রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিখ্যাত ছোট গল্প বলাই । এক কিশোরের বৃক্ষ প্রেম এবং ঐ কিশোরের প্রতি নিঃসন্তান কাকীমার সন্তান বাৎসল্যের এক অনুপম শোক গাথা বলাই ।
মাতৃহীন বলাইয়ের পিতা স্ত্রী বিয়োগের পর লন্ডনে চলে যাওয়ায় বলাই নিঃসন্তান কাকীমার কাছে থাকে । বলাই বাগানের এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায় আর গাছের সাথে কথা বলে । তার যাবতীয় বন্ধুত্ব গাছের সাথে । বিশেষ করে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে গজিয়ে উঠা পথের মাঝ খানে এক শিমুল গাছের প্রতি ।আর এই শিমুল গাছটির প্রতিই যত বিরাগ বলাইয়ের কাকার কারণ একে তো সে পথের মাঝ খানে বেয়াড়া ভাবে বেড়ে উঠেছে , তারপর এটা বড় হয়ে যত্রতত্র তুলা ছড়িয়ে এক বিসদৃশ কাণ্ড ঘটাবে । কাকা যেমন এই গাছটি কাটতে বদ্বপরিকর বলাই তেমনি নাছোড় বান্দা এই গাছ টির জন্য ।
বলাইয়ের পিতা লন্ডন থেকে ফিরে এসে তাকে শিমলা নিয়ে গেল লন্ডন নিয়ে যাবে বলে । হঠাত এক দিন শিমলা থেকে বলাই তার কাকাকে চিঠি লিখল লন্ডন যাবার পূর্বে সে তার বন্ধুর অর্থাৎ শিমুল গাছটির ফটোগ্রাফ সাথে নিয়ে যেতে চায় । কিন্তু বলাইয়ের কাকা বলাইয়ের অনুপস্থিতে এবং কাকিমার অজ্ঞাতসারে ইতিমধ্যে গাছটি কেটে ফেলেছে । সেই চিঠি যখন বলাইয়ের নিঃসন্তান কাকীর কাছে দেয়া হল বলাইয়ের কাকি দুদিন অন্ন গ্রহণ করলেন না, আর অনেকদিন পর্যন্ত বলাইয়ের কাকার সঙ্গে একটি কথাও বলেননি। বলাইয়ের বাবা ওকে তাঁর কোল থেকে নিয়ে গেল, সে যেন ওঁর নাড়ী ছিঁড়ে; আর ওর কাকা তাঁর বলাইয়ের ভালোবাসার গাছটিকে চিরকালের মতো সরিয়ে দিলে, তাতেও ওঁর যেন সমস্ত সংসারকে বাজল, তাঁর বুকের মধ্যে ক্ষত ক’রে দিলে।
ঐ গাছ যে ছিল তাঁর বলাইয়ের প্রতিরূপ, তারই প্রাণের দোসর।
মানবজীবনে বৃক্ষের ভূমিকা সীমাহীন। গাছপালা ছাড়া এই পৃথিবীই অচল। পৃথিবীতে প্রাণের প্রথম জাগরণ বৃক্ষ । বৃক্ষ পৃথিবীকে সুন্দর ও শোভন করেছে। শুধু তা-ই নয়, বৃক্ষই পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলেছে। বৃক্ষ আপন শক্তিতে লড়াই করে বিশ্বজুড়ে তার অস্তিত্বকে বিস্তার করে দিয়েছে। ফলে এই পৃথিবী মনোহারিণী ও রূপসীও হয়েছে। আর এসবই কেবল মানুষের জন্য, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য।
গাছপালা পৃথিবীর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। মানুষের অস্তিত্ব রক্ষায় অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে গাছপালার জুড়ি নেই। বৃক্ষ ও বনভূমি বায়ুমণ্ডলকে বিশুদ্ধ ও শীতল রাখতে সাহায্য করে। যেখানে গাছাপালা ও বনভূমি বেশি, সেখানে ভালো বৃষ্টি হয়। এর ফলে ভূমিতে পানির পরিমাণ বাড়ে, চাষাবাদ ও ফসল ভালো হয়। বৃক্ষ মাটির ক্ষয় রোধ করে উর্বরাশক্তি বাড়ায়। ঝড়, বৃষ্টি ও বন্যা প্রতিরোধেও গাছপালা সহায়তা করে। মোটকথা গাছপালা না থাকলে পরিবেশ হয়ে উঠত উষ্ণ। পৃথিবী হয়ে উঠত মরুভূমি। এর ফলে মানুষের অস্তিত্ব হতো বিপন্ন। অর্থাৎ পৃথিবীকে তার উপযোগী করে রাখতে এবং আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে গাছের ভূমিকা এক অনস্বীকার্য বিষয়। সহজ করে বলা যায়, বাতাসে শ্বাস নিতে না পারলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। বাতাস থেকে আমরা অক্সিজেন নিয়ে বাঁচি। গাছপালা থেকে আমরা নির্মল অক্সিজেন পাই আর আমাদের নিঃশ্বাস ছাড়া ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইড গাছপালা গ্রহণ করে রক্ষা করে। মোট কথা বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবীতে প্রানের অস্তিত্ব সম্ভব নয় ।
