মৃত ব্যক্তিরা কিভাবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে?
মৃত্যুর পরেও মৃত ব্যাক্তি দুনিয়ায় তাঁর আত্মীয়স্বজনদের দেখতে পান। কে কেমন আছে, কে কি করছে, সব বুঝতেও পারেন। শুধু কথা বলতে পারেন না। কখনও কখনও স্বপ্নে দেখা দিয়ে তাঁদের অবস্থা জানিয়ে যান বা তাঁদের মতামত দিয়ে যান। আমি কিছু সত্যি ঘটনা উল্লেখ করব যা আমার খুব কাছের মানুষের সাথে ঘটেছে। আমি ঘটনাগুলো জানি। কোন কোন ঘটনার আমি প্রত্যক্ষ সাক্ষী। তবে এগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা আমি দিতে পারবনা। সঙ্গত কারণেই আমি এসব মৃত ব্যাক্তির নাম-পরিচয় গোপন রাখছি। তবে ঘটনাগুলো আপনাদের জানাতে চাই। হয়ত এসব শুনে আপনাদের ভাবনায় কিছু পরিবর্তন হবে, হয়তো আপনাদেরও এমন ঘটনা জানা থাকাবে। হয়তো কেউ বিশ্বাস করবেন, কেউ করবেন না। কেউ হয়তো এসব ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।
১। একজন মানুষ তাঁর দুজন খুব নিকটাত্মীয় দ্বারা খুন হন। তিনি একা কোথাও যাচ্ছিলেন। আত্মীয় দুজন তাঁকে অনুসরণ করে। তিনি সেটা বুঝতে পারেননি। সন্ধ্যাবেলা তিনি যখন ফাঁকা মাঠের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তথন তাঁকে গলা কেটে খুন করে মাঠে ফেলে রেখে খুনীরা বাড়ী ফিরে আসে। রাতে মৃতব্যাক্তি তাঁর দশ বছরের ছেলেকে স্বপ্নে এসে সব কথা বলে যান। ছেলে ঘুম ভেঙ্গে যাবার সাথে সাথে সে খুনীদের গিয়ে প্রশ্ন করে, "তোমরা কেন আমার বাবাকে খুন করে শাপলার বিলের মাঠে ফেলে রেখে এলে?" পরে শাপলার বিলের মাঠেই মৃতের লাশ পাওয়া যায়।
২। এক লোক মারা গেছেন দশ বছরের বেশী সময় আগে। সেবার বন্যায় পুরো কবরস্থান ডুবে গেল। কোথায় কার কবর, বোঝার কোন উপায় নাই। সব কবর হাঁটু পানির নীচে। রাতে সেই মৃতব্যাক্তি স্বপ্নে এসে তাঁর জামাইকে বললেন, "আমি বেপর্দা হয়ে যাচ্ছি। আমাকে ঢাকো।" জামাই ফজরের নামাজ পড়ে কবরস্থানের দিকে গেলেন। কিন্তু কিছু দেখতে পেলেন না। তিনি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। কিভাবে শ্বশুরের কবর খুঁজে তাঁর লাশ চিনবেন? হঠাৎ তাঁর ঠিক সামনে শ্বশুরের লাশ ভেসে উঠলো। অক্ষত। যেন একটু আগেই মারা গেছেন। কিন্তু গায়ে কোন কাফন নেই। জামাইয়ের মাথায় বড় পাগড়ী ছিল। তাড়াতাড়ি সেটা দিয়ে লাশের শরীর জড়িয়ে ঢেকে নিয়ে পানি থেকে তুলে এনে ঘরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারপর কাফনের কাপড় আনিয়ে আবার লাশকে গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে উঁচু মাটিতে আবার কবর দিলেন।
