রমজানের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে আল-কোরানে। রমজান মাসেই কোরান মাজিদ নাজিল হয়েছে। সিয়াম সাধনা বস্তুত পক্ষে কৃচ্ছ্র সাধনের এমন এক পর্যায় যা আত্মশুদ্ধির সুযোগকে করে অবারিত, আর এনে দেয় সৃষ্টিকর্তার অসীম রহমতের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ লাভের অনাবিল আনন্দ। এমাসে সিয়াম সাধনার সাথে সাথে যত বেশী কোরান তেলাওয়াত ও আল্লাকে স্মরণ ও দুরুদ পাঠ করে মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া করা যায় ততই মঙ্গল ।
এই মাসে যথাযথভাবে সিয়াম সাধনা করে আমরা যত বেশী পুণ্য সঞ্চয় করে নিতে পারব ততই উত্তম । আমরা সকলেই জানি রমজানের ফজিলত অনেক । এ মাসের ফজিলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া আমাদের জন্য খুবই জরুরী, এ মাসটি দ্বিতীয়বার আমাদের জীবনে আসবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নাই। তাই বিশেষ রহমতের এ মাসে আল্লাহর জিকির তথা স্মরণের মাধ্যমে ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের রেখে যাওয়া আদর্শ পন্থা অনুসরণ করে অশেষ নেকী অর্জন করা যায় । সিয়াম গুনাহের ক্ষমা এবং কাফফারা হিসাবে গৃহিত হয় । রমজান আমাদের নিজেদের জন্য এমন একটি পদ্ধতি অবলম্বনের সুযোগ এনে দেয় যার মাধ্যমে সত্যিকার ইসলামী ভাব ধারায় অভ্যস্ত হতে পারি। এ মাসের অন্যতম বরকত হল ভাল কাজের প্রতিদান অনেক বেড়ে যায়। রমজান মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর যা সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। রমজান মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়।
পরিত্র কোরানের অনেক আয়াতে বিভিন্ন প্রসঙ্গ বর্ণনার সাথে আল্লাহ শিখিয়ে দিয়েছেন কখন ও কি ধরণের কথামালায় দোয়া চাইতে হয় । রাব্বানা দিয়ে শুরু আল্লার কালামগুলি উত্তম দোয়া হিসাবে গন্য । রাব্বানা দিয়ে শুরু কালাম গুলি একদিকে যেমন দোয়া অন্য দিকে কোরানের আয়াত বিধায় এই গুলি পাঠে কোরান শরীফ পাঠ ও দোয়ার কাজ একসাথে হয়ে যায় । কুরান মাজীদ তিলাওয়াত করাকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সর্বোত্তম নফল ইবাদত হিসেবে অভিহিত করেছেন। হাদিস শরীফে আছে কেউ যদি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করে তাহলে তিনি নেকি পান আর সে নেকির পরিমাণ হচ্ছে দশ গুণ বেশী (তিরমিযী শরীফ)।
প্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা এ মাসে সিয়াম সাধনার সাথে সাথে নিশ্চয়ই নীজ নীজ সাধ্য অনুযায়ী কোরান শরীফ তেলাওয়াত করা হবে । এ মাসে আমরা প্রায় সকলেই নীজেদের সুযোগ সুবিধা মত নিয়মিত ধর্ম চর্চা করব বলে আশা রাখি । ফাকে ফাকে যদি এই লেখা কিংবা অন্য যে কোন ওয়েবসাইট যথা http://www.quran.gov.bd হতে কিছু কোরানের আয়াত সে সাথে দুরুদ পাঠ করতে পারি তাহলে আমাদের জন্য কতই না মঙ্গল হয় । এই সময়ে আমরা এই লেখায় থাকা বিশ্ব নন্দিত কিছু মসজিদের ছবি দেখি ও সে সম্পর্কে কিছু অআলোচনা করি তবে কতই না ভাল হয় । প্রথমেই শুরু করতে পারি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদের ইতিকথা ও বর্তমান দৃশ্যাবলী নিয়ে ।
ইসলামের প্রাণকেন্দ্র মক্কায় অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই আল – হারাম মসজিদের সম্প্রসারিত অংশের নির্মাণকাজ সমাপ্তির পর মুসুল্লি ধারণ ক্ষমতা দাঁড়ায় ২.৫০ মিলিয়নে ।
ছবি- ২ মসজিদ আল- হারাম ( ২০১৪ সনে গৃহীত সর্বশেষ সংস্কার ও সম্প্রসারনের কাজ চলাকালীন ছবি )
( এর সম্প্রসারণ কাজ চলাকালীন সময়ে ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি )
পবিত্র কোরান শরীফে আরবি শব্দ রাব্বানা ( رَبَّنَا) তথা ‘হে আমাদের প্রতিপালক’ দিয়ে শুরু অনেক দোয়া আছে , তার মধ্য হতে এ পোস্টে রাব্বানা দিয়ে শুরু কিছু দোয়ার আয়াত বা আয়াতাংশ তুলে ধরা হয়েছে । আল্লাহ পাক পবিত্র কোরানে মোমেনদেরে রাসুলের নামে দুরুদ ও সালাম পাঠানোর জন্য বলেছেন (সুরা আহ্যাব - ৩৩.৫৬) ।
তাই রাব্বানা দিয়ে শুরু দোয়া পাঠের ফাকে ফাকে বরেন্য কবি সাহিত্যিকগন রচিত কিছু জনপ্রিয় হামদ ও না’ত সংযোজন করা হয়েছে লেখাটিতে । আমরা সকলেই জানি না’ত মানে প্রশংসা। রাসূলে পাকের প্রশংসাকে বলা হয় না’ত। মানুষ যখন আল্লাহ পাকের প্রশংসা করেন, তাকে বলা হয় ‘হামদ’। লেখাটির মাঝে মাঝে ইসলামের প্রথম যুগের শুরু হতে বর্তমান কাল পর্যন্ত নির্মিত কিছু বিখ্যাত ঐতিহাসিক মসজিদ, ইসলামের উপাসনা, প্রচার ও বিকাশে তাদের গুরুত্ব , আল্লার কুদরতি সৃষ্টি সম্পর্কে কিছু আয়াত ও সে সম্পর্কিত কিছু প্রাসঙ্গীক চিত্র সংযোজীত হয়েছে আল্লার মহাবিজ্ঞতা, মহাত্বতা ও তাঁর অপরূপ সৃস্টির বিষয়াবলী গভীরভাবে অনুধাবনের পথকে সুবিধা মন্ডিত করার জন্য ।
আমরা সকলেই জানি ৬১০ খ্রিস্টাব্দের রমজান মাসের ক্বদরের রজনীতে হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানরত অবস্থায় থাকাকালীন হযরত মুহাম্মদ ( সা) এর প্রতি প্রথম নাযিল হয় কোরানের নিন্মোক্ত পাঁচটি আয়াত ।
হযরত মুহম্মদ ( সা) এর প্রতি প্রথম নাযিলকৃত কুরানের প্রথম পাঁচটি আয়াত
ছবি -৩ : মক্কায় অবস্থিত ইতিহাস বিখ্যাত হেরা পর্বত
ছবি -৪ : হেরা পর্বতের সেই বিখ্যাত গুহা ( গুহাটি প্রায় ৩.৫ মিটার লম্বা ও ১.৫ মিটর প্রসস্ত )
সুত্র : Click This Link
আল্লার নিকট হতে জগত সমুহের সৃস্টিকর্তা ও মানবজাতি সৃস্টি সম্পর্কে সত্য জ্ঞান লাভের পর হযরত মুহাম্মদের ( স) কাছে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সময়ে নাযিল হয় কোরানের আন্যান্য সুরা ও আয়াত সমুহ । হযরত মোহামন্দ (স) রাসুল হিসাবে প্রচার করেন আল্লার তৌহিদী বানী ও রেখে যান আল্লার বাণী সম্বলিত পবিত্র কোরান ও কোরানের বিধান সমুহ , আর রেখে যান ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক রাস্ট্রিয় ও বিশ্বজনিন পর্যায়ে সুচারু ও সুন্দরভাবে সেগুলিকে বাস্তবায়নের আদর্শ ।
মহানবীর হযরত মুহাম্মদ ( স) কথা জানতে পারি কোরান হাদিসে ও বিভিন্ন লেখনীতে , তাঁকে নিয়ে লেখা হয় অনেক সুন্দর সুন্দর নাতে রসুল যেমনটি লিখেছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল
হেরা হতে হেলে দুলে
নূরানী তনু ও কে আসে হায়,
সারা দুনিয়ার হেরেমের পর্দা খুলে খুলে যায়
সে যে আমার কমলিওয়ালা কমলিওয়ালা।।
হাদীসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায়, সুরা ফাতেহাই হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাযিলকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। এর আগে বিচ্ছিন্ন কিছু আয়াত নাযিল হয়েছিল। সেগুলো সূরা ‘আলাক্ব , ‘মুয্যাম্মিল ও ‘মুদ্দাস্সির’ যা পরবর্তীতে পবিত্র কোরানে বিভিন্ন ক্রমে যথা আল ফালাক ৯৬ নং , ‘মুয্যাম্মিল ৭৩ ও মুদ্দাস্সির ৭৪ নং সুরা হিসাবে সন্নিবেশিত হয়েছে ।
