একথা এখন সকলেই একবাক্যে স্বীকার করবেন যে দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁস বলতে গেলে একটি মহামারী আকার ধারণ করছে । কেও কেও অবশ্য বলবেন যে এটা একেবারে নতুন কোন ঘটনা নয়। প্রতিবারের পিএসসি,জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি থেকে শুরু করে সবধরণের পরীক্ষায় প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস এখন দেশে আলোচনার একটি বড় অংশ দখল করে আছে । এ নিয়ে মিডিয়াতে দেখা যায় দেশের স্বস্বনামধন্য শিক্ষাবিদ , তথ্য প্রযুক্তিবিদ , মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, উচু পর্যায়ের সংস্লিষ্ট সরকারী আমলা , ছাত্র- শিক্ষক , অভিবাভক ও সচেতন নাগরিকদের অনেকেই উৎকন্ঠা প্রকাশ করছেন । দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিধ্বংসি এই প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরনের আশংকা ও মতামত প্রকাশ করছেন তাঁরা । বিষয়টি আমাদের মত ব্লগারদেরকেও বিচলিত করছে, এ নিয়ে ব্লগারগনও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ সোচ্চার হয়ে উঠেছেন দেখা যাচ্ছে । বিষয়টির ভয়াবহতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নাই । বিভিন্ন মাধ্যমে আসা গুটি কয়েক সংবাদ ভাষ্য হতেও এর ভয়াবহতা ও এর বিপক্ষে প্রতিবাদী কথা ও আচরণ অনুধবান করা যেতে পারে সহজেই ।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত লেখায় দেশে মুলত দুই ধরনের প্রশ্ন ফাঁসের দৃশ্য দেখা যায় । একটি পরীক্ষার দুএক দিন আগে ফাঁস হওয়া, আরেকটি পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ফাঁস হওয়া। পরীক্ষা বাণিজ্যের সঙ্গে এত দিন যুক্ত ছিল কোচিং সেন্টার, নোটগাইড বা অনুশীলন বই। এখন নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে প্রশ্ন ফাঁস, যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু সংখ্যক শিক্ষক নামদারী অসৎ মানুষ, কোচিং সেন্টার, ছাত্র ও ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এখানে মোটা অংকের টাকার গন্ধ থাকায় প্রশ্ন ফাঁস বাণিজ্য রমরমা হয়ে উঠেছে । পরীক্ষাটাই যেন এখন একটা বিরাট প্রহসনে পরিনত হয়েছে ।
এখন পরীক্ষা হলেই প্রশ্ন ফাঁস , তাও আবার আগাম ঘোষনা দিয়ে । এমন মাত্রার প্রশ্ন ফাঁস ইতিপুর্বে দেখা যায়নি দেশে । প্রশ্ন ফাঁস রোধের এত সব উদ্যোগও দেখা যায়নি আগে । তবে বাস্তবতা হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েও কোনোভাবেই তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।
পরীক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই পরীক্ষা ব্যবস্থাটাকেই এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন । প্রশ্ন ফাঁসের মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ক্ষোভ ও হতাশায় প্রতিদিন তারা ডুবে যাচ্ছে।
ছবি-২ : ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে পরীক্ষারত ছাত্র ছাত্রী।
এর পরিনামে দেশের মেধাবী ছাত্র ছাত্রীগন প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠছেন । তাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন দেশের সকল সচেতন মানুষ , তারাও আজ বিক্ষুব্ধ আর হতাশা গ্রস্থ । এ বিষয়ে চুপ করে থাকার সময় শেষ হয়ে এসেছে । মনে হয় সকলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে ।
ছবি -৩ : প্রতিবাদে মুখর দেশের ভোক্তভোগী মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের সাথে যুক্ত হয়েছেন সচেতন অভিবাবকবৃন্দ
প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি পর্যালোচনায় দেখা যায় , শিক্ষাব্যবস্থায় যত বেশি পরীক্ষা বাড়ছে, ততই বাড়ছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বাজার। ফেসবুকে একেকটি গ্রুপে কয়েক হাজার সদস্য, ফাঁসকৃত প্রশ্ন একজন পেলেই এদের সবাই পেয়ে যায়, এরপর জ্যামিতিক হারে তা বাড়তে থাকে। হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো এবং ভাইবারেও প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ছে মহুর্তেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।
