পথ খাল বেয়ে রাতের অঁধারে ইঞ্জিন নৌকা দিতেছে সীমান্ত পাড়ি
দেশ হচ্ছে লুণ্ঠিত কেও বা বাংগালী কেও বা হচ্ছে সুদুরে দেশান্তরী
নিজের সাথীটিকে নিয়ে যাচ্ছে চণ্ডালে কেরে বাড়িঘর হতেছে দগ্ধ
নষ্ট হতেছে ইন্দ্রিয় না জানি মন আমার কোথায় গিয়ে হয় আবদ্ধ।
নিজ পরিবার নিয়ে ছিলেম সুখে লুটেরা মম ভান্ডার করে দিল শেষ
জীবিত বা মৃত এ দুটোর মাঝে আমি করিনা কোন পার্থক্য বিশেষ
কামাতুর হিংস্র হায়েনার দল শুধু মোর সোনা রুপাই করেনি লুট
মোর সাথীটিকেও করেছে অপহরণ যাকে নিয়ে ছিল মহা সুখ ।
এক দিকে জীবন রক্ষা করার সংগ্রাম অন্য দিকে ভাতের সংগ্রাম
কী দুঃসহ সংগ্রাম বুকে চেপে ধরে রেখেছি হয়ে সাধারণ মানুষ
মুষ্ঠিবদ্ধ এক মুঠো চাল আর মোটা ভাতের জন্য হাহাকার সর্বত্র
নাই জায়গা থাকার বস্তিতে গেলেও ট্যাক্স দিতে হয় বিবিধ প্রকার ।
ছেড়ে দিয়ে বস্তি তাই একাকী থাকার নিমিত্ত দুর টিলাতেই করি গমন
টিলার উপরে প্রতিবেশীহীন বসতঘর হাঁড়িতেও থাকেনা ভাত তেমন
নিত্যই মেহমান আসে ব্যাঙ হয়ে সাপকে তাই দিতে হয় কিছু বাজা
দোয়া দুধ যায়না ফেরানো বাঁটে এরা বলদ করে প্রসব অথচ গাই বাঁঝা ।
কোন মতে পাত্র ভরে দোয়াই দুধ তিন সন্ধ্যা তাও নেয় দুর্বৃত্তরা কারি
বুদ্ধিমান হয়েও দেখছি হয়ে গেলাম এক নির্বোধ নির্জনে বসবাস করি
যে চোর সেই সাধু হয়ে কর্তার মত বসে আছে মাথার এদিক সে দিক ধরি
বিপর্যস্ত উদভ্রান্তের মত প্রতিদিন শেয়াল হয়ে সিংহের সাথে যুদ্ধ করি ।
চোর সাধু , উচ্চ নীচ, ধর্ম অধর্ম , সাপ ব্যঙ শিয়াল সিংহ ইত্যাকার নিয়ে
নিয়ম কানুনের বেড়াজাল ভেঙে গড়ে উঠেছে এখনেও এক দুর্বৃত্তদের সমাজ
এ যেন সহস্রাধিক বছর পেরোনো চর্যাপদের কবিদের মতই এক নীরব আর্তনাদ
ইতিহাসের বাঁক বদলের মোহনায় এসেও আজো তা যায়নি এতটুকু হারিয়ে ।
জাতপাত সংগ্রাম, উচ্চবর্ণ নিম্নবর্ণের সংগ্রাম ব্রাহ্মণ নিগ্রহ
এমনকি শবরী বালিকাদের যৌন অত্যাচার, লুণ্ঠন, ডাকাতি
কামাচারের সে সময়ের দুঃসহ ছবি এবং তার নীরব প্রতিবাদ
চর্যাপদের দোঁহার ভিতরেও উঠে এসেছিল নিদারুনভাবে ।
বাংলার আকাশ বাতাস পথে প্রান্তরেও এর জলন্ত প্রমাণ আছে ভূরি ভূরি
ধর্ম অধর্ম স্বৈরশাসন একনায়কের বিরুদ্ধে সোচ্চারিত হয়ে সাধারণের সাথে
কবি লেখকরাও হন নির্যাতিত নিষ্পেষিত, নির্যাতিত কবিরা লাঞ্ছিত হন পথে পথে
কখনো মৃত্যুকেও করেন বরণ নির্মমভাবে দুবৃত্তের কোপানলে চাপাতির ঘায়ে ।
মনে তাই বাজে উচ্চবিত্তের বিরুদ্ধে অত্যাচারিত মানুষ লড়ে যাচ্ছে এখন যে যুদ্ধে
সেখানে নিয়ম ভেঙ্গে দোহানো দুধ গরুর বাঁটে ফের প্রবেশ করানো কি সহজ সাধ্যে
বলদের যেমন বাচ্চা প্রসব করানো সাধ্যাতিত, এদেরকে ঠেকানো টাও বেশ প্রয়াসলব্ধ
এক অসম অস্থীর বাস্তব চিত্রই এ কবিতাপদে ছোট্ট করে মেলে ধরা হল পাঠক সমাজে ।
ছবি : সুত্র নেট
অট : তিয়ান ময়ী যা সাকা হাফং বা মাদুক মোয়াল নামে পরিচিত বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা বান্দরবন জেলায় অবস্থিত দেশের সর্বোচ্চ পাহারচুড়া , উচ্চতা ৩৪৫১ ফুট । এ পাহাড় টিলা ঢালে গড়ে উঠা মুরং উপজাতি সমাজ যা দেশের মুল চিত্রেরই এক সহ- প্রকাশ এবং সহয্র বছর পুরাতন চর্যাপদ দোঁহায় বর্ণিত পাহাড় টিলায় বসবাসকারীদের সমাজ জীবনেরই এক নবপরিনতি, সেটাই এ কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩২