পোষ্টটি পাঁচটি পর্যায়ে সংগঠিত , প্রথমত: গত ৬ই এপ্রিল ২০১৭ তারিখে সিরিয়ায় আমিরিকার টমাহক ক্ষেপনাস্রের আঘাত প্রসঙ্গ, দ্বীতীয়ত: জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমিরিকার পারমানবিক বোমা হামলার সচিত্র একটি বিবরণ, তৃতিয়ত: বিভিন্ন সময়কালে পারমানবিক সমরাস্রের বিস্তার ও হুমকি প্রদর্শন প্রসঙ্গ, চতুর্থত : শান্তিপুর্ণ ব্যবহারের নাম করে পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রকারান্তরে কৌশলে পারমানবিক বানিজ্যায়ন, পরিশেষে পারমানবিক ধংসযজ্ঞের হাত হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে সচেতনা জাগ্রতকরন বিষয়ক আলোচনা।
বিশ্বে ঘটে যাওয়া সামরিক কর্মকান্ডের যে দিকেই তাকানো যাকনা কেন শুধু দেখা যায় 'আজ যে বন্ধু, কাল সে শত্রু হতেও পারে'। সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আর পুতিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও মনে হয় খেটে যাবে কথাটা ? আমেরিকা ও রাশিয়া কি ফিরে যাবে সেই পরিচিত বৈরিতায়? ট্রম্পের নির্দেশে সিরিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়ল আমেরিকা। রাশিয়ার প্রত্যক্ষ আশ্রয়ে টিকে থাকা আসাদের সেনাবাহিনীকে ‘শিক্ষা’ দিতে সিরিয়ার শায়রত বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে পর পর ক্ষেপণাস্ত্র হানল মার্কিন ফৌজ।
ছোড়া হচ্ছে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: রয়টার্স।
গত ৬ এপ্রিল সিরিয়ার বিমান ঘাঁটিতে ট্রাম্পের ছুড়ে দেয়া ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ার দৃশ্যে মনে হচ্ছে তিনি সরাসরি রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের দুয়ারটি বন্ধ করে দিলেন। ইদলিব প্রদেশের খান শেইখুন শহরে আসাদের বাহিনীর রাসায়নিক হামলার জবাব দিতেই এই পাল্টা আক্রমণ বলে জানানো হয়েছে। রাসায়নিক হামলার পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্দেশ দিয়েছিলেন এই আক্রমণের।
উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে টমাহক হামলার পর শায়রত বিমানবন্দরের অবস্থা। ছবি( নিউ ইয়র্ক টাইমস )।
তবে অসমর্থিত সূত্রে খবরে জানা যায় হোমস প্রদেশের ওই বিমানঘাঁটি এই হামলায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। নিহত হয়েছেন কয়েক জন সিরীয় সেনাও।
দিন কয়েক আগে আসাদের সরকার ইদলিব প্রদেশে ‘বিদ্রোহী’ দমনে রাসায়নিক হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই হামলায় অন্তত ২০ শিশু-সহ ৭০ জনের মৃত্যু হয়। অসুস্থ হয়ে পড়েন বহু মানুষ ( নিউ ইয়র্ক টাইমস) । ইদলিবে রাসায়নিক গ্যাস হামলায় হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়ছে বলেই দেখা যায় । সেখানে ৩৩ শিশুসহ অন্তত ৮৯ জন নিহত হওয়ায় এর দায় ওই অঞ্চলের আসাদ বিদ্রোহীদের উপর চাপায় রাশিয়া ( দৈনিক ইত্তেফাক , তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৭)
Graves of the dead are still fresh from funerals the day before, the red soil still upturned. (Photo the Guardian)
সিরিয়ার যেখান থেকে রাসায়নিক হামলা চালানো হয়েছিল, সেই সেনা ক্যাম্পে পাল্টা হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন ডোরাল্ড ট্রাম্প ।রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের নিয়ম লঙ্ঘন করে সিরিয়ার আসাদ সরকার নিষিদ্ধ রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে বলে ট্রাম্পের অভিমত । যেখানে টমাহক হামলা চালানো হয়েছে, তার কাছাকাছি রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পও রয়েছে। তবে আগে থেকেই এই হামলার খবর তাদের জানিয়ে দেওয়ার ফলে রুশ সেনারা নিরাপদ স্থানে সরে যায় । মার্কিন পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এমনটা নয় যে এই হামলার পর সিরিয়ায় বর্তমানে মার্কিনীদের যে নীতি চলছে সেটা থেকে তারা সরে আসাবে ।
যদিও এই হামলার আগে আমেরিকা রাশিয়ার সেনাকে জানিয়েছিল , তথাপি ট্রাম্প অনেক ধোঁয়াশা বজায় রেখেছেন বলেই দেখা যায় ।সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের অবসানে এর পর ঠিক কোন পথে আমেরিকা চলতে চায় তাও পরিষ্কার নয়। রাশিয়া অবশ্য আমেরিকার এই হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে । ক্রেমলিন মার্কিন প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এ রকম হামলা চালালে মার্কিন-রুশ সম্পর্কের মধ্যে চিড় ধরতে পারে।
সিরিয়ায় আমিরিকার টমাহক মিসাইল এটাকের পরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র Igor Konashenkov বক্তব্য রাখছেন ( Photo : Tass )
A Russian defence ministry statement, read on state television, said the US attack had been “ineffective” and claimed Syrian authorities were looking for 36 Tomahawk missiles that fell outside the base and missed the target. The statement also confirmed Russia would stop cooperation and communication with US forces in Syria.
