কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি কথা। কখনও জেনেশুনে, কখনও অজান্তে, আবার কখনও অনিচ্ছাসত্ত্বে বাধ্য হয়ে বাবামা সন্তানদের সাথে অহরহ এমন কিছু আচরণ করেন যার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের উপর নির্যাতন করেন। কখনও শারীরিক, কখনও মানসিক নির্যাতন। সংখ্যায় কম হলেও কখনও কখনও সন্তানরা বাবা ও মা ( মা সন্তানকে নির্যাতন থেকে বাঁচাতে পারেনা বলে বা নির্যাতনের কথা জেনেও চুপ করে থাকে বলে সে নিজেও নির্যাতনকারী) দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। বাবামার নানা নির্যাতনের উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। যেমন -
১। বাবামার ত্রুটিপূর্ণ প্রতিপালনঃ
ক) কলহপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশঃ একটা শিশুর দেহ ও মনের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য সুস্থ ও স্বাভাবিক পারিবারিক পরিবেশ খুবই জরুরী। মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা (গর্ভকালীন ও জন্ম পরবর্তী সময়ে) শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশকে চরমভাবে প্রভাবিত করে।
মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন যে, শিশুদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের জন্য ভগ্নগৃহ বা ব্রোকেন হোমের (পরিবারে মৃত্যু, বিবাহবিচ্ছেদ, সেপারেশন বা ডিজারশনের কারণে স্বামী বা স্ত্রী যে কোন একজনের অনুপস্থিতি) চেয়ে কলহপূর্ণ পরিবার ( যে পরিবারে বাবা-মা অধিকাংশ সময়ে কলহে লিপ্ত) অনেক বেশী ক্ষতিকর।
বাবা-মার ঘন ঘন কলহ শিশুর মনে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। কেননা তার নিরাপত্তা বিধান ও স্বার্থ রক্ষার একান্ত আশ্রয়স্থল (বাবা-মা) সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়ে। বাবা-মার দ্বন্দ্ব শিশুর আত্মদ্বন্দ্বে পরিণত হয়, যার মীমাংসা সে করতে পারেনা। পরিণামে শিশুর চরম মানসিক বিপর্যয় ঘটে। অনেক বাবামা সন্তানের সামনে কলহ করেন বা তাঁদের সমস্যা সমাধানে সন্তানকে মধ্যস্থতা করতে বলেন। অল্প অভিজ্ঞতার কারণে শিশু এ কলহ মেটানোর কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে অপরাধবোধে ভোগে। এ কলহের জন্য নিজেকে দায়ী করে ও দুশ্চিন্তা নিয়ে বড় হয়। সে ভীরু হয় ও তার আত্মবিশ্বাস কমে যায়। তাছাড়া বাবার দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনে মা যখন কষ্টে থাকে, তখন সে সন্তানদের দিকে প্রয়োজনীয় মনোযোগ দিতে পারেনা। ফলে শিশুরা হতাশা, ভয়, নিরাপত্তাহীনতা, অপরাধবোধ, স্নেহবঞ্চনা, দুশ্চিন্তা... এসবে ভোগে। অনেক বাবারা মায়ের সাথে সাথে সন্তানদেরও গালি দেয় ও মারে।
বাবা-মার মধ্যে কলহপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে বড় হলে শিশুদের নানারকম মানসিক ক্ষতি হতে পারে। প্রচণ্ড মানসিক চাপ থেকে নানা মানসিক সমস্যা ও রোগ যেমন- দূর্বল ব্যক্তিত্ব, পরনির্ভরশীল, নানা পরিবেশ ও মানুষের সাথে সঙ্গতিবিধানের অক্ষমতা, কাউকে বিশ্বাস করতে বা ভালবাসতে না পারা, ট্রমা, এংজাইটি, ক্রনিক ডিপ্রেশন, ফোবিয়া, অবসেসিভ এন্ড কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, পোস্ট ট্রমেটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার... ইত্যাদি হতে পারে।