ছবি-৪ : মোবাইল ফোন দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস
পরিস্থিতি এতটাই প্রকট হয়েছে যে খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই বর্তমান প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো কঠিন কাজ বলে মনে করছে । প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ রাখা, প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণাসহ এক ডজনের বেশি সিদ্ধান্ত বা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি, সর্বশেষ প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে এই অভিযোগে গ্রেপ্তারের সংখ্যা শতের ঘর অতিক্রম করেছে । কিন্তু কোন উদ্যোগই কাজে আসছেনা । বিষয়গুলি নিন্মের চিত্রে খানিকটা অবলোকন করা যেতে পারে ।
ছবি-৫ : কোন উদ্যোগই কাজে আসছেনা
সুত্র : Click This Link
এ কথা সত্য যে প্রশ্ন ফাঁস আগেও হয়েছে তবে তা কখনো এতটা ভয়াবহ পর্যায়ে যায়নি। এখন অবস্থাটি বলতে গেলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে বিভিন্ন মহলে অআলোচনা হচ্ছে । দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও দায়বদ্ধতা না থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন । শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত হিসেবে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা মূলত বহনকারী বা সুবিধাভোগী শিক্ষার্থী। প্রশ্নপত্র কোথা থেকে ফাঁস হয়েছে, তার উৎস চিহ্নিত হয়নি । অনেকের মতে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে এখন যা হচ্ছে, তা মূলত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড । তাই এটা দমনের লক্ষ্যে কতৃপক্ষ পর্যায়ে কিছু গ্রেফতারী কর্মকান্ড চোখে পড়লেও তা বিশেষ কোন কাজে আসেনি ।
অপর দিকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও ডিজিটাল পদ্ধতিতেই প্রশ্ন ফাঁস রোধ সম্ভব বলে মনে করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী। তিনি প্রচলিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রশ্ন তৈরি শুরু হতে প্রশ্নটি পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন ধরে একভাবেই পরিচালিত হয়ে আসায় এর সাথে যুক্ত মানুষ ও পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বিধান যে কারও জন্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ।
বলা হচ্ছে প্রযুক্তিগত দিক থেকে যে কাউকে ট্রেস করা সম্ভব হলেও প্রযুক্তিতে যেমন অপরাধী চিহ্নিত করার সুযোগ আছে, তেমনি সেখানে ফাঁকি দেওয়ারও সুযোগ আছে। রিয়েল আইপি অ্যাড্রেস থাকলে সহজে শনাক্ত করা যায় , কিন্তু ভিপিএন ব্যবহার করলে শনাক্ত করা বেশ কঠিন । সরকারকে যারা ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে, তারা প্রযুক্তিগত ভাবে বেশ সক্ষমতার অধিকারী, অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় তারা কয়েক ডিগ্রী উপর দিয়েই চলে ,তা না হলে এতসব সরকারী বিধি বিধান ও কর্মকান্ডের পরেও প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয় কি করে !!!
এ পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত হিসেবে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা মূলত বহনকারী বা সুবিধাভোগী শিক্ষার্থী। প্রশ্ন কোথা থেকে ফাঁস হয়েছে, তার উৎস চিহ্নিত হয়নি। এ ছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে গিয়ে ধরা পড়া ঘটনায় ‘পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে’ মামলা হলেও কারও সাজা হয়নি। এ ধরনের মামলায় কেবল গ্রেফতারের খবরই দেখা যায় । এরপর প্রায় সব মামলার পরিণতিই জামিন আর খালাস, যার কোন খবর মিডিয়ায় তেমন আর আসেনা ।