সব মিলিয়ে এই হামলার পরে মধ্য এশিয়া জুড়ে অস্থিরতা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা এবং সেটা কোন দিকে গড়ায় সেটাই ভাবার বিষয় ।
অনেকেই এখন উত্তর কোরিয়া বিষয়েও আশঙ্কিত। কারণ, এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, চীন কোনও ব্যবস্থা না নিলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে একাই ব্যবস্থা নিতে পারে আমেরিকা। সেখানেও সামরিক অভিযানের আশঙ্কা রয়েছে। যার জবাব দিতে তৈরি উত্তর কোরিয়াও। এরকম ক্ষেত্রে চীনও যে চুপ করে বসে থাকতে পারবে না সেটা বলাই যায় । তাই একই সঙ্গে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে লড়াই-এর জন্য কি প্রস্তুত ট্রাম্প ? ভবিষ্যতের গর্ভে তার উত্তর লুকিয়ে আছে। বিশ্ব শান্তির জন্য তাই এ মহুর্তে সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন ।
North Korea is apparently 'prepared' to attack at 'any time'
How Trump can stop North Korea's nuclear threats against the U.S.
অপর দিকে বিভিন্ন ইস্যুতে চীনের সাথে এই মহুর্তে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয় পড়লে পরিনতি কি হতে পারে তা তুলে ধরেছে আমিরকার রান্ড কর্পোরেশন ( Research and development is an American nonprofit global policy think tank) ।
রান্ড করপোরেশন হেড কোয়ার্টার , সান্টা মনিয়া কালিফর্নিয়া
দক্ষিণ চীন সমুদ্র বা সাউথ চায়না সী-কে কেন্দ্র করে আমেরিকা যেভাবে একের পর এক উস্কানীমূলক ব্যবস্থা দিচ্ছে, এতে করে যদি সত্যিই এ অঞ্চলে আমেরিকা এবং চীনের মধ্য যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে সম্ভাব্য কি ঘটতে পারে তা নিয়ে আমেরিকার রান্ড কর্পোরেশন দুই দেশের ১০ টি গুরুত্বপুর্ণ Click This Link সামরিক ক্ষমতা যাচাই করে একটি নতুন স্কোর কার্ড প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রা ন্ড কর্পোরেশন বলেছে শুধুমাত্র স্প্রাটলী আইল্যান্ডএবং চীনের তাইওয়ান আক্রমন নিয়ে যুদ্ধ হলে উভয় পক্ষের যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হবে তাতে আমেরিকা এবং চীনের সামরিক শক্তির ভারসাম্যের বিরাট পরির্তন হবে ।
স্প্রাটলী আইল্যান্ড চীনের তৈরী কিতৃম দ্বীপ (The Spratly Islands dispute is an ongoing territorial dispute between Brunei, China (People's Republic of China), Malaysia, the Philippines, Taiwan, and Vietnam, concerning ownership of the Spratly Islands
উল্লেখ্য যে দক্ষীন চীন সাগরে স্প্রাটলী আইল্যান্ড নিয়ে ব্রনাই , চীন , ফিলিপাইন, তাইওয়ান , মালএশিয়া এবং ভিয়েতনামের মধ্যে টেরিটরিয়াল বিরোধ রয়েছে । চীন দক্ষীন চীন সাগরে আবার একটি কিতৃম দ্বীপও সৃস্টি করেছে ।
স্প্রাটলী আইল্যান্ড চীনের তৈরী কিতৃম দ্বীপ
রান্ড জানিয়েছে বেইজিং এর হাতে থাকা প্রায় ১৪০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে খুব সহজেই ওকিনাওয়া দ্বীপে অবস্থিত আমরিকার কাডেনা বিমান ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়া সম্ভব।
আর তা যদি হয় তাহলে, আমেরিকার বিমান বাহিনীর জন্যে চীনে আঘাত হানা বিরাট সময় ব্যয়কারী দুরত্বের বিষয় হয়ে দাড়াবে, কারন সেক্ষেত্রে আমেরিকাকে তাদের আলাস্কা, গুয়াম বা হাওয়াই বিমান ঘাঁটি থেকে চীনের উপর আক্রমন করতে হবে। এই দুরত্বের কারনে চীনও নিজেদের আক্রমনকে পূনরায় আরো কার্যকর করার জন্য যথেষ্ঠ সময় পাবে। রান্ড আরো জানিয়েছে ২০১৭ সালের কাল্পনিক সাত-দিনের যুদ্ধে তাইওয়ানকে রক্ষা করতে আমেরিকার কমান্ডাররা চীনে যুদ্ধ চালানোর জন্য ঘাঁটিই খুঁজে পাবে না।
বিষয়টিকে মাথায় রেখেই আমিরিকা ইতিমধ্যে দক্ষীন চীন সাগর অভিমুখে supercarrier USS John C. Stennis, পাঠিয়ে দিয়েছে
তবে, দীর্ঘ সময় ব্যাপী যুদ্ধে আমেরিকা যদি সুবিধা পায়ও এবং জিততেও থাকে তবে মনে রাখতে হবে এসময়ে কিন্তু আমেরিকার নৌবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর উপরও ভয়াবহ হুমকি বাড়তে থাকবে চীনের পক্ষ থেকে ।
তবে, স্প্রাটলীর যুদ্ধক্ষেত্রে, আমেরিকার স্টিল্থ যুদ্ধবিমান গুলো ভাল করবে। কারন এটা মেইনল্যান্ড চায়না হতে ৮০০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। তবে আমেরিকার লং-রেঞ্জ (দুরপাল্লার) ক্ষেপনাস্ত্রগুলো চীনের যেকোন বিমান ঘাঁটি ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। বর্তমানে আট ঘন্টার মধ্যে তাইওয়ানের আশেপাশের ৪০টির মত বিমান ঘাঁটি ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে আমেরিকা। রান্ড তাদের রিপোর্ট আরো বলেছে, যুদ্ধ শুরু হলে ওয়াশিংটন যখন এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়ারের উপর নির্ভর করবে, তখন বেইজিং এর তৈরী আধুনিক এ্যান্টি-শিপ-ব্যলিস্টিক-মিসাইল আমেরিকার নৌবাহিনীকে বিরাট হুমকিতে ফেলে দেবে। কারন বর্তমানে চীনের আধুনিক গোয়েন্দা সংস্থা, প্রযুক্তিগত নজরদারী এবং ডুবোজাহাজের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হবে।
চীন ১৯৯৭ সালের পর একদিকে তাদের জল-থেকে-স্থল যুদ্ধের ক্ষমতা দ্বিগুন বাড়িয়েছে,অপরদিকে তাদের ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী ক্ষমতারও উন্নয়ন করেছে।
Chinese front line nuclear attack submarine.
