somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিসেন্টলি দেখা কয়েকটা বাংলা সিনেমার অণু-রিভিউ

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তারেক মাসুদের "মাটির ময়না"

মুভির কাহিনী, লোকেশন,অভিনয় সংলাপ, চিত্রায়ন,পরিচালনা সবকিছু মিলিয়ে মাটির ময়না একটা অসাধারণ মুভি। লাস্ট কবে এরকম মুগ্ধতা নিয়ে বাংলা মুভি দেখেছি সেটা মনে করতে পারছিনা।মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগের সময়ের প্রত্যন্ত এক গ্রামের একটি পরিবারের গল্প, পরিবারের ছোট ছেলে আনুর গল্প। মুভিতে ছোট ছোট রূপক দৃশ্যে ফুটে উঠেছে ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার এবং তৎকালীন সামজিক অবস্হা। মুভিতে দুটি একস্ট্রা অরডিনারী চরিত্র আছে এক- আনুর বন্ধু রোকন, দুই- করিম মাঝি। রোকন চরিত্রে যে শিশু শিল্পী অভিনয় করেছে সে এক কথায় অনবদ্য এবং তার চরিত্রটা টোটালি অন্যরকম। পুঁথিপাঠ, নৌকা চালাতে চালাতে হালকা চালে গভীর গল্প বলা এসব নিয়ে করিম মাঝির চরিত্রটা ছিল খুব উপভোগ্য। আনুর বাবা গোঁড়া ধার্মিক হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক কাজী এবং স্বাধীনচেতা আনুর মা আয়েশা চরিত্র যেন আমাদের কুসংস্কার সমাজের মা-বাবার বাস্তব প্রতিনিধিত্ব করেছে। আনুর ছোট বোন আসমার চরিত্রটা বেশ ছোট হলেও খুব সুইট ছিল। আনুর কাকা মিলন এবং আনুর হুজুর ঈব্রাহিম হুজুর চরিত্রগুলিও মুভিতে বেশ গতি এনে দিয়েছে। মুভির মিউজিক একটু অন্যরকম হয়েছে। স্পেসিয়ালি ধর্ম এবং দর্শন নিয়ে বটতলায় দুই জন বাউল শিল্পীর গানে গানে তর্ক এবং নৌকায় জনৈক বয়াতির “শের এ খুদা আলি সাহেব গানটা।

মাটির ময়না হল এমন একটা মুভি যেটা দর্শককে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম এবং তারেক মাসুদের এক মাস্টারপিস। মাটির ময়না দেখার পর বোঝলাম তারেক মাসুদ কত উচুঁমানের নির্মাতা ছিলেন। স্যালুট তারেক মাসুদ!

রেটিং করলে আমি ১০ এ ৮ থেকে ৮.৫ দিব। এবং অবশ্যই মাস্ট সি একটা মুভি।



ফারুকির ছবি "মেইড ইন বাংলাদেশ"

আনিসুল হকের কাহিনী নিয়ে সারওয়ার ফারুকির ছবি মেইড ইন বাংলাদেশ। ছবির গল্প বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু চিল্লাচিল্লি আর গালাগালিতে ভরপুর জঘন্য সংলাপ, জঘন্য নির্মাণ শৈলী আর জঘন্য অভিনয়ে ছবির গল্পের বারোটা বেজেছে। সিনেমায় দুইভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে দেখায় শহরে বেকার খোরশেদের প্রত্যাহিক জীবন এবং তার সাথে বিদেশে স্বামী থাকা পাশের বাসার বৌদির ইটিশ পিটিশ। দ্বিতীয় অংশে দেখায় খুরশিদ আলম একটা মফঃস্বল শহরে গিয়ে ডিসি অফিসে ডিসিসহ এলাকার সব গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জিম্মি ঘটনা। এই জিম্মির কারণ খুরশিদ আলমের কিছু দাবি আছে সেগুলা সরকারকে পূরণ করতে হবে। ছবির সব শেষে দেখা যে পিস্তল আর বোমার ব্রিফকেস দিয়ে তাদের জিম্মি করেছিল তা আসল নয়, বোমা এবং পিস্তল দুইটাই নকল।

রেটিং করলে আমি ১০ এ ৪ দিব। এই মুভিটা কাউকে দেখার জন্য রিকমেন্ড করার মত না।



ফারুকীর "টেলিভিশন"