৩। একজন লোক মারা যাবার পরের দিন এক ছেলের বৌকে স্বপ্নে এসে বললেন, "আমার পাঁজরের বাম দিকে মাটি কম পড়েছে। ছেলেকে বলো যেন মাটি দিয়ে যায়"। ছেলে কোদাল হাতে কবরের পাড়ে গিয়ে দেখে, সত্যি সত্যি মাটি কম আছে। শেয়াল হয়তো মাটি খুঁড়ে থাকবে। ছেলে সযত্নে মাটি দিয়ে কবর ঢেকে দিয়ে ফিরে এলো।
৪। এক উচ্চশিক্ষিত ছেলে তাদের জমিতে বানানো একটি মসজিদের মোতাল্লি। সেই মসজিদের বেশ কিছু জমি ( ছেলের পরিবারের দেয়া ও অনেকের দান করা) কাদের তত্ত্বাবধানে থাকবে, এই নিয়ে গোলমাল বাধলো দুই পাড়ার লোকেদের মধ্যে। সেই ছেলের মৃত বাবা রাতে স্বপ্নে এসে বললেন, "ওরা দুষ্টু লোক। তুমি কি ওদের সাথে পারবে?" একথা শুনে ছেলে মসজিদের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাইলো। পরে পাড়ার মুরুব্বীদের হুকুমে সে তা পারেনি। তবে স্বপ্নের আদেশ শুনে মুরুব্বীরা বিষটি মীমাংসা করে দেন।
৫। এক মেয়ের দাদী খুব নামাজী ছিলেন। পরিবারের সবাই খুব পরহেজগার। সে বাড়ীর মেয়েটি একটি প্রতিবেশী ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ায় যার সাথে মেয়েটি লুকিয়ে অন্ধকারে কখনও কখনও দেখা করতো। মেয়ের মাকে রাতে মেয়েটির দাদী স্বপ্নে দেখা দিলেন। ভীষণ রেগে বললেন, "তোমার মেয়ের সর্বনাশ হবে! ওকে সাবধান কর!" এর মাসখানেক পরেই ছেলেটি মেয়েটিকে বিনাদোষে ত্যাগ করে।
৬। একটি বাচ্চা মেয়ে মারা গেছে। এগারো বছর বয়সে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। খুবই ভাল মেয়ে। বাবা মা মেয়ের শোকে পাগল প্রায়। দিনরাত কাঁদেন। এতে হয়তো মেয়েটির কষ্ট হয়ে থাকবে। একদিন সে স্বপ্নে তার খালাকে এসে বলে, "আম্মুকে বল। আম্মু খালি কাঁদে!"
৭। বাবা মারা যাবার অল্প কিছুদিন পরেই ছেলের সুন্নত করাতে মা ছেলেকে নিয়ে শহরে আত্মীয়দের বাসায় গেছেন। ছেলে সারলে ফিরে আসবেন। রাতে ছেলের দাদীকে বাবা স্বপ্নে দেখা দিলেন। হাতে লাল ছোট গামছায় বাঁধা নানারকম ফল। বাবা বললেন, "আমার ছেলে সুন্নত করতে গেছে। এখন ওর ফলমুল খাওয়া দরকার। এগুলো ওকে দিও।" মৃত্যুর পরেও বাবা ছেলের জন্য চিন্তিত। তাই মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন, ছেলেকে যেন ফলমুল খাওয়ানো হয়। ধন্য পিতৃস্নেহ!
