তুমি যেওনা সোনা, এভাবে যেতে নেই।
এভাবে চলে গেলে নড়বড়ে হয় বিশ্বাসের ভীত,
ভালবাসার দেয়াল থেকে খসে পড়ে
নির্ভরতার পলেস্তারা।
শত কষ্ট সহ্য করে যে মা চোখে স্বপ্ন বোনে নয় মাস ধরে,
মনে তার প্রথমবার 'মা' হবার আকুলি বিকুলি,
আসছে আশ্বিনে নিশ্চয় তার কোলে খেলা করবে
ফুটফুটে এক দেবশিশু।
যে মাঝি ঝড়ের আভাস দেখেও নৌকা ভাসায় গাঙের জলে,
চোখে তার হিমালয়সম অটল বিশ্বাস।
রূপালী ইলিশের ঝাঁকা মাথায় নিয়ে
ঠিক ফিরে যাবে আপন কুটিরে।
সুদিনের আশায় যে নববধূকে ছেড়ে স্বামী হয়েছে প্রবাসী,
ঘোমটার আড়ালে মনে তার বিরহের জ্বালা,
গভীর রাতে শূন্য বিছানায় চাঁদের আলো পড়লে সে ভাবে,
এবার এলে পতিকে বেঁধে রাখবে শাড়ীর আঁচলে।
যে শিশু বাবার অপেক্ষায় দিন গোণে রোজ,
সে জানে, মাস শেষে লাল জামা কিনে শহর থেকে
বাবা বাড়ী আসবে ঠিক।
চলকেট, বেলুন, খেলনা গাড়ীও থাকবে হাতে।
যে কৃষক আকাশের কালো মেঘের ডাকশুনে বোঝে,
আসছে বর্ষায় তার সবটুকু জমি ছেয়ে যাবে সবুজ ফসলে,
তার মনেও সুদিনের স্বপ্ন -
মেয়ের বিয়ে হবে ধুমধাম করে।
যে কিশোর তার নিপূণ হাতে বানিয়েছে লাল-নীল কাগজের ঘুড়ি,
হাতে তার শক্ত করে ধরা আছে নাটাই।
মনে তার ভরসা অবিচল
দখিনা বাতাস এলে ঠিকই ঘুড়ি উড়ে যাবে মধ্যগগনে।
যে ছেলে যুদ্ধে গেছে স্বাধীনতা আনবে বলে,
মাকে বলে গেছে, "বরণডালা সাজিয়ে রেখো।"
মা কি পারে ছেলের কথা অবিশ্বাস করতে?
সেই থেকে ঠায় বসে আছে পতাকার অপেক্ষায়।
এভাবে যেওনা। ফাগুন এলে কি বলব তাকে?
গাছের শাখারা যখন প্রশ্ন করবে, ফুল ফোটেনি কেন?
কি কৈফিয়ত দেব তাদের?
বিধাতা যদি প্রশ্ন করেন, "তোমাদের মনে পুঁতেছিলাম ভালবাসার বীজ।
সেখানে অবিশ্বাস আর ঘৃণার জন্ম দিল কে?"
আমি বলতে চাইনা, "তোমার চলে যাওয়াতে বিরাণ হয়েছে ধরিত্রী,
মানুষের মন থেকে ভরসা হয়েছে নির্বাসিত।"
ভালবাসলে পাশে থাকতে হয় আজীবন।
তোমার প্রস্থানে 'ঘৃণা' হবে 'ভালবাসা'র নতুন নাম,
রাতের শেষে ভোর কিংবা শীতের শেষে বসন্ত আসবেনা।
এভাবে যেওনা, এভাবে যেতে নেই।
আলপনা তালুকদার
১৯ আগস্ট,২০১৭
রাজশাহী
(ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:১১