পিতা-মাতার প্রত্যাখ্যান ( Parental Rejection) শিশুর জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। পরকীয়া বা দ্বিতীয় বিয়ে বা অন্য কোন কারণে সন্তান বাবামার কাছে অবাঞ্ছিত হলে তারা সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত ঔদাসীন্য ও অনীহা প্রদর্শন করে। একে নিষ্ক্রিয় প্রত্যাখ্যান ( Passive Rejection) বলে। আবার কখনও বাবামা সন্তানের প্রতি রূঢ় ও উৎপীড়নমূলক আচরণ করতে পারে। একে সক্রিয় প্রত্যাখ্যান ( Active Rejection) বলে। এ উভয় প্রত্যাখ্যানই শিশুর উপর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। তারা সমস্ত জগৎ সংসারকে অত্যন্ত নিষ্ঠুর স্থান মনে করে। এরূপ পীড়নমূলক অবস্থায় নিজেকে সম্পূর্ণ অসহায় বোধ করে, তার সামাজিক অভিযোজন প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হয়। পরিণামে বিভিন্ন মানসিক গোলযোগে আক্রান্ত হয়। কৃত্রিম পরিবেশ ( যেখানে সামাজিক কারণে বাবা-মা সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন, প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্যে কোন সুসম্পর্ক থাকেন।) ও শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ নারী তার নিজ গৃহে অতি আপনজন দ্বারা নির্যাতিত। তারমানে এই আশি ভাগ নারীর সন্তানেরা প্রতিনিয়ত মাকে নির্যাতিত হতে দেখে। এসব কলহপূর্ণ পরিবারে বেড়ে ওঠা শিশুরা ভয়, দুশ্চিন্তা, কষ্ট নিয়ে বড় হয় যা তাদের প্রতি বাবামা দ্বারা মানসিক, কখনও কখনও শারীরিক নির্যাতন।
খ) বাবামার অতিরক্ষণঃ কিছু বাবামা সন্তানদের অতিরিক্ত আগলে রেখে বড় করেন। তাদেরকে নিজে নিজে কোন কিছু করার স্বাধীনতা দেননা। সবসময় বাবামার হুকুম মেনে চলতে বাধ্য করেন। হুকুম না মানলে বাবামা দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।
গ) অরক্ষণঃ কোন কোন বাবামা নিজেদের ব্যস্ততার কারণে সন্তানের প্রতি যথেষ্ট খেয়াল করতে পারেন ন। সন্তানের দেখাশোনা কাজের লোকের উপর দিয়ে রাখেন। সন্তান কখন কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কার সাথে মিশছে, এসব কিছুই খেয়াল করেন না। এসব শিশুকে অরক্ষিত শিশু বলে। এসব শিশুরা সহজে নানা নির্যতনের শিকার হয়। তানহারা তার প্রমাণ। বস্তির শিশুরা অরক্ষিত বলেই তারা হারিয়ে যায়, পাচার হয়, নানা অপরাধে জড়ায়, কেউ চুরি করে নিয়ে গিয়ে অঙ্গহানি করে ভিক্ষা করায়। অনাদরে বেড়ে ওঠা এসব শিশুরা অবহেলিত ও নির্যাতিত হয়। বাবামার আর্থিক অসঙ্গতি কখনও কখনও শিশু শ্রম ও শিশু নির্যাতনের কারণ। সম্প্রতি কাজের মেয়ে নির্যাতনের বিভৎসতায় বিষয়টি প্রকটভাবে উঠে এসেছে।
ঘ) সন্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্ত্বমূলক আচরণঃ বাবামার কোন কোন সন্তানের প্রতি ( ছেলে সন্তান, পড়ালেখায় ভাল সন্তান, ছোট বা অসুস্থ সন্তান ইত্যাদি) পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ অন্য সন্তানদের প্রতি, বিশেষ করে মেয়ে সন্তানের প্রতি মানসিক নির্যাতনের কারণ। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থায় মেয়ে সন্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু হয় তখন থেকেই যখন জানা যায় গর্ভস্থ শিশুটি মেয়ে। ছোটবেলা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা পরিবার, প্রতিবেশী, স্কুল, খেলার সাথী, শিক্ষক, সমাজ - এদের কাছ থেকে দিনে দিনে একটু একটু করে শেখে যে মেয়েরা নীচু শ্রেণীর জীব, পুরুষের আজ্ঞাবহ, চাকর সমতুল্য এবং কোনমতেই সে পূর্ণাঙ্গ মানুষ নয়।