কুরান শরীফের গুরুত্বপূর্ণ সুরা ফাতিহা। এ সুরার মাধ্যমেই সূচনা হয়েছে পবিত্র কুরানের সংকলনের। সুরাটিকে আল কুরানের সার সংক্ষেপও বলা হয়। এ সুরা নাজিল হয়েছে মানুষের সার্বিক কল্যাণ , মুক্তি ও পথ প্রদর্শক হিসেবে। এই সুরাটি একটি সর্বশ্রেষ্ট দোয়া হিসাবেও স্বিকৃত। এটা আমরা সকল মুসলমানই নিয়মিতভাবে নামাজের সময় প্রতিটি রাকাতে পাঠ করি ।
সুরা ফাতেহা ( কোরানের সারমর্ম হিসাবে গন্য )
উল্লেখ্য যে, এই পোষ্টে উল্লেখিত কোরানের সকল আয়াত সমুহ, সে সকলের বাংলা প্রতিবর্ণায়ন ও অর্থ বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রনালয় কতৃক প্রকাশিত ডিজিটাল কোরান হতে নেয়া হয়েছে । উক্ত ডিজিটাল কোরান সংকলনে দেশের প্রখ্যাত আলেম ওলামাগন সংস্লিষ্ট ছিলেন । এই লিংকে ক্লিক CLICK http://quran.gov.bd করলে ডিজিটাল কোরান পাঠ করা যাবে । উল্লেখ্য যে, এই লিখাটিতে অনেক ক্ষেত্রে একটি আয়াতের পুরাটুকু উল্লেখ করা হয়নি , শুধু রাব্বানা অর্থাৎ ‘ হে আমাদের প্রতিপালক ‘ দিয়ে শুরু করা অংশ টুকুকে দোয়া হিসাবে চয়ন করা হয়েছে , আয়াতের সম্পুর্ণটুকু যে কেও ইচ্ছা করলে দেখে নিতে পারেন লিংক ফলো করে ডিজিটাল কোরান শরীফ হতে ।
কুরান মাজীদ সত্য পথের দিশা দেয়, তাওহীদ রিসালত, রবুবিয়ত ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে এতে । রয়েছে মানবিক মূল্যবোধের কথা, সুখী জীবন গড়ার জন্য রয়েছে অসংখ্য উপদেশ । এতে রয়েছে বিজ্ঞানের অনেক তত্বকথা, বিশ্বজগত সৃষ্টি রহস্যের কথা, সৌরজগত , ভুগোল , আকাশ. বাতাস , পানি , বৃষ্টি , উদ্ভিদ ও জীবজন্তু জগত, দৈনন্দিন , পারিবারিক , সমাজিক , রাস্টিয় ও বিশ্বজনীন অর্থনীতি , জীবনের এপার উপার , আখিরাত , পাপ পূ্ণ্য , শেষ বিচার দিবস , বেহস্ত, দোযক , ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তির উপায় , বিশ্বজনীন মানবতা প্রভৃতি জ্ঞান রাজ্যের তাবত বিষয়ের কথা ।
আল্লাহর পরিচয় কি, তিনি কাছে না দূরে থাকেন, তাঁকে চেনার উপায় কি এসব বিষয় সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে গভীর মনযোগ দিয়ে কোরানকে পাঠ করতে হয় , বুঝতে হয় কোরানের কথা । , আল্লাহ যদিও ধরাছোঁয়ার বাইরে, তবুকে এই মহান সত্তাকে চেনা যাবে তার সৃষ্টিতে, তাঁকে অনুভব করা যায় প্রকৃতির প্রতিটি বস্তুতে। তিনি এক স্থানে বা এক বস্তুতে সীমাবদ্ধ নন, বরং আকাশ-জমিনের সর্বত্র তিনি বিরাজমান। সে জন্যই আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল আল্লাহর ৯৯ টি গুণবাচক নাম থাকা সত্ত্বেও তাঁকে 'অ-নামিকা' নামে সম্বোধন করে লিখেছেন-
কোন নামে হায় ডাকব তোমায়
নাম না জানা অ-নামিকা
জলে স্থলে গগন তলে
তোমার মধুর নাম যে লিখা ।।
মক্কা হতে শুরু হয় ইসলামের প্রচার ও প্রসার । মক্কাতেই স্থাপিত হয়েছিল মুসলিম জাহনের সর্ব শ্রেষ্ঠ ও বৃহত্তম মসজিদ আল- হারামের মুল ঘর । বাইতুল্লাহ শরীফ বা কাবা ঘর সম্পর্কে এ সামুর ব্লগে বোন সুফিয়ার একটি মুল্যবান লেখা রয়েছে যা এখানে CLICK Click This Link করে দেখতে পারেন । সেখানে কাবা ঘরের ইতিহাস সহ এর কালক্রমিক নির্মাণ সম্পর্কে রয়েছে একটি মুল্যবান তথ্যবহুল লেখা ।
পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির পর ফেরেশতাগণ কর্তৃক প্রথম কাবা ঘর নির্মাণ করা হয়। এর পর বেশ কয়েকবার এর সংস্কার করা হয় । খৃষ্টপুর্ব ২০৩০ সনে হযরত ইব্রাহিম( আ) কতৃক এর পুণ: নির্মাণ কাজ হয় । যখন হযরত ইবরাহিম ( আ) ও হযরত ইসমাইল ( আ) কাবা গৃহের দেয়াল তুলতেছিলেন তখন তাঁরা নীচের দোয়াটি পাঠ করেন বলে আল্লাহ পাক পবিত্র কোরানে উল্লেখ করেন ( সুরা বাকারা- ২১৭)
আমরাও এই আয়াতটি পাঠের সাথে সাথে আল্লার দরবারে হাত তুলে মোনাজাত করতে পারি আমাদের সকল সৎকর্ম ও ইবাদত কবুল করার জন্য ।
কাবা ঘরের পুণ:নির্মাণ শেষ হলে তাঁরা আবার নীচের দোয়াটি পাঠ করেন বলে পবিত্র কোরানে দেখা যায় । এ দোয়ার মাহাত্ব অনেক ।
বস্তুতপক্ষে আল্লাহ পাক হযরত ইব্রাহিমের (আ) দোয়া কবুল করেছেন এবং তাঁর বংশ হতেই আমাদের রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সা ) এ ধরার বুকে আভির্ভুত হয়েছেন । হযরত আদম (আ) হতে শুরু করে মহানবী ( সা ) পর্যন্ত বংশ ধারা নীচের চিত্রে দেখা যেতে পারে ।
উৎস : Click This Link
লেখাটির এ পর্যায়ে দেশ বরেন্য কবি ও সাহিত্যিক গোলাম মোস্তফা রচিত একটি জনপ্রিয় না’তে রসুল পাঠের মাধ্যমে তাঁর প্রতি ছালাম প্রেরণ করা হল:
নবুওয়াত প্রাপ্তির পাঁচ বছর আগে কুরাইশগন কর্তৃক যখন কবা ঘর পুণঃনির্মাণ করা হয় তখন এর নির্মাণ কাজে অংশ নিয়েছিলেন হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং হজরে আসওয়াদকে কাবা ঘরের বর্তমান স্থানে স্থাপন করেছিলেন।
ছবি -৬: হজরে আসওয়াদ
সুত্র : Click This Link
নবীজির গুণের কথা ছড়িয়ে পরে তাঁর বাল্যকাল হতেই , তাইতো তাঁকে নিয়ে কবি নজরূল লিখেন-
ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মাদ এল রে দুনিয়ায়
আয়রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়।।
ধুলির ধরা বেহেস্তে আজ, জয় করিল দিলরে লাজ
আজকে খুশির ঢল নেমেছে ধূসর সাহারায়
দেখ আমিনা মায়ের কোলে, দুলে শিশু ইসলাম দুলে
কচি মুখের শাহদাতে বানী সে শুনায় ।।
হজরে আসওয়াদ জান্নাতের একটি মূল্যবান ইয়াকুত পাথর। পৃথিবীতে প্রেরণের সময় মহান আল্লাহ তায়ালা এই পাথর দুটির ঔজ্জল্য ম্লান করে তারপর প্রেরণ করেছেন। তানা হলে এদের আলোতে সমস্ত পৃথিবী এমনভাবে আলোকিত হয়ে থাকত যে দিন-রাত্রির পার্থক্য বুঝা যেতনা। অন্য এক হাদীছে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীতে প্রেরণের সময় হজরে আসওয়াদ দুধের মত সাদা ছিল। কিন্তু মানুষের পাপের ষ্পর্শে সেটা কালো রং ধারণ করেছে।
মক্কা বিজয়ের পর মহানবী কাবা ঘর হতে ৩৬০টি দেবদেবীর মুর্তী অপসারণ করেন । এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার কাবা গৃহে প্রাক ইসলামিক যুগে ও মক্কা বিজয়ের পুর্বে মুর্তী থাকার পরেও কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়া নিয়ে মুখরোচক ও মনগড়া বিধর্মী কিছু কথাবার্তা বিভিন্ন ব্লগে ও সামাজিক যোগাযোগোর মাধ্যমে বলা হয়ে থাকে মর্মে দেখা যায় , তবে সে সমস্তই অন্তসারশুন্য মিথ্যা মনগড়া কথামালা ব্যাতিত কিছুই নয় । ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীগন আশা করি এ বিষয়ে সচেতন থাকবেন ।
আমরা এই ফাকে একটু দেখে আসতে পারি আজ হতে প্রায় দুই শত বছর পুর্বে মসজিদ আল হারাম সহ মক্কা নগরী ও এর চারপাশ দেখতে কেমন ছিল ।
ছবি-৭ ১৮৫০ সনে অটোমান সাম্রাজ্যকালে মসজিদ আল- হারাম সহ মক্কা নগরীর চিত্র
ইসলামের প্রাণকেন্দ্র মক্কায় অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই আল – হারাম মসজিদের সম্প্রসারিত অংশের নির্মাণকাজ সমাপ্তির পর মুসুল্লি ধারণ ক্ষমতা দাঁড়ায় ২.৫০ মিলিয়নে ।