তবে আমিরিকাও তাদের Computer-based rendering of Virginia class attack submarine তৈরী করে রেখেছে
এ প্রসঙ্গে রান্ড কর্পোরেশন জানিয়েছে, তাইওয়ানের ক্ষেত্রে জল-থেকে-স্থল আক্রমনে আমেরিকা চীনের উপর ভয়াবহ ধ্বংস যজ্ঞ চালাতে পারবে। রান্ড এর মতে, চীনের ৪০ ভাগ উভচর জাহাজ গুলো আমেরিকার এই আক্রমনে ধ্বংস হবে। এতে করে চীনা সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে তাদের নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি ও ক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
আমেরিকা ২০০২ সাল থেকে তাদের কৃত্রিম উপগ্রহের ক্ষমতা বাড়িয়েছে যাতে করে শত্রুর উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটকে বিকল করে দেয়া যায়, ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রের গতিপথ পাল্টানো যায় বা শত্রুর গোয়েন্দা স্যাটেলাইটকে ধ্বংস করা যায়। রান্ড পরামর্শ দিয়েছে, আমেরিকার তৈরী উচ্চ-শক্তির লেজার সিস্টেম দিয়েও চীনের পুরো মহাকাশ কার্যক্রম ধ্বংস করে দেয়া যাবে। তবে চীনও বসে নেই ।
CHINA is developing an arsenal of first-strike space-lasers that could destroy NATO satellites neutralising the west’s ability to fight back in any conflict.
The lasers will take out US and European satellites from the ground killing off the Washington’s ability to launch intercontinental ballistic missiles in retaliation.
রান্ডের প্রতিবেদনে তাই এ কথাও বলা হয়েছে যে ২০০৭ সালে বেইজিং-এর স্যাটেলাইট বা ভূ-উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপনাস্ত্রের সফল উতক্ষেপনের ফলে আমেরিকার যোগাযোগ স্যাটেলাইট গুলো বিরাট হুমকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়াও আরো ভয়ের ব্যাপার হলো চীনের কাছে আছে রাশিয়ার তৈরী জ্যামিং সিস্টেম।
পারমানবিক যুদ্ধ প্রসঙ্গ
যদিও চীন ধীরে সুস্থে তাদের পারমানবিক শক্তি বাড়াচ্ছে, তারপরও আমেরিকার পারমানবিক আক্রমনকে প্রতিহত করে পাল্টা আক্রমন করা চীনের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। কারন এমুহুর্তে আমেরিকার পরমাণূ বোমার মজুদ চীনের মজুদের তুলনায় বেশী। রান্ডের প্রতিবেদন মতে, এক্ষেত্রে আমেরিকা চীন থেকে ১৩ গুন এগিয়ে আছে।
ব্রান্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের বর্ধমান সমর শক্তি এ অঞ্চলে আমেরিকার প্রভাবকে সঙ্কুচিত করবে। এছাড়া আমেরিকার সাথে যুদ্ধে না জিতেও চীন বেশ কিছু লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে। তবে এটা ঠিক, দুই পক্ষই যুদ্ধের কারনে যদি ভয়ানক ক্ষতির সম্মূখীন হয় তবে আমেরিকা আগের মতো কখনই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে পারবেনা।
এ প্রসঙ্গে বলা যায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকালে আমিরিকার ভয়াবহ তান্ডব লীলা জাপান কিছুটা ভুলে গেলেও ( কারণ জাপান পারমানবিক মারনাস্র উৎপাদন বন্ধের বিষয়ে নন- সাপোর্টিভ দেশের কাতার ভুক্ত যা লিখাটির শেষের দিকে দেখানো হয়েছে ) যদিউ জাপান হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে স্মৃতি নির্মান করে তা উদযাপন করে নিয়মিতভাবে )। তাই এই প্রায় ভুলে যাওয়া হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দৃশ্যাবলী এখন যা শুধু আমিরিকার ন্যাশনাল অআর্কাইভে সংরক্ষিত আছে সেখান থেকে তুলে আনা হল এখানে ।
প্রথমেই দেখানো হল পারমানবিক বোমা ফেলার আগে ৬ই আগস্ট সকালে হিরোশিমা শহড়টি কত প্রানবন্ত ছিল । আজ থেকে ৭০ বছর আগে ১৯৪৫ সনের আগস্ট মাসের ৬ তারিখ সকাল ৮.১৫ মি. Little Boy নিক নামে ৪৪০০ কেজি ওজনের একটি পারমানবিক বোমা অআমিরিকা কতৃক ফেলা হয় জাপানের হিরোসিমা শহড়ে ।
বোমা ফেলার পুর্বে হিরোসিমার দৃশ্য । পারমানবিক বোমা ফেলার পরে মহুর্তেই পুরে যাওয়া শহড়টিতে শুধুমাত্র কয়েকটি বিদ্যুত খাম্বা দেখা যায় ।
Colonel Paul Tibbets নামে পাইলটের পরিচালনায় Enola Gay নামের B-29 Superfortress bomber টি হতে বোমাটি নিক্ষেপ করা হয় ।
আমিরিকার মারিয়ানা দ্বীপের টিনিয়ান বিমান ঘাটি হতে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে B-29 Enola Gay বোমারো বিমানের ground crewদের সাথে পা্ইপে ধুমপান রত Colonel Paul Tibbets এর ছবি ( US Air Force Reauter)
৬ ই আগস্ট ১৯৪৫ বিমানটির ককপিটে বসে টেক অফের সময় Enola Gayর পাইলট Colonel Paul W Tibbets হাত নেড়ে অভিবাদন করছে (US National Archives)
