মাঝে মাঝে মনে হয় মরে গেছি। আমার মাথাটা কেমন ফাঁকা, আমার বুকটায় কি অসীম শূণ্যতা, আর দেহ তো সবসময়ই নির্জীব। এ দেহে প্রাণ হয়ত ছিল কিন্তু প্রাণের কর্মক্ষমতা ছিল না কোনদিনই। প্রাণের উৎস থেকে ঝর্ণাধারা কখনোই স্পর্শ করে নি আমার হৃদয়, আমার শরীর। আমার বুকে নেই কারো জন্য ভালোবাসার গোলাপ, কখনো স্থানও হয় নি ঘৃনার। সবটা জুড়ে শুধু অসীম শূণ্যতা। আমার নির্জীব শরীরের বয়স বাড়ে সাথে সাথে বাড়তে থাকে আমার অসীম শূণ্যতার ভার। সেই ভারে আমার বুকের পাজরে ফাটল ধরে, দিনে দিনে ফাটল বাড়তে থাকে কিন্তু কেন যেন ভেঙ্গে পড়ে না। আমার মাথাটা আজীবনই ফাঁকা, বুদ্ধির ধার আমার কোন কালেই ছিল না, ছিল না মস্তিষ্কের ওজন, সেখানে শুধু এক ফাকা ময়দান।
আমার মুখমন্ডলে নাকের ঠিক উপরে টানা টানা এক জোড়া চোখ রয়েহে জন্মের সময় থেকেই, কিন্তু তাতে দৃষ্টিশক্তি ছিল না কখনোই। আমার নির্জীব দেহের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চোখের মনিজোড়াও স্থির, সেখানে কোন প্রাণের চিহ্ন নেই, নেই মৃত্যুর ছায়া, আছে শুধুই নিস্তব্ধতা। আমার শরীরে সব অঙ্গই রয়েছে কিন্তু বাকযন্ত্রের সাথে কখনো পরিচয় হয় নি আমার। আমি কখনো চিৎকার করি নি, আধো আধো স্বরে ‘মা’ বলার ক্ষমতা আমার ছিল না, আমি কেবল এক নির্বাক মাংসপিন্ড। প্রাণ সৃষ্টির কাল থেকেই আমার স্নায়ুতন্ত্রটা ছিল বিকল। আমার জীবনে কোন কষ্টও নেই, নেই কোন সুখের স্পর্শ, আছে কেবল অনুভূতিহীনতা।
মাঝে মাঝে মনে হয় মরে গেছি। কী হবে আর এ নির্জীব দেহকে টেনে নিয়ে। আমি মুঠো ভরে ঘুমের বড়ি নেই, একটার পর একটা চালান করে দেই পেটের ভেতরে, তারপর দৃষ্টিহীন চোখ দুটোকে বন্ধ করে বিছানায় এলিয়ে দেই আমার নির্জীব শরীরটাকে আর জীবনের স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখতে যে দৃষ্টিশক্তির প্রয়োজন তা যে আমার বড্ড প্রখর।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:২৭