প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা হয়েছে ,পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে জাতীয় সংসদে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেছেন বিরোধী দলের একজন সাংসদ । এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী কি বিবৃতি দিয়েছেন তা সকলেরই জানা ।
( সুত্র : Click This Link
ছবি-৬ : জাতীয় সংসদ ভবন
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবিরাও পিছিয়ে নেই । প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে সরকারের ব্যর্থতার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের চারজন আইজীবীর দায়ের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৫ ই ফেব্রুয়ারী আদালত একটি রুলও জারি করেন। রুলিংয়ে বলা হয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে কেন সরকারের এই নিষ্ক্রিয়তাকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না ।
ছবি-৭ : হাইকোর্ট ভবন
সুত্র : Click This Link তারিখ : ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০১৮
ইত্যাকার বিবিধ কারণে ইদানিং সরকারের সংস্লিষ্ট মহল/মন্ত্রনালয় বেশ নরে চরে বসেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখা যায় ।
গত ২০ শে ফেব্রুয়ারী ২০১৮ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাব্য ছয় ক্ষেত্র নিয়েও আলোচনা হয়( সুত্র : Click This Link , ।
সভার কার্যপত্রে বর্নিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের সম্ভাব্য ছয়টি ক্ষেত্রের সংক্ষপ্ত বিবরণ
প্রথমত , বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্র ছাপার কাজে অনেক লোক জড়িত থাকেন। তাঁরা প্রশ্ন কপি করতে না পারলেও স্মৃতিতে ধারণ করে নিয়ে আসতে পারেন। তিন থেকে চারজনের গ্রুপের পক্ষে এভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা অসম্ভব কিছুনা ।
দ্বিতীয়ত, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে ট্রেজারি বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশ থাকলেও বাস্তবে অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না।
তৃতীয়ত, অতিরিক্ত কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়ায় সেগুলি ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে।
চতুর্থত, মুল পরীক্ষা কেন্দ্রের অধীন কিছু পরীক্ষার স্থান/ভেন্যু অনেক ক্ষেত্রে মূল কেন্দ্র থেকে দূরে অবস্থিত। ফলে ৩০ মিনিট আগেই কেন্দ্রসচিব প্রশ্ন খুলতে বাধ্য হন। এখান থেকেও প্রশ্ন ফাঁসের কিছুটা সুযোগ থেকে যায় ।
পঞ্চমত, পরীক্ষার্থী বা পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর । গুটি কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে গোটা প্রশ্নপত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়ে য়ায়।
ষষ্ঠত, বিটিআরসির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন আপলোডকারীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করাও সম্ভব হচ্ছে না।
তবে প্রশ্ন ফাঁসের ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত হলেও আন্ত মন্ত্রনালয় সভায় প্রশ্ন ফাঁসকারী চিহ্নিত হয়নি।
প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানোতে ব্যর্থতার কারণে আগামী বছর নতুন পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া এবং নতুন পদ্ধতিতে কয়েক শ প্রশ্ন নিয়ে একটি ‘প্রশ্নব্যাংক’ তৈরী করে সেখান থেকে পরীক্ষার আগ মুহূর্তে চুড়ান্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে দেখা যায় । একই সঙ্গে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) তুলে দেওয়ার বিষয়েও নীতিগতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা যায় ।