৮। এক বৃদ্ধা মারা গেছেন অনেক বছর আগে। তখন তাদের বাড়ী ছিল নদীর ধারে। বৃদ্ধার কবরও দেয়া হয় নদীর ধারেই। পরে নদী ভাঙ্গনের কারণে বৃদ্ধার ছেলেরা নদীর পাড় থেকে উঠে এসে গ্রামের ভিতরে বাড়ী করে। সেবার বর্ষার সময় নদীর পাড় আরো ভাঙ্গতে থাকে। এক রাতে বৃদ্ধা তাঁর তিন ছেলেকেই স্বপ্নে একই কথা বললেন, "আমার লাশ নদীতে পড়ে যাচ্ছে। তোমারা আমাকে তুলে এনে আবার কবর দাও।" ভোরে তিন ছেলে একসাথে নদীর পাড়ে গিয়ে দেখে কাফনসহ অক্ষত লাশ বেরিয়ে আছে। আর অল্প হলেই নদীতে পড়ে যাবে। তিন ছেলে লাশ কাঁধে নিয়ে বাড়ীতে এলো। গোটা গ্রামের মানুষ এলো লাশ দেখতে। তাড়াতাড়ি আবার বাড়ীর একপাশে লাশ কবর দেয়া হল।
৯। এক বৃদ্ধা মারা গেছেন পঁচিশ বছর আগে। কবরস্থানে আছে আম আর খেজুর গাছ। বৃদ্ধার নাতনীর মেয়ে ( বয়স সাত বছর। সে মৃত বৃদ্ধাকে কখনও দেখেনি। তাঁর কোন ছবিও নেই।) আরো দুতিনটা বাচ্চার সাথে খেজুর কুড়াতে গিয়ে কবরে পা দেয়। রাতে স্বপ্নে শিশুটিকে বৃদ্ধা ধমক দেন, "এই মেয়ে, কবর খোচ কেন?" মেয়েটি তার মাকে স্বপ্নের কথা বললে মা বৃদ্ধা দেখতে কেমন ছিল, জানতে চান। মেয়েটি বলে, "তিনি খুব ফর্সা, মাথার সব চুল সাদা। দাঁত নেই। চামড়া কুঁচকানো, লাঠি হাতে কুঁজো হয়ে হাঁটেন।" এমন নিখুঁত বর্ণনা শুনে মা অবাক হয়ে যান। পরে পুরো কবরস্হান ঘিরে দেয়া হয়।
১০। এক বৃদ্ধা মারা যাবার সাতদিন পর মেয়েদের স্বপ্নে এসে বলেন, "আমি সওয়াল-জবাব দিতে পারছি না। আমার আযাব হচ্ছে। তোমরা অমুককে (একজন ভাল লোকের নাম বলেন। তিনি একটি মসজিদের ইমাম) বল। আমার কবর জিয়ারত করে সওয়াল জবাব বলে দিয়ে যেতে।" এস্বপ্ন যেদিন দেখান, সেদিন ছিল শুক্রবার। সেদিনই সকালবেলা সেই হুজুর শহর থেকে তাঁর গ্রামের বাড়ী এসেছেন। তাঁকে বিষয়টি বলা হলো। তিনি বাদ জুম্মা কবর জিয়ারত করে দোয়া করে আসেন। তারপর ঐ মৃত বৃদ্ধা আর কোন অসুবিধার কথা বলেননি।
১১। এক বৃদ্ধা মারা গেছেন মঙ্গলবারে। দাফন করার পর রাতে তিনি ছেলেকে স্বপ্নে বলেন, "অমুক তান্ত্রিক তাঁর লাশের গলা কেটে নিয়ে গেছে!" সকালে ছেলেরা কবরের পাড়ে গিয়ে দেখলো, সত্যিই কবর খুঁড়ে গলা কেটে নিয়ে গেছে। দেহটা পড়ে আছে।
কিছু অবাস্তব, আধিভৌতিক ঘটনাও দেখেছি, জানি। বাস্তবতা কখনও কখনও কল্পনার চেয়েও অদ্ভুত। যেমন -
