তরুকে খুন করার আগে ধর্ষণ করবে নাকি ধর্ষণই করবে না এই সিদ্ধান্ত নিতে নিতে রাতুলের হঠাত মাথায় আসলো খুন করার পর ধর্ষণ করলে কেমন হয়?
রাতুল অনেকবার শুনেছে যে লাশকাটা ঘরের লোকজন নারীদের মৃত লাশকে ধর্ষণ করে।কিছুদিন আগের ঘটনা। পোস্ট মর্টেমের জন্য ৫ জন আত্মহত্যাকারী তরুণীর লাশ এসেছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে। লাশগুলোর সুরতহাল প্রতিবেদনে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, কোন ধর্ষণের আলামতও ছিল না। কিন্তু সিআইডির ল্যাবরেটরিতে ডাক্তারের পাঠানো প্রতিটি লাশের ‘হাই ভেজাইনাল সোয়াবে (এইচভিএস) ’ পাওয়া গেছে একই পুরুষের শুক্রাণু।তদন্তে বের হয় মরদেহগুলো মর্গে আসার পর সেগুলোকে ধর্ষণ করেছিলেন ডোমের এক সহযোগী।
রাতুলের মাথায় অবশ্য এই চিন্তা আসে অন্য কারণে। রাতুল চাইলেই তরুকে ধর্ষণ করতে পারবে না। মেয়েটা তার খুব কাছের মানুষ।রাতুল আর তরু পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকে অনেকদিন ধরেই। আরও সহজ করে বললে তরুদের বাসায় রাতুলরা ভাড়া থাকে।
ধর্ষণের ব্যাপারটা নিয়ে রাতুল ভাবলো এই নিয়ে তরুর সাথে আলোচনা করা যায়। রাতুল তার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই তরুর সাথে আলোচনা করেছে। তরুও করেছে তবে সেটা নিতান্তই প্রতিবেশী হিসেবে। তরু আর রাতুলের মধ্যে কোন ধরণের প্রেম নেই বলেই তারা দাবি করে। রাতুলের মা এই নিয়ে বেশ ক'বার তরুকে জেরা করেছিল। তরুর বাবাও বেশ ক'বার তরুকে বলেছে ,রাতুল একটা সাইকো । তুই ওর সাথে মিশবি না।
একবার তো রাতুলের মা তরুর বাবার সামনে জিজ্ঞেস করেছিল তরুকে ।
-তরু, মিথ্যা বলবে না। রাতুলের সাথে তোমার কি সম্পর্ক বলো?
-আন্টি, কি সম্পর্ক মানে? আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নাই।রাতুল ভাইয়াকে আমি ভাইয়া হিসেবেই দেখি।
-ভাইয়া থেকে আবার অন্য কিছু বানানোর চেষ্টা করবে না।
এরপর আরেকদিন তরু কোরান শরীফ ছুঁয়ে বলেছিল যে রাতুল ভাইয়ার সাথে তার কোন ধরণের সম্পর্ক নাই।না , তবু রাতুলের মা বিশ্বাস করতে চায় না। তার ধারণা তরুর সাথে একটা সম্পর্ক আছে রাতুলের।
রাতুলের মা কিংবা তরুর বাবা কেউই কিন্তু কখনো রাতুলকে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে নি। রাতুল শান্ত শিষ্ট ছেলে কিন্তু প্রচণ্ড বদমেজাজি। রাতুল ঘরের এমন কিছু নাই যে ভাংচুর করে নি। অনেকদিন আগে তরুর বাবা রাতুলদেরকে একটা টেলিভিশন উপহার হিসেবে দিয়েছিল- সনি ব্রাভিয়া। এত সুন্দর টেলিভিশন রাতুল কখনোই দেখে নি । অথচ মায়ের সাথে সামান্য ঝগড়ার জেরে সে টিভিটা ভেঙ্গে ফেলে সে। তাই রাতুলকে কারো কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হয় না। সবাই শুধু তরুকেই জেরা করে।
