবকিছু বিশ্বাস করে। এটা ধার্মিকের জন্য জরুরী। আর অন্ধবিশ্বাস হল জলজ্যান্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকার পরেও কোন ভুল জিনিস বা বিশ্বাসকে আঁকড়ে থাকা।
অন্ধবিশ্বাস খুবই ভয়াবহ জিনিস। ভারতে এই অন্ধবিশ্বাস মানুষের স্বাভাবিক যুক্তিবোধকে পরাজিত করে বারবার। ফলে মানুষ অস্বাভাবিক কোনকিছুকেও স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েও নরেন্দ্র মোদী মাথা নোয়ান এক ন্যাংটা গুরুর সামনে, যে কিনা একজন মানুষ! জনসম্মুখে উলংগ একজন মানুষ কিনা গুরু! নরবলি দিলে মনের আশা পূরণ হয়, গুরুর এমন কথায় বিশ্বাস করে নিজের শিশুসন্তানকে বলি দেবার ঘটনাও ঘটে ভারতে। গুরু নারীর পিঠের উপর দিয়ে হেঁটে গেলে সে নারী গর্ভবতী হয়, এমন অযৌক্তিক অন্ধবিশ্বাসের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে অল্পকিছুদিন আগে। মৃত মানুষের মাথার খুলিতে বিশেষ পানীয় পান করলে আয়ু বাড়ে, গুরুর এমন কথায় অন্ধবিশ্বাস করে কবর খুঁড়ে মাথার খুলি জোগাড় করে ধরা পরে এক লোক ভারতেই। ধর্ম গুরুদের প্রতি নানা অন্ধবিশ্বাসে ভরা ভারতীয়দের মন। এই তথাকথিত ধর্মগুরুদের দ্বারা নারীদের রেপ হওয়া খুবই কমন একটি বিষয়। নানা কুটকৌশলে সহজ-সরল নিরীহ মানুষের ধন-সম্পদ লুটে নেবার ঘটনাও ঘটে হরহামেশাই।
ভারতীয়দের কাছে গরু খুব পবিত্র প্রাণী। তাই গরুর গোবর ও মূত্রও তারা ব্যবহার করে অপবিত্র কোন কিছুকে পবিত্র করতে। কিছুদিন আগে পড়েছিলাম, গোমূত্র যেহেতু পবিত্র, তাই হাসপাতাল পরিষ্কার রাখতে ব্যবহৃত হবে গোমূত্র এবং ডাক্তাররা তাতে আপত্তি করেননি। কতটা অন্ধবিশ্বাস!!!
ভারতীয় হিন্দী ছবি 'পিকে' - তে হিন্দুদের নানা ধর্মান্ধতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষ ধর্মগুরু রাম রহিম সিং - এর ধর্ষণের শাস্তির পরিপ্রেক্ষিতে তার ভক্তদের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত ৩১ জন নিহত, ২৫০ জন আহত ও অনেক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা আর একবার তাদের ধর্মান্ধতার প্রমাণ দিল। মূলত অশিক্ষা ও কুশিক্ষার কারণে নিম্নবিত্ত হিন্দুরা এসব অন্ধবিশ্বাসে বেশী আক্রান্ত।
বাংলাদেশেও এমন অনেক কুসংস্কার প্রচলিত। মাজার পূজা, ঝাড়ফুঁক, পীরের মুরিদ,... এমন অনেক কুপ্রথা আমাদের দেশেও প্রচলিত। আপনি যতই বলুন এগুলো পাপ, কিছু লোকের ভন্ডামী ও লোক ঠকিয়ে পয়সা হাতানোর কৌশল ছাড়া কিছু নয়, তারা কিছুতেই বিশ্বাস করবেনা। এদের গুরু বা পীরের প্রতি অসীম ভক্তি এদেরকে অন্ধ করে দেয়।
আমি এসব গুরুদের মানুষকে সম্মোহিত করার ক্ষমতা দেখে অবাক হই। অল্প কিছু মানুষের এমন ক্ষমতা থাকে যাঁরা অগণিত মানুষকে তাঁর কথা মানাতে বাধ্য করতে পারেন। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার কথা মনে আছে? নেতাজি সুভাস বসু, মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু,....। সারা বিশ্বে এমন মানুষরা তাঁদের ক্যারিশ্ম্যাটিক পার্সোনালিটি দিয়ে পাল্টে দিয়েছেন নিজ নিজ দেশের চেহারা। ভাবুন তো, এই ধর্মগুরুরা যদি তাদের সম্মোহনী শক্তি ব্যবহার করে মানুষকে ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ করতেন, তাহলে কত ভাল হতো!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৩৫