আগামী ২০১৯ সনে অনুষ্ঠিতব্য এস এস সি পরীক্ষায় অনুসৃতব্য নতুন পদ্ধতিটি কী হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন কিছু অবশ্য এখনো জানা যায়নি । তবে প্রস্তাবিত প্রশ্ন ব্যাংকের ব্যাখ্যা সম্পর্কে প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদ ভাষ্যে জানা যায় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, সংশোধন ও প্রশ্ন নির্বাচনের কাজটি একটি নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হবে। ওই সফটওয়্যার ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারীদের ( শিক্ষক) কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে তা ‘প্রশ্নব্যাংকে’ রাখা হবে। সেখান থেকে প্রশ্নপত্রের সেট তৈরি হবে। একাধিক প্রশ্ন সেট অনলাইনে পরীক্ষার আগ মুহূর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হবে। সুরক্ষিত যন্ত্রের ( ডিভাইস) মাধ্যমে এই কাজটি করা হবে । এ প্রসঙ্গে এখানে উল্লেখ্য যে বর্তমানে এস এস সি সহ পাবলিক পরীক্ষায় বিজি প্রেসে দুই সেট প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে পাঠানো হয় । পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার নিয়ম। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো কেন্দ্রে এর আগেই প্যাকেট খোলা হয় এবং মুঠোফোনে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে পাঠিয়ে ফাঁস করা হয়।
এ অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকার কেন্দ্রিয়ভাবে প্রশ্ন ছাপাবে নাকি পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো ডিভাইস দিয়ে তা করতে পারবে তা এখন একটি বিরাট ভাবনার বিষয় বটে । বর্তমান অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রে পরীক্ষার কিছুক্ষন পুর্বে একটি মাত্র প্রশ্ন ছাপিয়ে কোনো লাভ হবে বলে মনে হয়না । অপরদিকে এখন যে সময়ে কেন্দ্রে প্রশ্ন যাচ্ছে তাতেই ফাঁস হচ্ছে। আর কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র ছাপাতে হলে তা ছাপতে হবে কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে । সুতরাং, ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনাতো থেকেই যাচ্ছে। সঙ্গত কারণে এমন কোনো পদ্ধতি আবিষ্কার করা প্রয়োজন যেখানে প্রশ্নপত্র ছাপাও হবে, বিতরণও হবে অথচ ফাঁস হবে না । এমতাবস্থায় প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত বিষয়ে, উপরে আলোচিত সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে প্রশ্নপত্র প্রনয়ন , ছাপানো ও তা পরীক্ষার্থীদের নিকট বিতরণ ও মাঝপথে ফাঁস হওয়া রোধ কল্পে একটি উপযুক্ত পন্থা নিয়ে আমাদের মত সাধারণ শিক্ষানুরাগী আমজনতার আলোচনা এখান হতেই শুরু হতে পারে ।
এখানে একটি কথা উল্লেখ্য যে, প্রশ্নপত্র প্রনয়ন ও বিতরণের মত জাতীয় গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন ও বাস্তবায়নে সমাজের সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহন যত স্বচ্ছ ও স্বতস্ফুর্ত হবে গৃহীত ব্যবস্থাটি তত বেশী নিখুত ও নির্ভরশীল হবে । গুটি কয়েক বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে গৃহীত ব্যবস্থা যে বার বার ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হচ্ছে তা কি আর এখন বলার অপেক্ষা রাখে ।
তাই প্রশ্ন পত্র ফাঁসের মত জনগুরুত্বপুর্ন একটি বিষয়ে গুটি কতেক বিশেষজ্ঞ নিয়ে ছোট্ট পরিসরে মন্ত্রনালয়ের সভাকক্ষে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহন কাঙিত ফল দিবে বলে মনে হয় না । এর জন্য প্রয়োজন সকলের সম্পৃক্ততা ও সহযোগীতা । এ লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন । এই কমিটি একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় সমাজের সংস্লিষ্ট সকলের নিকট হতে উপযুক্ত কৌশল সম্বলিত বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা আহ্ববান করতে পারেন । প্রাপ্ত প্রস্তবনাগুলি পর্যালোচনা করে কমিটি এক বা একাধিক কনসেপ্ট পেপার তৈরী করতে পারেন । কমিটি কতৃক প্রনীত কনসেপ্ট পেপারটি শিক্ষা