somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমিও বুড়ো হবে

২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




তুমিও বুড়ো হবে

"কোটিপতি বাবার দাফনেও অনীহা সন্তানদের" - এই খবরটি মিডিয়াতে খুব আলোড়ন তুলেছে। আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষ গরীব। তারা বৃদ্ধ বাবামাকে না দেখলে তবু কিছুটা মানা যায় ( যদিও কোন সন্তানেরই বৃদ্ধ বাবামার দেখাশোনা না করাটা অনুচিত। এটি অমার্জনীয় অপরাধ), কিন্তু ধনী বাবামার ধনী সন্তানেরা বৃদ্ধ বাবামাকে তাঁদের সম্পদ কেড়ে নিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দিলে সেটি মানুষের বিবেককে নাড়া দেবারই কথা। হয়েছেও তাই। সবাই ছিঃ ছিঃ করছে, এমন কুলাঙ্গার ছেলেদেরকে গালিগালাজ করছে। আমি নিজেও দাবী করেছি এই কুলাঙ্গার তিন ছেলেকে পুলিশ ধরুক, তাদের শাস্তি হোক। আরো চেয়েছি সাংবাদিকরা তাদের ছবি জনসম্মুখে প্রকাশ করে দিক যাতে তারা সামাজিকভাবে ধিকৃত হয় এবং এরকম আরো কুসন্তানেরা সতর্ক হয়। যে বৃদ্ধ বাবামা তাদের জন্ম দিয়েছেন, প্রতিপালন করেছেন, তাঁদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ না করে।

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছিল, কেন তিন তিনজন ছেলে থাকতেও কোন একজন ছেলের কাছেই বাবার আশ্রয় হলোনা? যে বাবা রাতদিন খেটে ছেলেদের জন্য কোটি টাকার সম্পদ করেছেন, তাঁকেই কেন ছেলেরা বাড়ী থেকে বের করে দিল? বাবামা মারা গেলে সব সন্তানই কেঁদে বুক ভাসায়, শেষবার দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে। যথাযথভাবে দাফন করে, মৃত বাবামার জন্য দোয়া করে, দান করে। অথচ তিন ছেলের কেউই বাবার মৃত মুখ দেখতে এলোনা, দাফনে শরীক হলোনা। কেন? কি কারণ? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়াটা জরুরী ছিল। কি এমন কারণ ছিল যার কারণে ছেলেরা বাবাকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে, এমনকি তাঁকে শেষবার দেখতেও আসেনি?

খবরটা পড়ার পর আমার হুমায়ূন আহমেদের লাশ দেশে আসার পর তাঁর প্রথম পক্ষের সন্তানদের কান্নাজড়িত মুখগুলো মনে পড়ে গেছিল। বাবা মাকে ছেড়ে আবার বিয়ে করেছেন, এই অভিমানে দীর্ঘদিন বাবার সাথে মনোমালিন্য ছিল সন্তানদের। কিন্তু বাবা মারা যাবার পর সব ভুলে ঠিকই তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সবাই। এটিই হবার কথা। কোন কারণে মনোমালিন্য হতেই পারে। কিন্তু বাবামা বা সন্তান মারা গেলে আর রাগ থাকার কথা না। কিন্তু এই কোটিপতি বাবার বেলায় তা হয়নি। বাবার মৃত্যুসংবাদ শুনেও ছেলে কষ্ট পায়নি। বরং সে জরুরী মিটিং এ আছে, তাই লাশটা আন্জুমানে মফিদুলকে দিতে বলেছে।

আমার অভিজ্ঞতা থেকেে আমি অনুমান করার চেষ্টা করেছি, কেন সন্তানেরা বৃদ্ধ বাবামার দেখাশোনা করেনা, অবহেলা করে বা বাড়ী থেকে বের করে দেয়?