ঙ) অতিরিক্ত পড়ার চাপঃ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থারয় সৃজনশীল পদ্ধতি, পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষা, অতিরিক্ত পাঠ্য বই ও গাইড বই পড়ার চাপ, প্রাইভেটের চাপ, পরীক্ষার চাপ, ভর্তি পরীক্ষার তীব্র প্রতিযোগিতা ইত্যাদি কারণে আমরা ছেলেমেয়েদের সারাক্ষণ পড়তে বাধ্য করি যা ওদের প্রতি মানসিক নির্যাতন। আমরা ওদের খেলার, বিনোদনের সময় দেইনা। আগে পরীক্ষার পর ছেলেমেয়েরা আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে যেত। এতে তাদের বিনোদন, আবেগিক, মানসিক, সামাজিক বিকাশ হতো। এখন ওরা পরীক্ষার পরের দিন থেকেই প্রাইভেট পড়ে। ফলে ওরা আত্মকেন্দ্রিক ও অমানবিক হয়ে গড়ে উঠছে। আমরা সবসময় পড়ার বিষয়ে সন্তানদের সামনে অন্য বাচ্চার তুলনা করি, নিজের সন্তানের দোষ ধরি, সমালোচনা করি, জোর করে নিজের মত ওদের উপরে চাপাই, পারিবারিক কোন বিষয়ে ওদের মত নেইনা,.. এগুলো সবই ক্ষতিকারক ও নির্যাতন।
চ) বাবামার অতি প্রশ্রয়ঃ
কোন কোন বাবামা অতি প্রশ্রয়, অতিরিক্ত টাকা, মোবাইল, এসব দিয়ে সন্তানকে উশৃংখল বানান। সন্তানের অপরাধকে উপেক্ষা করেন। (যেমন আমিন জুয়েলারসের মালিকের ছেলে।)এতেও সন্তানের ক্ষতি হয়। বাবামার উচিত, তাঁদের যা আছে, সন্তানকে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে শেখানো। অপচয় না করতে শেখানোও দরকার। সন্তানের মতকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে তার সব আবদার রাখা যাবেনা। তার কোন কথা মানা সম্ভব না হলে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া যাবেনা। আবার টাকা জমিয়ে না রেখে খরচ করাও জরুরী। সন্তানের ছোটখাট ইচ্ছা পূরণ করতে হবে।সন্তান দোষ করলে বাবামা একসাথে শাসন করতে হবে। একজন শাসন করলে ও অন্যকেউ প্রশ্রয় দিলে শিশুর আচরণ শোধরানো যাবেনা।
২। বাবামার অসৎ চরিত্রঃ
বিজ্ঞানীররা প্রমাণ করেছেন যে, মানুষের আচরণের জন্য দায়ী তার জিন ও পরিবেশ। বাবামা ও শিশুর চারপাশের পরিবেশ ভাল হলে সন্তান ভাল হবে। আর বাবামা অপরাধী ও পরিবেশ খারাপ হলে শিশুও অপরাধী বা খারাপ হবে।
বাবামার অসৎ চরিত্র সন্তানদের মানসিক ক্ষতি করে সবচেয়ে বেশী। বাবামা পরকীয়া করলে, ঘুষখোর, দূর্নীতিপরায়ণ, অপরাধী হলে, বাবা একাধিক বিয়ে করলে, নিকট আত্মীয়দের দেখাশোনা না করলে, বৃদ্ধ বাবামাকে অবহেলা করলে সন্তানরাও তাই শেখে। ওদের সামনে কোন গুরুজনদের সমালোচনা বা মিথ্যে বদনাম করলে শিশুরা আপনার প্রতিও শ্রদ্ধা হারাবে, তাদের আচরণে সে অশ্রদ্ধা প্রকাশ পাবে। বৃদ্ধ বয়সে তারা আপনাক ঐশীর মত খুন করবে। অথবা বৃদ্ধাশ্রমে বা কোন মসজিদের বারান্দায় ফেলে রাখবে।
যেসব পরিবারে বাবা সব খারাপ বা নেতিবাচক ঘটনার জন্য (যেমন- সন্তান ফেল করলে, বখে গেলে, দোষ করলে, ভুল করলে, প্রেম করলে, চুরি করলে, ইত্যাদি) মাকে দায়ী করে এবং যেসব পরিবারে বাবা প্রায় সবসময় মাকে নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে, সেসব পরিবারের শিশুরা বাবার কাছ থেকে ওসব আচরণ অনুকরণ করে। পরে দাম্পত্য জীবনে তারাও একই আচরণ করে। এভাবে বংশ পরম্পরায় বাবা, স্বামী, ছেলে... এভাবে নারী ও শিশুদের প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতন চলতে থাকে।