১। এক লোক মারা গেছেন। তাঁর কবর দিতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। গ্রামের লোকেরা কবর দিয়ে কবরের পাশে থেকে অল্প দূরে আসার সাথে সাথেই দেখতে পায়, কবরের পাশে অনেকগুলো বড় বড় শেয়াল। তাদের চোখ জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। ওরা এত লোক দেখেও ভয় পাচ্ছে না। কবরের পাড় থেকে চলেও যাচ্ছে না। গ্রামের লোক ভয় পেয়ে আলো হাতে সবাই দাঁড়িয়ে রইলো। শেয়ালগুলোও দাঁড়িয়ে থাকলো। কেউ কেউ তাড়া করতে চাইলো। এতে শেয়ালগুলো আরো হিংস্র চোখে তাকাতে লাগলো। গ্রামের লোক এক পরহেজগার লোকের কাছে গিয়ে ঘটনা জানালো। সব শুনে তিনি বললেন, "ওদেরকে মেরোনা বা ধাওয়া করো না। অনুরোধ কর। ওরা চলে যাবে।" গ্রামের লোক তাই করলো। একটু পর শেয়ালগুলো উধাও হয়ে গেল।
২। দশ বছরের এক ছেলে গ্রামে এক কৃষকের বাড়ীতে কাজ করে। গ্রামের এক লোকের সাথে ছেলেটির মায়ের অবৈধ সম্পর্ক আছে। তা নিয়ে গ্রামের লোক আজেবাজে কথা বলে। সেদিন কৃষকের বউও রাগ করে ছেলেটিকে গালি দেয়, তার মায়ের সম্পর্কেও আপত্তিকর কথা বলে। তাই শুনে অভিমানে ছেলেটি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। ছেলেটিকে দাফনের পরের দিন গ্রামের লোক দেখে, লাশটি কে বা কারা কবরের উপরে উঠিয়ে রেখেছে। গ্রামের লোক আবার লাশটি দাফন করে। পরের দিনও একই অবস্থা। আবার লাশ দাফন করা হয়। তৃতীয় দিনও লাশ কবরের উপরে দেখে গ্রামের লোক আর লাশ দাফন করেনি। লাশ পচে দূর্গন্ধ ছড়ালে লাশটি গ্রামের বাইরে বিলে ফেলে দেয়া হয়। শেয়াল, কুকুর, শকুন লাশটি খেয়ে ফেলে।
৩। শ্মশানের পাশে ছিল বিশাল এক বাঁশ ঝাড়। একদিন সন্ধ্যাবেলা গ্রামের লোক দেখলো, শ্মশান থেকে অনেকগুলো বড় বড় আগুনের গোলা লাফাতে লাফাতে বাঁশঝাড়ের মাথায় যাচ্ছে। আবার বাঁশঝাড় থেকে শ্মশানে যাচ্ছে। পুরো এলাকা সেই আগুনের আলোতে আলোকিত হয়ে গেল। ভয়ে গ্রামের মানুষ বাড়ীর ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
৪। একটি মেয়েকে জ্বীনে ধরেছে। সে উল্টাপাল্টা আচরণ করছে। কখনও হাসছে, কখনও কাঁদছে। বাড়ী ভর্তি লোক মেয়েটিকে দেখতে এসেছে। মেয়েটির বয়স ১০/১২ বছর। তার খেলার সাথী, তার বান্ধবীরাও এসেছে তাকে দেখতে। মেয়েটি তার এক বান্ধবীর নাম ধরে ডেকে বলল, "দ্যাখ, আমি মিষ্টি খাব।" বলেই মেয়েটি আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁ করল। তারমুখের ভিতরে সাদা মিষ্টি। সে চিবিয়ে খাচ্ছে। তার ঠোঁট বেয়ে মিষ্টির রস গড়িয়ে পড়ছে। তাতে মাছি উড়ে এসে বসছে।
