somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায় বঙ্গমাতা!

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিমানের পিছনের দিকটা একটু ফাকা থাকে, সে বোয়িং-৭৩৭ হোক কি ওয়াইড বডি এয়ারবাস-৪৮০। আবার বিমান বালাদেরও এক ডাকেই হাতের কাছে পাওয়া যায় পিছনে বসলে। যদিও টয়লেটের আওয়াজটা একটু ঝামেলা করে, কিন্তু একবার ঘুমিয়ে গেলে এ সমস্যা কোন সমস্যাই না। তাই অনলাইন চেক ইন করে টার্কিস এয়ারওয়েজে পিছনের দিকে বেছে নিলাম সীট। শেষবারের চেক-ইনের সময় আগে আগে এসে দাঁড়ানোতে অনেক আগেই পৌছে গেলাম গন্তব্য সীটে। হাতের ব্যাগটা উপরে গুছিয়ে রেখে সীটে আয়েস করে বসলাম। চিন্তায় ছিলাম খুব, ক্রিসমাসের সময় সব ফ্লাইটই বেশ দেরি করছিল। আমাদেরটাও প্রায় এক ঘন্টা পর যাত্রী উঠাল। এর মধ্যে পানি না খেতে পেরে তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ। পিছনে দেখলাম দুই লাস্যময়ী বিমানবালা খিলখিলিয়ে গল্প করছে; সীট থেকে উঠে তাদের কাছে গিয়ে এক গ্লাস পানি দিয়ে আমার জীবন রক্ষার জন্য অনুরোধ করলাম। আমার আবেদন পেয়ে মনে হল তারা অত্যন্ত খুশি হয়েছে। তাদের এই আচরণটা আমার কাছে বেশ জবর লাগে, সেবা যে তাদের পেশা তা তারা আচার আচরণে ভালভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম। যাহোক পানি গলায় নামিয়ে আবার ফিরে এসে বসে দেখলাম দুইটি বিশ-বাইশ বয়সের ছেলে আমার পাশের সীটে এসে বসল। চেহারায় বাঙ্গালি বলেই মনে হলো, কিন্তু ইংরেজিতে কথা বলছে। তাদের পিছন পিছন একজন মহিলাকে দেখলাম উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে; দুই একটা বাক্যালাপে বুঝলাম উনি তাদের মা। তিনি বার কয়েক আমার দিকে তাকালেন, (আমার দিকে না বলে আমার সীটের দিকে বললেই ঠিক হবে)। তবে তার দৃষ্টিতে আমি নিজে উদ্বিগ্ন হলাম না, কারন তার চেহারা দেখে নিশ্চিত হলাম খাশ বাঙ্গালী বলে। তিনি দুয়েক বার এদিক সেদিক চেয়ে আমাকে যা বললেন তাতে আমার গত বার ঘন্টা পূর্বের সকল পরিকল্পনা ও প্রয়াস একসাথে গুটিয়ে বাল্টিক সাগরে ছুড়ে ফেলল। তিনি অত্যন্ত স্পষ্ট ইংরেজি উচ্চারনে বললেন যে তিনি আমার সীটে বসতে চান। আমি বাংলায় জিজ্ঞেস করলাম তার সীট কোনটি। তিনি ইংরেজিতে উত্তর দিয়ে জানালেন সামনের দিকে। বাঙ্গালি রমণীর এরকম বর্ণচোরা আচরণে এত ক্ষন বঙ্গমাতার প্রতি যে শ্রদ্ধা ভরা আবেগ নিয়ে কথা শুনছিলাম, সে আবেগ ধীরে ধীরে ক্রোধের লাভায় রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে ভেতরে। আমি তাকে পুনরায় বাংলায় বললাম সামনের দিকে কতদূরে তার সীট। তিনি হাত দিয়ে দেখালেন তিন সারি সামনের জানালার পাশের একটি সীট এবং পুনরায় ইংরেজিতে বুঝালেন সীটটি খুব ভাল। আমি বললাম খুব কি অসুবিধা হবে, আমি তার বয়স্ক ছেলেদের দেখে রাখবো; সাথে জিজ্ঞেস করলাম তিনি বাংলায় কথা বলেন কি না। তিনি তখন চলে গেলেন এবং বিমানবালাদের গিয়ে তার যা আর্জি জানালেন তা হলো, তিনি তার দুই ‘কিডস(!)’ দের নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত তার কাছ থেকে বেশ(?) দুরে বসায়। এ অবস্থায় তারা কি কোন প্রকারে আমার আসনটি তাকে বরাদ্দ করতে পারেন কিনা! আমি অবাক হয়ে চিন্তা করতে লাগলাম, সকল আচরন বাঙ্গালি একজন সহজ সরল মাতাজীর মত। কিন্তু তিনি বাংলা বলতে এত অপারগ কেন। আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম এর শেষ দেখে ছাড়বো। মুখ শক্ত করে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম। চোখের কোন দিয়ে দেখলাম সুন্দরী এয়ারহোস্টেসটি পাশে এসে দাড়াল।