সন্তানের সুস্থ রুচিবোধ তৈরী করে দেয়া, তাদের সাথে সময় কাটানো, তাদেরকে বোঝা জরুরী। অনেক বাবামা সময় অভাবে বা টাকা অপচয় হবে বলে পরিবারকে বেড়াতে নিয়ে যাননা। বাচ্চার পড়ার ক্ষতি হবে বলে অতিথি এ্যলাাও করেননা, গরীব আত্মীয়কে সাহায্য করেননা, অসুস্থ হলে সময়ের অজুহাতে দেখতে যাননা। সন্তানকে সামাজিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা, মানবতা শেখাতে হলে নিজে এগুলোর চর্চা করুন। কারণ আপনিই শিশুর রোলমডেল। আপনাকে দেখেই শিশু শিখবে। মাঝে মাঝে একসাথে বেড়াতে যান। এতে পারিবারিক বন্ধন, আন্তরিকতা বাড়ে।
নিজে কোন ভুল বা দোষ করলে সন্তানকে 'সরি' বলুন, সন্তাকেও বলতে শেখান। সে যেন কোন কথা আপনার কাছে গোপন না করে। সন্তানের বন্ধু হোন। তাকে সত্যি কথা বলার, নিজের অপরাধ স্বীকার করার সৎসাহস তৈরী করে দিন। কোনভাবে আপনার সন্তান কারো দ্বারা নির্যাতিত হলে তার প্রতিকার করুন। কোনভাবেই তার প্রতি হওয়া কোন অন্যায় (যৌন নির্যাতন হলেও) গোপন করবেন না। তাতে সে আপনাকে ঘৃণা করবে।
৩। সন্তানের মতকে অগ্রাহ্য করাঃ
আমাদের সমাজে সন্তানের ইচ্ছার স্বাধীনতা কম। সেজন্যই পরিবার ছেলে বা মেয়েকে জোর করে অপছন্দের কারো সাথে বিয়ে দেয়। মেয়েদেরকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর নির্যাতন, পরকীয়া, বহুবিবাহ.. সহ্য করে সংসার করতে বাধ্য করে, তালাক দিতে দেয়না। ছেলেরা অবশ্য বৌ পছন্দ না হলে তালাক দেয়, দিতে পারে। আমাদের সমাজে প্রেম করার অপরাধে মেয়েদেরকে বাবামা, ভাই, চাচারা পিটিয়ে তক্তা বানায় যা কোন সভ্য সমাজে ঘটেনা। বিয়ের পরেও বাবামা ছেলের বউকে যৌতুক ও নানা কারণে নির্যাতন করে। ফলে ছেলে কষ্ট পায়। কোন কোন মা বউয়ের মতকে প্রাধান্য দিলে ছেলেকে স্ত্রৈণ বলেন, আর মেয়ের মতকে প্রাধান্য দিলে জামাইকে মহান বলেন।
ভারতে ও পাকিস্তানে কোন ছেলে বা মেয়ে পরিবারের অমতে ভিন্ন ধর্ম, জাত বা স্টেটাসের কাউকে বিয়ে করতে চাইলে যদি পরিবার তাকে নিবৃত করতে না পারে, তাহলে পরিবারের সবাই মিলে পরিকল্পনা করে ঠাণ্ডা মাথায় তাকে, কখনো কখনো তার প্রেমিকা বা প্রেমিকসহ তাকে হত্যা করা হয়। একে "honour killing" বা "পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে হত্যা" বলা হয়। সমাজ একে 'হত্যা' বা 'অপরাধ' মনে করেনা। কি জঘণ্য চিন্তা! নিজের সন্তানের সুখ, ভালবাসা, এমন কি জীবনের চেয়ে পরিবারের সম্মান বেশী প্রিয়, সম্মান রক্ষা বেশী জরুরী।
আমাদের অভিভাবকরা মনে করেন, বিয়ের জন্য ছেলের শিক্ষা, স্টেটাস বা উপার্জনটাই মূখ্য। নিজের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের সমতূল্য বা বেশী হলেই মেয়ে সুখে থাকবে। মেয়ে তাকে পছন্দ করে কিনা, তার সাথে মানসিকতা মেলে কিনা - এসব দেখার দরকার নেই। অনেক ফালতু অজুহাতে ছেলেদেরকেও বাধ্য করা হয় অপছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে।
অভিভাবকরা মনে করেন, একবার বিয়ে হয়ে গেলেই ভালবাসা আসবে হাওয়া থেকে, আল্লাহর রহমত থেকে। না এলেই বা ক্ষতি কি? একবার বাচ্চা হয়ে গেলে ভাল না বেসে যাবে কোথায়? তখন তো আর তার উপায় নেই। বাড়ীতে কুকুর পুষলেওতো মায়া হয়, আর সেখানে স্বামী বা স্ত্রী!