৫। এক লোক মহিষের গাড়ীতে করে আখ নিয়ে গেছেন চিনিকলে দিতে। তারপর বাজার করে রাতে তার ফেরার কথা। কিন্তু অনেক রাতেও লোকটা বাড়ী ফিরে না আসাতে তার বাড়ীর লোকজন চিন্তিত হয়ে পড়ল। তারা হারিকেন নিয়ে খুঁজতে বের হল। বাড়ী থেকে বেশ খানিকটা দূরে তার গাড়ী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। লোকের সাড়া পেয়ে লোকটা গাড়ী নিয়ে ফিরে আসে। আসার পর দেরীর কারণ জিগ্যেস করলে সে জানালো, রাস্তার সামনে সাদা শাড়ী পরা একটি মেয়েকে দাঁড়িয়ে ছিল। তাকে দেখে মহিষদুটো ভয় পেয়ে যায়। কিছুতেই তারা আর সামনে যাচ্ছিল না। আবার পিছনে গাড়ী ঘোরানোও সম্ভব হয়নি। ফলে তিনি দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছিলেন। লোকজনের সাড়া পেয়ে মহিলা চলে গেলে উনি গাড়ী নিয়ে বাড়ী ফিরেছেন।
৬। কবরস্থানের অল্প দূরে একটি গরু বাঁধা ছিল। কবরস্থানে একজন লোককে দাফন করে গ্রামের সব লোক চলে গেছে। কিছুক্ষণ পর গরুটা ভয়ে চিৎকার করতে লাগলো। প্রাণভয়ে ছুটে পালাতে চাইলো। কিন্তু দড়ি ছিঁড়তে না পেরে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে লাগলো। তাই দেখে একজন লোক এসে গরুটার দড়ি খুলে দিতেই গরুটা তার মালিকের বাড়ীর দিকে দৌড়ে গেল। তাই দেখে লোকজনও গরুটার পিছে পিছে গিয়ে দেখলো গরুটা গোয়ালে ঢুকে হাঁপাচ্ছে।
৭। এক মহিলা মৃত্যুশয্যায়। এক মাস তিনি কিছুই খান না। পানিও না। মহিলার এক চাচাতো ভাই ( যার সাথে মহিলার খুব আন্তরিকতা) তাঁকে প্রশ্ন করলেন, "না খেয়ে বেঁচে আছিস কিভাবে? তোর ক্ষুধা পায়না?" মহিলা চুপি চুপি জানালেন, রাতে কারা যেন এসে তাঁকে খাইয়ে রেখে যায়। তাই তাঁর ক্ষুধা পায়না। এর দুদিন পর মহিলা মারা যান। মরার আগ পর্যন্ত তিনি কিছুই খাননি
৮। খুব নামাজী ও শিক্ষিত এক লোক ( আমি ওনার হাতে প্রথম ইংরেজী কোরান শরীফ দেখেছিলাম) খুব অসুস্থ। তিনিও বিশ দিন কিছুই খাননা। পানিও না। তাঁর মেয়েরা এটা সেটা খাবার জন্য সাধেন, কি খেতে ইচ্ছা করে জিগ্যেস করেন। শুনে তিনি ভীষণ রাগ করেন, বিরক্ত হন। খাওয়ার কথা বললেই রেগে গিয়ে বলেন, "আমাকে বিরক্ত করোনা। আমি খাবনা। আমি ভাল আছি, খুব ভাল আছি। আমার রিজিক শেষ হয়ে গেছে।" এর কয়েকদিন পর কিছু না খেয়েই উনি মারা যান।
৯। এক পর্দানশীন মহিলা দীর্ঘ দিন অসুস্থ। প্যারালাইজড। একদিন সকালবেলা মেয়েদের ডেকে বললেন, "বাড়ীতে এত পুরুষমানুষ কেন? তোমরা এঁদেরকে বসতে দিচ্ছনা কেন? এঁরা কেন এসেছেন? একসাথে এত লোক কেন? এঁরা কারা?" মেয়ে বলল, "কই লোক? কেউ নেই। আপনি ভুল দেখছেন।" মহিলা বললেন, "আমার গা ভাল করে ঢেকে দাও। মাথায় ভাল করে কাপড় দিয়ে দাও। ওনাদের বসতে দাও।" তার কিছু সময় পর ঐদিনই মহিলা মারা যান।
