বাংলাদেশ মানেই ভিন্নতা এবং বৈচিত্রতা। ঋতুর বৈচিত্রতা মতের ভিন্নতা পথের ভিন্নতা ধর্মের ভিন্নতা। আর এসবের হাজারো বছরের সন্নিবেশে তৈরি হয়েছে আমাদের বাংলা ভাষা সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং স্বাধীন দেশ। ফ্রান্সের এক দার্শনিক বলেছিলেন কোন সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিতে হলে তার গ্রন্থশালা, হাজার বছরে গড়ে ঊঠা সংস্কৃতি এবং শিল্পী-বিজ্ঞানী-কারিগর, লেখক-দার্শনিক এদেরকে ধ্বংস করে দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি বুদ্ধিজীবী হত্যা হত্যার কাজ ধারাবাহিকভাবে করে আসতেছে এবং আজকে বাংলাদেশে শিক্ষিত সংখ্যা বেশি হচ্ছে, কিন্তু রবীন্দ্র নজরুল সুকান্ত সত্যেন বোস, জগদীশ চন্দ্র, মাওলানা ভাসানী সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে।
জাফর ইকবাল স্যার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল বেতনের চাকরি করতেন । বিশ্ববিখ্যাত গবেষনা প্রতিষ্ঠান বেল ল্যাবরেটরিজ এর শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী ছিলেন । সেই বিশাল লোভনীয় চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশে এসে , ঢাকা থেকে অনেক দূরে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকতা করেছেন । কারণ তিনি চেয়েছেন একেবারে সাধারণ মানুষদের ছেলে - মেয়েদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত করতে । তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলতেন গল্পের ভাষায় যেমন ছোটদের জন্য লেখা আমার বন্ধু রাশেদ , বাচ্চাদের জন্য গভীর জীবন - বোধ সম্পন্ন বই লিখেছেন । তথ্য - প্রযুক্তির বিকাশের জন্য কাজ করেছেন বাংলাদেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। পাঠ্য -পুস্তকের আধুনিকায়নে নিরলসভাবে খেটেছেন । বাংলাদেশের মাটিতে এমন দেশপ্রেমিক ও কর্মবীর একজন মানুষকে ছুরিকাঘাত করা হল । এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হতে পারে না । আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন শত শত বিজ্ঞানের কল্পকাহিনী বই এবং গল্প। আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে দীপু নাম্বার টু চলচ্চিত্রের কথা। জাফর ইকবাল স্যার প্রত্যেক শিশু কিশোরদের ভালোবাসায় জায়গা করে আছেন।
অনেকেই হয়তো রাজনৈতিক দর্শনের সাথে একমত নাও হতে পারেন। কিন্তু যারা হায়নার মত বর্বরতার সাথে হিংস্র নখর দিয়ে বীভৎসতার পথ বেছে নিল, তাদের কাছ থেকে বর্বরতা ছাড়া আমাদের কিছু শিক্ষা নেই- রয়েছে ঘৃণা, রয়েছে বিক্ষোভ। আশা করি ড: জাফর ইকবাল স্যার দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন এবং বাংলাদেশ যে অপশক্তির সংক্রমনে আক্রান্ত তা থেকে আমাদের স্বদেশ মুক্তি পাবে।