রাতুল আর তরুর মধ্যে আসলেই কোন সম্পর্ক নাই। তবে তারা ভালো বন্ধু এটা বলা যেতে পারে।তরু প্রায়ই শপিং করতে গেলে রাতুলকে নিয়ে যায়।যদিও রাতুলের খুব বেশি আগ্রহ থাকে না।রাতুল কেন জানি সবসময়ই তরুকে এড়িয়ে চলে । কিন্তু তরু এমনভাবে অনুরোধ করে রাতুল না করতে পারে না।অতি সুন্দরী রূপবতীদের এড়িয়ে চলার ক্ষমতা খুব বেশি পুরুষদের নাই।
আজকে রাতুল তরুকে অনুরোধ করবে। তরুর পছন্দ জানবে আগে।তরুর পছন্দ জানার পরই হাতের কাছে রাখা ব্লেড দিয়ে তরুর গলা কাটবে সে। ব্লেড দিয়ে কাজটা সাকসেসফুলি করতে পারবে কিনা বুঝতে পারছে না রাতুল। আসলে হাতের কাছে আর কিছু ছিল না তাই বাধ্য হয়ে নিজের ড্রয়ারে রাখা ব্লেডগুলোকে রাতুল নিয়ে এসেছে।
এই ব্লেডগুলো অবশ্য অন্য কাজের জন্য কেনা। সেই কাজ করতে গেলে মাঝেমধ্যেই রক্ত বের হয়ে যায় রাতুলের। তার মানে রাতুল চাইলেই এই ব্লেড দিয়ে তরুর গলা কেটে রক্তপাত ঘটাতে পারবে। গলা কিংবা অন্য কোথাও আঘাত করতে পারে তরুকে। সময়ই বলে দিবে কোথায় রক্তপাতের সূচনা ঘটবে। তরুকে শক্ত করে বাঁধতে হবে। যদিও তরুকে যেভাবে বেঁধেছে সেভাবে তরুর নড়াচড়া করার সুযোগ নাই।
ছাদের উপর পানির ট্যাংকির সাথে শক্ত করে বেঁধেছে তরুকে। আর তরুর মুখে তার ওড়নাটা গুজে দিয়েছে। তরু প্রায়ই রাতুলকে দেখলে এই ওড়নাটা ঠিক করতো। রাতুল ব্যাপারটায় খুব লজ্জা পেত। অথচ আজ পুরো ওড়নাটা খুলে ফেলার পরও একটুও লজ্জা পাচ্ছে না সে ।
ধর্ষণ করার ব্যাপারটা রাতুলের প্রাথমিক প্ল্যানে ছিল না। এই সিদ্ধান্ত সে হঠাতই নিয়েছে।জগতে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত হঠাতই নিতে হয়। রাতুলের ধর্ষণ করতে চাওয়ার একটা কারন হচ্ছে পত্রিকাওয়ালারা। যাতে করে পত্রিকার পাতায় শিরোনাম ছাপা হয় "ধর্ষণের পর তরুণীকে হত্যা করলো যুবক" বা এই টাইপ কিছু ।
তরুর মুখ থেকে হালকা করে ওড়নাটা খুলে রাতুল তরুকে জিজ্ঞেস করলো।
-তরু।
-জ্বী।
-তোমাকে খুন করা হবে একটু পর। তুমি জানো?
-হ্যাঁ, জানি।
-কিভাবে জানো?
-আপনার হাতে অনেকগুলো ব্লেড দেখেছি আমি।এগুলো দিয়ে নিশ্চয়ই আপনি *ল কাটবেন না ছাদের উপর?
-তুমি তো এত বিশ্রী ভাষায় কথা বলো না। কি হয়েছে তোমার?
-আপনিও তো কখনো আমার সাথে রেগে কথা বলেন নি। কিন্তু আজকে আমাকে কয়বার *গি বলেছেন?
-তুই যেই বাপের মেয়ে সেই বাপের মেয়ে *গিই হবে।
-তুই তোকারি করছেন কেন?
