somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

গল্পঃ বিচার

০৮ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তাহের মিয়ার ছেলে আরিফ মেসের ম্যানেজার মঞ্জুর গায়ে হাত তুলেছে।এটুকুন একটা ছেলে মাত্র ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে আর সে কিনা পঞ্চাশাের্ধ একজনের গায়ে হাত তুলল! রীতিমতো কয়েকটা থাপ্পড় ! ম্যানেজারের গায়ে হাত তােলার পর সারা মেসে সাড়া পড়ে গেল ব্যাপারটা নিয়ে।

মেসের কয়েকজন এসে আরিফকে তাহের মিয়ার রুমেই আটক করে রাখল।দুই একজন চড় থাপ্পড় দিতে চাইলেও দেয় নি।কারণ আরিফের বাবার নাম তাহের। মেসের এই রুমের একটা সিটে উনি গত ১০ বছর যাবত বসবাস করছেন।মেসের সিনিয়র মোস্ট মেম্বার। কেউ কোনদিন উনাকে নিয়ে খারাপ কিছু বলতে পারে নি। সদা নিশ্চুপ এই মানুষটা কারো সাথে দরকার ছাড়া তেমন কোন কথাও বলেন না।অথচ উনার ছেলেকে মাত্র কয়েকমাস হলো এখানে এনেছেন আর এতেই ছেলে বাবার মুখে চুনকালি মেখে দিলো।

তাহের মিয়া এখন কাজে। স্ত্রী মারা যাওয়ার কয়েকমাস পর উনি ছেলেকে তার নানার বাড়িতে রেখে ঢাকা চলে আসেন। এমন না যে ঢাকায় এসে তিনি আবার বিয়ে করে সংসার করছেন। যদিও তাহেরের গ্রামের অনেকের ধারণা তিনি ঢাকায় আবার বিয়ে করেছেন। এর পেছনে শক্ত কোন যুক্তি নাই।

পুরুষ মানুষ একবার বউয়ের মজা বুঝলে বউ ছাড়া আর থাকতে পারে না - কি অদ্ভুত এবং বিশ্রী যুক্তি। তাহের মিয়া কাউকে কোন জবাব দেয় না। তবে জবাব দেয় শ্বাশুড়ির কাছে।

'তাহের'

' জ্বী, আম্মা'

'বিয়া শাদির দরকার পড়ছে আমগোরে জানাইতা। বুঝছি, বিয়ার দরকার হইসে খুব।পুরুষ মানুষ। আমরাই তোমারে বিয়া দিতাম। আমি তো কতবার জিগাইছিলাম কই কখনোতো বলো নাই। আর বাহিরের মানুষ আমগোরে বইলা যায় তুমি বিয়া করসো ঢাকায়।'

'আম্মা,আপনার মরা মেয়ের কসম আমি বিয়ে করি নাই'।

তাহের মিয়ার সোজাসাপটা এক লাইনের উত্তর।এই উত্তরের পর আর কিছু বলার থাকে না।

যাওয়ার সময় তাহের মুচকি হেসে বলে ,আম্মা, আপনার নাতি বড় হোক।বাপ-বেটা একই দিনে বিয়ে করব।

তাহের মিয়া শ্রমজীবী লোকদের একটা মেসে থাকেন।উনিসহ এখানে প্রায় তিরিশের বেশি মানুষ থাকেন। এরা সবাই সবার খুব আপন এবং পরিচিত লোক। এক একজন ৭, ৮ কিংবা ৯ বছর ধরে এখানে থাকেন। মঞ্জু এই মেসের ম্যানেজার। অনেকদিন ধরেই সে এই মেস চালায়। মঞ্জু যদিও ইদানীং তাহের মিয়াকে পছন্দ করতে পারছে না। গত দুই মাস ধরতে গেলে কোন টাকাই দিচ্ছেন না তাহের মিয়া। মঞ্জু টাকা চাইলে ৫০০-১০০০ টাকা দিয়ে বলেন- মঞ্জু ভাই, এই মাসে ছেলেকে ভর্তি করাতে হবে কলেজে।বুঝোই তো, একটু খরচ আছে। আগামী মাসে দিব সব একসাথে।একটু কয়টা দিন সময় দাও এই মাসে।

