আমার বন্ধু খলিল। বাড়ী পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে। ভীষণ ধর্মভীরু কিন্তু শুক্রবারের নামাজটা পড়তেও নাকি তার মারাত্মক অালসেমী লাগে।
তার একটি গল্প আমার পাকিস্তানের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিল। সে যে গ্রাম থেকে এসেছে সে গ্রামে নাকি প্রায় হাজার পাঁচেক লোকের বাস। ছোটখাট শহর আর কি! পুরুষেরা বেশির ভাগই মিডলইষ্টের দেশগুলোতে কাজ করে। আর স্ত্রীরা দেশে বছর বছর কচি মুখের পয়দার মাধ্যমে জনসংখ্যার চক্রবৃদ্ধি উন্নয়নে উদার বিনিয়োগে রত। এই খলিলের মত কিছু সংখ্যাক মানুষ পড়াশুনাকে পূঁজি হিসেবে নিয়েছে।
খলিলরা একদিন সন্ধ্যারাতে ঘরে বসে তাস খেলছে। হঠাৎ বাইরে শোরগোল। খলিলরাও ঝাঁপ দিয়ে ঘরের বাইরে আসে। বেরিয়ে দেখে, কেউ রকেট লাঞ্চার, একে-৪৭, এম-১৬, গ্রেনেড নিয়ে কাউকে যেন ধাওয়া করেছে। আমি বিস্মিত হয়ে খলিলকে জিজ্ঞেস করলাম এই সব অত্যাধুনিক অস্ত্রপাতি তোমাদের কাছে থাকে। খলিল মুচকি হেসে উত্তর দিয়েছিল এগুলো প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই আছে। এর জন্য সরকারের কোন লাইসেন্স লাগে না। আমি ভীষণ অবাক হলাম। একটা সাধারন মফস্বলের লোকেদের হাতে সরকারী অনুমোদন ছাড়াই এইসব ভয়ঙ্কর অস্ত্রশস্ত্র। এ দেশ জঙ্গীর আঁতুড়ঘর হবে নাতো কি আমরা হব!!
যাহোক, খলিলকে আবার জিজ্ঞেস করলাম তা এই লোকগুলো হঠাৎ এগুলো নিয়ে কাকে ধরতে বের হয়েছে।
তার সহজ-সরল উত্তর ছিল এক ছিঁচকে চোর নাকি কার যেন শুকাতে দেওয়া কাপড় চুরি করতেছিল। সেটা এক মহিলা দেখতে পেয়েই চোর বলে চিৎকার করলে এইসব যুদ্ধাস্ত্রের দামামা।
এরপর খলিল থেকে আমি দশ হাত দূর দিয়ে চলাফেরা করেছি। আমার বুকের ছাতি কসাই মোদীর মতো ৫৬ ইঞ্চি চওড়া নয়। চোর ধরতে রকেট লাঞ্চার!! মাফ চাই!
স্বাধীনতা! আহ, স্বাধীনতা! এর স্বাদ যে বড়ই মধুর! আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরের প্রজন্ম তারা কিন্তু এই মধুরতম ব্যাপারটাকে খুব একটা উপলব্ধি করতে পারি না। যদি না আমার ভেতর থেকে এর জন্য তাড়না আসে; যদি না নিজেকে বোঝাতে পারি এর গুরুত্ব; যদি না সে কঠিনতম সময়টাকে বুঝতে চাই; তা নাহলে এই যুদ্ধটাকে স্রেফ আর দশটা বৈশ্বিক যুদ্ধের মতই মনে হবে। যার এক পক্ষ আমার জন্মভূমি; আরেকপক্ষ পাকিস্তান।
আজ একমাত্র সামরিক দিক ছাড়া বাংলাদেশ পাকিস্থানের চেয়ে সকল ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে আছে। কী অর্থনৈতিক কী সামাজিক! কী স্ট্রাটেজিক কী ডিপ্লোম্যাটিক! সকল সূচকে পাকিদের চেয়ে এই গরীব দেশটুকু এগিয়ে থাকা কম বিস্ময়ের নয়; কেন বিস্ময় বলছি তা একটু খোলাসা করা দরকার?
আয়তনে, সম্পদে, ভূ-কৌশলগত অবস্থানে, বৈশ্বিক পরিচিতিতে পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে অনেক অনেক এগিয়ে; তাহলে এমন কি বিষয় পাকিদের সাথে জড়িত হয়ে পড়ল যা তাদের এত নিরাপদ অবস্থানে থেকেও আজ বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে।
উত্তর একটাই হতে পারে, ‘নিমকহারামী’। ভাষাটা বেশ রূঢ় কিংবা আংশিক অশ্লীল শুনালেও এটাই পাকিদের পতনের নিয়ামক।
আপনি যখন আপনার কাছের জনের সাথে প্রতারণা করবেন; আপনি যখন আপনার নিজের লোকেদের অধঃস্তন করে রাখার চেষ্টায় রত হবেন; আপনি যখন আপনার আমিত্বে গরিয়ান হয়ে অন্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন; তখন মনে রাখবেন আপনার পতনের বেশি দেরী নেই; তা সে ব্যক্তির ক্ষেত্রে হোক কিংবা দলের ক্ষেত্রেই হোক কিংবা জাতির ক্ষেতেই হোক অথবা দেশের ক্ষেত্রেই হোক। পাকিরা এখনো এই দোষে চরমভাবে দুষ্ট। তাই তাদের আরো পতনের রাস্তা সামনে এখনো উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে।
আমাদের ক্ষমতাসীনরা কি উপরের লাইন কয়টি উপলব্ধি করার অবস্থায় আছে???
ছবি: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ , জাতীয় স্মৃতিসৌধে তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩২