ড্রাগন ফল। এ গাছটি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ। ক্যাকটাস পাতাটি কান্ডের কাজ করে এবং এ পাতাতেই ফল ধরে। একেকটি গাছ ৪০/৫০ বছর ফল দেয়। তাই একবার লাগালেই বহু বছর নিশ্চিন্তে থাকা যায়। গাছ লাগানোর প্রথম বছরেই ফল আসে। প্রথম এক দুই বৎসরে ফল কম হয়। তৃতীয় বছর থেকে প্রচুর ফল হয়। একটি গাছে মিনিমাম ত্রিশ কেজি ফল হয়। পাইকারী দাম কমপক্ষে কেজি প্রতি ২০০/- টাকা। সেই হিসেবে গাছপ্রতি বাৎসরিক আয় ৬,০০০/- টাকা। ৫০০ গাছে বৎসরে আয় ৩০ লক্ষ টাকা। খুচরা বাজারে ৫০০/- থেকে ১২০০/- টাকা পর্যন্ত কেজিপ্রতি বিক্রয় হয়। বীজের চারা লাগানোর চেয়ে কাটিংকৃত কলমের চারা লাগানো লাভজনক। বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য কমপক্ষে এক একর বা তিন বিঘা জমি হলে ভালো। এক শতকে ৪টি পিলারে ১২ টি গাছ লাগানো যায়। এক বিঘায় (৩০ শতাংশ) ১২০টি পিলারে ৩৬০টি গাছ লাগানো যাবে। বেলে-দোআঁশ মাটি এ ফলের জন্য উপযুক্ত। এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত লাগানো যায়। শীতকালে তিন মাস ফলন দেয় না। বছরের বাকি নয় মাসই ফলন দেয়। ফুল আসার পর ২৮/৩০ দিনের মধ্যেই ফল পুষ্ট এবং পরিপক্ক হয়ে যায়।
এ গাছ লাগাতে কিছু নিয়ম পদ্ধতি আছে। পাঁচ ফুট উচ্চতার একটি কংক্রিটের পিলারের মাথায় মটর সাইকেলের টায়ার বিশেষ কৌশলে বসাতে হয়। পিলারের গোড়ায় তিন থেকে চারটি ড্রাগন ফলের চারা লাগিয়ে দিয়ে পিলারে বেঁধে দিতে হয়। দুই ফুট বাই দুই ফুটের গর্তে হাড়ের গুঁড়া, খৈল, জৈব সার মিশিয়ে আগেই প্রস্তুত রাখতে হবে। গর্তের মাঝখানে পিলার বসবে। তিন চারটি গাছ পিলারকে আঁকড়ে ধরে বড় হয়ে টায়ারের উপর দিয়ে ছড়িয়ে ঝোপের মত হয়ে যায়। দেখতেও সুন্দর লাগে। লাল এবং সাদা এ দু'ধরনের ড্রাগন ফল বাজারে পাওয়া যায়। তবে লাল রঙের ড্রাগন ফলের দাম বেশি।
গাছ লাগানোর পর তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ ও কম। একেকটি ফল ওজনে আড়াইশ গ্রাম থেকে পাঁচশ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফলটি পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এবং তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়ক বলে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। তাই বাংলাদেশে ফলটির যথেষ্ট চাহিদা আছে। খুচরা বাজারে কেজি প্রতি দাম বার'শ টাকা পর্যন্ত ওঠে। আমাদের দেশের মাটি এই ফল চাষের উপযুক্ত হলেও অনেকেই বিষয়টি জানেন না, তাই চাষ করেন না। ড্রাগন ফল বাগানে সহায়ক ফসল হিসেবে আদাও চাষ করা যায়। বাংলাদেশ ইয়ং এন্টারপ্রেনারস নেটওয়ার্ক (বিডিইয়েন) এই ফল চাষে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, কাটিংকৃত কলমের চারা ন্যায্যমূল্যে বিক্রয়সহ পরিপূর্ণ বাগান তৈরিতে সহায়তা প্রদান করছে। তাই যদি বাণিজ্যিকভাবে ফলটি চাষে কেউ আগ্রহী থাকেন যোগাযোগ করতে পারেন। বিস্তারিত জানতে [email protected]