রাতুল এখন কথা থামিয়ে দিলো। রাতুল এর আগে কখনোই তরুকে তুই-তোকারি করে নি। আজকে সে বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। ছাদের উপর এনে তরুকে বেঁধে ফেলার পর অবশ্য একবার বলেছে রাতুল তাকে খুন করে ফেলবে।তখনই তরুকে বেশ ক'বার *গি বলেছে রাতুল। কিন্তু কেন খুন করবে তা এখনো বলে নি।
রাতুল ভাইয়ার তাকে ধর্ষণ করতে চাওয়ার ব্যাপারটা তরু এখনো জানে না। খুন করবে বলাতেও তরু একটুও বিচলিত হয় নি। তরুর ধারণা রাতুল ভাইয়া চাইলেও তাকে খুন করতে পারবে না। যে রাতুল ভাইয়া কখনো তাকে একবার বকাও দেয় নি সে কখনো খুন করতে পারে না। তরুর কাছে রাতুল অদ্ভুত একজন ভালো মানুষ। তরু রাতুল ভাইয়াকে অনেক পছন্দ করে । সেটা প্রেম কিনা তা বলা যাবে না ।
তবে, তরু যে কখনো রাতুলের প্রেমে পড়ে নি এমন না। তরু প্রায়ই রাতুলের প্রেমে পড়েছে। রাতুল অদ্ভুত সুন্দর করে ভায়োলিন বাজায়। তরু রাতুলের সেই ভায়োলিনের প্রেমে পড়েছে । রাতুল যখন ভায়োলিন বাজায় তখন তাকে অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। বারান্দার কোণে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে রাতুল মাঝেমধ্যে ভায়োলিন বাজায়।। একদিন রাতুল ভায়োলিন বাজাচ্ছিল। তরু পাশের বারান্দা থেকে রাতুল ভাইয়াকে ডাক দিলো। রাতুল কোন কথা বলে নি। রাতুল শুধু বলল, তরু,আমার প্রচন্ড মন খারাপ না হলে আমি ভায়োলিন বাজাই না। আর আমি আমার মন খারাপের সময় কাউকে পাশে চাই না। তুমি এই সময়টায় অন্তত আমাকে ডিস্টার্ভ করবে না, প্লিজ।
রাতুল কাউকে পাশে চায় না এটা সত্য নয়। সত্য হচ্ছে রাতুল তরুকে পাশে চায় না। রাতুলের মন খারাপের কারণ তরুর বাবা। বায়োলিনের করুন সুরে রাতুল নিজেকে পোড়ায় । দুঃখগুলোকে পোড়ায় । একজন কবি কবিতার শব্দে শব্দে নিজেকে পোড়ায়। একজন গায়ক তার গানে গানে তার দুঃখগুলোকে পোড়ায়। আর রাতুল পোড়ায় বায়লিনে। তরুকে একদিন এই কথা বলাতে তরু রাতুলকে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা রাতুল ভাইয়া আমি কিভাবে দুঃখ পোড়াই বলেন তো? আমি তো কিছুই পারি না। রাতুল উত্তর দিলো, তুমি নিজেই পোড়ো।
বেশ কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে রাতুল আবার তরুর মুখের ওড়নাটা টান দিয়ে তরুকে ডাক দিলো।
-তরু।
-কি বলবি বল।
-তরু, তুমি আমাকে তুই তোকারি করছো কেন?
-আপনি আমাকে তুই তোকারি করলেন কেন?
-তুই একটা **কির পোলার মেয়ে তাই করেছি।
-আপনি আমার বাবাকে নিয়ে এভাবে কথা বলছেন কেন, রাতুল ভাইয়া?
-তোর বাবা কি করেছে জানিস না?
-কি করেছে?
-সেসব তোর জেনে লাভ নাই। তোর হাতে দুইটা অপশন। তোকে যেকোন একটা বেছে নিতে হবে।
-কিসের অপশন?
-তোকে আমি ধর্ষণ করবো।এখন তুই কি খুন করার আগে সেটা চাস নাকি খুন করার পরে?
-আপনি কি বলছেন । আপনার মাথা ঠিক আছে?
রাতুল ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিল তরুর গালে। এরপর বলল, তোদের সবার কি মনে হয় আমি পাগল?
তরু কিছু বলল না। এই মুহুর্তে তরু কাঁদছে।মেয়েটার কান্না অদ্ভুত মায়াবী ।তরু প্রায়ই তার বাসার বারান্দায় বসে বসে কাঁদে। রাতুল কখনোই তরুকে তার কান্নার সময় বিরক্ত করে নি। তরুকে কখনো জিজ্ঞেস করে নি, এই তরু, কাঁদছো কেন? রাতুলের ধারণা কেউ কান্না করলে এই প্রশ্ন করা উচিত না। এই প্রশ্ন তারই করা উচিত যার জড়িয়ে ধরার অধিকার কাছে।যাতে, এই প্রশ্নটা করেই টুপ করে জড়িয়ে ধরতে পারে।
রাতুল তরুকে জড়িয়ে ধরবে কিভাবে? রাতুলের সেই অধিকার নাই। রাতুল শুধুই তরুর প্রতিবেশী। রাতুল চাইলেও তার ভেতরকার প্রতিশোধপরায়ণ মন কখনোই তরুকে জড়িয়ে ধরতে দিবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে রাতুল তরুর মুখে তার ওড়না গুজে দিতে ভুলে গিয়েছে।আশ্চর্য মেয়েটা একবারও চিৎকার করলো না কেন?