Little Boy নামের আনবিক বোমাটি Enola Gay's bomb bay তে লোড করার পুর্ব মহুর্ত ( US National Archives )
বোমাটি ভুমি হতে ২০০০ ফুট উপরে থাকতেই ১৫০০০ টন TNT তেজস্ক্রিয় ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে বিস্ফোরিত হয় ।
বোমাটি ফেলার বিমান থেকে দেখা যায় সারা শহড়টি ছেয়ে গেছে ব্যঙগের ছাতার মত ঘন মেঘে (National Archives )
বিমান হতে ছুড়ে দেয়া বোমাটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হিরোসিমা শহড়ের ১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায় এবং শহড়টির ৬০% ভবন ধংস করে ম্টিতে মিসিয়ে দেয় ।
বোমা ফেলার পর আকাশ হতে তোলা হিরোসিমার ক্ষয়ক্ষতির একটি চিত্র (National Archives )
৬ আগস্ট ১৯৪৫, হিরোশিমার শহড় হতে ১.৩০ কি মি , দুরে অবস্থিত জাপানী অআর্মী ডিভিশনাল ব্যারাক মাটির সাথে মিশে যায় (National Archives )
৬ আগস্ট ১৯৪৫, আনবিক বোমা ফেলার পরে হিরোশিমার একটি ধংসপ্রাপ্ত ভবন (National Archives )
বোমার আঘাতে তাৎক্ষনিকভাবেই হিরোশিমায় ৮০০০০ মানুষ মারা যায় , কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই মৃতের সংখ্যা ১৪০,০০০ পৌঁছায় যা হিরোশিমার মোট ৩৫০.০০০ এর প্রায় অর্ধেক ।
ধংসস্তুপের মধ্যে পুড়ে যাওয়া একটি ফায়ার ইঞ্জিন ( US National Archives )
৯ আগস্ট ১৯৪৫, হিরোশিমার Otagawa River embankment এ জরুরী বিভাগে বোমায় অআক্রান্ত লোকজনদেরকে দেখা যাচ্ছে ( Yotsugi Kawahara/Hiroshima Peace Memorial Museum/Reuters)
The Prefectural Industry Promotion Building, যা পরবর্তীতে Hiroshima Peace Memorial, Atomic Bomb Dome or Genbaku Dome হিসাবে পরিগনিত হয় (AFP)
এপ্রিল ১২, ১৯৪৬, যে সমস্ত বৈমানিকেরা হিরোশিমায় পারমানবিক বোমা ফেলেছিল তারা খোলা জীপে করে নিউ ইয়র্কে যুদ্ধাবসানের বছর পুর্তিতে হাসিসুখে প্যারেড করছে ( US National Archives )
১৯৪৬ , পারমানবিক বোমা বিষ্ফোরনের এক বছর পরে ধংসস্তুপের ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বিধ্যস্ত ভবন ( Keystone/Getty Images)
সিরকা ১৯৪৭ : বোমা বিম্ফোরণের দুই বছর পরে বোমাক্রান্ত মানুয়ের হাতে তার Circa প্রভাব (Getty)
বোমা ফেলার দই বছর পরে টোকিও ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে আনবিক বোমাক্রান্ত ভিকটিমদের পিঠে ফুসকীপড়া রোগের দৃশ্য (Getty )
১৯৪৮ : হিরোশিমায় বোমা বর্ষনের তিন বছর পরে জাপানি জনতা দুর হতে দাঁড়িয়ে ব্যাথাতুর চোখে অআনবিক বোমার বিভিসিকাময় দৃশ্য দেখছে (AFP )
হিরোশিমার তিন দিন পরে আরো একটি বড় আনবিক বোমা ফেলা হয় নাগাসাকিতে । ৪৫০০ কেজি আনবিক বোমাটির নিক নেম ছিল Fat Boy নামক বোমাটি Bockscar নামক বোমারু বিমান হতে ছোড়া হয় নাগাসাকিতে । বোমাটির আঘাতে নাগাসাকিতে ৩৯০০০ হতে ৮০০০০ লোক প্রাণ হারায় । জাপান ১৫ ই আগস্ট ১৯৪৫ এ অআত্ম সমর্পন করে ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ।
২৯ মার্চ ১৯৪৬, নাগাসাকিতে বোমা বহনকারী Bockscar বোমারো বিমানটিকে Roswell বিমান ঘাটিতে দেখা যায় ( AFP )
৯ ই আগস্ট ১৯৪৫ সনে নাগাসাকিতে নিক্ষিপ্ত Fat Boy আনবিক বোমাটি (US National Archives )
৯ ই আগস্ট ১৯৪৫ সনে নাগাসাকিতে নিক্ষপ্ত বোমাটি হতে আকাশে মাশরুম মেঘ কুণ্ডলীর মত দেখা যায় (Reuters)
নাগাসাকি উপর নেমে আসা বোমা থেকে তৈরী তেজস্ক্রিয় ধুম্রকুঞ্জ 9.6km ৯.৬০ কিলোমিটার দূর থেকে দেখা যায় (Nagasaki Atomic Bomb Museum/Getty Images)
বোমা ফেলার পর নাগাসাকির বিধ্যস্ত অবস্থার দৃশ্য (US National Archives)
আনবিক বোমা নিক্ষেপস্থলে গড়ে তোলা হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল পার্কে নির্মিত স্মৃতি মিনার (Atomic Bomb Dome, Chris McGrath / Getty Images)
দেশ ভিত্তিক পারমানবিক অস্রের মওজুদ
পারমানবিক ক্ষতাধর পৃথিবীর ৯টি দেশের কাছে এখন প্রায় ১৭০০০ মানব বিধংসী মারনাস্র রয়েছে । দেশ ভিত্তিক পরিসংখ্যান নিন্মরূপ :
রাশিয়া : ৮৫০০,
অআমিরিকা:৭৭০০
ফ্রান্স : ৩০০
চীন : ২৫০
বৃটেন ২২৫
পাকিস্তান : ১২০
ভারত : ১১০
ইসরাইল ( অঘোষিত ) : ৮০
উত্তর কোরিয়া : ৬ হতে ৮ টি
সুত্র : Click This Link