১০। এক দানশীলা মহিলা দীর্ঘ দিন অসুস্থ। মৃত্যুর দিন সকালবেলা তিনি ছেলের বৌকে ডেকে বললেন, "এত শিশু! এত সুন্দর সুন্দর বাচ্চা!! এরা কারা? কোন বাড়ীর বাচ্চা? বাড়ীতে এত ফুল কেন? কে এনেছে? তুমি এনেছ বৌমা?" এর কিছুক্ষণ পর উনি মারা যান। সাথে সাথে ফুলের সুগন্ধে বাড়ী ভরে যায়।
১১। এক বাড়ীতে এক শিশু মারা গেছে। বাড়ীতে শোকের ছায়া। শিশুটি যে ঘরে থাকতো, সেই ঘরে শিশুটির বাবা-মা সহ কয়েকজন বসে আছে। হঠাৎ করে গোটা ঘর মিষ্টি একটা আতরের গন্ধে ভরে গেল। শিশুটির মা ভাবলো, সে একাই বোধহয় গন্ধটা পাচ্ছে। ঘরের সবাই জানালার বাইরে কেউ আছে কিনা দেখলো। কেউ নেই। ঘরে উপস্থিত এক বৃদ্ধা জানালেন, "আসবে, চল্লিশ দিন পর্যন্ত আসবে। মায়া!!!"
১২।। এক বাড়ীতে মিসকিন খাওয়ানো হয়েছে মৃত এক শিশুর জন্য। শোবার ঘরের জানালার সোজাসুজি বাইরে চৌকি রাখা আছে যার উপরে খাবার রাখা ছিল। সেদিন সারারাত বাড়ীর আশেপাশে পোলাওয়ের গন্ধ ম ম করতে লাগলো। শোবার ঘর থেকে সবাই সারারাত সে গন্ধ পেল। অথচ পোলাও রান্না হয়নি। ভাত, ডাল, মাংস, সব্জি, মাছ এসব খাওয়ানো হয়েছে। যে হুজুর শিশুটির জানাজা পড়িয়েছিলেন, তিনি সব শুনে শিশুটির মাকে প্রশ্ন করলেন, "আপনার মেয়ে কি পোলাও খুব পছন্দ করতো?" শিশুটির মা জানালো, "হ্যাঁ, খুব করতো।"
১৩। এক লোক মারা গেছেন বেশ কিছুদিন আগে। অনেকদিন পর তাঁর কবর ভেঙ্গে মাটি দেবে গেছে, বাঁশ পচে গেছে। কবর ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু আরেকজনকে কবর দিতে গিয়ে গ্রামের লোকজন দেখলো, ভেতরে সাদা কাফন দেখা যাচ্ছে। ধবধবে সাদা। একটুও পচেনি, নষ্ট হয়নি। ভেতরে লাশটাও অক্ষত দেখা যাচ্ছে। গ্রামের লোকেরা মাটি দিয়ে কবর ঢেকে দিলেন।
১৪। এক অল্পবয়সী সদ্যবিধবা নাকফুল পরে আছে। তার শ্বাশুড়ী চাচ্ছেন বৌ তার নাকফুলটা খুলে ফেলুক। কিন্তু বৌয়ের শোকাতুর অবস্থা দেখে কেউ তাকে সেকথা বলতে পারছে না। বিকেলে বৌ বলল, "আমার নাকফুলটা নাকে নেই। কোথাও পড়ে গেছে। আল্লাহর কি ইশারা! ভাল হয়েছে। ওটার আর দরকার নেই।" দেখে শ্বাশুড়ী খুশী হলেন।
১৫। এক মসজিদের ইমাম, খুব ভাল লোক। তাঁকে ভীষণ চিন্তিত, মর্মাহত দেখা গেল। ইমামতিও করেন না। নামাজের সময় হলে অজু করে জায়নামাজে বসে কাঁদেন, বিড়বিড় করে কি যেন বলেন। কিন্তু নামাজ পড়েন না। অথচ উনি কখনও নামাজ কাযা করেন না। তাঁর অবস্থা দেখে তাঁর স্ত্রী খুব চিন্তিত হলেন। প্রশ্ন করেও এমন করার কারণ জানতে পারলেন না। কিছুদিন পর তিনি জানালেন, "সকালে নামাজ পড়তে বসে দেখি আমি সব সুরা ভুলে গেছি। কিছুই মনে নাই। তখন আমার হুজুর আমাকে সবসময় একটি দোয়া পড়তে বললেন। টানা পনেরো দিন রাতদিন সেই দোয়া পড়ার পর আবার আমার সব মনে পড়েছে।"
১৬। একটি মাদ্রাসার নাইট গার্ড মাদ্রাসার একটি ঘরে রাতে থাকেন। বাকী সব ঘর তালা দেয়া থাকে। তিনি রাতে নানারকম শব্দ শুনতে পান। মাঝে মাঝে বারান্দায় বিশাল সাপ, ছোট বাচ্চা দেখেন। আবার একটু পরেই দেখেন কিছু নেই। একদিন রাতে উনি একটি ঘরে খুব বেশী শব্দ শুনে ভয় পেলেন। একটু পর গায়েবী কথা শোনা গেল। "কাল ক্লাস এইটের ছেলেরা এঘরে সিগারেট খেয়েছে। গন্ধে আমরা থাকতে পারছিনা। আপনি প্রিন্সিপালকে বলবেন।" পরের দিন প্রিন্সিপাল এইটের ছেলেদের জিগ্যেস করলে দুজন ছাত্র সিগারেট খাবার কথা স্বীকার করলো।
১৭। এক পরহেজগার লোক মারা গেছেন। তাঁকে গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে জানাজার জন্য নিয়ে যাবার জন্য খাটিয়া তুলতে গিয়ে দেখা গেল, লাশটা নড়ছে। তাড়াতাড়ি কাফনের কাপড় খুলতেই লোকটা উঠে বসলো। সবার দিকে তাকালো। তারপর বলল, "আমাকে এক থালা পান্তা ভাত আর পুঁটি মাছের তরকারী এনে দাও। আমি খাব।" গ্রামের লোক তা এনে দিল। তিনি খেলেন। তারপর হাত ধুলেন। তারপর আবার শুয়ে পড়লেন। যেন এখন তিনি ঘুমাবেন। উনি চোখ বন্ধ করলেন। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল ওনার শ্বাস চলছে না। উনি মারা গেছেন। জানাজা পড়িয়ে তাঁকে দাফন করা হলো।
১৮। আরেক মৃত লোকও গোসল করানোর সময় নাকে মুখে পানি দেবার পর বেঁচে ওঠেন। তিনি এখনও বেঁচে আছেন। গ্রামের লোক তার মান দিয়েছে "জ্যাতা মালেক"।
১৯। ফেসবুকে বেশ কিছুদিন আগে দেখেছিলাম। সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ভেবে এক হিন্দু লোককে ঢাকার একটি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। নিহতের ভাই এসে নিহতের চোখ দেখে বলেন, "মরেনি। বেঁচে আছে। জ্ঞান নেই।" পরে চিকিৎসার পর সে লোক বেঁচে ওঠে। সাংবাদিক, লোকজন তাকে দেখতে ভীড় করে। তিনি বার বার অনুরোধ করছিলেন সবাইকে চলে যেতে।
আগেই বলেছি, এসব ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা আমি দিতে পারবনা। কেউ চাইলে বিশ্বাস করবেন। না চাইলে ভাববেন আমি মিথ্যে বলেছি। তবে দয়া করে কেউ কুটতর্ক করবেন না প্লিজ। আর এরকম অভিজ্ঞতা যদি আপনাদেরও থাকে, তাহলে কমেন্টে লিখে জানাতে অনুরোধ করছি।
খুব খুব ভাল থাকবেন বন্ধুরা..
http://www.onurag.com/2013/11/blog-post_29.html
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1865802093673615&id=100007315272396
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:২৫