ভারসাম্যমূলক প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য দেশের মোট ভূমির অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা দরকার। সে ক্ষেত্রে সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে বনভূমি পরিমাণ ১৭ শতাংশ। যেখানে তিনটি গাছ কাটা হচ্ছে সেখানে লাগানো হচ্ছে একটি গাছ। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে ব্যাপক হারে নির্বিকার বৃক্ষ নিধনের ঘটনা ঘটছে। ফলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বনভূমির পরিমান নেমে এসেছে ৩.৬ শতাংশ। তারই বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর আবহাওয়ায়। দিনের বেলা দুঃসহ গরম আর রাতে প্রচন্ড শীত অনুভূত হচ্ছে।আর বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতির প্রভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বৈশ্বিক উষ্ণতার অন্যতম কারণ এই অকাতরে বৃক্ষ নিধন ।
কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের দুই পাশে বিশাল যে রেইনট্রিগুলো এত দিন প্রকৃতির কোলে পর্যটকদের স্বাগত জানিয়ে আসছিল, সেগুলোর একটা বড় অংশ এখন আর নেই। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী ওই গাছগুলোর ছায়ায় প্রাণ জুড়াত পথচারীরা। পাখপাখালির আশ্রয়ও ছিল তারা। সে গাছগুলো কেটে ফেলেছে জামায়াত-শিবির। বাংলাদেশে গাছের ওপর আঘাত করে ঠিক যেন জীবন-জীবিকার ওপরই আঘাত করা হলো। প্রকৃতিবিদেরা একে রাজনীতির নামে প্রকৃতির প্রতি প্রতিহিংসার এক নিকৃষ্ট নজির হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বন বিভাগের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক অবরোধের নামে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে একই কায়দায় দেশের ১০টি জেলার প্রধান সড়কের পাশের প্রায় ২০ হাজার ছায়াবৃক্ষ ধ্বংস করেছে জামায়াত-শিবির। এই ২০ হাজার গাছের সঙ্গে আরও কাটা গেছে লাখ খানেক গাছের লতাগুল্ম ও বড় গাছের ডালপালা। আর্থিক হিসাবে এতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ব্যাপক হারে এই গাছ কাটতে বিশেষ ধরনের যান্ত্রিক করাত ব্যবহার করা হয়েছে । হাতে বহনযোগ্য ও দ্রুত গাছ কাটা যায় এমন করাত সাম্প্রতিক সময়ে চীন থেকে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসছে। বিশেষ করে টেকনাফ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন এলাকায় এই করাত গাছচোরেরা সম্প্রতি ব্যবহার করছে বলে পত্রিকা থেকে জানা যায় । কক্সবাজারের সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে চীনের তৈরি এই করাতগুলো বাংলাদেশে ঢুকেছে। বন বিভাগের কোনো কোনো কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো মনে করছে, সড়ক অবরোধের জন্য এই ব্যাপক বৃক্ষ নিধনের পরিকল্পনা নিয়ে জামায়াত-শিবির আগেই এমন বিপুলসংখ্যক করাত সংগ্রহ করেছে।
হাতে বহনযোগ্য তিন থেকে নয় ফুট পর্যন্ত লম্বা যান্ত্রিক এই করাত দিয়ে একজন মানুষ ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে একটি গাছ কেটে ফেলতে পারে। এই ধরনের করাতের সামনের দিকে একটি ধারালো ব্লেড থাকে, যা রাবারের বেল্টের মাধ্যমে সচল হয়। সাধারণ বনের গাছ দ্রুত কাটতে গাছচোরেরা এটি ব্যবহার করে থাকে।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও রাজশাহী জেলার প্রধান সড়কের গাছ নির্বিচারে কেটে অবরোধ করেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। আর অবরুদ্ধ এলাকায় চালানো হয় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট।
সবচেয়ে বেশি গাছ কাটা হয়েছে নোয়াখালী জেলায়। সেখানে প্রায় আট হাজার গাছ নিধন করা হয়। এই গাছগুলোর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজারই ছোট গাছ। বাকিগুলো ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, সাতক্ষীরা জেলা শহরে প্রবেশের প্রধান সড়কগুলোর দুই পাশের প্রায় তিন হাজার গাছ কাটা হয়। সাতক্ষীরার আশাশুনি সড়ক, কলারোয়া সড়ক ও সাতক্ষীরা-খুলনা প্রধান সড়কের দুই পাশে আকাশমণি, বেলজিয়াম, মেনজিয়াম, রেইনট্রি ও কড়ইগাছের শোভাও এতে ধ্বংস হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগের বয়সও ১০ থেকে ১৫ বছর।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বাঁশখালী ও লোহাগাড়ায় প্রায় দুই হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এগুলো প্রায় সবই পুরোনো গাছ। কক্সবাজারে প্রায় ২০০ এবং বাকি সাতটি জেলায় প্রায় তিন হাজার গাছ ধ্বংস করা হয়। কক্সবাজারের গাছগুলো দেশের অন্যতম পুরোনো। স্থানীয় করাতকল মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, এ রকম একেকটি গাছের দাম প্রায় এক লাখ টাকা। আর ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সী গাছের দাম স্থান ও প্রকৃতিভেদে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বলে সূত্রগুলো দাবি করেছে।