ছবি- ৮ মসজিদ আল- হারাম ( ২০১৪ সনে গৃহীত সর্বশেষ সংস্কার ও সম্প্রসারনের কাজ চলাকালীন ছবি )
( এর সম্প্রসারণ কাজ চলাকালীন সময়ে ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি )
ছবি-৯ মসজিদ আল- হারামের সম্প্রসারণ কাজ সমাপনান্তে এর এরিয়াল ভিউ
তৌহিদের বাণী প্রচারে প্রাথমিক পর্যায়ে মক্কার কুরাইশদের বিবিধ ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে নবী করিম ( স) মদিনায় হিজরত করেন ।
মুহাম্মদ (সা) মদিনায় আসার পর সেখানে নির্মিত হয় আল –মসজিদ আল নববী । ৬২২ খৃষ্টাব্দে মসজিদটি মহানবির সরাসরি অংশগ্রহনের মাধ্যমে নির্মিত হয় । গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদুল হারামের পরই মসজিদে নববীর স্থান। নির্মাণের পর মসজিদটি সন্মেলনস্থল, আদালত ও মাদ্রাসা হিসেবে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পরবর্তীকালে মুসলিম শাসকরা মসজিদটির সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করেছেন।
ছবি-১০: অটোমান শাসন আমলে মসজিদ আল নববী
উমাইয়া খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদের শাসনামলে সম্প্রসারণের সময় হযরত মোহাম্মদ (সা) এবং প্রথম দুই খুলাফায়ে রাশেদিন হযরত আবু বকর ( র)ও উমর (র) এর কবর মসজিদ চত্তরে স্থান পায় । মসজিদের দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থিত সবুজ গম্বুজ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, এটি হযরত আয়িশার ( রা) বাড়ি ছিল ( সুত্র : Ariffin, Syed Ahmad Iskandar Syed (২০০৫)। Architectural Conservation in Islam : Case Study of the Prophet's Mosque। Penerbit UTM। পৃ: 88–89,109। )
ছবি-১১ আল –মসজিদ আল নববী কমপ্লেক্স
ছবি-১২ : আল –মসজিদ আল নববীর প্রবেশ দ্বারে মহানবী মোহাম্মদ ( স) এর নাম ফলক
ছবি-১৩ : মহানবীর রওজা শরীফের প্রবেশ দ্বার
মক্কার কাবা ঘর , মদিনায় রাসুলের রওজা শরীফ দেখার তৌফিক এখনো যাদের হয় নাই কবি কাজী নজরুল তাদের জন্য লিখেছেন:
ছবি-১৪ : বর্তমানে মসজিদ আল-নববী বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ । ২০১২ সনে ৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে শুরু করা এর সর্বশেষ সম্প্রসারণের পর এর মুসুল্লী ধারণ ক্ষমতা দাঁড়ায় ১.৬ মিলিয়নে ।
ইত্যবসরে জেরুজালেমের পুরনো শহড়ে অবস্থিত ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ মসজিদুল আকসা যা বাইতুল মুকাদ্দাস নামেও পরিচিত সেখানকার বিষয়গুলি একটু দেখা যাক । এটির সাথে একই প্রাঙ্গণে কুব্বাত আস সাখরা, কুব্বাত আস সিলসিলা ও কুব্বাত আন নবী নামক স্থাপনাগুলোও অবস্থিত। স্থাপনাগুলো সহ এই পুরো স্থানটিকে হারাম আল শরিফ বলা হয়। মুহাম্মদ (সা) মিরাজের রাতে মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসা মসজিদে এসেছিলেন এবং এখান থেকে তিনি ঊর্ধ্বাকাশের দিকে যাত্রা করেন। ইতিহাসবিদ পণ্ডিত ইবনে তাহমিয়ার মতে নবী সুলাইমান ( আ) এর তৈরি সম্পূর্ণ উপাসনার স্থানটির নামই হল মসজিদুল আল-আকসা ।
ছবি-১৫ : হারাম আল শরিফ মসজিদুল আকসা তথা বাইতুল মুকাদ্দাস এই কমপ্লেক্সেই অবস্থিত
ছবি-১৬ : মসজিদুল আকসা যা বাইতুল মুকাদ্দাস নামেও পরিচত
মুহাদ্দিসগণ এই বিষয়ে একমত যে সম্পূর্ণ উপাসনার স্থানটিই নবী সুলাইমান (আঃ) তৈরি করেছিলেন যা পরবর্তীতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল । মুসলমানগন বিশ্বাস করেন , নির্মাণের পর থেকে এটি ঈসা (আঃ) সহ অনেক নবীর দ্বারা এক আল্লাহকে উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যাবহৃত হয়ে এসেছে। এই স্থান মুসলিমদের প্রথম কিবলা । নবিজীর হিজরতের পর কুরানের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণে কাবা নতুন কিবলা হয়। বর্তমানে "আল-আকসা" মসজিদ বলতে বোঝায় কিবলি মসজিদ , মারওয়ানি মসজিদ ও বুরাক মসজিদ ( ৩ টির সমন্বয়) যা হারাম আল শরীফ এর চার দেয়াল এর মধ্যেই অবস্থিত।
ছবি-১৭ আল- আকসার কিবলি মসজিদ এবং কুব্বাত সুলাইমান (১৯০৭ সালে প্রকাশিত চিত্র )।
ছব-১৮ কুব্বাত আস সাখরা। এটি ইসলামী স্থাপত্যের সর্বপ্রাচীন নমুনা
সুত্র : Friedlander, Gerald, Pirkê de rabbi Eliezer, Kegan Paul, Trench, Trubner & co. Ltd. , London, 1916, p.221
কিছু ঐতিহাসিক তথ্যমতে দেখা যায় যে হযরত ইব্রাহিম ( আ ) এখানেই তাঁর পুত্র ইসমাইল কে কুরবানি দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন। আদম (আ) কে সৃষ্টিরও ২০০০ বছর পূর্বে ফেরেশতারা এই জায়গায় এসেছিলেন এবং ইসরাফিল (আ) কেয়ামতের সময় এখানেই শিঙ্গায় ফুঁ দেবেন (Friedlander ১৯১৬) ।
ছবি - ১৯ : কুব্বাত জিব্রাইল
সুত্র: Prophet's Dome . Archnet Digital Library. https://archnet.org/collections
ছবি-২০ : ছবি - কুব্বাত আল মিরাজ
ঐতিহাসিক তথ্যমতে দেখা যায় যে মিরাজ এর রাত্রে এই নির্দিষ্ট স্থানটি থেকেই নবী করিম ( সা ) উর্ধ্বাকাশে গমন করেছিলেন । কুরআন ও ইসলামি বিবরণ অণুযায়ী আল-আকসা মসজিদে মুহাম্মদ (সা) মিরাজের রাতে ,বিদ্যুৎ ও আলোর চেয়ে দ্রুতগামী বাহন বোরাকে চড়ে এসেছিলেন ( Khadija ২০০৭), "A night journey through Jerusalem" [জেরুজালেমে একটি রাতের ভ্রমন]
১৯৬৭ সনের যুদ্ধের আগ পর্যন্ত জর্ডানের ওয়াকফ মন্ত্রণালয় মসজিদটির তত্ত্বাবধায়ক ছিল। যুদ্ধে ইসরায়েল জয়ী হওয়ার পর ইসলামি ওয়াকফ ট্রাস্টের হাতে মসজিদের ভার প্রদান করা হয়। তবে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী মসজিদ এলাকায় টহল ও তল্লাশি চালাতে পারে। মুহাম্মদ আহমেদ হুসাইন প্রধান ইমাম এবং আল-আকসা মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে তাকে জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিয়োগ দেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি দ্বন্ধের ক্ষেত্রে আল-আকসা মসজিদের অধিকার একটি ইস্যু। মসজিদসহ পুরো হারাম আল শরিফের উপর ইসরায়েল তার সার্বভৌমত্ব দাবি করে কিন্তু ফিলিস্তিনিদের দাবি এর অভিভাবকত্ব ইসলামি ওয়াকফের। ফিলিস্তিনিরা মসজিদ এবং পূর্ব জেরুজালেমের অন্যান্য ইসলামি স্থানগুলোর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করে আসছে ।
ছবি-২১ : উমাইয়া গ্রেট মসজিদ , দামেস্ক, সিরিয়া
উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদ-১ কতৃক ৭০৫-৭১৫ খৃস্টাব্দে বর্তমান সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে গ্রেট মসজিদ হিসাবে নির্মাণ করা হয় ।সম্পুর্ণ পাথরের তৈরী এ মসজিদটি এখনো টিকে আছে । এই মসজিদটিকে ইসলামিক দুনিয়ায় চতুর্থতম পরিত্র মসজিদ হিসাবে অভিহিত করা হয়ে থাকে । বলা হয়ে থাকে যে হযরত ঈছা ( আ ) এর পুণরাগমন হবে এই মসজিদেই প্রথম (Hitti, Phillip K. 2002). History of Syria: Including Lebanon and Palestine. Piscataway, NJ: Gorgias Press LLC.
