somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাচীন মিথে মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং একটি ডিম তত্ত্ব।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্রহ্মাণ্ড সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত আমাদের অতি পরিচিত একটি শব্দ। ব্রহ্ম এবং অন্ড এ দু'টি শব্দ থেকেই ব্রহ্মাণ্ড কথাটির উৎপত্তি। যেখানে ব্রহ্ম মানে মহাবিশ্ব এবং অন্ড মানে ডিম। তাহলে ব্রহ্ম এবং ব্রহ্মাণ্ড এই দু'টি শব্দের মাঝে পার্থক্য কি? পার্থক্যটা হচ্ছে অতুলনীয় ব্রহ্মকে ডিম রূপে তুলনা থেকেই ব্রহ্মাণ্ড কথাটির উৎপত্তি।
প্রাচীন ভারতীয় উপাখ্যান ঋগ্বেদ উপনিষদ এর সৃষ্টি তত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত পড়তে- View this link



ব্রহ্মা (ট্রিনিটি)


কিন্তু এতকিছু থাকতে হঠাত ডিম কেন ? আমারো একই প্রশ্ন।

চৈনিক পুরাণ বিশ্ব সৃষ্টির ব্যাপারে এক জায়গায় বলছে, মহাবিশ্ব ছিল একটি ডিমের ন্যায়। প্যান গু সেই ডিমের ভেতর ১৮০০০ বছর ধরে বড় হতে থাকে তারপর সেই ডিম ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে প্যান গু সেই ভেঙ্গে যাওয়া ডিমের উপরের অংশ দিয়ে তৈরী হয় আকাশ আর নিচের অংশ দিয়ে তৈরী হয় পৃথিবী। তারপর সেইসব খন্ডাংশ প্যাং গু নিদ্রিষ্ট স্থানে বয়ে নিয়ে যায়। এবং এই দীর্ঘস্থায়ী পরিশ্রমলব্ধ কাজের কারণে প্যাং গু একসময় ক্লান্ত হয়ে ভেঙ্গে পরে। তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে তৈরী হয় ভূমি, পাহাড় পর্বত, তার রক্ত থেকে নদী জলাভূমি, তার শ্বাস বায়ু, তাঁর কন্ঠ বজ্র, তার চোখ চন্দ্র ও সূর্য আর এভাবেই তৈরী হয় মহাবিশ্বের।


প্যান গু


চৈনিক উপাখ্যানে বিশ্ব সৃষ্টির প্রতীক

এদিকে আবার প্রাচীন মিশরীয় এক উপাখ্যান বলছে, আদিতে এ বিশ্ব ছিল নোংরা ময়লা আবর্জনার একটি স্তূপ। দেবতা রা সেখানে রাজহাঁসের বেশে মতান্তরে বাজপাখীর বেশে এসে একটি ডিম প্রসব করে উপর তা দিতে থাকেন। সেই ডিম থেকে জন্ম নেয় দেবী হাতহুর আর এভাবেই সৃষ্টি হয় মহাবিশ্বের। এখানে উল্লেখ্য রা এবং হাতহুর কে আবার পরবর্তীতে হোরাস এবং আইসিস রুপে আলাদা বর্ণনা পাওয়া যায়।



দেবতা রা


আধুনিক সময়ে এই ডিম তত্ত্ব শুধু মিথের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল না। ১৯৩০ এ এসে এডউইন হাবল মহাবিশ্বের গঠনের ব্যাক্ষায় নিয়ে আসলেন ভিন্ন মাত্র। হাবল নিয়ে আসলেন সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্ব তত্ত্ব। তিনি বলতে চাইলেন আজ থেকে প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে ক্ষুদ্রাকৃতির পিন্ডের এক এক বৃহৎ বিষ্ফোরণের মাধ্যমে ফেটে চৌচির হয়ে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়। আধুনিক পদার্থ বিদ্যায় যে ডিম ফেটে যাওয়া(!) বিগ ব্যাং তত্ত্ব নামে পরিচিত।

এদিকে কল্প বিজ্ঞানের লেখকগণ তাদের লেখনির মাধ্যমে এই মহাজাগতিক ডিম তত্ত্বের আগুনে নানা ভাবে ঘি ঢালতে থাকলেন। ১৯৭০ সলে প্রকাশ পেল পল এন্ডারসন এর ডিম তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে লেখা তার বিখ্যাত উপন্যাস তাও জিরো আবার তার পরপরই ১৯৭২ সালে প্রকাশ পেল আইজ্যাক আসিমমভ এর ডিম তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে লেখা উপন্যাস গড দেমসেলভস


সে যাই হোক, প্রাচীন মিথে এত্ত এত্ত ডিম তত্ত্ব থাকবে, কখনো ভারতীয় পুরাণে স্রষ্টা ব্রহ্মা আসবে রাজহাঁসে চেপে আবার কখনো মিশরীয় পুরাণে স্রষ্টা দেবতা রা রাজহাঁসের বেশে তার নিজের ডিম তা দিয়ে পৃথিবী সৃষ্টি করবে। আর চির রহস্যময় শিল্পী লিওনার্দো ডা ভিঞ্চি তা শুধুই বসে বসে দেখবে তা কি করে হয়! ডা ভিঞ্চি এই ডিম তত্ত্ব খুঁজে পেলেন হোমার বর্ণিত গ্রীক পুরাণের ট্রোজন যুদ্ধের ময়দানে। ডা ভিঞ্চি দেখলেন ট্রোজন যুদ্ধের মূল নায়িকা হেলেনের জন্মও ডিম থেকে। দেবরাজ জিউস রাজহাঁসের বেশে লেডার সাথে মিলনের কারণে লেডা দু'টি(মতান্তরে তিনটি) ডিম প্রসব করে আর সেই ডিম ফুটে জন্ম নেয়া তিন সন্তানের একজন হচ্ছে ট্রয় নগরীর হেলেন। লেডা হচ্ছে প্রাচীন গ্রীক মিথের অন্যতম কুমারী মাতা। থেটিসের রাজ এথোলিয়নের কন্যা, স্পার্টার রাজা থেন্ডারসের স্ত্রী।