রাতুল বললো, তরু,তোমাকে মেরে ফেলা হবে, ধর্ষণ করা হবে এসব শোনার পরও তুমি বাঁচতে চাও না কেন? তুমি তো চাইলেই চিৎকার করে লোক জড়ো করতে পারো।
তরু উত্তর দিলো, রাতুল ভাইয়া আমি যদি এখন চিৎকার করি আপনি একটা বাজে অবস্থায় পড়ে যাবেন। আমি কখনো চাই নি আপনাকে বাজে অবস্থায় ফেলতে। আপনি আমাকে ভালোবাসেন না জেনেই আমি কখনো আপনাকে ভালোবাসি এই কথাটি বলি নি।
তরু রাতুলকে ভালোবাসে এই কথা রাতুল জানে। কিন্তু রাতুল কখনোই তরুর সাথে এই সম্পর্ক করতে চায় নি। তরুর বাবার প্রতি যে পরিমাণ ঘৃণা রাতুলের আছে তা দিয়ে কখনোই তরুকে ভালোবাসা সম্ভব না।
-রাতুল ভাইয়া, কি ভাবছেন?
-কিছু না।
-আপনিও কি আমাকে ভালোবাসেন?
-না।
-মিথ্যা বলছেন কেন?
-আমি মিথ্যা বলি না।
-কে বলল?
-আমি জানি আপনি মিথ্যা বলেন। আর আপনার মিথ্যাগুলো একদম মিথ্যার মতই শোনায়।
-তরু, তুমি চুপ করবে?
-আমাকে তো মেরেই ফেলবেন। আর চুপ করে কি লাভ? জীবনের শেষ সময়ে এসে ভালোবাসার কথা বলতে পারা সবার ভাগ্যে জোটে না।এই যে আমি আপনাকে বলে দিলাম এখন আমার মরে গিয়েও শান্তি। আপনি আমাকে কখন মারবেন বলে ঠিক করেছেন?
-একটু পর।
-আমার একটা শেষ ইচ্ছা রাখবেন?
-রাখার মত হলে রাখব।
-একটা না দুইটা।
-আগে শুনি।
-প্রথমটা হচ্ছে আমাদের বাসার নিচে যে বকুল গাছ আছে। এর নীচ থেকে কিছু বকুল ফুল নিয়ে আসবেন আমার জন্য।বকুল ফুল নিয়ে আসার পর আমি এর গন্ধ শুকঁবো। এরপর আপনি আমাকে মেরে ফেলতে পারেন।
-আরেকটা ইচ্ছা?
-সেটা বকুল ফুল আনলে বলব।
-এখনই বলো।
-না এখন বলা যাবে না।
-কেন?
-বলা যাবে না। আপনি তো ফোনে গেমস খেলেন। দেখেন না একটা লেভেল পার না হলে আরেকটা লেভেল আসে না? আপনি বকুল ফুল নিয়ে আসলেই পরেরটা আনলকড হয়ে যাবে। হা হা হা।
-তরু, তুমি কি আমার সাথে মশকরা করছো?
-মৃত্যুপথযাত্রীর কাছে পুরো জীবনটাই এক ধরণের মশকরা।
-আমি এখন ফুল আনতে নিচে যাব। তুমি কোন কথা বলবে না।
-আপনি নিশ্চিন্তে যেতে পারেন। আপনি বকুল ফুল আনতে গেলে আমি চুপ করে বসে থাকব। আপনার আমাকে খুন করে ফেলেন আমার তাতে আপত্তি নাই। তবে আমাকে কি একবার বলবেন কেন খুন করবেন?
-হ্যাঁ বলব। তবে বকুল ফুল আনার পর।যদিও তোমার জেনে তেমন লাভ নাই।
-তাও আমার জানতে হবে। অন্য কেউ আমাকে খুন করলে আমি জানতে চাইতাম না। কিন্তু আমার খুনির নাম যখন রাতুল তখন আমাকে জানতেই হবে।
-আচ্ছা,তোমার বাবাকে তোমার কেমন মনে হয়?
-ভালো মনে হয় না।
-কেন?
-আমার বাবা একজন বড় দুর্নীতিবাজ। আর উনার কথা বলা শুনলেই বুঝা যায় উনি কেমন।
-এই প্রথম কাউকে দেখলাম নিজের বাবার সমালোচনা করতে।
-খারাপ সবসময়ই খারাপ সেটা নিজের বাবা হোক আর যেই হোক।
-একটা ব্যাপার কি জানো? তোমার বাবা যতটুকু খারাপ তার অল্প কিছুই তুমি জানো।
-আর কি আছে?
-তুমি জানো তোমার বাবা আমার মাকে প্রায়ই ধর্ষণ করেন?
-ধর্ষণ বলছেন কেন? আপনার মা নিজের ইচ্ছায় আবার বাবার কাছে আসেন।
-তুমি যা জানো তা সত্যি নয়।
-কোনটা সত্য তাহলে?
