পুরুষ নির্যাতন
নানা সময়ে পুরুষরাও তাদের বৌদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন যা তাঁদের মনোকষ্টের কারণ। সেগুলো বিচ্ছিন্নভাবে আমি আমার আগের লেখাগুলোতে বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করেছি। আজ সেগুলো একসাথে তুলে দিলাম।
বেশীরভাগ পুরুষ তাঁদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি করেন, তা হলঃ বৌরা শ্বশুরবাড়ির লোকদের দেখতে পারেননা, তাঁদের সাথে ভাল আচরণ করেননা। তাঁদের পিছনে টাকা খরচ করা অপচয় মনে করেন, স্বামীকে তাঁদের জন্য খরচ করতে বাধা দেন। কোন কোন স্বামী গোপনে বাড়ীতে টাকা পাঠান। বৌরা জানতে পারলে অশান্তি করেন, টাকার হিসাব রাখেন, এত টাকা কোথায় খরচ করেছেন, তার কৈফিয়ত চান।
স্বামীদের কমন একটি অভিযোগ হল - স্বামীদের প্রাক্তন প্রেমিকার কথা তুলে বউরা খোঁটা দেন, নানা অশান্তি করেন।
অনেকে অভিযোগ করেন, কোন কারণে ঝগড়া হলেই বৌ আত্মহত্যার হুমকি দেন, কথা বলেননা, আলাদা ঘরে ঘুমান, কখনও কখনও রাগ করে বাপেরবাড়ী চলে যান, স্বামীর উপর রাগ করে বাচ্চাদের সাথে রাগারাগি করেন, ওদের মারেন। বাচ্চাদের সাথে এমন আচরণ স্বামীদের সবচেয়ে বড় মনোকষ্টের কারণ। (মনোবিজ্ঞান বলে, মানুষ তীব্র মানসিক পীড়নের সম্মুখীন হলে কখনও কখনও নানা প্রতিরক্ষামূলক কৌশল বা Defense Mechanism ব্যবহার করে অভিযোজন করে। স্বামীর উপর রাগ করে বাচ্চাকে মারা - এটাকে বলে Displacement. এ বিষয়গুলো নিয়ে আমার আলাদা একটা লেখা আছে।)
একজন বললেন, তাঁর স্ত্রীকে তাঁর পছন্দ হয়না। কারণ তার মন-মানসিকতা, চিন্তা-ভাবনা, রুচি,... কোনকিছুই তাঁর বউয়ের সাথে মেলেনা। ফলে তিনি বৌয়ের সাথে কোনকিছু শেয়ার করতে পারেননা। ফলে তিনি তাঁর পুরনো প্রেমিকাকে ভুলতে পারেননা, সবসময় মিস করেন। মনে করেন, প্রেমিকাকে বৌ হিসেবে পেলে জীবনটা অন্যরকম হত। এই না পাওয়ার কষ্ট তাঁকে দিনরাত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রাখে। কখনো কখনো তিনি ডিভোর্সের কথা ভাবেন। ছেলের কথা ভেবে তাও করতে পারেন না।
একজন জানালেন, তাঁর বউ খুব নোংরা। কোনকিছু গুছিয়ে রাখেননা। পুরো বাড়ীর জিনিসপত্র এলোমেলো পড়ে থাকে। দামী দামী ফার্নিচারের প্রতিটার উপরে এক ইঞ্চি করে ধূলার স্তর। বাথরুম, কিচেনসহ পুরো বাড়ী নোংরা হয়ে থাকে। নিজে পরিস্কার করেননা, কাজের লোককে দিয়েও করাননা। স্বামী নিজে মাঝে মাঝে বাড়ী পরিস্কার করেন। কখনও কাজের লোককে দিয়ে করান। এই নিয়ে রোজ অশান্তি।
একজন জানালেন, তাঁর স্বল্প আয়ে সংসার চালাতে এমনিতেই কষ্ট হয়। তার উপর তাঁর বউ অপচয় করেন। তাঁকে না জানিয়ে পকেট থেকে টাকা নিয়ে খরচ করেন।প্রতি মাসের শেষে তাঁর বাজার খরচের টাকা থাকেনা। বৌ কথা শোনেননা। প্রতি মাসে তাঁর শাড়ী কেনা চাইই চাই।
একজন জানালেন, তাঁর বউ তাঁকে নিয়ে আলাদা থাকতে চান প্রাইভেসীর কারণে। নিজেদের মত আলাদা, স্বাধীন থাকবে, যা খুশী করবে, যেখানে খুশী যাবে, বিলাসিতা করবে, কারো কথা মেনে চলতে হবেনা ইত্যাদি। বউ নিজে তার পরিবার ছেড়ে এসে স্বামীর সাথে থাকতে পারলে স্বামী পারবেনা কেন? - এই হল বউয়ের যুক্তি। আর স্বামী চান, বৌ নিয়ে বাবামার সাথে থাকতে। এই নিয়ে রোজ ঝগড়া হয়।