আগামী মাসে ছেলের বই কেনা। এটা সেটা একটা অজুহাত আছেই তাহের মিয়ার।

কিন্তু এইভাবে দুইমাস টাকা না দেয়ায় মঞ্জু মিয়া খুব বিরক্ত। তার উপর ছেলেকে নিয়ে এসেছেন মেসে। ছেলেও দুইমাস ধরে আছে এখানে। একটা "এক্সট্রা" মানুষ থাকলে তার জন্য অন্যদের অসুবিধা হয়। তাহেরের ছেলেটা মাত্র এস এস সি দিলো। এত পিচ্ছি একটা ছেলে এভাবে বড়দের মেসে থাকছে!কেমন না ব্যাপারটা?

যদিও তাহের মিয়ার রুমমেট হাফিজ এ নিয়ে কিছু বলে না। কয়েকদিনই তো! এক সাথে থাকায় জানে ছেলের জন্য আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে কত খরচ হবে তাহেরের । তাহের মিয়া ফ্লোরে ঘুমিয়ে ছেলেকে বেডে ঘুমাতে দেন। মাঝে মাঝে হাফিজের নাইট ডিউটি থাকে। হাফিজ মুচকি হেসে বলে যায়-তাহের ভাই, ফ্লোরে ঠান্ডা অনেক।আপনি আমার খাটে শোবেন। তাহের মিয়া শোয় না। তাহের ফ্লোরেই ঘুমায়। হাফিজও জানে তাহের ভাই কখনো তার খাটে শোবে না। এই লোক কখনো তার ডিস্টার্ব হতে পারে এমন কিছু করবে না।

হাফিজের ছেলে-মেয়ে আর বউ গ্রামে থাকে। আর হাফিজ এখানে এই মেসেই থাকে। ইচ্ছা থাকলেও বউ বাচ্চাদের শহরে আনতে পারে না। তাহের মিয়া হাফিজের খুব পছন্দের ব্যক্তি। হাফিজ মাঝেমধ্যে খোঁজ দেয়।অমুক-তমুক গ্রামের মেয়ের।

'তাহের ভাই, মাইয়াডা আমার বউয়ের দিকের আত্মীয়। একদম পুষ্কুনির এপার-ওপারে বাড়ি। বিয়ে হইসে মাত্র কয়েকমাস। জামাই মইরা গেলো রোড এক্সিডেন্টে। সি এন জি চালাইতে গিয়ে একদম ট্রাকের নিচে। গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ধইরা সব গেল জ্বইলা। বেচারার কিচ্ছু পাওয়া যায় নাই। আহারে মেয়েটা এত ভালো আর তার কপালে এই জুটলো।!'

এসব বলে হাফিজের কি করুণ আকুতি। মেয়েটার জন্য খারাপ লাগা। হাফিজ যোগ করে-

'তাহের ভাই, আপনার মত ভালো মানুষ এই পৃথিবীতে খুব কম আছে। আপনি রাজি হইলে আমি প্রস্তাবটা পাঠাই দেই। আমি কইলে না করতে পারবো না কেউ। জামাই এর একটা ইজ্জত আছে না?'


তাহের অনেক্ষণ হাফিজের এই বকবক শুনে। হাফিজ আরো কিছু বলতে চাইলে তাহের সবসময় উত্তর দেয়-

হাফিজ ভাই,আমার তো মা-বাবা নাই। সেই ছোটবেলা থেকেই নাই।ভাই, আমার একটা অভাব ছিল সবসময়। বাবা-মায়ের অভাব। এই অভাব যার আছে তার আর কোন অভাবের দরকার নাই।তার অভাবের লেভেল হাই! সে জগতের সবচেয়ে বড় অভাবী। হাফিজ ভাই, আমার ছেলেটার তো মা নাই। আমি আবার বিয়ে করলে আমার ছেলেটা খুব একলা হয়ে যাবে না?

তাহের মিয়ার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে হাফিজ। কি অদ্ভুত মায়া এই মানুষটার মধ্যে। চোখে-মুখে হারানোর একটা ভয় প্রতীয়মান। হাফিজ হাল ছেড়ে দেয়। আবার অনেকদিন পর চলে আসে নতুন কোন পাত্রীর খোঁজ নিয়ে।

তাহের ভাই, এই মেয়েটা আমার তমুকের আত্মীয়।
এই মেয়েটা অমুক।

তাহেরও একই কথা বারবার শুনিয়ে যায়।

সেই দুপুর থেকে আরিফ কিছু খায় নি।কিছু খায় নি বললে ভুল হবে। রুমে বিস্কুট রাখা ছিল। সেখানে বিস্কুটের বক্সে ২ পিস বিস্কুট ছিল।সেগুলাে খেয়ে নিয়েছে সে আর সাথে পানি। রুমে পানিও ছিল না।মেস ম্যানেজার মঞ্জুর সাথে আরিফের ঝামেলাটা ওই পানি আনতে গিয়েই। মঞ্জু তাহের মিয়াকে গালাগালি করেছে। আরিফ ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে নাই। টিন এজ ছেলে।রক্ত গরম। ঠাসঠাস মেরে দিলো মঞ্জুকে। মঞ্জু তখন কিছু করে নাই। সব ক্ষোভ জমা রাখলো তাহের মিয়া মেসে ফেরা পর্যন্ত।

তাহের মিয়া মেসে ফিরলেন রাত ৯ টায়। মেসে ঢুকতেই মঞ্জু মিয়ার চিৎকার- চেচামেচি। কি পোলা পয়দা করলেন মিয়া? বড়দের সম্মান দিতে জানে না?

অকস্মাৎ মঞ্জু মিয়ার এমন আচরণে তাহের কিছুই বুঝতে পারে নি।

'মঞ্জু ভাই, কোন সমস্যা?'
'সমস্যা মানে? আপনার ছেলে কি করসে জানেন? সে আমার গায়ে হাত তুলল!'

আশেপাশের রুম থেকে দুই একজন বের হয়ে আসলো।এক একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষী দিচ্ছে।

'তাহের ভাই, পোলাডারে মানুষ করতে পারলেন না।'

'তাহের, কি কইরলা জীবনে? পোলাডারে নানার বারিত রাখি নষ্ট করি ফেইললা।'

'তাহের ভাই, আপনার ছেলে এমন কাজ করতে পারে কখনো ভাবি নাই। মঞ্জু ভাই আমাদের জন্য এত কষ্ট করে আর আপনার ছেলে তাকে থাপ্পড় মারলো?'

এরকম নানান জন নানান রকম কথা বলেই যাচ্ছে। তাহের মিয়া কাউকে কিছু না বলে রুমে গেল। দেখলো আরিফ ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যেই নিজের কোমড়ের বেল্ট টা টেনে খুলে পিঠের উপর শুরু করলেন মার। ঘুমের মধ্যে ও মা গো বলে চিৎকার করে পেছনে ফেরার চেষ্টা করছে আরিফ। কিন্তু পারছে না। তাহের মিয়া একের পর এক আঘাত করেই যাচ্ছেন। এদিকে আরিফের চিৎকারে মেসের সবাই তাহের মিয়ার রুমের সামনে এসে হাজির। মঞ্জু মিয়া দৌড়ে এসে তাহের মিয়াকে আটকানোর চেষ্টা করলো।

'তাহের ভাই আর মাইরেন না। পোলাডা মইরা যাইবো।'

তাহের কারো কথা শুনছে না। কিছু বলছেও না। একের পর এক বেল্টের বাড়ি দিয়েই যাচ্ছে।


আরিফও কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না। একবার কোনভাবে আস্তে আস্তে বলল, আব্বা,আর মাইরো না।


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×