১। বাবামা কখনও স্বেচ্ছায়, কখনও ছেলেমেয়ের চাপে তাদের সম্পদ ছেলেমেয়ের নামে লিখে দেন। সম্পদ পাবার পর কুলাঙ্গার, অমানুষ সন্তানদের কাছে ঐ বাবামার আর কদর থাকেনা। ফলে তাঁরা নির্যাতিত হন।

২। দরিদ্র সন্তানেরা বাবামার দেখাশোনার ব্যয়ভার নিতে চায়না বলে।

৩। বাবামা দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার নেবার সামর্থ্য না থাকার কারণে।

৪। একাধিক সন্তান থাকলে একজন আরেকজনের উপর বাবামার দায় চাপাতে চায়। ফলে বাবামা অবহেলিত, নির্যাতিত হন।

৫। ছেলেমেয়েদের মধ্য সম্পদ বণ্টনে বাবামা বৈষম্য করলে অনেক সন্তান রাগ করে বাবামার দায়িত্বে অবহেলা করে।

৬। বৃদ্ধ ও অসুস্থ বাবামার দেখাশোনা করা কষ্টকর বলে।

৭। ছেলের বউরা বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর দেখাশোনা করতে চায়না বলে।

আমির খানের একটি জনপ্রিয় ধারাবাহিক অনুষ্ঠান "সত্যমেব জয়তে" - তে দেখেছিলাম, ভারতের কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে বৃদ্ধ, অসুস্থ বাবামাকে ( যারা আর সুস্থ হবেন না) তাদের সন্তানেরা বিষের ইনজেকশন দিয়ে খুন করছে। অনেক সন্তান বাবামার অর্থ, সম্পদ কেড়ে নিয়ে তাদেরকে বাড়ী থেকে বের করে দিচ্ছে বা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

কোটিপতি সেই মৃত বাবার বেলায়ও ছেলেরা তাঁর সম্পদ লিখে নিয়ে তাঁকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে। তাই সব বাবামার উচিত, কোন অবস্থাতেই তাঁর সম্পদ ছেলেমেয়েদের নামে লিখে না দেয়া। কারণ আপনি জানেন না সম্পদ না থাকলে আপনার সন্তানেরা আপনার সাথে কেমন ব্যবহার করবে। তাছাড়া আপনার বেঁচে থাকার জন্য আপনার অর্জিত সম্পদই সবচেয়ে বড় শক্তি। কারণ টাকা ছাড়া আপনি আপনার কোন প্রয়োজনই মেটাতে পারবেন না। আর আপনার মৃত্যুর পর আইন অনুযায়ী আপনার সম্পদ আপনার সন্তানদের এমনিতেই পাওয়ার কথা।

তবে যাঁদের ছেলে সন্তান নেই, তাঁরা ফৌতি হবার ভয়ে মৃত্যুর আগেই অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাধ্য হয়ে তাঁদের সম্পদ মেয়েদের নামে লিখে দেন। "মেয়ের বাবামা হওয়া কি অপরাধ?" - এই শিরোনামে একটি লেখাতে আমি এই অসুবিধার কথা বিস্তারিত লিখেছিলাম। আমার লেখাটির উদ্দেশ্য ছিল, সমস্যাটির সমাধানের জন্য বর্তমান উত্তরাধিকার আইনের (শরীয়া মেনেই) কিছুটা সংস্কার করা যাতে জীবনসত্ত্ব দান বা অসিয়ত ( ইসলামে অসিয়ত মানা ফরজ। কিন্তু আমাদের আইনে অসিয়তের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই) মোতাবেক মেয়েদের বাবামারা তাঁদের সম্পদ তাঁদের মেয়েদের নামে লিখে দিতে পারেন। এতে -

১। বেঁচে থাকা অবস্থায় বাবামা তাঁদের কষ্টার্জিত সম্পদের উপর অধিকার হারাবেন না ( মেয়েরা সম্পদ পেয়ে তাঁদেরকে অবহেলা করতে বা বাড়ী থেকে বের করে দিতে পারবেনা)। এবং

২। বাবামার মৃত্যুর পর তাঁদের সম্পদ ফৌতি হবেনা। মেয়েরা তাঁদের
বাবামার সম্পদের উপর অধিকার পাবে বা অন্য কেউ এসে তাদের সম্পদে ভাগ বসাতে পারবেনা।

আমাদের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় বৃদ্ধ বাবামার সাথে দূর্ব্যবহার নতুন কিছু নয়। প্রায়ই শোনা যায়, দেখা যায়, ছেলের বৌ বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে নির্যাতন করছে, মারছে, ছেলেরা বৃদ্ধ বাবামাকে ভাত দিচ্ছে না, বাড়ী থেকে বের করে দিচ্ছে, আলাদা হচ্ছে, সম্পত্তি লিখে নিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে বা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে, কাজ করতে বা ভিক্ষা করতে বাধ্য করছে, মাদকাসক্ত ছেলের হাতে মার খাচ্ছেন বাবামা, কেউ কেউ খুন হচ্ছেন, ছেলে ও ছেলের বৌ বৃদ্ধ মাকে গোয়ালঘরে ফেলে রাখছে। সেখানে শেয়াল মায়ের পায়ে কামড় দিয়ে মাংস ছিঁড়ে খাচ্ছে।

ছেলের বৌরা শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারে বা করে, (তার আর্থ-সামাজিক কারণ আছে), কিন্তু ছেলেরা কেন আপন বাবামাকে নির্যাতন করে বা তাঁদের দেখাশোনা করেনা???

আমাদের দেশে সবচেয়ে বৈরী সম্পর্ক হয় শ্বাশুড়ী-বৌয়ের। তার কারণও আছে। মা সীমাহীন কষ্ট করে তিল তিল করে ছেলেকে মানুষ করেন। ছেলেকে অসম্ভব ভাল বাসেন। ছেলের কাছে প্রত্যাশাও বেশী। কারণ ধর্মমতে বাবা-মার দেখাশোনার দায়িত্ব ছেলে-মেয়ে উভয়ের হলেও ছেলেদের দায় বেশী বলে সমাজ মনে করে। বউরা চায়না ছেলে সে দায়িত্ব পালন করুক। করতে গেলে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য টাকা কম পড়বে বা সঞ্চয় কম হবে। তাই শ্বশুরবাড়ীর লোকেদের পিছনে টাকা খরচ করা বৌরা পছন্দ করেনা, অপচয় মনে করে। তাই বৌরা সংসারের কর্তৃত্ব চায়। অন্যদিকে শ্বাশুড়ী কষ্ট করে একটু একটু করে নিজের সংসার সাজান, ছেলেমেয়েদের মানুষ করেন। তাই শ্বাশুড়ী ও সংসারের কর্তৃত্ব বউদের হাতে ছাড়তে চান না। ফলে দু'জনের মধ্যে সংঘাত বাধে, সম্পর্ক খারাপ হয়।

আবার সারাজীবন মা ছেলের কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। বিপত্তি ঘটে তখন, যখন বিয়ের পরে ছেলের কাছে স্ত্রী মায়ের চেয়ে বেশী প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে শারীরিক ও মানসিক প্রয়োজনে। তাছাড়া বেশীরভাগ স্ত্রী বিয়ের পর স্বামীকে নিজের হাতের মুঠোয় রাখতে চায়, স্বামীকে তার আত্মীয়দের কাছ থেকে আলাদা করার চেষ্টা করে প্রাইভেসী চাওয়ার কারণে। ফলে শ্বাশুড়ী ও অন্য আত্মীয়দের সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক খারাপ হয়।

বউরা মনে করে স্বামীর কাছে যেহেতু সে অত্যাবশ্যক, তাই স্বামীর আর কারো প্রয়োজন নেই। স্বামী ও স্বামীর আয় হলেই যেহেতু তার সব প্রয়োজন মিটে যায়, তাই বৌরা স্বামীর অন্য রিলেটিভদের 'আগাছা' মনে করে। দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।

বাবামার দূর্গতি হয় তখন, যখন ছেলেরা বাবামাকে ফেলে বউদেরকে বেশী প্রাধান্য দেয়। এসব কুপুত্ররা বাবামার সাথে অমানবিক আচরণ করে। তার দেখাদেখি বউরাও করে।