নাগাসাকিতে বোমা ফেলার পরে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত এই আনবিক শক্তিধর দেশগুলি বিভিন্ন সময়ে পারমানবিক মারনাস্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধ উপলক্ষে । এর মধ্যে বেশী হুমকি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাস্ট । বিভিন্ন সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ও অস্তিতিশীল পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট কমপক্ষে ১৪ বার আনবিক মারনাস্র হামলার হুমকি দিয়েছে । ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় অআমিরিকা কমপক্ষে ৪ বার পারমানবিক হুমকি দিয়েছে এবং দক্ষীন কোরিয়াকে হুমকি দিয়েছে কমপক্ষে এক ডজনবার । ফকল্যান্ড নিয়ে যুদ্ধের সময় বৃটেন আর্জেন্টিনাকে হুমকী দিয়েছে একবার , ২০০৬ সনে ফ্রান্স ইরানকে নিউক্লিয়ার থ্রেট দিয়েছে , কিউবান মিজাইল ক্রাইসিসের সময় রাশিয়া আমিরিকাকে দিয়েছে eyeball to eyeball পারমানবিক হুমকি এবং রাশিয়া ১৯৫৬ সনে সুয়েজখাল ইস্যু নিয়ে বৃটেন ও ফ্রান্সকে পারমানবিক মারনাস্র প্রয়োড়গের হুমকি দিয়েছে । তা্ইওয়ান নিয়ে চীন দিয়েছে আমিরিকাকে এই মারনাস্র ব্যবহারের হুমকি । কারগিল যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তান ইন্ডিয়াকে পারমানবিক অস্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছিল বলে জানা যায় ( Click This Link )
১৯৯৯ সনে কাশ্মীরের কারগিলে পাক ভারত যুদ্ধ
পারমানবিক যুদ্ধ সরঞ্জামের পিছনে একটি দেশ বিশেষ করে আমিরিকা কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তার কোন হিসাব বা পরিসংখ্যান কথনো প্রদান করেনা । তবে বিশেষজ্ঞগন একটি আনুমানিক হিসাব তৈরী করতে পারেন অনায়াসে । The Stimson Center নামে একটি সংগঠন হিসাব করে দেখিয়েছে ২০১৭ সন হতে ২০২২ সন পর্যন্ত কেবল মাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনবিক সরঞ্জমাদি খাতে কমপক্ণে $৭১৯.০৯ বিলিয়ন ডলার হতে $ ৭৬১.০৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে ।
নিউক্লিয়ার সরঞ্জামের পিছনে আনবিক শক্তিদর দেশগুলি যে পরিমান অর্থ ব্যয় করে তা দিয়ে অনায়াসেই বিশ্বের সকল এলাকার দরিদ্র দেশগুলির অন্ন , বস্র , বাসস্থান , শিক্ষা , চিকিৎসা ও আন্যান্য মানবিক চাহিদা পুরণ করা যায় অনায়াসে ।
The foundation of the International Red Cross’ মনে করে যে তাদের হাতে যে পরিমান সম্পদ ও ক্ষমতা এখন আছে তা দিয়ে শুধুমাত্র এখনকার যুগের একটি আনবিক বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ কোন দেশের মাত্র একটি নগড়ের ক্ষয় ক্ষতি মোকাবেলাতেও সমর্থ হবেনা , তাই আন্তর্জাতিক রেডক্রস বিশ্বব্যপি জোড়ালো আবেদন রাখছে আনবিক সরঞ্জামের বিলুপ্তি সাধনের জন্য । তাদের মতে এই খাতে যে পরিমান অর্থব্যয় হবে তা দিয়ে অনায়াসে বিশ্বকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করা যায় খুবই অল্প সময়ের ভিতরে ।
পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রসঙ্গ
আলোচনার শুরুতেই বলে নেয়া ভালো যে, নতুন কোনো তাত্ত্বিক বিতর্ক সৃষ্টি করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয় । তবে বর্তমান বিশ্বে আরো অনেক কিছুর মতোই পরমাণু বিদ্যুতেরও একটা রাজনীতি রয়েছে বলে সর্বত্রই শুনা যায় । আলোচনার শুরুতেই এটা আমাদের মাথায় রাখা দরকারযে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আমেরিকানরা ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা এবং ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা হামলা চালিয়ে যে অসংখ্য মানুষ হত্যা করে তার সকলই ছিল সাধারণ নিরাপরাধ (সামরিক গ্যরিসনে থাকা হাতে গুনা কয়েকজন সৈন্য ব্যতিত ) । এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলো – ‘শহর’ নির্বাচন। আমেরিকানরা কিন্তু জাপানের রাজধানী টোকিওতে সেই বোমা হামলা চালায় নি। অর্থাৎ জাপানের যে শহরে ধনিক শ্রেণীর বসবাস, রাজনৈতিকদের বসবাস, যারা যুদ্ধ পরিচালনা করে, তাদেরকে অক্ষত রেখে এমন দুইটি শহর বেছে নেয়া হয়, যেখানে বসবাস ছিল শ্রমজীবী মানুষদের। এখানে মূলত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কাজ করেছিল। একটি হল শ্রেণীপ্রশ্ন দ্বিতীয়টি হলো জাপানের শ্রমজীবী মানুষের মন । সেই মন থেকে সোভিয়েত বিপ্লব বা সমাজতান্ত্রিক ভাবনা মানসকে গুড়িয়ে দেয়া।
মার্কিনিরা সেদিন এই পারমাণবিক বোমা হামলা চালিয়ে ছিল জেনেভা প্রোটোকলকে অস্বীকার করে। ১৯২৫ সালে বিশ্বের যে ১৪৬টি দেশ জেনেভা প্রোটোকলে স্বাক্ষর করেছিল, তার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ছিল। ওই প্রোটোকলে বলা হয়েছিল, সনদে স্বাক্ষরকারী দেশগুলি যুদ্ধে বিষাক্ত গ্যাস, রাসয়নিক ও জৈব অস্ত্রের ব্যবহার করবে না। এই জেনেভা প্রোটকল ভেঙে মার্কিনিরা জাপানে আক্রমন চালায়। এর কোন প্রয়োজনিয়তাই ছিলনা বলেই অনেকে মনে করেন এমন কি মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক
American Friend Service Committee ( AFSC)
স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা American Friend Service Committee ( AFSC) গত ১৬ জুলাই ২০১৪ তারিখে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলেছে
Prior to the bombings, the then Chairman of the Joint Chiefs of Staff, Admiral Leahy, advised President Truman that “a surrender of Japan can be arranged with terms that can be accepted.”
Understanding that Japan’s defeat was inevitable, in 1944 Emperor Hirohito had appointed Suzuki Kantro as Japan’s Prime Minister with the mandate to negotiate an end to the war with the United States. Japanese diplomats approached U.S. diplomats in Lisbon and the Vatican, and the OSS (the forerunner to the CIA) in Switzerland, urging a negotiated end to the war with the condition that the emperor be permitted to remain on his throne. With the Truman Administration’s commitment to unconditional surrender, these Japanese demarches were ignored.
সুত্র: Click This Link
১৯৫৭ সালে মার্কিন উদ্যোগে জাতিসংঘের অধীনে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (IAEA) গঠন করতে সমর্থ হয়। সংস্থাটির প্রধান কাজ হলো পরমাণু বিদ্যুৎ কর্মসুচির সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এমন এক নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ছাড়া অপর কোনো রাষ্ট্র পরমাণু বিদ্যুৎ কর্মসুচি থেকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির কর্মসুচিতে যেতে না পারে। একইভাবে এই এনার্জি এজেন্সি গঠন করার ফলে সারা পৃথিবীর উপর গুটি কয়েক রাষ্ট্রের যেমন আধিপত্য বজায় থাকবে তেমনি পরমাণু চুল্লি রপ্তানির ব্যবসায়ে মার্কিনি কোম্পানিগুলির বিশাল বাজার সৃষ্টি হবে। আমাদের এটা জেনে রাখা দরকার, পরমাণু চুল্লি রপ্তানির বাণিজ্যে এখনও মার্কিনিদের আধিপত্য বজায় রয়েছে। তবে এর মধ্যে রাশিয়াও যুক্ত হয়েছে । বাংলাদেশও রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে একটি পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র রূপপুরে একটি পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে ।
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের একটি কল্পিত মাষ্টার প্লান
রাশিয়ার চেরনোবিল ও জাপানের পরমানু বিদ্যুত কেন্দ্রের বিপর্যয়ের কথা কমবেশি আমরা সকলেই জানি । এ নিয়ে কথা বাড়িয়ে পোষ্ট টিকে লম্বা করতে চাইনা । তবে এ ব্যাপারে কোন মারাত্মক ক্ষতিকর দিক নিয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার জন্য অনোরোধ তো করাই যায় । পরমানু বিদ্যুত কেন্দ্রের আকস্মিক কোন বিপর্যয় ছাড়াও এর লিক হয়ে যাওয়া বর্জ হতে দুরারোগ্য কেনসার , লিউকেমিয়া এবং মারাত্মক ধরণের gastro-intestinal illnesses এর সৃস্টি হতে পারে । এটা এখন সকলেরই জানা কথা যে Atomic bomb was fueled by plutonium. Plutonium is a byproduct of civilian nuclear power plants. A typical 1,000 megawatt light water reactor produces 400-600 pounds of plutonium each year, enough to manufacture between 22 and 33 nuclear weapons. Regarded as the most toxic substance, a millionth of a gram of plutonium can cause skin cancer. If inhaled, a fragment of plutonium the size of a grain of pollen will almost inevitably cause lung cancer. If ingested, plutonium will likely result in bone or other cancers. নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট হতে এখন সহজেই নিউক্লিয়ার যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরী করা যায় যেটা ভারত ও পাকিস্তান করেছে , ইরানও চেষ্টা করছে । নিউক্লিয়ার ওয়েপন এখন ৭০ বছরের পুরাতন একটি প্রযুক্তি , ফলে পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে পি এইচ ডি করছে এমন একজন ছাত্রের পক্ষরই আনবিক যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরীর কারিগরি ডিজাইন প্রনয়ন করে দেয়া সক্ষম , শুধু লাগবে প্রয়োজনীয় অর্থ ও সম্পদ ,আর কুকাজের জন্য সম্পদের কোন অভাব হয়না এটা ভুতে জোগায় মানুষ মারার জন্য ।
তাই বলা যায় কেও আমাদেরকে শান্তি দিতে পারবেনা যতক্ষন পর্যন্ত না আমরা সচেতন হই ।
একটি প্রশ্ন থেকেই যায় বিশ্ব কি একটি পরমাণু অস্ত্র মুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারবে ?