অত্যন্ত দু:খের সাথে বলতে হয় সিরিয়ার আলেপ্পোতে আজ বোমার আঘাতে ধংস হচ্ছে মসজিদ
ছবি-২২ : বোমার আঘাতে আলেপ্পোতে বিধ্বস্ত আল জিনি মসজিদ , সিরিয়া
সাম্প্রতিককালে বোমায় নিহত সিরিয়ান মুসলিমদের আত্মার শান্তি কামনা করি এই মাহে রমজানে, আর দোয়া করি আল্লা যেন শান্তি দেন বিশ্ব জাহানে । সকলের উপলব্দিতে আসুক ইসলামী সত্যের ও শান্তির সুমহান বাণী । জগতের বুক হতে দুর হয়ে যাক যাবতীয় হিংসা বিদ্বেষ, যুদ্ধ ও হানাহানি । দোয়া করি সিরিয়ায় বন্ধ হোক মুসলমানদের মধ্যে প্রাণঘাতি যুদ্ধের তান্ডব লিলা ।
অপরূপ স্থাপত্য শেলী ও আভ্যন্তরীণ নক্সা ও কারুকার্যময়তা নিয়ে মধ্যযুগে মসজিদ নির্মিত হয়েছে দেশে দেশে ।
অটোমান রাজত্বকালে তুরস্কের ইস্তামবুলে অপরূপ স্থাপত্য শৈলী নিয়ে ১৬০৯ সনে নির্মিত ব্লো মসজিদ তার মধ্যে একটি । এই মসজিদটির মুল সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে এর ভিতরের নীল টাইলস উপর সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের অপরূপ সমাহর । এটিকে দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার দেশী বিদেশী দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে ইস্তাম্বুলে ।
ছবি-২৩ : ব্লো মসজিদ , ইস্তাম্বুল , তুরস্ক
ছবি -২৪ : নীল ও বিভিন্ন রংগের কারুকার্যময় টাইলস শোভিত তুরস্কের ব্লো মসজিদটির আভ্যন্তরীন বাহারী চিত্র
ইসলামের সুমহান তৌহিদি বাণী ছড়িয়ে পরে পৃথিবীর সর্বদিকে , গড়ে উঠে বহু দেশে মুসলিম বসতি ও শাসনব্যবস্থা , ইসলামী স্থাপত্য শৈলী অনুসরনে দেশে দেশে গড়ে উঠে সুন্দর সুন্দর মসজিদ
প্রশান্ত মহাসাগরীয় তিনটি ইসলামিক দেশে ইসলাম ও মসজিদ
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে প্রশান্ত মহাদেশীয় যে কয়টি দেশে মুসলিমদের আগমন ঘটে তার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায়া অন্যতম। উত্তর সুমাত্রা হয়ে ক্রমে মুসলমানরা ছড়িয়ে পড়ে ছোট বড় ১৭ হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত হাজার হাজার মাইলের বিস্তৃত দেশটিতে। ষোড়শ শতাব্দীতে দেশটির প্রধান ধর্ম হয়ে যায় ইসলাম। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া সর্ববৃহত মুসলিম প্রধান দেশ । ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার মুসলমানেরা আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায় করেন ।তবে জনবহুল শহড়টিতে রাস্তায় যানজটের কারনে সঠিক সময়ে মসজিদে পৌঁছাতে অনেক অসুবিধা হয় । এ অসুবিধা দুর করার জন্য দেশটিতে পবিত্র রমজান মাস হতে ভ্রাম্যমান মসজিদ চলু করা হয়েছে । পিকআপ ভ্যানে বিশেষ ডিজাইনে ভ্রাম্যমান মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে । বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান ও স্টেডিয়ামের সামনে মুসুল্লিদের সুবিধার্থে এ সব ভ্রাম্যমান মসজিদ নামাজের সময় উপস্থিত হয় , এই ব্যবস্থায় মসুল্লিদের নামাজের সুবিধা হয়েছে । একে জরুরী প্রয়োজনে এম্বোলেন্সের কাজেও ব্যবহার করা যায় ।
ছবি – ২৫ : ইন্দোনেশিয়ায় ভ্রাম্যমান মসজিদ
ছবি-২৬ : প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ব্রনাই এর রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ানে অবস্থিত একটি মসজিদ :
ছবি-২৭ : মাল এশিয়ায় অবস্থিত দৃস্টি নন্দন সুবিশাল ক্রিস্টাল মসজিদ, টেরাংগুনা, মালএশিয়া
কোরান মাজিদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
কুরান মাজীদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আয়াত রয়েছে প্রায় ৮৫০ খানি। সৃষ্টিজগতের তাবত রহস্য এতে বিধৃত হয়েছে। এমনকি বর্তমানকাল পর্যন্ত বিজ্ঞান যা কিছু আবিষ্কার করেছে তার নিদর্শন কুরান মাজীদে রয়েছে । এমন অনেক নিদর্শন কুরান মাজীদে রয়েছে, যার মাত্র গুটি কয়েক আধুনিক বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পেরেছে , এখনো অনেক কিছু আবিস্কার করতে পারেনি , যতবেশী কোরানে উল্লেখিত বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলিকে নিয়ে যথাযথ বৈজ্ঞনিক জ্ঞান ও পদ্ধতি অনুসরন করে গবেষনা করা যাবে ততই বেশী জানা যাবে ও প্রমান করা যাবে কোরানের বৈজ্ঞানিক মহাত্বতা । প্রকৃত জ্ঞান দানের মালিক আল্লাহ, আল্লাহর নিকট হতে প্রাপ্ত জ্ঞানের আলোকেই মানুষ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আয়ত্ব ও প্রয়োগ করতে পারছে । আল্লাহ তাকেই সাহয্য করেন যে নীজে চেষ্টা করে । মুসলমানগন যদি নীজেরা চেষ্টা না করে তাহলে সে নীজের রাস্তা নীজেই বন্ধ করে রাখবে তাতে কোন সন্দেহ নাই ।
বিশ্ব জগত সৃস্টি
পবিত্র কোরানের সুরা আনআমের ১০১ নং আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাই হচ্ছেন আসমান ও জমিনের শ্রষ্টা । আল্লার ইচ্ছায় ও হুকুমে বিশ্ব ব্রম্মান্ড সৃস্টি হয়েছে এক মহা শুন্য হতে, এই শুণ্যের পশ্চাতে রয়েছেন একজন অদৃশ্য মহাশক্তিমান সৃষ্টি কর্তা, তিনিই আল্লাহ ।
ছবি-২৮ : আধুনিক বিজ্ঞানের আলোচনায় প্রমানীত বিশ্ব ব্রম্মান্ড সৃষ্টি হয়েছে একটি মহা শুন্য হতে ( the universe has created from nothingness )
কোরানে যা ১৪০০ বছর আগে বলা হয়েছে বৈজ্ঞানিকগন তা আজ সঠিকভকবে অনুভব করতে পারছে বিগ বেং থিউরির ( মহাবিস্ফোরণ তত্ব) কল্যানে।
ছবি – ২৯ : মহা বিস্ফোরণ তত্ত্বনুসারে আদি পরিচিত সময়কাল হতে পরবর্তীতে মহাজাগতিক বিশ্বের বৃহত-স্কেলে বিবর্তনের চিত্র ।
ছবি -৩০ : ২০০১ থেকে ২০১০ সন পর্যন্ত Wilkinson Microwave Anisotropy Probe (WMAP), স্যটটেলাইটে তুলা ছবিসমুহ ‘বিগ বেং’ কে বুঝতে সহায়তা করেছে
আল্লাহ জগতকে সৃস্টি করেছেন পর্যায়ক্রেমে , বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রকার বৈজ্ঞানিক গবেষনার মাধ্যমে সে কথার সত্যতা আজ দেখতে পাচ্ছেঅ ২০১৩ সনে দক্ষিন মেরু টেলিস্কোপের সাহায্যে বিজ্ঞানীগন মহা বিস্ফোরন অব্যবহিত পরে ছুটে চলা আলোক রস্মি হতে পরবর্তী ধাপে কিভাবে B-Mode এর মাধ্যমে সম্প্রসারিত হয়ে কোটি কোটি গ্যালাস্কি তথা নক্ষত্র পুঞ্জে পরিনত হয়েছে সে সৃস্টি রহস্য অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে ।
ছবি –৩১ : সাউথ মেরু টোলিস্কোপ
ছবি -৩২: বিগ বেং থেকে উৎসরিত আলোক কনা প্রবাহিত হয়ে মহাকর্ষীয় লেন্সিং প্রভাব দ্ধারা বি-মোড তৈরী করে মহাবিশ্ব জুরে পরিভ্রমনের বৈজ্ঞানীক কল্প
রাত ও দিন প্রসঙ্গে চন্দ্র সুর্য ও তাদের নীজ নীজ কক্ষপথে বিচরণের কথা বলা হয়েছে সুরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে ।
ছবি-৩৩ : সৌর জগত ও তাদের নীজ নীজ কক্ষপথে বিচরণ দৃশ্য
একথাও বলা হয়েছে যে সুর্য একজায়গায় স্থির ( Constant ) নয়, সেও তার নিদৃষ্ট কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে । সুর্য উহার নিদৃষ্ট কক্ষে ভ্রমন করে চলেছে ( সুরা ইয়াছিন ৩৬. ৩৮)
বস্তুতপক্ষে সুর্য প্রচন্ড গতিতে ঘন্টায় ৭২০,০০০কিলোমিটার গতিতে ( ২০কিলোমিটার/সেকেন্ড https://en.wikipedia.org/wiki/Solar_apex ) নক্ষত্র ভেগার দিকে ছুটে চলেছে যাকে বলা হয় সোলার এপেক্স ।
রাতের আকাশে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে দেখতে পাওয়া তারাগুলির মধ্যে ভেগা সবচতে বড় তারা ( নীচের বা দিকের ছবির সব চেয়ে বড় তারাটি ভেগা ) ডানের ছবিতে ভেগা ও সুর্যের আকারের পার্থক্য দেখানো হয়েছে ( বায়েরটি সুর্য ও ডানেওর টি ভেগা ) ,ভেগা সুর্যের সবচেয়ে নিকটতম নক্ষত্র , সুর্য হতে ভেগা (https://en.wikipedia.org/wiki/Vega) এখনো ২৫ আলোক বর্ষ দুরত্বে আছে
ছবি –৩৪ : ভেগা নক্ষত্রের অবস্থান ও তার প্রতি সুর্যের ছোটে চলা