মানুষের মধ্যে প্রতিশোধস্পৃহা কাজ করে। বউকে শ্বশুর, শ্বাশুড়ী ( বিশেষ করে শ্বাশুড়ী) নানা কারণে নানাভাবে সারাজীবন নির্যাতন করে। তাই বউরাও বৃদ্ধ বয়সে শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে নির্যাতন করে বা তাদের সাথে ভাল আচরণ করেনা।

আমাদের দেশে বিছানায় পড়ে থাকা বৃদ্ধ মানুষগুলোর দেখাশোনা করা কষ্টকর। পালা করে ছেলেমেয়ে বা মূলত ছেলের বৌরা তাঁদের দেখাশোনা করে। আমার এক পরিচিত আপা (যার বাবা দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থেকে থেকে পিঠে ঘা হয়ে গেছিল) কে বলতে শুনেছি, "এত কষ্ট পাওয়ার চেয়ে আব্বার মরে যাওয়া ভাল।" এসব মানুষকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরানো কষ্টকর। ( বিদেশে ট্রলিতে করে খুব সহজে এখান থেকে সেখানে নেয়া যায়। সারাক্ষণ শুইয়ে না রেখে হুইল চেয়ারে বসিয়ে রাখা ও হয়)।

অনেকে এসব মানুষের সাথে দূর্ব্যবহার করে। বিশেষ করে যাঁরা বিছানায় টয়লেট করেন, তাঁদের সাথে। এঁদের প্রস্রাব-পায়খানা পরিস্কার করা কষ্টকর। দূর্গন্ধের কারণে এঁদের কাছে কেউ যেতে বা থাকতে চায়না। বৃদ্ধ মানুষদের বুদ্ধি কমে যাবার কারণে অনেকে এমন কিছু আচরণ করেন যা বাড়ীর লোকজন পছন্দ করেনা। যেমন, এক বাবা টয়লেট থেকে এসে হাত না ধুয়েই খেতে বসেন, নোংরা, কাদা, ধুলা মাখা জামাকাপড় পড়েই বিছানায় বসেন। একজন সারাক্ষণ বিশ্রী ভাষায় আপন মনে গালাগালি করেন। একজন সবকিছু ভুলে যান। ভাত খেয়ে একটু পরেই বলেন, বউ খেতে দেয়নি। গোসল করানো হলেও লোকের কাছে অভিযোগ করেন, বউমা তিনদিন ধরে গোসল করায়নি। একজন সারাক্ষণ সারাবাড়ি কফ, থুথু ফেলেন। ইত্যাদি।

বৌদের সাথে শ্বশুর শ্বাশুড়ীর রক্তের টান না থাকা, বৈরী সম্পর্ক থাকা বা আন্তরিকতা না থাকার কারণে বউরা শ্বশুর শ্বাশুড়ীর সাথে থাকতে বা তাদের দেখাশোনা করতে চায়না। এর হাজার হাজার ব্যতিক্রম ও আছে। আমি এক ছেলে বউয়ের কথা জানি। তারা ফজরের নামাজ পড়েই তাড়াতাড়ি শাশুড়ীর বিছানার পেশাব পায়খানা ও শাশুড়ীকে পরিস্কার করে তাঁকে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করে দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একদিনের জন্যও তাঁরা বৃদ্ধার অযত্ন করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক অসুস্থ হলে তাঁকে দেখতে গিয়ে দেখলাম, তাঁকে ডাইপার পরিয়ে রাখা হয়। কারণ তিনি পেশাব পায়খানার কথা বলতে পারেন না। ফলে বাড়ী, বিছানা নোংরা, দূর্গন্ধময় করে ফেলেন। ডাইপার থাকলে তিনি নিজেও ভাল থাকেন। তাঁকে সারারাত ভেজা বিছানায় থাকতে হয়না।

এক বউমাকে দেখলাম শ্বাশুড়ীর জন্য আলাদা ওয়াশিং মেশিন কিনে দিয়েছে। শ্বাশুড়ীর যাবতীয় নোংরা কাপড় মেশিনেই ধোয়া ও শুকানো হয়ে যাচ্ছে। কাজের মেয়েরা ঘেন্না না করে সেজন্য হাতের গ্লাভস ও দূর্গন্ধ না লাগে সেজন্য নাকের মাস্ক কিনে দিয়েছেন।

