দর্শনার মোড় থেকে বামের রাস্তা ধরে সোজা চলে যেতে হবে ঝাড়ুমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত। সেখান থেকে ডান দিকে কিছু দূর গেলেই কাঁচা রাস্তা । সেই রাস্তা ধরে যেতে হবে । স্থানীয় লোকদের বললেই রাস্তা বলে দেবে।
আমরা যাচ্ছি। কাঁচা রাস্তা পর্যন্ত খুব সহজেই গেলাম। এরপর প্রথম মোড় এ এসে বিপত্তি। কোন দিকে যাব? যে লোক ঠিকানা বলবে তাকে মোবাইল এ পাচ্ছি না। একটু অপেক্ষা করে সোজা সামনের দিকে রওনা দিলাম। কিছুদূর যাবার পর লোকজনের দেখা পেলাম। তাদের জিজ্ঞাসা করলাম -ভূড়িখালী কোন দিকে? তারা কী, কি বলে কয়েকবার নামটা জেনে নিল। আমরা মনে মনে বললাম -গাধার পাল্লায় পরলাম নাকি। তারপর জিজ্ঞাসা করল --কার বাড়ি যাবেন? নাম বলার পর বললো ----সোজা যেয়ে প্রথম যে রাস্তা ডানদিকে গেছে সেইটা দিয়ে গেলে সামনেই পাবেন।
গাড়িতে চড়ে আবার রওনা দিলাম। তখন বাজে সকাল সাড়ে দশটা। যাই আর যাই ডানে কোন পথ নাই। পথপ্রদর্শককে মোবাইল ফোনে বার বার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। সেও বলে সামনে আসেন। যেতে যেতে বেলা দেড়টায় ডানদিকে পথ পেলাম। ডানের পথ ধরে কিছু দূর গেলাম। পথপ্রদর্শক এবারে চিন্তিত স্বরে বললো --আপনারা কোথায়? উত্তরে বললাম-- কি জানি।!
--লোকজনদের জিজ্ঞাসা করেন। লোক ধরে নাম জেনে তাকে জানালাম। সে বলে --এই জায়গা কোথায়? তার গ্রামের লোকজনদের জিজ্ঞাসা করে কয়েকজন মিলে ফোনে রাস্তার লোকেশন বলতে শুরু করলো। আমরা একবার সামনে একবার পিছনে একবার ডাইনে একবার বাঁয়ে ঘোরাঘুরি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে এক বাজারে গাড়ি থামালাম।। ড্রাইভার বললো --আপা এই বাজারে কিছু খাই, না খায়ে তো আর শক্তি পাই না।
এবার আমাদের তাড়া ড্রাইভারকে খাওয়াতে হবে । ওকে সুস্থ্য রাখতে হবে। কারন ঐ আমাদের ভরসা। ও আমাদের দুজনের জন্য দুটা কেক ও দুইকাপ চা এনে দিল। ওখানকার লোকজনদের জিজ্ঞাসা করলাম --ভাই ভূড়িখালিটা কোথায়? তারা কেউ ভূড়িখালি চেনে না।
বেলা তিনটা বাজে। বেটা ড্রাইভার যে কই গেল? কিছুক্ষন পরে এলো। রাগত স্বরে বললাম --কোথায় গিয়েছিলেন? বলে যাবেন না? আশ্চর্য! বেটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো --একটু বাইরে গিয়েছিলাম আপা। আমার সতীর্থ বললেন ---শুধু আপনার বাইরে যাবার কথা ভাবলেন আমাদের যেতে হবে তা ভাবলেন না। ড্রাইভার নিজেই ব্যাবস্থা করে দিল। একটা বাসায় নিয়ে গেল। সেখানে যেয়ে পেলাম প্রকৃতির দাকে সাড়া দেবার ব্যাবস্থা। প্রস্রাব করবার যায়গা আলাদা, পায়খানার যায়গা আলাদা। টিন দিয়ে ঘেরা। মাথার উপর ছাদ নেই। সেখানে কলপাড়ে বাঁশের বেড়ার গায়ে একটি আয়নাও ঝোলানো।

পেটের ভার কমিয়ে সতীর্থকে বললাম-- কেমন লাগলো এখানে খোলা আকাশের নিচে



বাড়ি ফিরলাম রাত আটটা। বেটা পথপ্রদর্শককে দিলাম ঝাড়ি। ----বেটা তুমি ঠিকানা বলতে পারনা তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করলা কেন? ভূড়ীখালী কেউ চেনে না পর্যন্ত। পথপ্রদর্শক মিন মিন করে বললো আপা ভূড়িখালী না ঘূড়িখাল।

(এখানে চুপি চুপি বলি আমার সতীর্থের ছবিটা দিতে আমাদের কোন আপত্তি নাই আপনাদের না থাকলে আওয়াজ দিয়েন।)
ভূড়িখালি খুঁজতে খুঁজতে আসলেই আমরা ভূড়িখালি করবার ভাল জায়গা পেয়েছিলাম যেখান থেকে আকাশ দেখা যায়।