বিগত দশ বছরে বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে কোন বিষয়ে? আমি নিশ্চিত যে কোনো পাঠক কোনো প্রকার চিন্তাভাবনা ছাড়াই বলে দিতে পারবেন, “ইংরেজি এবং গণিত”। বাংলাদেশে বাংলা মাধ্যমের একজন শিক্ষার্থীকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতে করতে তিনটি ভাষা শিখে ফেলতে হয়। যদি গণিতকে একটি ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে সংখ্যাটি হবে চার। আমি নিজেকে যদি প্রশ্ন করি একজন ভবিষ্যৎ কৃষিবিদের বৃত্তের স্পর্শকের সূত্র জেনে লাভ কি, আমি কোনো উত্তর পাই না। “Modal verb কাকে বলে”, এই প্রশ্নের উপর একজন ভবিষ্যৎ গণিতবিদের শিক্ষাজীবন বাজি ধরারই বা যুক্তি কি? কৃৎ প্রত্যয় বা ষ-ত্ব বিধানের উপর একজন পদার্থবিজ্ঞানীর ভবিষ্যৎ কতখানি নির্ভর করে?
তেমন করে না। এবং পেশাগত প্রয়োজন পড়লে মানুষ এসব শিখে নিতেই পারে। স্কুল জীবনে পড়ে আসা এসব গভীর পাণ্ডিত্য মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় পাড় হওয়ার আগেই ভুলে যাওয়া শুরু করে। যদি সংস্কারের কথা চিন্তা করি, তবে শুরু করার সময়টা বোধ হয়ে চলে এসেছে। নিচে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হলোঃ
১। ইংরেজি ব্যাকরণকে প্রাথমিকের পর ঐচ্ছিক করে দিতে হবে। এর উপরের যে কোনো শ্রেণীর কোনো শিক্ষার্থী ইচ্ছা করলে এবং কেবল মাত্র আগ্রহ পোষণ করলে ইংরেজি ব্যাকরণ অধ্যয়ন করবে।
২। বাংলা ব্যাকরণকে অষ্টম শ্রেণীর পর ঐচ্ছিক করে দেয়া যেতে পারে।
৩। ধর্ম ও নৈতিকতা শিক্ষা সকল পর্যায়ে বাধ্যতামূলক কিন্তু পরীক্ষা বিহীন থাকবে। ধর্ম শিক্ষার উদ্দেশ্য পরীক্ষায় নকল করে পাশ করার চেয়ে আত্মিক উন্নয়ন হলে এ শিক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে।। একজন শিক্ষার্থী যখন নকল করে বা সামান্যতম হলেও দেখাদেখি করে ধর্ম শিক্ষা পরীক্ষায় পাশ করে তখন তার এ বিষয়ে বিনিয়োগকৃত সকল শ্রম ঋণাত্মক ফলদায়ক হয়।
৪। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীদ্বয় নামক বিভীষিকা দূর করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের ঠিক আগ মুহুর্তে অনেকগুলো বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞান লাভের তেমন কোনো মাজেজা দেখি না। যে মেয়েটি দু'দিন পর ডাক্তারি পড়বে তার জন্য e=mc^2 প্রমাণ করতে শেখার গুরুত্ব ঠিক কতখানি তা আমার মাথায় আসে না। এর চেয়ে আমি বরং সুপারিশ করবো এ ধরণের উচ্চতর জ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়ানো হোক। এর ফলে সময়, শ্রমও বাঁচবে, সততা এবং যোগ্যতার সাথে পাশের হারও বৃদ্ধি পাবে।
পরিশেষঃ
ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয়, শতভাগ মাধ্যমিক পাশ শিক্ষার্থীদের ইংরেজি সাহিত্যিক বা ব্যাকরণ পণ্ডিত বানানোর প্রচেষ্টাও যুক্তিযুক্ত নয়। দৈনন্দিন জীবনে এবং উচ্চতর অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়ার জন্যও আমাদের ইংরেজি ব্যাকরণের তেমন দরকার পড়ে না। হাজার হাজার মাধ্যমিকের গণ্ডি পাড় হতে না পারা বাংলাদেশী ও অন্যান্য জাতীয়তার মানুষ ইংরেজিভাষী দেশগুলোতে গিয়ে অসাধারণ ইংরেজিতে কথা বলছে, নোট লিখছে। সেখানে ইংরেজি ব্যাকরণ না পারলে একজন শিক্ষার্থী তার ছাত্রজীবনই চালিয়ে যেতে পারবে না, এটি একটি বেশ একরোখা ভুল সিদ্ধান্ত। বাংলা ব্যাকরণের বেলায়ও বলা চলে মোটামুটি একই কথা। উচ্চ মাধ্যমিকে ব্যাকরণ বিষয়গুলোতে আমরা যা পড়ে এসেছি তার প্রায় কিছুই আমাদের মনে নেই, থাকার কারণও নেই। শেখার জন্য শেখাকে আমি খুবই গুরুত্ব দেবো, কিন্তু একবারে মুখস্থ করে রাখতে হবে এবং পরীক্ষার হলে সেগুলোকে প্রয়োগ করে দেখাতে হবে, ব্যাকরণের বেলায় এমন কড়াকড়ি সবার জন্য না থাকাই উত্তম। সর্বোপরি, সব্যসাচী বানানোর যুক্তি বর্তমান পৃথিবীতে কমে এসেছে। সকলের মেধা বিকাশের সুযোগ দিতে না পারলেও কারো মেধা বিকাশের পথে বাধা না দেয়া হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৬ সকাল ১০:২২