জাপানে হিরোশিমায় আনবিক বোমা ফেলার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ পারমাণবিক বিজ্ঞানী এটা প্রতিরোধের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান বরাবর আবেদন করেছিলেন । এ-বোমা হামলার কয়েক দিনের মধ্যেই বিশ্বের সকল স্থান হতেই পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয় । জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার সম্পুর্ণভাবে বন্দের জন্য ২৪ শে জানুয়ারী ১৯৪৬ সনে প্রথম রেজল্যুশন গৃহীত হয় ।
এর পর কয়েক দশক ধরে বায়ুমন্ডলে পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য বিশ্বব্যপী আন্দোলন ঘনিভুত হয়ে উঠে এবং পারমানবিক বোমার ‘’কম্প্রিহেনসিভ টেস্ট ব্যান ট্রিটি (CTBT ) করার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, এবং অন্যান্য পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশকে বাধ্য করার জন্য চাপ দিতে থাকে ।
১৯৬৮ সালের দিকে এই জনপ্রিয় আন্দোলন দেশে দেশে অ -পারমাণবিক সরকার এবং নিউক্লিয়ার নন-প্রলিফারেশন চুক্তি (এনপিটি) (Nuclear Nonproliferation Treaty (NPT) নিগোশিয়েট করতে সক্ষম হয় । চুক্তিটি ছিল তিনটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত ১) অ -পারমাণবিক জাতি সমুহ কখনো যেন মিথ্যা শপথ এর মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশে পরিনত না হতে পারে ২) শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তি উৎপন্ন করার অধিকার প্রত্যেকের থাকবে; এবং ৩) চুক্তির ষষ্ঠ ধারা অনুযায়ী পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ গুলি তাদের হাতে থাকা পারমানবিক অস্ত্র নিস্ক্রীয় করবে । কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি এখনো পূর্ণ তা পায়নি বরং পারমানবিক অস্র তৈরীকারী দেশের সংখ্যা এবং এর মজুদ কেবল বেড়েই চলেছে ।
১৯৮০ সনে বিশ্বব্যপী জমে উঠা Halt the Nuclear Arms Race যা Freeze Movement নামে সমধিক পরিচিত ছিল তা আমিরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিগানকে রাশিয়ার সাথে পারমানবিক মারনাস্র নিস্ক্রীয় ও সীমিত করন নিগোসিয়েশনে যেতে বাধ্য করেছিল । কিন্ত এটাও পারমানবিক অস্র বিস্তারে মুলত কোন ভুমিকাই রাখতে পারেনি ।
বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দাবীর প্রেক্ষেতি the International Court of Justice (ICJ) The International Court of Justice (ICJ) is the principal judicial organ of the United Nations (UN). It was established in June 1945 ১৯৯৬ সনে পারমানবিক অস্র ব্যাবহারকে সতর্ক বানী দিয়ে একটি রুলিং জারি করে ।
The International Court of Justice (ICJ)
ICJ এর রুলিং এ বলা হয় There exists an obligation to pursue in good faith and to bring to a conclusion negotiations leading to nuclear disarmament in all its aspects under strict and effective international control । ICJ এর এডভাইজরী অপিনিয়নের উপর ভিত্তি করে ২০১৪ সনের মে মাসে মার্শাল দ্বিপপুঞ্জ সরকার সাহসিকতার সাথে ICJ এবং জাতীয় আদালতে বিশ্বের ৯টি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের বিপক্ষে এনপিটি এবং সাধারণ আন্তর্জাতিক আইন চুক্তির ধারা ভঙ্গ ও তা বাস্তবায়নে তাদের ব্যর্থতার জন্য মামলা দায়ের করে ।
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ ( ১৯৮৬ সনে পুর্ণ স্বাধিনতা প্রাপ্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দ্বীপ দেশটির লোক সংখ্যা মাত্র ৫২৬৩৪জন (২০১৩সনের আদমশুমারী)। এখানে উল্লেখ যে ১৯৪৬ সন হতে ১৯৫৮ সন পর্যন্ত শীতল যুদ্ধকালীন (Cold War) সময়ে অআমিরিকা মার্সাল দ্বিপপুঞ্জের কিছু দ্বীপে মোট ৬৭টি পরিক্ষামুলক পারমানবিক বিস্ফোরণ ঘটায় এর মধ্যে
Castle Bravo https://en.wikipedia.org/wiki/Castle_Bravo নামে সবচেয়ে বড় বোমাটির ( (১০৫০০ কেজি ওজনের ) মোট তেজস্ক্রীয় ক্ষমতা ছিল ১৫ মেগাটন যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাহৃত বোমার থেকে ৭২০০ গুনের ও বেশী ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল ।
https://en.wikipedia.org/wiki/Castle_Bravo
Castle Bravo mushroom cloud এর দৃশ্য
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের একটি এরিয়াল ভিউ
