ভারতের সুপ্রীম কোর্ট মুসলিমদের মধ্যে ডিভোর্সের "তিন তালাক" প্রথাকে 'বেআইনি', 'অসাংবিধানিক' ও 'ইসলামের অংশ নয়' বলে তা বাতিল করেছে। এর আগে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও বিধানটি আইন করে বাতিল করা হয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরে 'ধর্মের বিধান' আখ্যা দিয়ে এ অমানবিক ও পাপ কাজটি লোকে দিনের পর দিন করে এসেছে।
এরকমই আরেকটি কুপ্রথার নাম সতীদাহ। সতীদাহ প্রথা চালু হয়েছিল ধর্মের দোহায় দিয়ে নারীর সম্পদ হরণের কূটকৌশল থেকে। মোহরানা মাফের বিষয়টিও তাই। ইসলামে স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করা পুরুষের জন্য ফরজ। অথচ অধিকাংশ পুরুষরা বিয়ের রাতে স্ত্রীর কাছে মোহরানা মাফ চেয়ে নেন, স্ত্রীর ন্যায্য পাওনা দেননা যা ইসলামের খেলাফ।
ইসলামে মাজার পূজা নিষিদ্ধ। অথচ বাংলাদেশের আনাচে কানাচে থাকা অসংখ্য মাজারগুলোতে দানবাক্স বসিয়ে অগনিত মানুষের কষ্টার্জিত কোটি কোটি টাকা ধর্মের নামে কিছু অপরাধী লুটে নিলেও সেগুলো বন্ধ করার বিষয়ে কারো কোন তৎপরতা নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাড়ায় শিক্ষকদের বাসভবনের পিছনে একটি মাজার আছে। প্রায়ই সেখানে সারারাত ধরে অতি উচ্চশব্দে গান বাজতে থাকে। এই শব্দে পড়ালেখা, ঘুমানো দায়। একজন মৃত মানুষের কবরের উপরে গানবাজনা করা কি উচিত? আমি কয়েকজন শিক্ষককে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন এই মাইক বাজানো বন্ধ করা যায়না? তারা বলেছে, মাজারে নাকি গাঁজার আসরও বসে। এই মাজারের আয়ের বখরা নাকি নেতা - পুলিশ সবাই পায়। তাই এসব বন্ধ হবেনা।
এসব ধর্ম পাপীরা চালাকী করে মাজারের আশপাশে মসজিদ বানায়, যাতে লোকেদের বোঝানো যায় যে তারা মসজিদে দান করছে। এতিমখানার নামেও টাকা তোলা হয়। অথচ এসবের অধিকাংশই ভুয়া। অনেক মানুষ মাজারে মানত করে, শিরনী দেয়, রান্না করে মাজারে খাইদাই করে। এ সবই বেদাআত। শুধু কবর জিয়ারতের বা নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রেখে দানবাক্সগুলো সরানো, রান্না ও গান বন্ধ করা দরকার।
আমাদের দেশে শুনি ভিক্ষুকরা কোটিপতি। তারা মসজিদের নামে, মেয়ের বিয়ে, চিকিৎসা, কাফনের কাপড়, ইত্যাদির কথা বলে (মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে ব্যবহার করে) মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে, মানুষকে ঠকায়।
ধর্মের নামে লোক ঠকানো বন্ধ করা যায়। আমাদের দান বা যাকাতের অর্থ নিজের দরিদ্র আত্মীয় বা পরিচিতদেরকে দেয়া উচিত, ভণ্ড ভিখারীদের বা মাজারে নয়। পরিচিত মসজিদ বা এতিমখানায়, পরিচিত অসুস্থ মানুষকেও টাকা দেয়া যায়। পরিচিত গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য টাকা দেয়া বেশী ভাল। এরা ভিক্ষা করতে পারেনা।
আমাদের এ উপমহাদেশে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, ইত্যাদি সবক্ষেত্রে নারীর প্রতি নানারকম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। তালাকের পর খোরপোষ, মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে বিধবা স্ত্রীর হক, বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের হক, স্ত্রীর সম্পত্তি বা অর্থ স্ত্রীকে তার ইচ্ছামত খরচ করতে দেয়া, এমনকি বাবার বাড়ী থেকে দেয়া স্ত্রীর সম্পদ ও (স্বামীরা নিজেদের দখলে নেয়, স্ত্রীদের দেয়না) বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেয়া হয়না যা ধর্মের খেলাফ। বাংলাদেশের শতকরা আশিভাগ নারী স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত ( অশ্রাব্য গালি, নির্মম প্রহার, জখম, এমনকি খুন) হলেও এতে ধর্মের খেলাফ হয়, একথা কেউ বলেনা।