নিধনের শিকার গাছের বেশির ভাগই সামাজিক বনায়নের আওতায় গ্রামের গরিব মানুষ সরকারের সহায়তায় রোপণ করেছিল। গ্রামের গরিব মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই গাছ লাগানো হয়েছিল। গ্রামবাসী বছরের পর বছর গাছগুলোর পরিচর্যা ও পাহারা দিয়ে আসছিল। সামাজিক বনায়নের এসব গাছ নিলামে বিক্রি করার পর পরিচর্যাকারী গরিব মানুষদের মোট দামের ৫৫ ভাগ পাওয়ার কথা ছিল।
জামাত শিবির চক্র নিজেকে ধর্মের ঠিকাদার মনে করে । এবার ধর্মীয় দৃষ্টিতে ওদের এই কর্মকাণ্ড কতটা হঠকারী সেটা দেখা যাক ।
ইসলামে পরিবেশের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে। তাই ইসলামে বৃক্ষ রোপণ এবং বৃক্ষের পরিচর্যার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান যুগে বৃক্ষ রোপণের উপর যে গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে তার পথ প্রদর্শন করেছে ইসলাম। আজ হতে দেড় হাজার বছর আগেই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ ( সাঃ) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে গেছেন।
আমরা জানি পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু যদি বলা হয়, বৃক্ষের অপর নাম জীবন তাহলে অনেকের কাছেই তা অবাক লাগতে পারে। একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলেই এর সত্যতা অনুধাবন করা যাবে। পানি ব্যতীত কোন প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। এটা সত্যি কিন্তু সেই পানির প্রধান দুটি প্রধান উপকরণের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান উপকরণ অক্সিজেন সরবরাহ করে বৃক্ষ। আমরা নিশ্বাসের সাথে যে অক্সিজেন গ্রহণ করি তা পাই বৃক্ষ হতে। কোন কারণে বিশ্ব যদি কয়েক দিনের জন্য পানিশূন্য হয়ে যায় তাহলেও অনেক প্রাণী বেঁচে থাকতে পারবে। কিন্তু অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ এবং অন্য কোন প্রাণীই এক মুহূর্তও বেঁচে থাকতে পারবে না। তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে প্রাণী জগতের টিকে থাকার জন্য বৃক্ষের উপস্থিতি কতটা অনিবার্য।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা ফরজ নামাজের পর জীবিকার অন্বেষণে জমিনে ছড়িয়ে পড়। এই জমিনে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে অন্যান্যের মধ্যে কৃষি কাজের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর কে না জানে কৃষির প্রধান উপকরণ হচ্ছে বৃক্ষ। ইসলামের দৃষ্টিতে পেশা হিসেবে কৃষি কাজকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে রিজিকের দশ ভাগের নয় ভাগই তেজারত বা ব্যবসায়ের মধ্যে নিহিত। এই ব্যবসা বাণিজ্যের মধ্যে কৃষিজাত পণ্যের প্রধান্য লক্ষনীয়। কোন কিছুর উপরই মানুষের একচ্ছত্র মালিকানা অর্জিত হয় না। বৃক্ষের ক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য। মানুষ বৃক্ষের বীজ বা বৃক্ষ সৃষ্টি করতে পারে না। আল্লাহ মানুষের জন্য গাছ অথবা গাছের বীজ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ সেই বীজ বপন করে চারা গাছ উৎপাদন করে। সে ক্ষেত্রেও আল্লাহর রহমত ছাড়া কিছু হয় না। তাই মানুষ কোনভাবেই বৃক্ষের উপর একচ্ছত্র মালিকানা বা আধিপত্য দাবি করতে পারে না। আল্লাহ তার বান্দার জন্য যতগুলো নিয়ামত সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত হচ্ছে বৃক্ষ, যা ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। কোন ব্যক্তির জমিতে গাছ জন্মালে সংশ্লিষ্টব্যক্তিই ঐ গাছের ভোগ দখলগত মালিকানা লাভ করবে। তিনি যে কোন প্রয়োজনে গাছ ব্যবহার করতে পারেন। এমন কি একান্ত প্রয়োজন হলে গাছ কেটে ফেলতেও পারেন। কিন্তু এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে গাছটি কর্তন করা হলে মানুষের কোন ক্ষতি হবে কিনা।
অকারণে বা বিনা প্রয়োজনে ইসলাম কাউকে গাছ কাটার অনুমতি দেয় না। কারণ যে ব্যক্তির জমিতেই গাছ জন্মাক না কেন তাতে অন্য মানুষ, এমন কি জীবজন্তু, পশুপাখির হক আছে। ইসলাম কোন ফলবান বৃক্ষের নিচে কাউকে মলত্যাগ করার অনুমতি দেয় না। মানুষ ইচ্ছে মতো গাছের ফল ভোগ করতে পারে। এমন কি কাঠ কেটে এনে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। কিন্তু অকারণে বনে আগুন দিয়ে বন পুড়িয়ে দেবার অনুমতি ইসলাম কাউকে দেয় না। প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নিজ হাতে বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যা করেছেন। হাদিসে বলা হয়েছে, কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তেও কারো হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে সে যেন তা রোপণ করে নেয়। কারণ এজন্য তাকে কিয়ামতের দিন অনেক সওয়াব দেয়া হবে। বৃক্ষরাজি সর্বদা আল্লাহকে সেজদারত থাকে এবং তারা তসবিহ পাঠ করতে থাকে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, তুমি কি দেখ না যে আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আকাশ মন্ডলীতে ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজী, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে। বৃক্ষরাজি মানুষ এবং পশুপাখির কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে ,পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক। আমি প্রচুর বারি বর্ষণ করি। অতঃপর আমি ভূমিকে প্রকৃষ্টরূপে বিদারিত এবং উহাতে উৎপন্ন করি শস্য, শাক-সবজি, জলপাই, খর্জুর, বহু বৃক্ষ বিশিষ্ট উদ্যান, ফল এবং গবাদিপশুর খাদ্য। উহা তোমাদের ও তোমাদের গবাদিপশুর ভোগের জন্য। ‘যে ব্যক্তি অকারণে একটি ফুল গাছ কাটবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’
যে কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথে তার আমলনামা বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু ছাদকায়ে জারিয়ার সওয়াব অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ মানুষ মৃত্যুর পরও সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব অব্যাহতভাবে পেতে থাকবে। কোন ব্যক্তি যদি একটি গাছ রোপণ করেন তাহলে ঐ গাছটি যতদিন বেঁচে থাকবে এবং মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু যতদিন তার ফল বা উপকার ভোগ করতে থাকবে ততদিন বৃক্ষরোপণকারীর আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে। এমন কি রোপণকারী যদি মারা যান তাহলেও তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে যত দিন গাছটি বাঁচা থাকবে। কোন মানুষ যদি ঐ বৃক্ষ হতে কোন উপকার বা ফল ভোগ নাও করে তাহলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকবে। ইসলামে বৃক্ষরোপণের উপর কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা অনুধাবন করার জন্য এই একটি হাদিসই যথেষ্ট।
অথচ রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে যে ভাবে বৃক্ষ নিধন চলছে তাকে কিভাবে অভিহিত করা যায় ? কোন যুক্তিই এই কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করতে পারে না । কোন এক জেনারেলের শাসনামলেও ঢাকার দৃষ্টি নন্দন শতবর্ষী প্রচুর গাছ কাটা হয়েছে । তথাকথিত ধর্মের ধ্বজাধারীরা ৫ই মে ২০১৩ তে ঢাকা শহরে যেন বৃক্ষ নিধনের মহোৎসবে নেমেছিল । বর্তমানেও চলছে দেশের মহাসড়কগুলিতে বৃক্ষনিধনের তাণ্ডব । এই সভ্যতা ও ধর্ম বিবর্জিত কর্মকাণ্ডকে নিন্দা জানাবার কোন নিন্দা সূচক শব্দাবলীই যথেষ্ট নয় ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৮