উপরের উল্লেখিত গতিবেগ অনুযায়ী দেখা যায় সুর্য প্রতিদিন ১কোটি ৭২ লক্ষ ২৮ হাজার মাইল পথ পাড়ি দেয় । সুর্যের সাথে পৃথিবী ও চন্দ্র সহ সৌর জগতের সকল গ্রহ উপগ্রহ এই সমান দুরত্ব অতিক্রম করছে । অধিকন্ত বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সকল নক্ষত্রই তাদের জন্য পুর্ব পরিকল্পিত পথে ছুটে চলেছে । তার মানে হল সমগ্র বিশ্ব ব্রম্মন্ডাই তার কক্ষপথে ( orbits) অবর্তিত হচ্ছে যা কোরানে ১৪০০ বছর আগে বলা হয়েছে ,’ আসমানের শপথ যাহার চলিবার ও আবর্তিত হওয়ার পথ রহিয়াছে’ ( সুরা যাররিয়াত ৫১.০৭)।
বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী বিশ্ব ব্রম্মান্ডে প্রায় ২০০ বিলিয়ন গ্যলাক্সি রয়েছে ( টেলিস্কুপে দেখার ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে এ সংখ্যা আরো বাড়তে থাকবে বলে বিশ্বাস ) । এই ২০০ বিলিয়ন তারা বা নক্ষত্রের অধিকাংশরই আবার গ্রহ ও উপগ্রহ আছে যে গুলির প্রত্যেকটিই সুষ্ঠ ভাবে আবর্তিত হচ্ছে শত শত কোটি বছর ধরে, কিন্তু কেও কারো সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেনা ।
মহান রাব্বুল আলামিনের সৃস্টি রহস্য প্রকাশের সাথে সাথে পবিত্র কোরানে রয়েছে তাঁর শুকর গোজাড়ী করার জন্যও দোয়ার আয়াত :
জগতের যেদিকেই তাকানো যাক কেন সেখানেই দেখতে পাওয়া যায় আল্লার অপরূপ সৃস্টির নিদর্শন । কোরানের শত শত আয়াতে রয়েছে সৃস্টি রহস্যের বর্ণনা যেমনটি দেখা যায় দরিয়ার পানির ধর্ম সম্পর্কে সুরা আর রহমানের দুটি আয়াতের বর্ণনায় :
বস্তুতপক্ষে এটা আজ প্রমানিত যে ভুমধ্য সাগরের পানি জিব্রালটার প্রনালী দিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের প্রবেশ করলেও তাদের মধ্যে একটি সুক্ষ বিভেদ থেকেই যায় । ভুমধ্য সাগরের পানির উঞ্চতা , লবনাক্ততা , এবং ঘনত্বের পরিবর্তন হয়না কারন সেখানে অদৃশ্য একটি বাধা ( বেরিয়ার ) দুইটি সাগরের জল রাশিকে পৃথক রাখে ।
ছবি-৩৫ : জিব্রালটার প্রনালির দুই দিকে ভুমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের পানির ভিন্নতা
জিব্রালটার প্রনালী দিয়ে ভুমধ্য সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর যুক্ত । জিব্রালটার নামটি এসেছে স্পেন বিজয়ী মহাবীর তারেকের নাম হতে । জিব্রালটার এখন একটি ব্রিটিশ ওভারসিস টেরিটরি । এই বৃটিশ ওভারসিস টেরিটরির ( বৃটিশ নিয়ন্ত্রিত ভুখন্ড ) জিব্রালটারের ইউরূপা পয়েন্টের কাছে বসবাসকারী ১০০০ মুসলিম অধিবাসিদের নামাজের সুবিধার জন্য সৌদী অর্থায়নে নিন্মের সমজিদটি নির্মান করা হয় ।
ছবি -৩৬ : জিব্রালটার প্রণালীর কাছে মসজিদ
পুজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে ইসলামের নব জাগরন
কিছু কিছু আন্তর্জাতিক মহল থেকে ইসলামকে সন্ত্রাসী জঙ্গী ধর্ম হিসাবে চিহ্নিত করে তুলার চক্রান্তকে ব্যর্থ ( আংশিক এখনো অনেক চক্রান্ত ও নির্যাতন রয়ে গেছে বিভিন্ন স্থানে) করে দিয়ে দেশে দেশে ইসলামের বিজয় কেতন এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে । খোলা চোখে মধ্যপ্রাচ্যের দু একটি দেশে মুসলমানদের বিপর্যয় চোখে পড়লেও ইসলামের বিজয় নিশান উড়ে চলেছে দৃপ্ত বেগে বিশ্বের প্রায় সকল সমাজতান্ত্রিক , ধনতান্ত্রিক , মুসলিম ও অমুসলিম দেশ সমুহে দ্রুত বেগে । উল্লেখ্য কমুনিস্ট রাশিয়াতে ইসলাম বিপর্যস্ত ছিল দির্ঘকাল ধরে। মস্কোর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ঈর্ঘদিন ছিল বন্ধ । সেটা এখন খোলে দেয়া হয়েছে মুসলমানদের নামাজের তরে ।
ছবি-৩৭ : কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ , মস্কো ।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে রাশিয়ানদের পুরোনো মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে । ধর্ম বিশেষ করে ইসলাম নিয়ে আগে তো সব রুদ্ধ ছিল, এখন রাশিয়াজুড়ে মসজিদ ও মাদ্রাসার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাঁরা সমাজ থেকে ধর্মকে আর বিচ্ছিন্ন করে বা দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে না। এটা ইসলামের বিকাশের জন্য অনেক বড় একটা বিরাট বিষয় ।
গোটা চেচনিয়ায় যেখানে মসজিদের অস্তিত্ব বিলীন হ ওয়ার পথে ছিল সেখানে এখন কাদিরভ মসজিদটি রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ ও ইসলমিক সেন্টারে পরিনত হয়েছে ।
ছবি - ৩৮ : চেচনীয়ার রাজধানী গ্রজনীতে অবস্থিত আহমাদ কাদিরভ মসজিদ
ছবি – ৩৯ : রাশিয়ার কাজানে অবস্থিত কুলশরীফ মসজিদ (Qolsharif Mosque)
মসজিদটি রাশিয়ার কাজানে অবস্থিত , এটা সেখানকর সকল ইসলামিক কার্যকলাপের কেন্ত্র ভুমি । এটা রাশিয়া ও ইউরোপের সর্ববৃহত মসজিদ ( তুরস্ক ব্যতিত). কাজানের রাজধানী কানাতে স্থাপিত মসজিদটি ১৫৫২ সনে ইভান সেনাবাহিণী (Ivan the Terrible , সে সময়কার রাশিয়ার জার সম্রাট ) কতৃক ধ্বংসের পর একে পুনরায় ২০০৫সনে সৌদি আরব ও ইউ এ ই অর্থায়নে একটি বহু মিনার বিশিষ্ট মসজিদ হিসাবে নির্মাণ করা হয় ।
চীনে ইসলামের অবস্থা
চীনে ইসলামের আবির্ভাব হয় হিজরি প্রথম শতকে। তং রাজবংশের শাসনামলে সিল্ক রোড ও সমুদ্রপথে আরব ও ইরানি মুসলমানরা গিয়ে প্রথমে চীনে ইসলাম প্রচার করেন। তখন থেকেই চীনের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন মুসলমানরা। চীনা মুসলমানরা মনে করেন, চীনে ইসলামের আবির্ভাবের শুরু হয়েছিল সা`দ ইবনে আবি ওয়াক্কাসের (রা) সফরের মধ্য দিয়ে। সে সময় ইসলামের প্রতি অনুরাগের নিদর্শনস্বরূপ সম্রাট ইউং ওয়েই চীনে মসজিদ নির্মাণের আদেশ দেন। যা ছিল চীনে প্রতিষ্ঠিত প্রথম মসজিদ। ১৪শ` বছর পার হয়ে যাবার পরও Guangzhou শহড়ের ঐ Huaisheng মসজিদটি স্মারক মসজিদ হিসেবে আজো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে চীনে । কমিউনিস্ট আমলের প্রথম হতেই ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা ও নিপিরন সত্ত্বেও চীনে বিশেষ করে দেশটির বৃহত্তম হান গোত্রের মধ্যে ইসলামে দীক্ষিতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মুসলমানরা এগিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের ধর্মানুশীলনের দিকে। চীনের ৮ কোটি মুসলমানের দেশে ইদানীং মুসলিম ধর্মানুরাগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইসলাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
ছবি- ৪০ : হিউসেংগ মসজিদ , গোয়াংজু , চীন
ইসলামী স্থাপত্য শৈলীর মসজিদ ও নির্মিত হচ্ছে চীনে , চীনে বর্তমানে প্রায় ৩৯০০০ মসজিদ রয়েছে ।
ছবি -৪১ : ইসলামী স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত চীনের কোয়নজু’তে অবস্থিত হিউয়ী মসজিদ (Hui Mosque)
ব্যপক হারে ইউরোপে গীর্জা সমুহ মসজিদে রুপান্তর
৭১১ খৃস্টাব্দে মুসলমানদের স্পেন বিজয়ের পর কর্ডোভাতে ‘গ্রেট মস্ক’ নির্মিত হয় । স্পেনীসদের দাবী মসজিদটি যেখানে নির্মিত হয় সেটি পুর্বে তাদের একটি কেথলিক গীর্জা হিসাবে ছিল । ৭১১ সনে মুসলিম বিজয়ের পর এটার মাঝখানে দেয়াল তুলে এক অংশে মুসলমানেরা মসজিদ আর অপর অংশ খ্রিস্টানেরা গীর্জা হিসাবে ব্যবহার করে আসছিল । ৭৮৪ সনে মুসলমানেরা খ্রিস্টানদের অংশ কিনে নিয়ে গীর্জাটিকে ভেঙ্গে সেখানে গ্রেট মস্ক নির্মান করেন ।
ছবি - ৪২ : স্পেনের কর্ডোভায় গ্রেট মসজিদ কমপ্লেক্স
এই মসজিদটির বাহ্যিক অবকাঠামো ইউরোপিয়ান গথিক স্টাইলে নির্মান করা হলেও এর প্রধান মিনার ও ভিতরের ডেকোরেশনে অপরূপ ইসলমী স্থাপত্য নির্মান শৈলী ও কারুকাজ করা হয়েছিল যা আজো বিস্ময় হয়ে আছে । নিন্মের চিত্রে দেখা যেতে পারে ।