আমার মনে হয় পৃথিবীতে মেয়েদের প্রতি যত বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তারমধ্যে মানসিক দিক থেকে সবচেয়ে নির্মম হল স্বামীর বহুস্ত্রীর একসাথে বসবাস, মানে বহুবিবাহ। একটা মেয়ের জন্য চোখের সামনে তার স্বামীর অন্য স্ত্রীর ঘরে শুতে যেতে দেখাটা যে কতটা অমানবিক, একটু কল্পনা করলেই বোঝা যায়। মেয়েরা এমন করলে পুরুষদের কেমন লাগবে? মাঝরাতে স্ত্রীর মোবাইল ফোন বেজে উঠলে যেখানে পুরুষদের গায়ের সব লোম খাড়া হয়ে যায়, সেখানে...।
ইসলাম ধর্মে মেয়েদেরকে সবচেয়ে বেশী সম্মান ও অধিকার দেয়া হয়েছে। নানা অজুহাতে তা লংঘণ করা হয়। একটা উদাহরণ দেই। সব পুরুষরা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করে বলে, ইসলামে চারটা পর্যন্ত বিয়ে হালাল। অথচ পবিত্র কোরআনে কোথাও সাধারণ নারীদের ব্যাপারে এই কথা বলা হয়নি, শুধু এতিম মেয়েদের ক্ষেত্রে তা বলা হয়েছে এবং তার সাথে পবিত্র কোরআনে 'যদি' শব্দটি জুড়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যদি এরুপ আশঙ্কা দেখা দেয় যে এতিম মেয়েদেরকে নিরাপদে রাখা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না, তাহলেই শুধু তাদের বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ চারটি পর্যন্ত। কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে বিয়ের অনুমতি নেই। সাধারণ মেয়েদের ক্ষেত্রে তো আরোই নেই।
পবিত্র কোরআনে শর্ত-সাপেক্ষে একাধিক বিয়ের অনুমতি দিয়েছে মাত্র একটা জায়গায়, সুরা নিসা’র ৩ নম্বর আয়াতে − “এতিমদের তাদের সম্পদ বুঝাইয়া দাও। খারাপ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করিও না। আর তাহাদের ধনসম্পদ নিজেদের ধনসম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করিয়া তাহা গ্রাস করিও না। নিশ্চয় ইহা বড়ই মন্দ কর্ম।
আর যদি তোমরা ভয় কর যে এতিম মেয়েদের হক যথাযথভাবে পূরণ করিতে পারিবে না, তাহা হইলে সেই সব মেয়েদের মধ্য হইতে যাহাদিগকে ভাল লাগে তাহাদিগকে বিবাহ করিয়া নাও দুই, তিন বা চারিটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে তাহাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখিতে পারিবে না তবে একটিই”।
সুরা নিসার আয়াত ১২৯ − “তোমরা কখনও নারীদিগকে সমান রাখিতে পারিবে না যদিও ইহা চাও” - এর ভিত্তিতে কিছু মওলানা চিরকাল দৃঢ়ভাবে দাবি করেছেন যে, পবিত্র কোরআন বহুবিবাহ বাতিল করে এক স্ত্রী রাখার বিধান বহাল রেখেছে। কারণ “ন্যায়সঙ্গত” অর্থাৎ “আদ্ল”-এর মধ্যে প্রেম-ভালবাসাও অন্তর্ভুক্ত যা সমান ভাগে ভাগ করা যায় না। তাঁরা বলেন বিত্তশালী স্বামীরা তাদের চার বৌকে সমান সমান বাড়ি-গাড়ি দিয়ে রাখলেই কি তাদেরকে সমান সমান ভালবাসা দেয়া সম্ভব? ভালবাসা কি সমান সমান অংশে ভাগাভাগি করার জিনিস? যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে মুসলিমদের বহুবিবাহ কি ধর্মের খেলাফ বা পাপ নয়?