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন মিন মিনে গলায় কিছু কর্মসুচী যথা New Agenda Coalition তুলে ধরলেও তা NPT এর য়ষ্ঠ ধারা বাস্তবায়নে কোন প্রভাব রাখতে পারেনি । দুনিয়ার প্রায় ১০০টি দেশের সমন্বয়ে Intergovernmental Conferences on the Humanitarian Consequences of Nuclear Weapons আনবিক অস্র নিক্রিয়করন ও তা উৎপাদন বন্ধে দাবী তুললেও আনবিক ক্ষমতাধর ৫ টি দেশ (P-5 nuclear powers ) যথা ইউ এস এ , রাশিয়া , বি্রটোন , ফ্রান্স এবং চীনকে কোন রূপ চাপে ফেলতে পারেনি । এর সাথে ব্ঙগের ও ঠেং মেলা অবস্তার মত পাকিস্তান , ভারত , উত্তর কোরিয়া ও ইজরাইল ও যুক্ত হয় ও অআনবিক বোমা ও মিজাইল তৈরী ও মজুদ বাড়িয়েই চলে পারমানবিক বিধ্বংসী ক্ষমতার মুর্তী।
ভয়ংকর পারমানবিক বোমার অগ্নিমুর্তী
তবে ২০১৩ সনে জাতি সংঘ Open-Ended Working Group এর মাধ্যমে আনবিক মারনাস্র উংপাদন ও ব্যবহারের বিপক্ষে তাদের অবস্থন পুর্ণব্যক্ত করে এবং এ বিষয়ে বহুমুখী সুপারিশও রাখে ।
কিন্ত এর প্রয়োগ দেখা যায় শুধু উত্তর কোরিয়া আর ইরানের বিপক্ষে , বাকী সব যেন ধুয়া তুলশি পাতা ।
নিউক্লিয়ার প্রলিফিকেশন ট্রিটি (NPT) এর পর্যালোচনা প্রতি ৫ বছর অন্তর জাতি সংঘে অনুষ্ঠিত হয় । সর্বশেষ এর পর্যালোচনা হয়েছে গত এপ্রিল- মে মাসে । তাই এখন এর একটি মধ্যমেয়াদী মুল্যায়ন আবশ্যক হয়ে পরেছে । যতদুর জনা যায় এছরের এপ্রিল/ মে মাসে এর একটি মধ্য মেয়াদী মুল্যায়ন হতে পারে ।
এথানে উল্লেখ্য যে গতবছর ২৭ শে অক্টোবর ২০১৬ তে পারমানবিক মারনাস্রের উৎপাদন ও ব্যকহার বন্ধের জন্য জাতিসংঘে একটি যুগান্তকারী রেজুলেশন গৃহীত হয় ।
জাতিসংঘের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গত দুই দশক ধরে বহুপাক্ষিক পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টার পথে পক্ষাঘাতের অবসান ঘটায়
পরবর্তীতে ডিসেম্বর ২০১৬ তে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পারমানবিক মারনাস্র বন্দের লক্ষে রেজুলেশন গ্রহনের জন্য একটি ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয় ।যদিও এই ভোটাভোটির সময়ে নিম্মে দেখানো দেশগুলি নন সাপোর্টিভ http://www.icanw.org/why-a-ban/positions/ ভোট দেয় ।
Albania,Australia, Belgium, Bosnia & Herzegovina,Bulgaria, Canada, China, Croatia,Czech Republic
Estonia, France, Germany, Greece, Hungary, Iceland, India, Israel, Italy, Japan( Japan, which is the only nation ever to be attacked with nuclear weapons, voted against the UN resolution to begin negotiations in 2017 on a treaty prohibiting nuclear weapons. It claims that US nuclear weapons are essential for its security. সত্যিই বিচিত্র বটে !!! ) ।
Latvia, Lithuania, Luxembourg, Micronesia, Monaco, Montenegro, North Korea, Norway, Pakistan, Poland, Portugal, Romania, Russia, Slovakia, Slovenia, South Korea ,Spain, Turkey, United Kingdom , United States = ৩৯টি দেশ
তার পরেও জাতিসংঘে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয় যার আওতায় সকল প্রকার পারমানবিক অস্র নিষিদ্ধকরনের বিষয়ে ২০১৭ সনের জুন ও জুলাই মাসে নিউ ইয়র্কে একটি নিগোশিয়েশন আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে ।
এখানে উল্লেখ্য যে International Campaign to Abolish Nuclear Weapons (ICAN) পৃথিবীর ১০০টি দেশে ছড়িয়ে থাকা একটি বেসরকারী আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন , যারা nuclear weapon ban treaty জন্য বিশ্বব্যপী শক্তিশালী ভুমিকা রাখছে যেন ২০১৭ সনে জুন -জুলাইতে অনুষ্ঠিত সন্মেলনে পারমানবিক সমরাস্র বন্ধের জন্য একটি বৈশ্বিক এগ্রিমেন্টে পোঁছতে পারে । যে কেও এইলিংক অনুসরণ করে ICAN এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন , রাখতে পারেন পারমানবিক অস্রমুক্ত বিশ্ব গড়তে বলিষ্ট মতামত কিংবা ভুমিকা । এই পোষ্টের মুল উদ্দেশ্য এটাই । উপরে উল্লেখিত ৩৯ টি নন সাপোর্টিভ দেশের তালিকা হতে দেখা যায় বিষয়টি কতই না কঠীন হবে!!! এ সময়ে আমরা যার যার অবস্থান হতেই সোচ্চার কন্ঠে দাবী তুলতে পারি বিশ্বের সকল জাতি সত্তাই যেন মানব সভ্যতা বিধ্বংসি পারমানবিক অস্র প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে পার সমন্বিত ভাবে ।
উল্লেখ্য যে Information is power , তাই যতবেশী তথ্য আমরা জানতে পারব এবং একে অপরকে জানাতে পারব ততই আমাদের সচেতনতা বাড়বে এবং পারমানবিক মারনাস্র নিরস্রিকরনে বৈশ্বিক জনমতগঠন প্রক্রিয়াটিও শক্তিশালী হবে ।
ধন্যবাদ এতক্ষন সাথে থাকার জন্য
তথ্য ও ছবি সুত্র : সংস্লিষ্ট স্থানে উল্লেখ ও লিংক দেয়া হয়েছে
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:২২