ছবি - ৪৩ : গ্রেট মসজিদের গম্বুজের আভ্যন্তরীন অপরূপ সৌন্দর্য মন্ডিত কারুকাজ
১২৩৬ সনে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসানের পরে স্পেনীসরা এটাকে আবার রোমান ক্যথলিক গির্জায় ক্যথেড্রালে রুপান্তর করে । ২০০০ সন হতে স্পেনিশ মুসলমানেরা এই ক্যথেড্রালে পারস্পরিক এরেঞ্জমেন্টের মাধ্যমে নামাজ আদায়ের সুবিধার জন্য ক্যথলিক চার্চের কাছে লবিং চালিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু মুসলমানদের এই দাবী সমুহ ক্রমাগতভাবে স্পেনিশ চার্চ অথরিটি ও ভেটিকান থেকে নাকচ করে দেয়া হয়েছে । এই পবিত্র মাহে রমজানে দোয়া করি ইউরোপে প্রবেশ দ্বার হিসাবে পরিচিত স্পেনের কর্ডোভার ঐতিহাসিক মসজিদটি যেন সেখানকার মুসলমানদের নামাজের জন্য অবারিত করে দেয়া হয় ।
এখানে উল্লেখ্য যে স্পেনের সেই বিখ্যাত গ্রেট মসজিদে মুসলমানদের নামাজ আদায়ের অধিকারের দাবী অগ্রায্য হলেও ইউরোপের অন্যান্য দেশে উল্লেখযোগ্য হারে গীর্জা সমুহ মসজিদে রুপান্তরিত হচ্ছে বিগত কয়েক দশক ধরে । এটা ইউরোপে ইসলামের বিকাশে সহায়তা করছে ব্যপকভাবে ।
জার্মানী , ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে মুসলমান ও মসজিদের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত গতিতে , ফ্রান্সে রয়েছে প্রায় ২৫০০ মসজিদ ( যদিউ ২০১৫সনে সন্ত্রাসী ঘটনার পরে প্রায় ২০টির মত মসজিদকে উগ্রপন্থার অজুহাতে সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল এব্ং মসজিদ সমুহ বেশ কিছু বিধিনিষেধ ও নজরদারীর আওতায় আনা হয়েছে ,তবে এটা নিতান্তই সাময়িক ) । ইসলামের নামে উগ্রপন্থিদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ হলে মুসলমানদের জন্য কোন অসুবিধাই থাকবেনা , ইসলামের নামে সকল প্রকার সন্ত্রাসী কার্যকলপ বন্ধ হোক সমগ্র বিশ্বে, এ কামনাই পবিত্র রমজানে দোয়া কবুলের মাসে জানাই বিধাতার পরে ।
ছবি -৪৪ : The Grande Mosquée in Paris
যুক্তরাজ্যে মসজিদের সংখা এখন প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি , এ ছাড়াও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় শিল্প করখানায় মুসলমানদের নামাজের জন্য রয়েছে অনেক প্রেয়ার রুম । ইউকেতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খ্রিষ্টানদের চার্চ মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছে, আরো অনেকগুলি রুপান্তরের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে । উল্লেখ্য একটি ভলানটারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চার্চগুলির মসজিদে রূপান্তর হচ্ছে , এর মধ্যে কোন জোর জবরদস্তি নেই । তাই বলা যায় ইসলামের বিকাশ তার আপন গতিতেই হয়ে চলেছে আল্লার অশেষ মেহেরবানিতে । এটা আল্লা তায়ালার অশেষ রহমত, এটা তাঁর দ্বীন কে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠার একটি পরিস্কার ঈঙ্গীত । এই পবিত্র রমজানে আল্লার কাছে শুকর গোজর করি সে সাথে ইসলামকে সুমহান করার জন্য তাঁর সাহায্য কামনা করি। উল্লেখ্য ইসলামের বিকাশ , হেফাজত , রক্ষনাবেক্ষন ও প্রতিপালনের জন্য কোন রকম জঙ্গী ফঙ্গী বা চরম নিন্দনীয় কোন রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রয়োজন নেই , বিশ্ব ব্রমামান্ডের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী অল্লাই এর বিকাশ , হেফাজত ও একে সঠিকভবে প্রতিপালনের জন্য তৌফিক দান করবেন । আমরা ঈমানে বলীয়ান হলে ইনসাল্লাহ আমাদের দোয়া তার দরবারে কবুল হবে ।
ছবি-৪৫ : বার্মিংহাম সেন্ট্রাল মসজিদ , হাইগেইট , বার্মিংহাম , ইউ কে
যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের এবারডীন শহরের কেন্দ্রস্থলে কোন মস্জিদ না থাকায় মুসল্লীদের নামাজের সুবিধার্থে বছর কয়েক আগে বাংলাদেশী বংশোদ্বত মুসলমানদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শহড়ের কেন্দ্রস্থলে সৈয়দ শাহ মোস্তফা জামে মস্জিদ নামে একটি মস্জিদ নির্মিত হয়। কিন্তু মসজিদে স্থান সংকোলনের অভাবে অনেক মুসুল্লীকেই মসজিদের বাইরে প্রচন্ড শীতের মধ্যে জুমার দিনে নামাজ পড়তে হত। মুসুল্লীদের এত কষ্টের মধ্যে নামাজ পড়তে দেখে মসজিদ সংলগ্ন চার্চের রেভারেন্ড ড:আইজাক পোবালান তার অনুসারীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে প্রতিবেশী মুসলিমদের উপসনার স্বার্থে চার্চের একটি অংশ মসজিদের সাথে যুক্ত করে দিয়ে নামাজ আদায়ের জন্য উম্মোক্ত করে দেন ২০১৩ সনে । মিডিয়া বিশেষ করে বিবিসির বদৌলতে বিষয়টি বৈশ্বিক আলোচনার শীর্ষে চলে আসে । দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের ইসলামী ও অনৈসলামী বিশিস্ট আলেম ও পন্ডিত বর্গ এ মহতি প্রচেষ্টাটির সামাজিক ও সাম্প্রদায়ীক প্রভাব নিয়ে নিরীক্ষা ধর্মী গবেষণা কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন।
ছবি -৪৬ : এবারডীনের একই অংগনে মসজিদ ও গীর্জায় মুসলমান এবং খ্রিষ্টানদের নামাজ ও প্রার্থনা
বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় সহিংসতা পরিহার করে সকলের শান্তিপুর্ণ সহবস্থানে উপসনা ও প্রার্থনার ক্ষেত্রে এধরনের উদ্যোগট সৃস্টি করতে পারে নতুন একটি অধ্যায়ের । এমনিতেই ,এখন পশ্চিমা বিশ্বে হাজার হাজার বিশালাকৃতির গীর্জা জনশুন্য ও বিরানভুমিতে পরিনত হওয়ার পর্যায়ে । এগুলি যদি আল্লার কৃপায় মসজিদে রুপান্তরিত হয়ে মানুষকে দ্বিন ইসলামের দিকে ধাবিত করে তবে এর চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে । দেশ দেশান্তরে মহান ইসলামের বিজয় হবে এতো আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাধীন ও তাঁরই বিধান এবং এখতিয়ারধীন । পবিত্র রমজানের দোয়া কবুলের এ মাসে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন ইসলামের শান্তিপুর্ণ বিজয়কে নীজ মহিমায় তরান্বিত করেন ।
দুনিয়ার উত্তর প্রান্তের দেশ কানাডার টরেন্টো, মনট্রিল, ক্যালগেরি , হ্যালিফ্যাক্স ও আলবার্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সুউচ্চ মিনার গম্বুজসহ অনেক মসজিদ। পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট প্রার্থনার স্থান। বিভিন্ন শহরে অবস্থিত প্রায় শতাধিক মসজিদ প্রতি শুক্রবার কানায় কানায় পূর্ণ থাকে মুসল্লিদের উপস্থিতিতে।
ছবি – ৪৭ : বাইতুন নুর মসজিদ ( আলবার্টা কানাডা )
পৃথিবীর দক্ষিন প্রান্তের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ধর্ম বিশ্বাসীর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমলেও প্রভাবশালী এ দেশটিতে অন্যান্য ধর্মের তুলনায় ইসলাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এখন দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ছয় লাখের মতো । উল্লেখ্য তিনজন টার্কিশ সাইপ্রিয়ট তাদের বাড়ী ব্যংকে বন্ধক রেখেস অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ায় সানসাইন নামে একটিউ মসজিদের নির্মাণ ব্যায় মিটানোর জন্য অর্থের যোগান দেন ।
ছবি- ৪৮ : সানরাইজ মসজিদ , ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে । বাড়ছে মসজিদের সংখ্যা। আমেরিকায় মুসলমানদের সংখ্যা গত এক দশকে বেড়েছে প্রায় দশ লক্ষ। ২০০০ সনে আমেরিকায় মুসলমান ছিলো ১০ লক্ষ। সংখ্যাটি বেড়ে এখন ২৬ লাখে পৌঁছেছে। ২০০০ সনে আমেরিকায় মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স ছিলো ১২০৯ টি , এখন সেই সংখ্যাটি প্রায় তিন হাজার। নিউইয়র্কে ২৫৭টি, ক্যালিফোর্নিয়ায় ২৪৬টি, টেক্সাসে ১৬৬টি মসজিদ আছে। ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠ ম্যারিল্যান্ডে ১০ কোটি ডলার অর্থাৎ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে একটি নতুন দিয়ানিত মসজিদ। আমেরিকার সমাজে নৈতিক অবক্ষয়, অধঃপতন যত বাড়ছে,, ইসলাম সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ ততই বেড়ে যাচ্ছে নি:সন্দেহে মুসলিম উম্মার জন্য এটা একটা সুসংবাদ । এই রামজানে কামনা করি আল্লা ইসলামের প্রসারকে দুনিয়ার বুকে কায়েম করুন ।