ইসলামে বহুবিবাহ জায়েজ না হলে (এতিম বা অরক্ষিত মেয়েদের বিষয়টি ও প্রথম স্ত্রীর কোন ন্যায্য সমস্যা থাকা ছাড়া) পুরুষদের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ..... বিয়ে কি বৈধ? যদি না হয়, তাহলে বিয়ের পরে শারীরিক সম্পর্ক, বাচ্চা..... এসব কি বৈধ???
ধর্ম ও আইন মানুষের জন্য। মানুষের প্রয়োজনে যেকোন আইন (ধর্মীয় আইনও) পরিবর্তিত হয়। যেমন - সৌদি আরবে নামাজ না পড়লে জেল হয়, যদিও ধর্মে ধর্ম পালনের জন্য কাউকে শাস্তি দেয়া বা বাধ্য করতে বলা হয়নি। হিন্দুধর্মমতে মেয়েরা বাবামার সম্পত্তি পেতনা। এখন তারা এ ধর্মীয় আইন পরিবর্তন করে নিয়েছে। আগে হিন্দুদের ডিভোর্সের বিধানও ছিলনা। এখন আছে। বাংলাদেশে আইন হয়েছে, বাবামাকে না দেখলে ছেলের জেল হবে, শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে না দেখলে ছেলে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারবে, দ্বিতীয় বিয়ে করতে হলে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি লাগবে - এগুলোর কোনটাই ধর্মে নেই।
পুরুষরা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য বহুবিবাহের মত অনেক আইন বানিয়ে নিয়েছে, এখনও নিচ্ছে। ইরানের পার্লামেন্ট আইন পাস করেছে যে বয়স ১৩ বছর হলেই পিতা তার পালক কন্যাকে বিয়ে করতে পারবে।
সম্প্রতি তুরস্কের পার্লামেন্ট একটি আইন পাশ করতে যাচ্ছে। তা হল, ধর্ষক ধর্ষিতাকে বিয়ে করতে রাজী হলেই তার ধর্ষণের শাস্তি মাফ করে দেয়া হবে। ধর্মে কি এমন নির্দেশনা আছে? মেয়েদেরকে পুরুষের আজ্ঞাবহ করে রাখার জন্য মিথ্যে বলা হয়, "স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত" যা ধর্মের কোথাও বলা নেই।
ভারতের দিল্লী হাইকোর্ট সম্প্রতি আরেকটি রায় দিয়েছে বয়স্কদের জন্য যা ধর্ম বিরোধী। দিল্লী হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, বাবামার বাড়ীর উপরে ছেলেদের কোন আইনগত অধিকার থাকবেনা। তারা বাড়ীতে থাকতে পারবে কি পারবেনা, তা বাবামার বিবেচনার উপর নির্ভর করবে। এর ফলে ছেলেরা বাবামাকে বাড়ী থেকে বের করে দিতে বা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিতে পারবেনা। ভারতে বর্তমানে সন্তানেরা বাবামাকে বাড়ী থেকে বের করে দিচ্ছে, বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে, এমনকি কোন কোন এলাকায় বিষের ইন্জেকশন দিয়ে বৃদ্ধ বাবামাকে সন্তানেরা খুন পর্যন্ত করছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেয়া হয়েছে।
ধর্মের দোহায় দিয়ে ভারতের হিন্দুরা মুসলিম খুন, মায়ানমারে মুসলিম খুন করছে। তালেবান বা আইসিসরা জোরপূর্বক ইসলামী রাষ্ট্র বা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে গিয়ে ধর্মের খেলাফ করছে। কেননা হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান-নাস্তিক একই স্রষ্টার সৃষ্টি এবং কুরআন ও হাদিসে জোর করে কাউকে ধর্ম পালনে বাধ্য বা খুনের অনুমতি নেই। যেমন -
"সাবধান! ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, তোমাদের পূর্বে যারাই ধর্ম নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছে তারাই ধ্বংস হয়েছে।" [মুহাম্মদ (সঃ)]
“ধর্মের ব্যাপারে কোন জোরজবরদস্তি নেই।" [সূরা বাকারাহঃ২৫]
"যারা অন্য দেবতাদের পূজা করে, সেসব দেবতাদেরকে তোমরা গালি দিও না।" [সূরা আনয়ামঃ১০৮]
"তোমার ধর্ম তোমার, আমার ধর্ম আমার।" [সূরা কাফিরূনঃ০৬]
মাজার পূজা, নারী নির্যাতন, ঘুষ, খুন, মজুতদারী, অন্যায়, রডের বদলে বাঁশ দেয়া, শিয়া-সুন্নি বিরোধে শত শত মুসলিম হত্যা, নানা জঙ্গী গোষ্ঠী দ্বারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা,.. এগুলো বন্ধ হওয়া বেশী জরুরী। ধনী মুসলিম দেশগুলোর লোকেদের বিলাসিতা ও নানা পাপকাজ ও বিধর্মীদের সাথে হাত না মিলিয়ে গরীব মুসলিম দেশগুলোর সাহায্যে এগিয়ে আসা বেশী জরুরী।
ইসরাইলকে গালি দেয়ার চেয়ে বেশী জরুরী ধনী, ক্ষমতাবান মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। কারণ তারা "মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই" নীতি অমান্য করছে। মুসলিম দেশগুলো মুসলিম দেশগুলোকে সাহায্য না করে সার্থের জন্য হাত মেলায় ইহুদীদের সাথে। তাহলে দোষ কার? এক্ষেত্রে মুসলমানই কি মুসলমানের শত্রু নয়?