-তোমার বাবাই আমার বাবাকে খুন করেছেন এটা জানো ?
তরু একদম হতবিহবল হয়ে গেছে এই কথা শুনে। কি বলছে রাতুল ভাইয়া এসব ! তরু জানে তার বাবা একজন দুর্নীতিবাজ । তরু জানে রাতুলের মায়ের সাথে তার বাবার এক ধরণের সম্পর্ক আছে। দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কি করবে এটা তাদের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। তরু কখনোই এতে মাথা ঘামাতে চায় নি।
রাতুল বলা শুরু করলো।
আমার বাবা যখন তোমাদের এই বাড়িতে উঠেন এরপরই তোমার বাবার আমার মায়ের প্রতি এক ধরণের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। তোমার বাবা এলাকার পাওয়ারফুল লোক। তাই বেশ কয়বার আমার মাকে কুপ্রস্তাব দিলেও এর কোন বিচার হয় নি। বরং বারবার আমার বাবাকে নানান কিছুর সাথে জড়িয়ে ঝামেলায় ফেলে। একবার তোমাদের বাসার কাজের মেয়ের সাথে আমার বাবাকে জড়িয়ে তোমার বাবা বেশ কুরুচিকর কুৎসা রটায়। এরপরই আমার বাবা আত্মহত্যা করেন। বাবা কোনদিন মাকে একবারও বলেন নি এসব। আর বাবা মারা যাওয়ার পরই তোমার বাবা আমার মায়ের একাকীত্বের সুযোগ নেন। আমার মা আমাকে বাঁচানোর জন্য সব কিছু গোপনে সহ্য করে যেতেন। একদিন কি হয়েছে শুনো । মা তোমার বাবাকে বলছে,ভাই, আমাকে আবার মাফ করে দেন। আমার ছেলেটা বড় হয়েছে। আপনার কথামত আমি সব করেছি । আমাকে এই বয়সে এসে মাফ করে দেন , ভাই। মায়ের সেদিনের কান্না আমার কান পর্যন্ত আসে । আর তখনি আমি ভাবতে থাকি কিভাবে তোমার বাবার উপর প্রতিশোধ নেয়া যায়।
তরু রাতুলকে থামিয়ে বলল , আর প্রতিশোধের সহজ লক্ষ্যবস্তু আমি ?
রাতুল কিছু বলছে না। শুধু একবার বলল, আমি নিচে যাচ্ছি তোমার জন্য বকুল ফুল নিয়ে আসতে । খবরদার তুমি এক পাও নড়বে না।
তরু রাতুলকে আশ্বস্ত করে বলল, আমি জানি আপনি আমাকে খুন করতে পারবেন না। আমি মোটেও খুন হওয়া নিয়ে চিন্তিত নই। আর যদি করেও ফেলেন আপনি আমাকে খুন করার পর ধর্ষণ করবেন । আমার জীবিত চোখ আপনার সে বিকৃত লালসা দেখতে চায় না।
রাতুল আর কিছু না বলে নিচে নামছে। সে এখন বকুল তলায় যাবে। সেখান থেকে এই মধ্যরাতে বকুল ফুল কুড়িয়ে নিয়ে আনবে । এরপর তরুকে খুন করে তার মায়ের প্রতি অন্যায়ের প্রতিশোধ নিবে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতেই রাতুল তরুদের ঘরের সামনে রক্তের চিহ্ন দেখতে পেল। একদম তাজা রক্ত । মনে হচ্ছে কাউকে মাত্র খুন করা হয়েছে। রাতুল তরুদের ঘরের ভেতর ডুকতে গিয়ে হঠাত থেমে গেল।দরজার পাশে একটা গলাকাটা মাথা। রাতুল বেশ ভয় পেয়ে গেল। অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে না মাথাটা কার।সিঁড়ির লাইটটা জ্বালাতেই বুঝতে পেল এই মাথা তরুর বাবার। রাতুল ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো । একটা বড় ছুরি হাতে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে । রাতুল তরুদের ড্রয়িং রুমের আলো জ্বালাতেই সেই মানুষটা রাতুলের দিকে তাকাল।
মানুষটা কাঁদছে। রাতুল সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল, মা এটা তুমি কি করলে? রাতুলের মা কোন উত্তর দিলো না। শুধু বলল, তরুকে ছেড়ে দে। যে অন্যায় করেছে সে শাস্তি পাক। তরু কোন অন্যায় করে নি । তুই ওকে কিছু বকুল ফুল হাতে দিয়ে চলে আয়।এরপর, আমরা মা-ছেলে পালিয়ে যাব।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১২:১৪