ছবি- ৪৯ : দিয়ানিত সেন্টার অফ আমিরিকা Diyanet Center of America (D.C.A.) , ওয়াসিংটন
উল্লেখ্য যে, যুক্তরাস্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত দিয়ানিত মসজিদটি তুরস্ক সরকারের Presidency of Religious Affairs (Diyanet Isleri Baskanligi যাকে সংক্ষেপে দিয়ানিত Diyanet বলা হয় ) এর অর্থায়নে নির্মান করা হয় । উল্লেখ্য যে দিয়ানিত সাপ্তাহিক জুম্মার খুৎবার খসড়া তৈরী করে দেয় যা তুরস্কের ৮৫০০০ মসজিদে এবং তাদের (Diyanet) অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের আরো প্রায় ২০০০ টি মসজিদে পঠিত হয় যদিও হানাফী ব্যতিত অন্য মতাবলম্বীরা এর সমালোচনা করে থাকেন ।
পৃথিবীর পুর্ব প্রান্তের সুর্যোদয়ের দেশ জাপানে ইসলামের সওগাত
উসমানি খেলাফতের সময় সুলতান আবদুল হামিদ সর্বপ্রথম ১৮৯০ খৃস্টাব্দে নৌপথে তাঁর জাহাজ ‘আর্তগর্ল'(Al Togrul )-এ এক সৌজন্যমূলক মিশন জাপানে পাঠিয়েছিলেন সে অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াতের সম্ভাবনা সম্পর্কে সমীক্ষা চালানোর জন্য । প্রতিনিধি দলটি জাপানে খুব ভাল প্রভাব সৃষ্টি করেন। মূলত তাঁরা ঐ অঞ্চলে ইসলাম কবুলের বীজ বপন করে যান।
ছবি –৫০ : ১৮৫০ সালে জাপানে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য গমন কারী সেই বিখ্যাত ‘আর্তগর্ল'(Al Togrul ) জাহাজ
সুত্র Click This Link
তবে তারা জাহাজে তুরস্কে ফেরার পথে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন। মাঝ নদীতে যাওয়ার পর শুরু হয় প্রকাণ্ড ঝড়। উথাল পাথাল ঢেউ শুরু হয় সমুদ্রে। দিক হারায়ে জাহাজটি ডুবে যায়। ছয়শ’ নয় জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র ৬৯ জন আল্লাহর অসীম কুদরতে বেঁচে যান। নিকটবর্তী দ্বীপের জাপানী অধিবাসীরা দুর্ঘটনা কবলিত লোকদের অত্যন্ত আন্তরিকভাবে সাহায্য করেন। জাপানের বাদশাহ মেইজি আহতদের চিকিৎসা ও জীবিতদের তুরস্কে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। শহীদেরকে দুর্ঘটনাস্থলের নিকটেই দাফন করা হয় এবং সেখানে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে সময় থেকে প্রতিবছর এ দুর্ঘটনার স্মৃতি হিসেবে একটি অনুষ্ঠান করা হয়। সৌজন্যমূলক মিশনের অধিকাংশ সদস্য যদিও শহীদ হন, কিন্তু তাঁদের কোরবানী কার্যকর ভূমিকা পালন করে। জাপানে ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটে এবং তা বিকশিত হয়, পরবর্তীতে জাপানে স্থাপিত হয় বেশ কিছু ইসলামী সেন্টার এবং মসজিদ । টোকিওর শহরতলী এলাকা সাইতামার (saitama) একটি ভবন ক্রয় করে সেখানে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন সেখানকর মুসলমানেরা । আল্লাহ তাদের মহতি কর্ম কবুল করুন ।
ছবি-৫১ : টোকিও কামি মসজিদ (Tokyo Camii) টোকিও , জাপান
পবিত্র মাহে রমজনের এই দিনে ইসলামের দাওয়াতী সে সব শহীদদের জন্য রইল দোয়া ।
ভারতীয় উপমহাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মুসলমান ও মসজিদ
শ্রী লংকার খ্রিস্টান এবং মুসলমানগনের মধ্যে ধারনা রয়েছে যে সৃস্টি কর্তার আদেশে বেহেস্ত হতে ফেরেশতাগন হযরত আদমকে ( আ.) প্রথমে শ্রীলংকাতেই নামিয়ে রেখে রেখে গিয়েছিলেন । কিন্তু একথার পিছনে কোরানে পরিস্কার কোন উল্লেখ নেই কিংবা সহি হাদিসের কোন দালিলিক প্রমান নেই । তবে সপ্তম শতাব্দিতে আরব বনিকদের আগমনের ফলে শ্রিলংকায় ইসলামের সুচনা হয় । এখন সেখানকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ভাগই মুসলমান । কিন্তু ৯০দশকে শুরু হওয়া শ্রিলংকার গৃহযুদ্ধে প্রায় ৯৫ হাজার মুসলমানকে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়া করে তামিল টাইগাররা ও সেখানকার মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ ধ্বংস করে । তাই সেখানকার মুসলিমদের দুর্দশা ও মসজিদগুলি পুণ:স্থাপিত হোক এ দোয়াও রইল এই মাহে রমজানে ।
ছবি -৫২ : ১৯ শতকে নির্মিত জামি উল আলফার মসজিদ , কলম্বো, শ্রীলংকা
বাবরী মসজিদ
বাবরী মসজিদ সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে আলোচিত একটি মসজিদের নাম। বাবরি মসজিদ'র অর্থ বাবরের মসজিদ। ১৫২৭ সালে মুঘল সম্রাট বাবরের আদেশে নির্মিত হয় বলে এর বাবরী মসজিদ নামকরণ। ১৯৯২ সালে ভারতের কট্টর হিন্দুরা অযোধ্যার বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে ছিল । বিষয়টি এখনো সেখানে সমস্যা হয়ে রয়েছে ।ভারতের শীর্ষ আদালত মনে করে, ধর্ম আর বিশ্বাসের সঙ্গে এই সমস্যা জড়িত। তাই এরকম একটি সংবেদনশীল বিষয়ের সমাধান একমাত্র আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই হতে পারে। এই পবিত্র রমজানে আল্লার কাছে দোয়া করি মসজিদটি যেন পুর্বের মত পুণ;নির্মিত হয় ও চালু হয় স্বরূপে । দোয়া করি সম্প্রদায়ীক উত্তেজনা কিংবা ষড়যন্ত্রে মসজিদসহ কোন ধর্মীয় উপসনালয় যেন ধ্বংস প্রাপ্ত না হয় দুনিয়ার কোথাও ।
ছবি - ৫৩ : ভারতের অযোদ্ধায় বাবরী মসজিদ( ভেঙ্গে ফেলার আগের ছবি )
আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলিম নিগ্রহ ও মসজিদের উপর ধ্বংস যজ্ঞ
আমাদের প্রতিবেশী দেশ আরাকানে মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর ইতিহাসের জঘণ্যতম গণহত্যা ও নির্যাতন চলছে। আরাকানকে মুসলিম শূণ্য করতেই আন্তর্জাতিক চক্রান্ত অনুযায়ী এ বর্বর নির্যাতন। নির্যাতনবন্ধে বাংলাদেশ সরকারকেই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হচ্ছে । কারণ যে কোন সংকটে রোহিঙ্গারা সবচেয়ে অধিকহরে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে , এখনো প্রায় প্রায় ৫ লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে আছে । তাদের দু:খ দুর্দশার কোন সীমা নাই । এ দিকে গত কয়েক দিন পুর্বে ঘুর্ণী ঝড় মোরার আঘাতে উপকুলীয় এলাকায় আশ্রয় গ্রহনকারী প্রায় ৩ লক্ষ রোহিঙ্গা ভীষণভাবে ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছে । ঘুর্ণীঝড়ে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের উপকুলীয় দেশবাসীসহ সকলের জন্য রইল সমবেদনা ও এই পবিত্র রমজান মাসের দোয়া , আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুন ।
ছবি –৫৪ : আরাকানে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের একটি মসজিদ । দোয়া করি আরাকানে মুসলিম নির্যাতন বন্ধ হোক , ক্ষতিগ্রস্ত সকল মসজিদ পুণ: নির্মিত হোক ।
বাংলাদেশে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী মসজিদ সংলগ্ন মাযারে ওরস প্রসঙ্গে
বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মধ্যে একটি হলো বাগেরহাটে অবস্থিত ষাট গম্বুজ মসজিদ। মসজিদটিকে ইউনেশকো কতৃক ১৯৮৩ সলে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সুলতান নসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) আমলে খান আল-আজম উলুগ খানজাহান (র) সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে খলিফাবাদ রাজ্য গড়ে তোলেন। খানজাহান (র) বৈঠক করার জন্য একটি দরবার হল গড়ে তোলেন, যা পরে ষাট গম্বুজ মসজিদ হয়। এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিল। পাথরগুলো আনা হয়েছিল রাজমহল থেকে। তুঘলকি ও জৌনপুরী নির্মাণশৈলী এতে সুস্পষ্ট । বাংলাদেশের একমা্ত্র বিশ্ব ঐতিয্যবাহী মসজিদটিতে বার্ষিক ওরস হয় । এই পরিত্র রমজানে দোয়া করি দেশের সকল মসজিদ অলি আওলিয়াদের মাযারে যেন ইসলামী বিধি বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ পুরাবক সকল প্রকর ধর্মীয় বিষয়াদি প্রতিপালিত হয় ।