ভিঞ্চি এঁকে ফেললেন তাঁর এক বিখ্যাত চিত্রকর্ম "লেডা এন্ড দ্যা সোয়ান" কিন্তু চিত্রকর্মটি কোনভাবে হারিয়ে গেল যার সন্ধান আজো মেলেনি। নিচে তাঁর চিত্রকর্মের একটি রেপ্লিকা।



যাইহোক, ভিঞ্চি পরবর্তী মাইকেলএঞ্জেলোও এঁকেছিলেন "লেডা এন্ড দ্যা সোয়ান" নামে আরেকটি চিত্রকর্ম। কিন্তু হারিয়ে গেল মাইকেলএঞ্জেলোর সেই চিত্রকর্মটিও যার খোজ আজো মিলল না। নিচে মাইকেলএঞ্জেলোর চিত্রকরমটির একটি রেপ্লিকা।




কিন্তু কোথায় সেই রাজহাঁসের ঠিকানা ? রাজহাঁসের সেই তারকা মন্ডলের নাম সিগন্যাস । শরতের আকাশে সবচাইতে প্রভাব বিস্তারকারী তারকা মন্ডল।



শরতের আকাশ অনন্য সব পাখীর মেলা। বৃহৎ নক্ষত্রমন্ডল সিগন্যাস বা গ্রীক মিথের রাজহাঁসরুপী দেবরাজ জিউস হচ্ছে এই আকাশের প্রধান চালক। যা উত্তরের ক্রস নামেও পরিচিত। যার লেজের দিকের তারা দেনেব উক্ত নক্ষত্রমন্ডলের সবচাইতে উজ্জ্বল তারা। যা লীরা নক্ষত্রমন্ডলের উজ্জ্বল তারা ভেগা ( আকাশের পঞ্চম উজ্জ্বল তারা) এর মাধ্যমে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। সিগন্যাস নক্ষত্রমন্ডলের আরেক উজ্জ্বলতর তারা অ্যালব্যারিও যা রাজহাঁসের মাথা নির্দেশ করে।

সিগন্যাসের পাশের আরেক নক্ষত্রমন্ডল অ্যাকুয়েলা গ্রীক মিথে জিউসের বাহন ঈগল হিসেবে যার পরিচিতি। এই নক্ষত্রমন্ডলের উজ্জ্বলতম তারা আলতেয়ার

দেনেব, ভেগা এবং আলতেয়ার একত্রে উত্তরের আকাশের বিখ্যাত গ্রীষ্মের ত্রিভুজ নামে পরিচিত।

শরতের আকাশপটের ধারাবর্ণনা সহ নাসার একটি ভিডিও চিত্র - View this link


একটি অনুমানঃ

চলে যাই আজ থেকে ১৭০০০ বৎসর আগে তৈরী দক্ষিণ ফ্রান্সের লেস্কাস গুহায়





প্রথমের চিত্রটি লেস্কাক্স গুহায় প্রাপ্ত একটি গুহাচিত্র। বলা হয়ে থাকে এটি হচ্ছে পৃথিবীর প্রাচীনতম মানচিত্র। যেখানে একটি উদ্ধত বাইসন, পাখীর মাথা সদৃশ একজন মানুষ এবং একটি দন্ডের উপর পাখীর ছবি।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ছবিটি এবং বিশ্ব মানচিত্র সমান অনুপাতে বসালে এশিয়ার একাংশ, ইউরোপ এবং আফ্রিকার একাংশের সীমানার সাথে হুবহু মিলে যায়! আবার হারকিউলিস, লীরা এবং সিগন্যাস নক্ষত্রমন্ডলের তারকার বিন্যাস উক্ত গুহাচিত্রের রেখার সাথে মিলে যায় হবহু! যেখানে পাখীর মুখ সদৃশ মানুষের চিত্রটির অবস্থান সিগন্যাস নক্ষত্রমন্ডলে। হতে পারে প্রাচীন মিশরের উপখ্যানের দেবতা রা / হোরাসের ১৭০০০ বছর আগের রূপ এটি! হতে পারে এর সবই অতি অনুমান। হতে পারে কিছুই না। কিন্তু কৌতুহলী মনের রহস্যই হচ্ছে সর্বদা রহস্য খুঁজে বেড়ানো।



শেষ করছি ইয়েটস এর Leda and The Swan কবিতাটি দিয়ে,

A sudden blow: the great wings beating still
Above the staggering girl, her thighs caressed
By the dark webs, her nape caught in his bill,
He holds her helpless breast upon his breast.

How can those terrified vague fingers push
The feathered glory from her loosening thighs?
And how can body, laid in that white rush,
But feel the strange heart beating where it lies?

A shudder in the loins engenders there
The broken wall, the burning roof and tower
And Agamemnon dead.
Being so caught up,
So mastered by the brute blood of the air,
Did she put on his knowledge with his power
Before the indifferent beak could let her drop?





** সমস্ত লেখাটি শেষ করে এনে সামান্য অসাবধানতায় ট্যাবটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে লিখতে হয় আবার নতুন করে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণের পক্ষে একই জিনিষ নতুন করে লেখায় আগের মতো ধৈর্য রাখা সম্ভব হয়না। যেকারণে লেখাটা হয়তো অনেক এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। সেজন্য অগ্রিম ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

** ছবিসুত্রঃ ইন্টারনেট
** সকল লিংকঃ উইকিপিডিয়া

৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×