মন্ত্রনালয় তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সমাজের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের সাথে ইফেকটিভ কনসালটেশন এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলি মুল্যায়ন করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারে । সমাজের সকল স্তরের মানুষের অংশ গ্রহনের ফলে গুনগতমানের উপযুক্ত প্রশ্নপত্র প্রনয়ন থেকে শুরু করে সেগুলির বিতরন পর্যায় পর্যন্ত একটি উপযুক্ত কৌশল উদ্ভাবিত হতে পারে । তবে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সাথে সংষ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব যতাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা তা সুনির্দিষ্ট পন্থায় যথাযথভাবে তদারকি ও ব্যর্থতার দায় নিরোপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করাটাও একান্ত জরুরী। খেয়াল রাখতে হবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় শুধুমাত্র ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র বহনকারীদের কাধেই না বর্তিয়ৈ , পুরা নেট ওয়ার্কটাই সনাক্ত করা প্রয়োজন , অবশ্য এ সবকিছু নির্ভর করে কতৃপক্ষের সদিচ্ছা ও নিষ্ঠর সহিত তা পালনের মানসিকতার উপর ।
যাহোক, এ আলোচনার ইতি টানার পুর্বে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ কল্পে এর প্রনয়ন ও বিতরন ব্যবস্থার বিষয়ে দেশের একজন অতি সাধারণ নাগরিক হিসাবে একটি কর্ম পন্থা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন মনে করি । সবাই যদি শুধু বলি প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা প্রয়োজন , কিন্তু কিভাবে এটা রোধ করা যেতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে কিছু না বলা হয় তাহলে বলাটা অসম্পুর্ণ থেকে যায় । যদিও ধারণা করি প্রস্তাবিত পন্থাটি সম্পর্কে অনেকের বিভিন্ন রকমের দৃষ্টিভঙ্গী থাকতে পারে তথাপি এটি একটি ভাবনার শুরুতো হতে পারে ।
প্রস্তাবিত পন্থা/কৌশলটির মুল কাঠামো ও বাস্তবায়ন পর্যায় সমুহ
১) কর্মসুচী/পন্থাটি বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই পরীক্ষার প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি প্রশ্নপত্র প্রনয়ন ও নির্বাচন কমিটি গঠন করা যেতে পারে ।এই কমিটিতে সংস্লিশ্ট বিষয়ে দেশের বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ।
২) এই কমিটি দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে বিজ্ঞ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিকট হতে নির্ধারিত গাইড লাইনের আলোকে সংস্লিষ্ট বিষয়ের পাঠ্যক্রমের পরিধির ভিতরে থেকে প্রশ্ন প্রনয়ন করে মুল কমিটির নিকট প্রেরনের জন্য আহ্নবান জানাবে ।
৩) কমিটির বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সদস্যগন প্রাপ্ত প্রশ্নপত্র সমুহের মধ্য হতে উপযুক্তমানের প্রশ্ন নিয়ে প্রতিটি বিষয়ের জন্য ২০ টি ইউনিক প্রশ্নপত্র প্রনয়ন করবে । কোন প্রশ্নের সাথে কোনটিই মিলতে পারবেনা । প্রতিটি প্রশ্ন সেটে পরীক্ষার স্তর ( যথা এস এস সি /এইচ এস সি ) অনুযায়ী ২/৩ ঘন্টা সময়ের মধ্যে উত্তর দান উপযোগী সর্বাধিক ১০ টির মত প্রশ্ন দিয়ে একটি প্রশ্নপত্র তৈরী করবে । বিষয় ভিত্তিক ১০টি করে প্রশ্ন নিয়ে গঠিত প্রশ্নটি হবে সে বিষয়ের জন্য একটি প্রশ্ন ব্যাংক । বিষয় ভিত্তিক প্রশ্ন ব্যাংকটি চুড়ান্ত করতে হবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র তিন দিন পুর্বে । এ পর্যায়ে প্রশ্ন ব্যাংক হতে দৈবক্রমে কোন সেটের প্রশ্ন ফাঁস হলেও কারো কোন লাভ হবেনা , কারন কেও জানবেনা কোন সেট দিয়ে পরীক্ষা হবে । অতএব এ পর্যায়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে দুশ্চিন্তার তেমন কোন কারণ নেই । তবে একটি বিষয়ে কিছু সম্ভাবনা থেকে যেতে পারে , তাহলো সংঘবদ্ধ প্রশ্নপত্র ফাঁস কারীরা ২০ টি সেটের অধীনে ২০০টি (২০ X ১০=২০০) প্রশ্নের উপর একটি 'উত্তর-পত্র ব্যাংক' তৈরী করে তাদের হাতের কাছে মজুদ রাখতে পারে ভবিষ্যতে মওকা মত ব্যবহার করার জন্য, সে সাথে পরীক্ষায় কমন পড়ার নিশ্চয়তা দিয়ে দেশ জোরে নোট বুকের একটি রমরমা বানিজ্যও ফেদে বসতে পারে !! তাই এ পর্যায়েও যথেষ্ট গোপনীয়তা রক্ষার কৌশল অবলম্বন প্রয়োজন হবে । গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও সেজন্য কঠোরতম শাস্তির বিধান রাখাটাও প্রয়োজন হবে । গন্ডিটা ছোট বলে এ পর্যায়ে দায়ীদেরকে সনাক্ত করা তেমন কোন কঠীন হবেনা বলেই মনে হয় ।