অভিভাবকরা ছেলে- মেয়েদের সুখের কথা ভেবেই বড় যত্ন করে তাদের অমতে বিয়ে দিয়ে তাদেরকে চরম অসুখী করেন। একটাই অমূল্য জীবনে পছন্দের মানুষের সাথে সুখে-দুখে জীবন কাটানোর আনন্দের তুলনায় সম্পদ, জাত, ধর্ম ইত্যাদি কোন কিছুই যে গুরুত্বপূর্ণ নয়, একথা অভিভাবকদের কে বোঝাবে? অনেক বাবামা মেয়ের ও ছেলের বউয়ের পড়া বন্ধ করে দেন, চাকরী ছাড়ান। এসব মেয়েদের প্রতি নির্যাতন।
শেষকথাঃ প্রতিটা শিশুর সামাজিকীকরণের প্রথম প্রতিষ্ঠান হল তার বাড়ী, তার পরিবার। এটিই তার আচরণ, মূল্যবোধ, ধারণা, বিশ্বাস, নৈতিকতা, সাহস, শিক্ষা.. ইত্যাদির ভিত্তি তৈরী করে দেয়। এই ভিত্তিই তার সারাজীবনের আচরণের মূল চাবিকাঠি। এখান থেকে সে যা শিখবে, সারাজীবন সে তাইই করবে। পরিবারে সে ভাল কিছু শিখলে সে ভাল হবে, নাহলে খারাপ।
ছেলেদেরকে ছোটবেলা থেকেই বেশী প্রাধান্য না দিয়ে সমান প্রাধান্য দিতে হবে। মেয়েদের কে মানুষ ভাবতে শেখাতে হবে যাতে সে বড় হয়ে মেয়েদেরকে অপমান, নির্যাতন বা ছোট মনে না করে। এটা খুব জরুরী।
বাবাদের উচিত ব্যস্ততার মাঝেও মাঝে মাঝে স্বামী, স্ত্রী, সন্তান বা পরিজনদের সারপ্রাইজ দেয়া। সাধ্যমত সন্তানকে উপহার কিনে দেয়া, পরিবার নিয়ে কাছাকাছি কোথাও বেড়াতে বা খেতে যাওয়া, আত্মীয় বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, অসুস্হ রিলেটিভদের দেখতে যাওয়া, ছুটিতে আত্মীয়দের বাড়ী বা দেশের বাড়ী বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি। কোনমতেই বিশেষ দিনগুলো ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এতে পরিবার আপনার কাছে গুরুত্বহীন হয়ে গেছে, এমন বাজে অনুভূতি তৈরী হয়। মাঝে মাঝে অপ্রত্যাশিত কোন উপহার দিন, বেড়াতে যান। তাহলে সন্তান বুঝবে আপনি তার আচরণে খুশী।
সন্তানকে ভালবাসুন। পৃথিবীর কোন সন্তানই যেন কোন নির্যাতনের শিকার না হয়। আর আশা করছি, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তন হোক। কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থার কারণে আমিও আমার সন্তানকে নির্যাতন করতে বাধ্য হচ্ছি। সরি বাবা, সরি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:১৮