ছবি – ৫৫ : বাংলাদেশের বাগেরহাটে চতুর্দশ শতকে নির্মিত ষাট গম্বুজ মসজিদ
ছবি -৫৬ : যাট গম্বুজ মসজিদের অভ্যন্তর ভাগের অপরূপ স্থাপত্য শৈলী
বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারাম
তৎকালীন বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুল লতিফ ইব্রাহিম বাওয়ানি প্রথম ঢাকাতে বিপুল ধারণক্ষমতাসহ একটি গ্র্যান্ড মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। ১৯৫৯ সালে ‘বায়তুল মুকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠনের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে সময়কার বিশিষ্ট স্থপতি টি. আব্দুল হুসেন থারিয়ানি মসজিদ কমপ্লেক্সটির ডিজাইন করেন । ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের মিহরাবটি অর্ধ-বৃত্তাকারের পরিবর্তে আয়তাকার। আধুনিক স্থাপত্যের কম অলংকরণই এই মসজিদের একটি লক্ষনীয় বৈশিষ্ট । এর অবয়ব অনেকটা পবিত্র কাবা শরিফের মতো হওয়ায় এই মসজিদটি মুসলমানদের হৃদয়ে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। আসুন সকলে মিলে এই পবিত্র রমজানুল মোবারকে এই মসজিদ দেখতে দেখতে দেশ , জাতি ও সমগ্র মুসলিম উম্মা ও বিশ্বশান্তির জন্য পরম করুনাময়ের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে নিই ।
ছবি – ৫৭ : বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারম ।
পারশ্যের বিখ্যাত কবি শেখ সাদী রচিত বিশ্ব মুসলিম উম্মায় সর্বাধিক পঠিত একটি দুরুদ
ইমেজ সুত্র : Click This Link
শেখ সাদী রচিত বালাগাল উলা দুরুদটি হতে পান করা যায় নবী প্রেমের সুধা । সত্যিই নবী প্রেমের এক মহান আরশি ‘বালাগাল উলা বি কামালিহী’।
অনেকেই এই দুরুদটির বাংলা অনুবাদ করেছেন, তবে মওলানা ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদীর অনুবাদটি বেশ সুন্দর বলে দেখা যায় :
সুউচ্চ শিখরে সমাসীন তিনি নিজ মহিমায়
তিমির-তমসা কাটিল তার রূপের প্রভায়,
সুন্দর আর সুন্দর তার স্বভাব চরিত্র তামাম
জানাও তাঁর ও তাঁর বংশের ‘পরে দরূদ-সালাম।
ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে যে সকল দুঃখ-কষ্ট নবীজী ভোগ করেছেন সে সময়ে তাঁর সাথী ছিলেন নবী কন্যা হযরত ফাতেমা জাহরা । কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কাছে সিদ্দিকা ফাতিমা জাহরা মসজিদ
নামে একটি মসজিদ ২০১১ সনে বিখ্যাত ভারতীয় তাজ মহলের ডিজাইন অনুসারে নির্মান করা হয়েছে ।
ছবি – ৫৮ : সিদ্দিকা ফাতিমা জাহরা মসজিদ
পারস্যের কবি শেখ সাদী রচিত বালাগাল উলা দুরুদটি অনুকরনে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন :
কুল মখলুক গাহে হযরত
বালাগাল উলা বেকামালিহী।
আঁধার ধরায় এলে আফতাব
কাশাফাদ দুজা বেজামালিহী
রৌশনীতে আজো ধরা মশগুল
তাইতো ওফাতে করি না কবুল,
হাসনাতে আজো উজালা জাহান
হাসুনাত জমিউ খেসালিহী
নাস্তিরে করি’ নিতি নাজেহাল
জাগে তাওহীদ দ্বীন-ই কামাল
খুশবুতে খুশী দুনিয়া বেহেশত
সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী
বিভিন্ন লেখনী হতে জনা যায় পারস্যের এক ব্যক্তি শেখ সাদীর বিবিধ ধরনের চিন্তা ভাবনা , কবিতার কথামালা সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন। এক রাতে ঐ ব্যক্তি স্বপ্নে দেখতে পেলেন, একজন ফেরেশতা একখানি নূরের বরতন নিয়ে মাটিতে নেমে এলেন। ঐ ব্যক্তি জানতে চাইলেন এ কি ব্যাপার? ফেরেশতা জবাবে বললেন, সাদীর একটি কবিতা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে-সে জন্য বেহেশতের এ উপহার। কবিতাটি হল-
জ্ঞানিদের চোখে
গাছের ঐ সবুজ পাতা
খোদা তত্ত্বের
এক একখানি গ্রন্থ।
ঐ ব্যক্তির যখন ঘুম ভেঙ্গে গেল তখন সেই রাতেই গজলটির ব্যাপারে স্বপ্নে দেখা খোশ খবর সাদীকে জানাতে গেলেন। আশ্চর্য! লোকটি দেখেন উজ্জ্বল বাতি জ্বেলে শেখ সাদী সেই কবিতাটিই পড়ছেন।
আল্লাহ তায়লা কোরানে যা বলেন তা চিন্তা করে দেখতে গেলে দেখা যায় আধুনিক বিজ্ঞানেও তা প্রমানিত, সুরা নহলের ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘’ আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীকে তিনি যথাযথ ভাবে সৃষ্টি করেছেন ওরা আল্লাহ্র প্রতি যে অংশীদারিত্ব আরোপ করে, তিনি তার বহু উর্দ্ধে ‘’ ( কোরান ১৬ .০ ৩ )। “যথাযথ ভাবে” এই শব্দটি দ্বারা যে ভাব প্রকাশ করা হয়েছে তা হচেছঃ এই বিশাল বিশ্বভুবন সৃষ্টি আল্লাহ্র কোন খেয়াল খুশী, বা লীলা খেলা বা আকস্মিক কিছু নয়। সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখেই এই বিশাল বিশ্বভুবনকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কথারই সমর্থন মিলে সুরা হিজরের ৮৫ নং আয়াত (১৫:৮৫) এবং সুরা আম্বিয়ার ১৬ নং আয়াতে (২১:১৬) তে।
সারা বিশ্ব ভুবনে, গ্রহ নক্ষত্রে, বিশ্ব চরাচরে এক আল্লাহ্র আইন বিদ্যমান। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেখি পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্র, রসায়ন বিজ্ঞানের সূত্র, উদ্ভিদ জগতে, প্রাণী জগতে সর্বত্র একই নিয়ম চালু বা সকলে প্রকৃতির একই আইনের অধীনে পরিচালিত। এ সকলেই নির্দ্দেশ করে যে, সকল বিশ্ব চরাচরের সব কিছু একই স্রষ্টার সৃষ্টি। বিভিন্ন স্রষ্টার সৃষ্টি হলে তাদের পরিচালনার আইনও বিভিন্ন হতে বাধ্য হতো। ফলে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে দাঁড়াতো। কিন্তু বিশ্ব প্রকৃতিতে কোথাও অনিয়ম নাই। সর্বত্র শান্তি, শৃঙ্খলা ও সমন্বয় রয়েছে ।
সুরা নহলের ১৩ নং আয়াতে আরো বলা হয়েছে পৃথিবীর (আরও) অনেক বস্তু যা তিনি বহু রং-এ (এবং গুণে) সমৃদ্ধ করেছেন (মানুষের জন্য) যারা (কৃতজ্ঞ চিত্তে) আল্লাহ্র প্রশংসা কীর্তন করে অবশ্যই তাদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।
ছবি : সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি
বিশ্ব প্রকৃতির সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টার জ্ঞানের স্বাক্ষর বিদ্যমান। প্রকৃতির আইন স্রষ্টার প্রজ্ঞা ও জ্ঞানকে ধারন করে। প্রকৃতির সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা আল্লাহ্র সৌন্দর্যকে, শিল্পী মনকে ধারণ করে। সূর্যাস্তের পশ্চিম আকাশে রং এর ছটা, ফুলের পাপড়ির বিভিন্ন রং এর বাহার, পত্র-পল্লবের বিচিত্র সমাবেশ, প্রাণীকূলের গঠনের মধ্যে সৌন্দর্যের যে বিকাশ ঘটেছে তা সম্পূর্ণ অনুধাবন করা সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাহিরে তবে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন কাজী নজরুল তার গজলে ।
সৃষ্টির মাঝে, প্রকৃতির মাঝে আল্লাহ্র প্রজ্ঞা, সৌন্দর্য, শৃঙ্খলা অর্থাৎ তার হাতের স্বাক্ষর বিদ্যমান। এসব নির্দশন অনুধাবন করার ক্ষমতা তাদেরই থাকবে যারা আল্লাহ্র বাণীর প্রতি নিবেদিত। তাই আসুন এই রমজানে কোরানের বাণীর সাথে সুর মিলিয়ে মোনাজাত করে নিই
এই রমজান মাসে সিয়াম সাধনার পাশাপাশি আল্লাহ আমাদের সকলককে সহজ সরল ও সত্যের পথে চলার তৌফিক দিন এ কামনাই করি ।
ধন্যবাদ মেহেরবাণী করে ধৈর্য ধরে লম্বাসময় সাথে থেকে পোষ্টটি পাঠের জন্য
কৃতজ্ঞতায়
http://quran.gov.bd/ প্রকাশের সাথে জড়িত সকলকে
গুগল অন্তরজাল আর লেখাটির সুত্রে উল্লেখিত সকলকে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৫