৪) পরীক্ষা শুরুর মাত্র দুই ঘন্টা পুর্বে একটি বিশেষ কমিটি কতৃক শিক্ষা বোর্ডের সন্মেলন কক্ষে সকলের সামনে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রশ্নব্যাংক হতে ২০ সেট প্রশ্ন নিয়ে নিন্মের মত স্বচ্ছ একটি মিশ্রন বাক্সে ডেলে এলোমেলো করে সেখান হতে ১০ সেট প্রশ্ন রেনডমলি নির্বাচন করতে হবে । এ পর্যায়েও প্রশ্ন ব্যাংক হতে দৈবক্রমে কোন সেটের প্রশ্ন ফাঁস হলেও কারো তেমন কোন লাভ হবেনা , কারন কেও জানবেনা কোন সেট দিয়ে পরীক্ষা হবে । ১০ টি সেটের যে কোন একটি দিয়ে পরীক্ষা হতে পারে , অতএব কেও যদি ফাঁসকৃত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে পরীক্ষা দিতে চায় তাহলে তাকে ১০ টি সেট হতেই ১০০টির মত বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের উপরে প্রস্তুতি নিতে হবে যা দুই ঘন্টার মধ্যে করা সম্ভব হবেনা । তবে এ ক্ষেত্রেও উপরের মত 'উত্তর-পত্র ব্যাংক' সংক্নান্ত বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে ।
ছবি-৮ : প্রথম পর্যায়ে প্রশ্নপত্র মিক্সিং ও সেখান হতে রেনডমলী ২০ সেট প্রশ্নপত্র নির্বাচন
( ডিভাইসটি মুলত রাফেল ড্রতে ব্যবহৃত হয়)
৪) উপরে বর্নিত পন্থায় নির্বাচিত ১০ সেট প্রশ্ন পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র এক ঘন্টা পুর্বে প্রয়োজনীয় গোপনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অনলাইন/ই-মেইলের মাধ্যমে প্রতিটি পরিক্ষা কেন্দ্রে প্রেরণ করতে হবে । এই সময়ের মধ্যে ই-মেইলে প্রেরিত প্রশ্ন ফাঁস হলেও তেমন কোন সমস্যা নাই । কারন তখনো কেও নিশ্চিত হতে পারবেনা কোন প্রশ্নটি দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে ।
৫) অনলাইন/ ই - মেইলে ১০ সেট প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর পরীক্ষা কেন্দ্রের কম্পিউটারে সেগুলি ডাউনলোড করে প্রতিটি প্রশ্নপত্রের মাত্র একটি প্রিন্ট বের করতে হবে । প্রতিটি সেটের জন্য একটি করে মোট ১০ সেট প্রশ্নপত্রকে নিন্মের মত স্বচ্ছ একটি মিক্সিং বক্সে ডেলে এলোমোলো করে সেখান হতে কেন্দ্র কমিটি কতৃক ৫ সেট প্রশ্নপত্র রেনডমলি উঠাতে হবে ।
ছবি-৯: দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রশ্নপত্র মিক্সিং ও সেখান হতে রেনডমলী ১০ সেট প্রশ্নপত্র নির্বাচন
এটা করতে হবে পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাত্র ৩০ মিনিট পুর্বে, কেন্দ্র কমিটির সকল সদস্যের সম্মুখে । এ পর্যায়েও কেও নিশ্চিত হতে পারবেনা কোনটি দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে । এপর্যায়ে দৈব দুর্বিপাকে যদি ৫ সেট প্রশ্নই ফাঁস হয়ে যায় তাহলে পরীক্ষার্থীকে ৫ সেট প্রশ্নের উপরে প্রায় ৫০টির মত প্রশ্নের উত্তর তৈরী করতে হবে । বায়োনিক ক্ষমতা সমপন্ন কেও যদি তা করতে পারে তাহলে করতে পারে তবে সে সম্ভাবনা একেবারে কম । তাছাড়া পরীক্ষার্থীদেরকে তো পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পুর্বে পরীক্ষার হলে উপস্থিত থাকার জন্য একটি নির্দেশনা রয়েছেই , যা তখনো বলবত রাখতে হবে । কেন্দ্রে সে সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বাহির হতে পরীক্ষার্থীদেরকে প্রম্ট করার সুযোগ বন্ধ করার বিষয়টিও প্রস্তাবিত এই কর্ম কৌশলের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে ।