টেলিভিশন সিনামাটা ভালো লাগেনি। প্রথমত এটাকে সিনেমা মনে হয়নি, মনে হয়েছে টেলিফিল্ম দেখছি। দ্বিতীয়ত ছবিটাতে কিছু অসংগতি আছে যেগুলা চোখে পড়ার মত। পজটিভ যে ব্যাপারটা চোখে পড়ল সেটা হল-কিছু কিছু দৃশ্যের চিত্রায়ণ দারুণ হইছে আর করিম ভাইয়ের অভিনয়। তিশা নিঃসন্দহে একটা ভালো অভিনেত্রী। তবে ফারুকি সাহেবের নাটক সিনেমায় সেই ভালোটা দেখা যায় না। সেটা দেখা যায় ফারুকির নাটক সিনেমা ছাড়া তিশার অন্যান্য নাটকগুলোতে। ফারুকি সাহেব তিশা’র মত একটা ভালো অভিনেত্রীরে একি টাইপের অভিনয় করানোর মাধ্যমে একটা বৃত্তের মধ্যে বন্ধী করে রাখছেন। তিশা যদি সে বৃত্তের বাহিরে চলে না আসতে পারে, তাহলে হয়ত একদিন তিশা গুনার বাহিরে চলে যাবে।

ছবিটাকে আমি রেটিং করলে ১০ এ ৫ থেকে ৫.৫ দিব।



তৌকির আহমদের "দারুচিণী দ্বীপ"

তৌকির আহমদের দারুচিণী দ্বীপ মোটামোটি ভাল লাগছে। তবে ছবির সমাপ্তিটা যদি এরকম সুখী -সুখী না করে একটু দুঃখের করা যেত, তাহলে হয়ত দর্শকরা সিনেমা দেখার শেষে চোখ মুছে মুছে সিনেমা হল বের হত। মম’র অভিনয় ভালো লাগছে। আরেকটা প্লাস পয়েন্ট হল হুমায়ূন আহমদের কাহিনী- চিত্রনাট্য হওয়ার পরেও এই ছবিটাতে হুমায়ূন আহমদের বাজারি ম্যন্ডোটারি সিলি দৃশ্যগুলো, যেগুলা প্রায় তার নাটক সিনেমাতে দেখা যায় সেরকম দৃশ্য(একটা দৃশ্য ছাড়া) প্রায় ছিল না।

ছোট-খাট কিছু অসংগতি ছিল তারপরেও এটাকে আমি রেটিং করলে ১০ এ ৬ থেকে ৬.৫ দিব।



গিয়াস উদ্দিন সেলিমের "মনপুরা"

মনপুরা সম্পূর্ণ গ্রামবাংলার পট-ভূমিতে নির্মিত প্রেমের সিনেমা বলা চলে। তবে যেরকম উঁচু আশা নিয়ে দেখতে বসেছিলাম সেটা পুরাপুরি পুরন করতে পারেনি। এর মুল কারণ হতে পারে সিনেমা শুরু হওয়ার পর থেকে বোঝা যাচ্ছিল পরের ঘটনা কি হবে। তাই সিনেমার সাসপেন্স আর টুইস্টগুলা কেমন সাদামাটা লেগেছে। লোকেশন আর অভিনয় অনেক ভালো ছিল। তবে নায়িকার ড্রেস-আপটা কেন জানি পরিবেশ আর চরিত্রের সাথে তেমন মানায়নি, একটু বেশী গর্জিয়াস হয়ে গেছে মনে হল। সিনেমার সবচেয়ে ভালো লাগছে যেটা সেটা হল অর্ণবের মিউজিক, এক কথায় দারুণ। সোনার পালঙ্কের ঘরে গানে চন্দনা মজুমদার ও কৃষ্ণকলির কম্বিনেশনটা অসাধারণ ছিল।

অবসর সময়ে ফেমেলি নিয়ে দেখতে পারেন, আশা করি ভালো সময় কাটবে। রেটিং করলে করবো ৫.৫ থেকে ৬ দিব।



ঋতুপর্ণা ঘোষের উনিশে এপ্রিল

ঋতুপর্ণা ঘোষ নাম দেখেই দেখতে বসেছিলাম উনিশে এপ্রিল। পুরা সিনেমা দেখে পুরাই হতাশ হইছি। অপেক্ষাকৃত বেশি সফল স্ত্রী কে নিয়ে স্বামীর হীনমন্যতা, ব্যাস্ত সেলেব্রেটি মাকে না পাওয়ার অভিমান বুকে পুষে মেয়ের বড় হওয়া এবং সেটা জমিয়ে রাখা, বাবার মৃত্যুর জন্য মাকেই দোষী মনে করা, এক কথায় মা আর মেয়ে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব নিয়ে পুরা সিনেমা। তবে মা ও মেয়ের চরিত্রে অপর্ণা সেন ও দেবশ্রী রায়ের অভিনয় ভালো ছিল।
সিনেমাটা আমার কাছে বোরিং টাইপের সিনেমা লাগছে। তাই কাউকে রিকমেন্ড করবো না দেখার জন্য।

রেটিং করলে করবো ৪.৫ থেকে ৫।

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪০
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×