সুখ সম্পর্কে অনেকেই তত্ত্ব দেন। কিন্তু যখন ইতিহাসের স্মরণীয় দার্শনিকরা সুখ নিয়ে কথা বলেন, তখন সেখানেই বিশ্বাস আসে মানুষের। এখানে দেখুন সেই দার্শনিকরা সুখ নিয়ে কি বলেছেন। ১. খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দের দিকেই গৌতম বুদ্ধ সুখের সন্ধান দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সুখের কোনো পথ নেই। সুখই সেই পথ'। জীবনের চলার পথই গন্তব্য তত্ত্বের সঙ্গে মেলে অনেকটা। জীবনে অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষ যে তৃপ্তি লাভ করে তাই সুখ বলে মনে করেন বুদ্ধ। এটাই জীবনের অন্তিম গন্তব্য। ২. বার্টান্ড রাসেল ১৮ শো শতকের প্রথম দিকে বলেছিলেন, 'সাবধানতার যত রূপ আছে, তার মধ্যে ভালোবাসা সত্যিকার সুখের সবচেয়ে বড় মাধ্যম'। এই গণিতের প্রেমিক, বিজ্ঞানী এবং যুক্তিবাদী সুখের সন্ধান দিয়েছেন। ৩. উনিশ শতকের দিকে বেঁচে ছিলেন দার্শনিক ফ্রেডেরিক নিৎজচে। সুখ নিয়ে তিনি বলেন, 'সুখ এমন এক অনুভূতি যা শক্তি বৃদ্ধি করে, বাধা জয় করে'। ধ্বংসবাদে বিশ্বাসী এই চিন্তাবিদের মতে, চারপাশের সবকিছুতে নিয়্ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমেই সুখ মেলে। ৪. সক্রেটিস বেঁচে ছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের দিকে। তিনি বলেছিলেন, 'সুখের গোপন মন্ত্র হলো, খুব বেশি না চাওয়া। সেই সঙ্গে কম উপভোগের বিষয়টি আয়ত্ত করতে হবে'। প্রাচীন আমলের শ্রেষ্ঠ দার্শনিকের একজন সক্রেটিস। তিনি মনে করেন, সুখ বাহ্যিক জগত থেকে আসে না। ৫. খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ অব্দের দিকের দার্শনিক প্লেটো। তিনিও সুখ নিয়ে কথা বলেছেন। 'একজন মানুষ জীবনে যা করেন, সুখ লাভ তার ওপরই নির্ভর করে। তার সুখ অন্যদের ওপর নির্ভর করে না'। সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো যে তার শিক্ষকের মতোই সুখের কথা বলবেন তা সাধারণ বিষয়। ৬. প্রাচীন গ্রিসের আরেক দার্শনিক অ্যারিস্টটল। খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দের দিকের চিন্তাবিদ তিনি। সুখ নিয়ে বলেন, 'সুখ আমাদের ওপরই নির্ভর করে'। প্লেটোর শিষ্য হিসাবে অ্যারিস্টটলও সুখের সংজ্ঞা দিতে কিছুটা নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছেন। ৭. ১৮০৬ সালে দিকের খ্যাতিমান দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল সুখ নিয়ে বলেছিলেন, 'আমি আমার চাহিদাগুলো পূরণের পরিবর্তে তা কমানোর মাধ্যমে সুখ খোঁজার পথ পেয়েছি'। তবে সুখের সংজ্ঞা দিতে তিনি প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিকদেরই পথ ধরেছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ৮. প্রাচীন চীনের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ছিলেন কনফুসিয়াস। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দের দিকে তার চিন্তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। সুখ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, 'ভালো চিন্তা নিয়ে মানুষ যত বেশি সাধনা করবে, তার বিশ্ব ততটাই সুখকর হয়ে হয়ে উঠবে'। এই দার্শনিকের সুখের চিন্তাধারা সম্প্রতি কগনিটিভ বিহেভিয়োরাল থেরাপিতে যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষকে অন্যদের চিন্তা, চেতনা, আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে বলা হয়। ৯. হিসপানিয়া খ্রিষ্টপূর্ব ৪ অব্দের দিকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন চিন্তাবিদ সেনেকা। সুখ নিয়ে তার ভাষ্য হলো, 'মানবজাতির সবচেয়ে বড় আর্শীবাদ আমাদের ধরা-ছোঁয়ার মধ্যেই রয়েছে। যা আছে তা নিয়েই তুষ্ট থাকেন একজন জ্ঞানী মানুষ। কি নেই তা নিয়ে কখনো ইচ্ছাপ্রকাশ করেন না'। ১০. চীনের আরেক দার্শনিক লাও জু। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দের দিকে চীনের নামকরা চিন্তাবিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠালাভ করেন। সুখ সম্পর্কে বলেছিলেন, 'বিষণ্ণতায় ভুগছেন মানে আপনি অতীতে বাস করছেন। শঙ্কায় আছেন মানে ভবিষ্যত নিয়ে পড়ে রয়েছেন। আর যদি শান্তিতে থাকেন তবে বর্তমানেই আছেন'। অনেকের মতে, যারা বর্তমানে যা রয়েছে তাতেই ধ্যান দেন, তবে সুখ মেলে। ১১. উনিশ শো শতকের আরেক বিশ্বখ্যাত চিন্তাবিদ সোরেন কির্কগার্ড। তিনি বলেছিলেন, 'জীবন কোনো সমস্যা নয় যা সমাধান করতে হবে। বরং এটা একটা বাস্তবতা যার অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে'। তার মতে, বর্তমানের জীবন থেকেই সুখ আসতে পারে। আর জীবনের এই যাত্রাকে উপভোগ করতে হবে। ১২. আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস-এ ১৮১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন চিন্তাবিদ হেনরি ডেভিড থোরি। সুখ নিয়ে তার মতামত হলো, 'সুখ অনেকটা প্রজাপতির মতো; এর পেছনে যত ছুটবেন, এটি ততই আপনাকে ধোঁকা দেবে। কিন্তু যখন মনোযোগ অন্য কিছুতে দেবেন, তখন তা শান্ত হয়ে আপনার কাঁধে এসে বসবে'। তিনি যেকোনো ধরনের অভ্যাস গড়ে তোলার বিপক্ষে ছিলেন। তিনি আরো বড়, মহাজাগতিক ক্ষেত্রে সুখের সন্ধান করতে চেয়েছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০১