৬) এ পদ্ধতিতে নির্বাচিত ৫ সেট প্রশ্নপত্রকে ( সেট -ক, সেট - খ, গ, ঘ, ঙ নামে ভাগ করে ) কেন্দ্রের মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যার ভিত্তিতে ( পরীক্ষা কেন্দ্রে গড়ে মোট প্রায় ১৫০০ পরীক্ষার্থী ধরে নিয়ে ) প্রতি ৩০০ জনের জন্য ১ সেট প্রশ্নের প্রিন্ট নিলেই চলবে । উল্লেখ্য যে ফেব্রুয়ারী ২০১৮ তে অনুষ্ঠিত এস এস সি পরিক্ষায় ৮৫৫১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে মোট ১৭ লক্ষ চুয়াত্তর হাজার ৫৩৩ জন পরিক্ষার্থী দেশের ৩৪১২ টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছে । এর মধ্যে দেশের বাইরে বিদেশে অবস্থিত ৮ টি কেন্দ্র হতে মোট ৪৫৮ জন পরীক্ষা দিয়েছে, সে সমস্ত কেন্দ্রে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে তেমন কিছু শুনা যায়না । তারপরেও বিদেশী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত নিরাপদ পদ্ধতিতে প্রশ্ন সরবরাহ করতে হবে । কারণ এ প্রযুক্তির যুগে বলাতো যায়না, সেখানে প্রশ্ন যাওয়া আসা ও বিতরনের সময় কোন মতে ফাঁশ হলে তা দেশে আসতে মহুর্তমাত্র সময়ই যথেষ্ট ।
পুর্বেই বলা হয়েছে কেন্দ্রিয় প্রশ্ন প্রনয়ন কমিটি কতৃক চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত বা প্রনীত প্রতিটি প্রশ্নই আবশ্যিক ভাবে গুনেমানে সমান গুরুত্ব ও মানের হবে । সে বিবেচনায় প্রতি সেটে ৩০০টি করে মোট ৫ সেট প্রশ্নপত্রকে উচ্চ গতির প্রিন্টিং ক্ষমতা সম্পন্ন লেজার প্রিন্টারের সাহায্যে মোট ১৫০০ কপি (পরীক্ষার্থীর সংখ্যানুযায়ী প্রয়োজনে কম বেশী হতে পারে ) প্রিন্ট করতে হবে । একটি এইচ পি লেজার জেট প্রিন্টারে ৩০০ কপি প্রিন্টের জন্য মাত্র ১০ মিনিট সময় প্রয়োজন হতে পারে । প্রিন্টিং এর জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে মাত্র ৫ টি লেজার প্রিন্টারের ব্যবস্থা রাখলেই চলবে , প্রিনটারের গতির উপরে নির্ভর করে সময় আরো কমও লাগতে পারে । এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট ও তার অর্থায়নের বিষয়গুলি লেখাটির পরের অংশে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে ।
ছবি -১০ : প্রশ্নপত্র প্রিন্টিং এর জন্য লেজার প্রিনটার সমুহ
তারপরে ছাপানো সকল প্রশ্নপত্রকে একসাথে নিন্মের মত বড় আকারের একটি স্বচ্ছ মিক্সিং বক্সে ডেলে দিয়ে কেন্দ্র কমিটির সকল সদস্যের উপস্থিতিতে এলোমোলো করে একত্রে মিশাতে হবে ।
ছবি-১১: কেন্দ্র পর্যায়ে ছাপানো প্রশ্নপত্র একত্রে মিশিয়ে সেখান হতে রেনডমলী ৫ সেট প্রশ্নপত্র নির্বাচন
তারপর মিক্সিং বক্সের ভিতরে থাকা প্রশ্নগুলি হতে ৫ সেট প্রশ্নপত্র রেনডমলি তুলে নিয়ে সেগুলি হতে একের পর একটি করে পরিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে । যার ভাগে যা পরে তাই দিয়ে সে পরীক্ষা দিবে । প্রশ্ন নির্বাচন , ছাপানো ও তা পরীক্ষার্থীদের নিকট বিতরণ কর্মকান্ডের জন্য ৩০ মিনিট সময়ই যথেষ্ট । উল্লেখ্য যে পরীক্ষার স্থান/ভেন্যুগুলি মুল কেন্দ্র হতে কোন মতেই হাটা পথে ৫/৭ মিনিটের বেশী দুরত্বে হতে পারবেনা । কারণ দুরের ভেন্যুতে প্রশ্ন নেয়ার কালে যে কোন অঘটন ঘটে যেতে পারে । উপরে বর্নিত কৌশলাদি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনে যতধরনের প্রস্তুতি মুলক প্রশিক্ষন বা অনুশীলনমুলক কর্মকান্ডের প্রয়োজন হবে তার ব্যবস্থা পুর্বাহ্নেই পরীক্ষা কেন্দ্র কতৃপক্ষকে করতে হবে । এই প্রযুক্তির যুগে এটা কোন অসম্ভব কর্ম নয় । এরকম কর্মকান্ডের ফলে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার জন্য ফাঁস কারীরা মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় হাতে পেতে পারে । তাও নিশ্চিত নয় কোন সেট কোন পরীক্ষার্থীর হাতে যাবে , এমনকি পাশাপাশি সিটে বসা দুজন পরীক্ষার্থী দুরকমের প্রশ্ন হাতে পেতে পারে , ফলে একে অপরে দেখা দেখি করে লেখাও সম্ভব হবেনা ।
এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন সেটের প্রশ্নপত্রে পরিচালিত পরিক্ষার উত্তর পত্র মুল্যায়নের বিষয়টিও গুরুত্বপুর্ণ । প্রশ্নপত্র গুলি নির্ধারিত পাঠ্যক্রম যথাযথভাবে অনুসরন করে প্রনীত এবং প্রতি সেট প্রশ্নের প্রতিটি ক্রমিকে সম মান থাকার কারণে উত্তর পত্র মুল্যায়নে তেমন কোন অসুবিধা হবেনা । সকল মুল্যায়নকারীকেই উত্তরপত্র মুল্যায়নের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড গাইড লাইন সরবরাহ করা হলে সকল পরীক্ষার্থীর উত্তর পত্রই সমভাবে মুল্যায়িত হতে পারবে । তবে কমিটি কতৃক রেনডমলী নির্বাচিত প্রশ্নগুলি ও যেগুলির মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়া হবে তা কমিটির সকল সদস্যের স্বাক্ষর যুক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন কমিটি/কতৃপক্ষের নিকট অনলাইনে প্রেরন করে তা সংরক্ষন ও সে অনুযায়ী উত্তর পত্র মুল্যায়নের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহন করতে হবে ।
প্রস্তাবিত পন্থাটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক ( সরঞ্জাম) সাপোর্টের একটি ব্যয় প্রাক্কলন
পুর্ব বর্নিত তথ্য হতে দেখা যায় সারা দেশে এস এস সি স্তরের পরীক্ষা প্রায় ৩৫০০ টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হতে পারে । সে হিসাবে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক ( সরঞ্জাম) সাপোর্টের একটি ব্যয় প্রাকলন দেয়া হলো ।
উপরের ব্যয় প্রাক্কলন অনুযায়ী সর্বমোট ৮২ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকার সরঞ্জামের প্রয়োজন হতে পারে । এর মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ৫ টি কম্পিউটার আছে ( পরীক্ষা কেন্দ্র হওয়ার মত যোগ্য হিসাবে বিবেচিত প্রায় প্রতিটি স্কুলে পাঁচটি কম্পিউটার/লেপটপ থাকা এখন একটি স্বাভাবিক বিষয়) । তাই উপরের ব্যয় প্রাক্কলন হতে কম্পিউটার খাতের অর্থ বাদ দিলে কর্মসুচীটির জন্য মোট প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমান দাঁড়াবে ৩০ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকার মত । বিভিন্ন মিডিয়া হতে জানা যায় এশিয়ান ডেভেলপসেন্ট ব্যাংক শিক্ষা অবকাঠামো খাতে শহজ শর্তে অনুদান/ঋণ দানে খুবই আগ্রহী । মোট কথা এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান কঠীন কোন বিষয় নয় । তাছাড়া এই কর্মসুচী বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা ফিস হতে কিংবা সরকারী /বেসরকারী বা আন্তরজাতিক দাতা সংস্থার নিকট হতে অনুদান হিসাবে পাওয়া যেতে পারে । উল্লেখ্য যে, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আন্ত শিক্ষা বোর্ড কো অর্ডিনেশন সাব কমিটি ২০১৮ সনে এস এস সি পরীক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ ১৫৫০ টাকা পরীক্ষা ফিস নির্ধারন করে দিয়েছে, সুত্র : http://www.observerbd.com/details.php?id=98971 ) ।
সে হিসাবে শুধুমাত্র দেশের এস এস সি স্তরের ১৭.৭৫ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের নিকট হতে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার উপরে ফিস সরকারী খাতে আহরিত হতে পারে । এই অর্থের মধ্যে মাত্র ১০ ভাগ অর্থ ব্যয় করে উপরের প্রস্তাবিত কর্মসুচী বাস্তবায়ন করা যেতে পারে ।
যাহোক, প্রস্তাবিত পন্থাটি বিবেচিত হোক বা হোক তাতে কোন ক্ষতি নাই, তবে কামনা করি সংস্লিষ্ট সকলেই একনিষ্টভাবে যুক্ত হোক প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের মিছিলে , জাতি মুক্তিপাক একটি মারাত্মক বিপর্যয় হতে , আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও কোটি কোটি শিক্ষানুরাগী কোমলমতি মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা মুক্তি পাক তাদের মানসিক যন্ত্রনা হতে, ফাঁস করা প্রশ্নে পাশ করা কোন ডাক্তারের হাতে যেন কাওকে ধাবিত হতে না হয় অকালে মরনের পথে, শিক্ষা ব্যবস্থার ভাবমুর্তী উজ্জল হোক দেশে ও বিদেশে ।
স্বাধিনতার মাসে সকলের প্রতি শুভেচ্ছা রইল ।
তথ্য ও ছবি সুত্র : যথাস্থানে লিংক আকারে দেয়া হয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:১৬