আমার এক ডাক্তার বন্ধু প্রেম করে বিয়ে করেছে। কিন্তু তার স্ত্রী তার বাড়ীর লোকেদের সাথে কথা বলেনা, ভাল আচরণ করেনা। তার কারণ আমার বন্ধুর পরিবার তার স্ত্রীর সাথে বন্ধুর বিয়েকে মেনে নিতে চায়নি বলে। বন্ধু তার ছোটবোনকে কাছে রেখে পড়াতে চেয়ে পারেনি। কারণ বউ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তাই আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে বাবামাকে এনে বোনসহ রেখেছে। ছুটির দিনে সে বাবামার কাছে ছেলেদের নিয়ে যায়, বাজার করে বা টাকা দিয়ে আসে। বউ কখনোই যায়না।
বেশীরভাগ পুরুষের মত আমার এ বন্ধুরও অভিযোগ হল - তার বৌ সন্দেহপ্রবণ। কোন মেয়ে বান্ধবীর সাথে কথা বলা পছন্দ করেনা। এমন কি, নিজের এলাকা থেকে যেসব মেয়েরা কলেজ-ভার্সিটিতে পড়তে আসে, তারা নানা সময়ে আসে নানা সমস্যা নিয়ে। তাদের সাথে কথা বলাও যাবেনা। বউ ফোন চেক করে। ওসব মেয়েদের গালি দেয়, আজেবাজে মেসেজ দেয়। স্বামীকে তার মোবাইল নাম্বার বদলাতে বলে যাতে ওরা কথা বলতে না পারে। সে বদলাতে পারেনা। কারণ অনেক রোগীর কাছে তার ফোন নাম্বারটা আছে। এসব নিয়ে চরম অশান্তি।
এক লেখক বন্ধু জানালো, তার বউয়ের দাবী, তার কোন মেয়ে ভক্ত থাকা যাবেনা। তাদের সাথে চ্যাট করা যাবেনা। কোন মেয়ে তার লেখাতে লাইক বা কমেন্ট করলে তা নিয়ে অশান্তি। তার পাসওয়ার্ড হ্যাক করে সে ওসব ভক্তদের গালি দেয়।
এক বন্ধু জানালো, যেকোন সমস্যা, কষ্টের কথা সে তার বৌয়ের সাথে প্রাণখুলে শেয়ার করতে পারেনা। বউ তার মত, বন্ধু তার মত থাকে। বন্ধু কোন বিষয় নিয়ে বউয়ের সাথে কথা বলে আনন্দ পায়না। কারণ তার বউয়ের শোনার আগ্রহ নেই। তার সব আগ্রহ ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালে। দুনিয়ার আর কোন কিছু তাকে টানেনা।
একজন জানালো, বিয়ের আগে বৌ বলেছিল দু'জনের আয়ে সংসার চালাবে। এখন বউ তার বেতনের টাকা দেয়না। টাকা দিয়ে কি করে, বলেও না। স্বামী একার আয় দিয়ে সংসার চালাতে পারেনা, ব্যাংক লোন আছে। এই নিয়ে রাগারাগি হয় প্রায়ই।
একজন জানালো, তার বউ শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে কিছু দিতে দেয়না। কোন জিনিস বা খাবার কিনে আনলে লুকিয়ে রাখে। দেয়না। স্বামীর বেতনের সব টাকা নিয়ে নেয়। স্বামীকে টাকা দিলেও তার হিসাব নেয়। বাবামা, ভাইবোনকে টাকা দিতে দেয়না। দিলে বলে, আমাকেও আলাদা করে টাকা দাও।আমার বাবামা, ভাইবোনকে দেব।
একজন বলল, তার বউ সংসারের বিষয়ে উদাসীন। কোন কিছু করতে চায়না। এমন কি, রান্নাও না। অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমায়। সব কিছু কাজের মেয়ের উপর ফেলে রাখে। নিজের মেয়েকেও ঠিকমত খাওয়ায় না। মেয়েটা দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েকে পড়াতেও চায়না। কাজের মেয়ে টিকেনা তার দূর্ব্যবহারের কারণে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানালেন, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বউ
শ্বশুরবাড়ী ঈদ করতে যেতে চাননা। বউয়ের দেখাদেখি ছেলেও যেতে চায়না। তিনি প্রতিবার বাবামার সাথে গ্রামের বাড়ীতে একা ঈদ করতে যান। এ নিয়ে তাঁর প্রচণ্ড মানসিক কষ্ট আছে।
একজন জানালো, তার স্ত্রী পরকীয়া করে। তিনি স্ত্রীকে খুব ভালবাসেন। তাই তালাক দিতেও পারছেন না। আবার তাকে ফেরাতেও পারছেন না। তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় আছেন।