বিদেশে বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনার জন্য সরকারী হোম আছে। সেখানে বয়স্কদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, দেখাশোনার জন্য লোক আছে। তাঁদের পরিস্কার রাখার নানা ব্যবস্থা ও আছে। ফলে অসুস্থ বা বিছানাগত হলেও ধনী বা গরীব, কোন মানুষদেরই দূর্ভোগ পোহাতে হয়না। চিকিৎসা সুবিধা, কাজের নিশ্চয়তা ও পেনশনের ব্যবস্থা আছে। ফলে কোন মানুষকেই বৃদ্ধ বয়সে ছেলেমেয়েদের উপর নির্ভর করতে হয়না। তাই ছেলেমেয়েরা বৃদ্ধ বয়সে না দেখলেও কোন ক্ষতি নেই।

এর বিপরীতে আমাদের দেশে দরিদ্র পরিবারগুলোতে অবসর নিতে চাইলেও সংসারের চাকা সচল রাখার তাগিদ বয়স্ক মানুষগুলোকে কাজ করতে বাধ্য করে। এই মানুষগুলোর অবস্থা ভয়াবহ।

দরিদ্র পরিবারের অসুস্থতা বা বয়সের কারণে বিছানাগত বয়স্ক মানুষগুলোর দূর্গতি চোখে দেখার মত না। তাঁদের পেশাব, পায়খানা, বমি, কফ, ঘা পরিস্কার করার কষ্টটা ও কম নয়। একা একজন মানুষের পক্ষে এঁদেরকে নড়াচড়া করানোও সহজ নয়। দরিদ্র পরিবারগুলোতে রোগীর খাবার ও চিকিৎসা খরচ যোগানোই যেখানে অসাধ্য, সেখানে অন্য কোন সুবিধা আশা করা বাতুলতা।

শেষকথা : আমরা ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানরা যাতে কোন অসুবিধায় না পড়ে, সেজন্য রাতদিন পরিশ্রম করে সম্পদ করি, তাদের লেখাপড়া শেখাই। কোটিপতি বাবার তিন ছেলেও নিশ্চয় শিক্ষিত। কিন্তু বাবা তাদের প্রকৃত শিক্ষা দিতে পারেননি। দিলে এমন হবার কথা নয়। সন্তানের জন্য সম্পদের পাহাড় গড়ার চেয়েও বেশী জরুরী তাদেরকে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া, তাদের সাথে সময় কাটানো, একসাথে বেড়াতে যাওয়া, একসাথে খাওয়া, সন্তানের সুখ-দুখে, অসুখে তাদের পাশে থাকা, সন্তানের সাথে গল্প করা, তার বন্ধু হওয়া। তাহলে তার সাথে আপনার আত্মার টান তৈরী হবে। সে আপনাকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেও পারবেনা।

ঐ বাবা তাঁর সন্তানদের সাথে এসব করেছেন কিনা এবং কি কারণে ছেলেরা বাবাকে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে - এদুটো প্রশ্নের জবাব কোন সাংবাদিক বন্ধু বের করতে পারলে মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদদের অনেক উপকার হতো। তেমন কেউ কি আছেন?

বাবামা তাঁদের বাবামা, আত্মীয়, প্রতিবেশীদের সাথে যেমন আচরণ করেন, তাঁদের সন্তানরাও তাঁদের দেখেই নিজের বাবামাদের সাথেও অবধারিতভাবে একই আচরণ করবে। তাই আমরা কি করছি বা আমাদের দেখে আমাদের সন্তানরা কি শিখছে সেটা অনুধাবন করার সময় এসেছে। কেননা ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতেই হবে, একদিন আমরাও বুড়োবুড়ি হব।

(এই লেখাও বড় হয়ে গেল! মেয়েরা কম কথা বলতে পারেনা। আমিও মেয়ে!!!!)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:০৬
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×