হিন্দুরা ধর্মকে ব্যবহার করে মুসলমানদের খুন করছে, তাদের ঘরবাড়ি সম্পদ লুট করছে। মায়ানমারের বৌদ্ধরাও তাই। ইহুদীরা মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষের কারণে তাদেরকে হত্যা করতে দ্বিধা করেনা। মুসলিম শিয়া ও সুন্নীরা একে অন্যকে খুন করে, মুসলমানরা কাদিয়ানীদের, নাস্তিকদের, সমকামীদের দেখতে পারেনা ধর্মের কারণে। কেউ সমকামী, নাস্তিক বা কাদিয়ানী হলে একজন মুসলিমের কি সমস্যা? যার পাপ তার। অন্য কারো নয়।
ইসলাম বলছে, একজন মানুষকে ( মুসলিম বা বিধর্মী বা নাস্তিক হলেও) খুন করার অর্থ গোটা মানবজাতিকে খুন করা। তাহলে গোটা মানবজাতিকে খুন করে বেহেশ্তে যাওয়া কিভাবে সম্ভব? হলি আর্টিজানের জঙ্গীরা নাকি মানুষ খুন করে বেহেশ্তে চলে গেছে!!! এতই সহজ???
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর অভ্যাস ছিলো কোনো না কোনো মেহমানকে সাথে নিয়ে খাওয়া। একদিন তিনি অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও কোন মেহমান না পেয়ে একজন বৃদ্ধ ভিক্ষুককে নিয়ে খেতে বসলেন। ইব্রাহীম (আঃ) বিসমিল্লাহ্ তথা আল্লাহর নামে খাবার মুখে তুললেন; কিন্তু ভিক্ষুক বিসমিল্লাহ্ না বলেই খাওয়া শুরু করল। ইব্রাহীম (আঃ) ভিক্ষুককে প্রশ্ন করলেন, "আপনি আল্লাহর নাম না নিয়েই খাওয়া আরম্ভ কেন করলেন?"
ভিক্ষুক বলল, "আমি বাপু আল্লাহ্-তে বিশ্বাসী নই। পেলে খাই, আর না পেলে না খেয়েই থাকি। কারো নাম নেওয়ার দরকার মনে করি না।"
ইব্রাহীম (আঃ) খুব রাগান্বিত হয়ে বললেন, "হে অকৃতজ্ঞ বান্দা! তুমি এখান থেকে চলে যাও। আমার এই খাবার তোমার মত নাফরমান ব্যক্তির জন্য নয়।" বৃদ্ধ ভিক্ষুকটি তখন মন খারাপ করে না খেয়েই সেখান হতে চলে গেলেন। সাথে সাথে আল্লাহর পক্ষ হতে ওহী আসলো যে, "হে ইব্রাহীম! আমি এই ভিক্ষুককে দীর্ঘ ৮০ বছর যাবৎ আহার করিয়ে আসছি। আমি কখনোই অভিযোগ করি নাই, কারণ সে আমারই বান্দা। আর তুমি তাকে এক বেলা খাওয়াইতে রাজি হলে না!!!"