একজন বলল, তার স্ত্রীকে স্ত্রীর পরিবার স্ত্রীর মতের বিরুদ্ধে তার সাথে বিয়ে দিয়েছে। ফলে সে স্বামীকে মন থেকে মেনে নিতে পারছেনা। পুরনো প্রেমিককে সে ভুলতে পারেনি। প্রায়ই তার কথা বলে। পরে স্বামীকে সরিও বলে। বলে, আর বলবেনা। কিন্তু আবার বলে। এলোমেলো আচরণ করে। কিছুদিন বাবার বাড়ীতেও ছিল। তাতেও স্বামীর জন্য তার আকর্ষণ তৈরী হয়নি। তিনি তালাক দিতেও পারছেন না। কারণ তিনি জানেন, তাঁর স্ত্রী খুব সৎ এবং খুবই ভাল মেয়ে।
যদিও একসাথে থাকতে গেলে কিছু বিষয়ে মতের মিল না হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে স্বামীদের সুবিধা হল, স্ত্রী কোন কিছু করার জন্য স্বামীকে বলতে বা চাপ দিতে পারে মাত্র, তাকে কোনভাবেই কোনকিছু করতে বাধ্য করতে পারেনা। মারতেও পারেনা। রাগারাগি, কান্নাকাটি, মন খারাপ করতে পারে বড়জোর। তাই এগুলোকে 'নির্যাতন' বলা যায়না। আর নির্যাতন মনে করলে স্বামী অনায়াসে স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন। কেউ নির্যাতন সহ্য করে তাকে সংসার করতে বাধ্য করতে পারেনা, করেনা। (ছেলেরা যেহেতু আয় করেন, তাই বউ তালাক দিয়ে আবার বিয়ে করতে পারেন বা করেনও যা মেয়েরা পারেনা। কারণ মেয়েরা আয় করেনা। স্বামীকে তালাক দিলে তাকে বাবা বা ভাইদের ঘাড়ে বোঝা হতে হবে যা মোটেই ভাল কিছু না। তাই মেয়েরা সবধরণের নির্যাতন মুখ বুঁজে সহ্য করে।) কিন্তু মেয়েরা স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকেদের দ্বারা (শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, কখনো কখনো খুন) নির্যাতিত হলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বাবামা মেয়েকে তার স্বামীকে তালাক দিতে দেয়না। নির্যাতন সহ্য করে হলেও সংসার করতে বাধ্য করে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের উপর নির্যাতনের মূল পার্থক্যটা এখানেই।
আমার বিরুদ্ধে আমার স্বামীর অভিযোগ হলঃ
আমি খরচের ছোটখাট একটা জাহাজ। টাকা খরচ করতে না পারলে আমার পেটের ভাত হজম হয়না। অপচয় করা আমার শখ। স্বামী যখন অস্ট্রেলিয়া ছিল, তখন তাকে না জানিয়ে শ্বাশুড়ীর মতেরও বিরুদ্ধে ( শ্বাশুড়ীও চাননি মৃত স্বামীর পুরাতন ভাঙ্গা ঘর ছেড়ে তিনতলার উপরে ফ্ল্যাট বাসায় উঠতে) আমি একগাদা টাকা খরচ করে (নিজের ও স্বামীর সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে) শ্বাশুড়ী ও ননদের জন্য ছয় রুমের বিশাল বাড়ী বানিয়েছি। প্রতি ঈদে স্বামীকে না জানিয়ে, কখনও জানিয়ে স্বামীর পক্ষের আত্মীয়দের জন্য প্রচুর উপহার কিনি। ( স্বামীর পক্ষের গরীব আত্মীয়দের বাড়ী যাই। এটা, সেটা কিনে নিয়ে গিয়ে দিয়ে আসি বা টাকা পাঠিয়ে দেই। অসুস্থ ননদের জন্য প্রতি মাসে অনেক টাকা খরচ করি, তিনজন ছাত্রের পড়াশোনার খরচ চালাই,... - এগুলো মুখে অভিযোগ বললেও মনে মনে খুশীই হয়), প্রতি মাসে কমপক্ষে ষোলো থেকে বিশ হাজার টাকা দান করি। শ্বাশুড়ীর জন্য একটা বিছানার চাদর কিনতে যেয়ে নিজের জন্যও ছয়টা কিনে আনি। কখনোই দু'একটা শাড়ী বা থ্রিপিচ আমি কিনতে পারিনা। কমপক্ষে চারটা কেনা চাই। একবার ঈদে ছয়টা জামদানী শাড়ী বাকীতে কিনে এনে স্বামীকে বলেছিলাম, "আমি কিনতে চাইনি। পছন্দ হলে কি করব? তাছাড়া দোকানদার জোর করে দিয়ে বলল, টাকা পরে দিলেও হবে।" সস্তা কোন জিনিসই আমার পছন্দ হয়না। আর সবচেয়ে বড় অভিযোগ - আমি ফেসবুকে প্রচুর সময় নষ্ট করি। ফেসবুকে লেখালেখি করতে গিয়ে মেয়েদের পড়াই না। অথচ আমার লেখার চেয়ে লোকে আমার ছবি বেশী পছন্দ করে!!! সত্যি সেলুকাস.....!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:৪৪