“এক্সকিউজ মি! ক্যান ইউ প্লিজ টেইক দ্যা সীট নাম্বার.........”
নাহ্। পারিনি শক্ত হতে, কারণ প্রথাগত বাঙ্গালি মন আমাকে পাথর হতে দেয় নি। মায়ের কথা চিন্তা করেই নুয়ে চলে গেলাম সামনের সীটে। শুধু একবার জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনি কি বাঙ্গালী?”
উত্তরে মহিলা কিছুই বললেন না, ভাব নিলেন ভালো করে কিছু শুনতে পান নি। যাহোক নতুন নির্দিষ্ট আসনে গিয়ে বসে বাইরে তাকিয়ে আছি, দেখছিলাম গ্রাউন্ড সার্ভিসের গাড়িগুলোর ব্যস্ত ছোটাছুটি। আবারো বাঙ্গালী নারী কন্ঠে ফুঙফাঙ ইংরেজি ভাষার শব্দ শুনে বিমানের ভিতরে তাকালাম। দেখলাম আরেকজন বাঙ্গালি নারী আসছেন এদিকে, ইংরেজদের মত উচ্চারনে কথা বলছেন তার স্বামী ও মেয়ের সাথে। স্বামী ও মেয়ের চেহারা দেখেও বাঙ্গালীই মনে হল। তার স্বামীও আশ-পাশের লোকজনের সাথে বাংলায়ই কথা বলছেন। কিন্তু মহিলাটি কোন এক অজানা কারনে ফাই-ফুই ইংরেজিতেই কথা বলছেন। বাচ্চাটা নয়-দশ বছরের হবে, ইংরেজিতেই কথা বলছে্। মহিলার কথা শুনে মনে হচ্ছিলো তিনি মনে হয় বাংলাই জানেন না। এরই মধ্যে ছোট্ট মেয়েটি একটা বড় ব্যাগ কেবিন কম্পার্টমেন্টে রাখার চেষ্ট করতে গিয়ে ভারসম্য হারিয়ে ফেলল; সাথে সাথে ইংরাজ মা চিত্কার করে তার স্বামীকে স্পষ্ট বাংলায় বললেন, “এই ওকে ধরো, ও তো পারবেনা ব্যাগটা উঠাতে”। আমার এদিকে পেট ফেটে হাসি এসে গেল, আর বুক চিরে স্বস্তির নিশ্বাস বেরিয়ে এল; এতক্ষন পরে যাহোক মাতাজীকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনলেন বিধাতা! আর হাসি আসছিলো পুরনো একটি কৌতুক মনে পড়ে। আসলে এ ঘটনা বর্ণনার পেছনে ইংরেজি ভাষাভাষি বাঙ্গালি নারীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার কথা হলো বিদেশে বসবাস করে ইংরেজি বা বিদেশী ভাষাতো অনেকই বলেন, সময় ও সুযোগ পেলে নিজের মাতৃভাষাটাকে মুখে তোলায় কি সমস্যা হয়?! বরঞ্চ এরকম করলে তো আমাদের পূর্বপুরুষদের রক্ত পণের বিনিময়ে অর্জন করা বাংলা বলার অধিকারটাকে অনেক হেয় করা হয় বলেই আমার মনে হয়। আমাদের জাতীস্বত্তা যেহেতু ভাষার উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে, তাই আমাদের ভাষাটাকে বিন্দু পরিমান হেয় করা স্বীয় বাঙ্গালী জাতীয়তাকেই হেয় করার নামান্তর! উন্নত দেশে বসবাস করে যদি নিজের শিকড় ভুলে যাই, তবে তো জীবন-মানের উন্নতির বদলে জারজ সম একটা অবস্থান অর্জন করা হল (সুপ্রিয় সেই বিদেশী ভাষায় যাকে বলে “Bastard”)। এরচেয়ে বরঞ্চ নিজদেশে নিজ পরিচয়ে “থার্ডক্লাস সিটিজেন” হয়ে বেঁচে থাকাই ঢের ভাল!
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

১. ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:৩৬

নীড় ~ বলেছেন: এয়ারবাস-৪৮০!



৪৮০ বলে কিছু নাই , হবে ৩৮০

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৪৯

লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ! ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য!

২. ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:৪৪

আহসান২০২০ বলেছেন: ভালো লিখেছেন। তবে আমি মনে করি দেশের বাইরে যে ভাষায় সহজে মত প্রকাশ করা যায় তাই ব্যবহার করা উচিত। তবে দেশী মানুষের সাথে বাংলায় বলাটাই শ্রেয়। তারপরও কাউকে তো আর জোর করে বাংলা বলায় বাধ্য করা যাবে না।

আর একখান কথা, বিমানের পিছনে তো ফাকা জায়গা দেখি নাই। একটু জায়গা থাকে ২/৩ জন বিমানবালার জন্য, যেখানে তারা খাবার প্রস্তুত করেন।

৩. ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:৪৫

সুখ নাইরে পাগল বলেছেন:

হায়রে আংরেজি প্রেম

৪. ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৭

জানা বলেছেন:



ভাল লাগলো পোস্টটি পড়ে। এইরকম মানষিকতা যে দুঃখজনক এবং লজ্জার। এইরকম দায়িত্বহীন অভিভাবকের সন্তানদের কিভাবে স্বদেশ এবং মাতৃভাষার প্রতি টান জন্মাবে? এরা বেশীরভাগ সময়ই নিজস্বতা হারিয়ে 'না ঘরে-না ঘাটের' হয়েই বড় হয়, বেঁচে থাকে। মর্মান্তিক!



এমন পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছে বহুবার। কষ্ট পাই তবে, আমিও এমন পরিস্থিতিতে নিজের ভাষায় অনড়, নাছোড়বান্দা থাকতে ভালবাসী।



ভাল থাকবেন। পোস্টে এবং মন্তব্যে দায়িত্বশীল ব্লগিং অব্যহত থাকুক।



আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নামাজের দায়ভার!

লিখেছেন জাদিদ, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:০১

'নামাজ' - শব্দটা আমার মত বেশ কিছু মানুষের জন্য বেশ বিব্রতকর। কারন একজন মুসলিম হিসাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা অনেক সময় আমরা পালন করতে পারি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে "রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ": পুনর্বাসন নাকি নতুন ষড়যন্ত্র?

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৫৬


বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে এক অনিশ্চিত ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ গত ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারিয়েছে, এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার একটা ব্যক্তিগত সমুদ্র থাকলে ভালো হতো

লিখেছেন সামিয়া, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৭


আমি এসে বসছি
নরম বালুর উপর,
সামনে বিশাল সমুদ্র,
ঢেউগুলা আমারে কিছু একটা বলতে চাইতেছে,
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।

আমার মাথার উপর বিশাল আকাশ,
আকাশের নিচে শুধু পানি আর পানি,
আমি একলা,
আমার সামনে সমুদ্রের একলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে... সাজাই এ ঘর ফুলে ফুলে ...

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল দ্বার খোল, দ্বার খোল....
বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে লাগে দোল। সাথে সাথে দোলা লাগে বুঝি আমাদের অন্তরেও। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজড ! নতুন করে ওপেন করার সুযোগ নেই......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৪৫


..বলে মনে করেন জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান। বাংলাদেশের রাজনীতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্বনামধন্য থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রধানের সাথে বৈঠকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×