ইব্রাহীম (আঃ) তখন তাঁর ভুল বুঝতে পারলেন, এবং ভিক্ষুককে খুঁজতে লাগলেন, কিন্তু তাকে আর পেলেন না। অতঃপর অনুতপ্ত হলেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন।
তার মানে কেউ চাইলে ধর্ম পালন নাও করতে পারে। কাউকে ধর্ম মানতে ইসলাম বাধ্য করতে বলেনি।
আফগানিস্তানে তালেবানরা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে গিয়ে ইসলামী আইন লংঘন করে। ইসলাম দ্বীনের দাওয়াত দিতে বলেছে। কাউকে ধর্ম মানাতে বাধ্য করতে বলেনি। কারণ প্রতিটা মানুষের পাপ, পূণ্যের হিসাব রাখার জন্য দু'জন ফেরেশ্তাকে আল্লাহ নিয়োজিত করেছেন এবং মানুষ তার প্রতিটা ভাল ও মন্দ কাজের হিসাব কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে দিতে বাধ্য হবে। সুতরাং কেউ কোন পাপ করলে তার শাস্তি সেই ব্যক্তিই পাবে, অন্য কেউ পাবেনা। যেমন - যে নামাজ পড়ল না, রোযা রাখলোনা, আল্লাহকে বিশ্বাস করলোনা, তার শাস্তি আল্লাহই তাকে দেবেন। সুতরাং আমাদের তাতে বিচলিত হবার কিছু নেই। কেউ লালনের মূর্তি বা সুপ্রিম কোর্টের সামনের মূর্তিকে পূজা করেনা। যদি কেউ করেও, তাহলে সে পাপ তার। সুতরাং ওটা সরালেই গোটা বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক হয়ে যাবেনা বা ওটা থাকলেই সবাই হিন্দু হয়ে যাবেনা। রোযা না রাখার অপরাধে আইসিসের মানুষ খুন করে রাস্তার পাশের থাম্বায় ঝুলিয়ে রাখা অন্যায়।
সৌদি আরবে নামাজ না পড়লে জেল হয়। এটিও অনুচিত। চুরি করা অপরাধ। ধর্ম না মানা অপরাধ হওয়া উচিত নয়। কারণ কারো ধর্ম মানার যেমন অধিকার আছে, তেমনি কারো ধর্ম না মানার অধিকারও থাকা উচিত। কেউ স্বেচ্ছায় দোজখে গেলে কারো আপত্তি থাকা উচিত নয়। কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত হেদায়েত হয়না, যতক্ষণ আল্লাহ তাকে হেদায়েত না করেন।
আফগানিস্তানে জোর করে আল্লাহর আইন মানতে বাধ্য করতে গিয়ে স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া হলো। অথচ ইসলাম বলছে, "বিদ্যা শিক্ষা করা প্রতিটি নরনারীর জন্য ফরজ, বিদ্যা শিক্ষার জন্য প্রয়োজনে সুদূর চীনে যেতে বলা হয়েছে। কোরআনের প্রথম শব্দ পড়, বিদ্যানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র। এই কথা বলতে গিয়েই গুলি খেল মালালা। কিছু মানুষের জোর করে ধর্মের নামে জুলুম করার ফলে আফগানিস্তান তছনছ হয়ে গেল।
ক্ষমতাবানরা ক্ষমতার দাপটে ধর্মের নামে বা অন্য কোন অজুহাতে মানুষের উপর নির্যাতন করে, করছে, করবে। যত দীর্ঘ সময় ধরেই মানুষের উপরে অন্যায় জুলুম, নির্যাতন চলুক না কেন, অন্যায় অন্যায়ই। অন্যায় কখনোই ন্যায় হয়ে যায়না। ভারতীয় এ রায়কে সাধুবাদ জানাই। সেইসাথে প্রত্যাশা করি, সারা পৃথিবীতে যত অন্যায় আইন বা নিয়ম (ধর্মীয় বা অন্য যেকোন) প্রচলিত আছে, সেগুলো বাতিল হোক, বন্ধ হোক। বোমা মেরে, গুলি করে বা অন্য যেকোন ভাবে নিরপরাধ মানুষ হত্যা বন্ধ হোক। মানুষ ভাল থাকুক। মানবতার জয় হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৪৩