-দোস্ত, এবারে ঈদে জাপানে যাচ্ছি।
-গতবারেও তো জাপানে গিয়েছিলি।
-হুম, গতবারে আমি জাপানে গেলেও বউ-বাচ্চা কিন্তু ইন্ডিয়াই গিয়েছিল।
-তোর পোড়া কপাল! আমেরিকা-ব্রাজিল তোর যাওয়া কখনই হল না।
-তা তোর খবর কি?
-আর খবর। অনেক দৌড়-ঝাপ করে এবার ইংল্যান্ডে যাচ্ছি।
-গুটকু ছালামের খবর পাইছিস। ও কোথায়? ব্যাটার তো বড় বড় কথা চায়না, ডেনমার্ক ছাড়া সে নাকি যাবেই না।
-তোরে কইছে। ও ব্যাটা তো এবার হুন্ডুরাসে যাচ্ছে। হা হা হা।
-যাক তাহলে পাশাপাশিই আছি। ‘দোস্ত, ফোনটা একটু হোল্ট করত। কে যেন গুতোচ্ছে?
দেখি পাশেই গলাছিলা চীনামুরগীর মতো টাক মাথার এক হ-য-ব-র-ল লোক বেশ রাগী-রাগী ভাব নিয়ে বিড়বিড় করছে।
-‘কি ভাই, সমস্যা কি? বকনা বাছুরের মতো গুতোচ্ছেন ক্যান?’-আমার চোখ-মুখ বাঁকিয়ে খেঁকিয়ে উঠা।
-সাধে কি আর গুতোই! তা মশাই এতক্ষণ ধরে আপনার ফোনে কথা শুনছিলাম। কয় পুরিয়া?
-কয় পুরিয়া মানে?
-মানে বুঝেন না। গায়ের পোশাক দেখে মনে হচ্ছে ছিয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ কবলিত মানুষ আপনি। দৈবাৎ এখনো মাঠে টিকে আছেন। আর সে কি-না জাপান-আমেরিকা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে।
-থামুন, থামুন। কি সব যা-তা বলছেন? আর আপনিই বা এসব বলার কে?
-দাঁড়ান! দাঁড়ান। আপনি যে উচ্চস্বরে পাবলিক প্লেসে দাঁড়িয়ে জাপান-আমেরিকাকে গাজীপুর টু গুলিস্তান যাত্রা বানিয়ে ছিলেন, তাতে নেহাত খাঁটি ভদ্রলোক ছাড়া আপনার হাবভাবের একটা জবাব দিতে কেউ কসুর করবে না। আমি ভদ্রর নোক নই। তাই এই গুতোগুতি।
আমার মেজাজটা গেল বেদম খারাপ হয়ে। আরে এমনিতে নানামুখি টেনশন আছি। গতরাত থেকে মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়ার ভয় নিয়ে সারারাত অপেক্ষা করে এই ঝামেলার জাপান ভ্রমণ। আর এই ব্যাটা বিনা উস্কানিতে চুলকানি শুরু করেছে। মনে মনে ঠিক করলাম, চুলকানি যেহেতু শুরুই করেছে, তাহলে একটু ভালো করেই চুলকে দেই।
-গলাছিলা টাকলু, আমি দুর্ভিক্ষের নায়ক হই, আর বুবলির নায়ক হই তা নিয়ে তোর এত মাথা-ব্যথা ক্যান। আমি রাতে জাপানে যামু, দিনে আমেরিকায় ফিরমু। তাতে তোর কী? কে তোকে আমার কথা শুনতে কইছে? তোর লম্বা গলা টেনে আরো লম্বা করে হাইপারলুপ রেলের টিউব বানামু। সেই টিউবে করে ভ্রমণে যামু। হইছে। যা ভাগ এখন!!
আমার গলাবাজিতে কিছু ভাত না ছাড়তেই কাউয়া কৌতূহলী কাজ-না-থাকলে-খই-ভাজ প্রকৃতির লোকজন জড় হয়ে গেছে। তাদের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা, ‘ঘটনা কি ভাই?’
-এককথায় তাদের বললাম, ‘ঐ ব্যাটা আমাকে গুতোচ্ছে’।
মানুষজন আমার কথার কিছু বুঝতে পারে নি। ভাবখানা এমন যে শুধু শুধু গুতোবে ক্যান।
ইতোমধ্যে আমার উচ্চবাচ্যতে ছিলাগলা মুরগী চুপ মেরে গেছে। মিনমিন করে কি যেন বলছে? আমি আরো দু-চারটা কথা বলে ঐ স্থান ত্যাগ করলাম। সন্ধ্যার আগেই বাসায় পৌঁছুতে হবে। বাচ্চা দুটো জাপানে যেতে খুবই পছন্দ করে। নাচন-কোদনের মাধ্যমে যাওয়া যায়। এতে তাদের আনন্দ দেখে আমি মজাই পাই। কিন্তু এই বউটাকে নিয়েই ঝামেলা। তাঁর একটাই আক্ষেপ তাকে আমেরিকা-ব্রাজিলে নিতে পারলাম না। আমারও কী বেদনা কম?
ক্লান্ত-বিধবস্ত মন নিয়ে সারারাত জাগা আমি ভয়ে ভয়ে বাসায় ফিরছি। জানি বাসায় ঢুকামাত্র কিম জং এর বানানো নতুন এটম বোমা গুয়ামের পরিবর্তে আমার উপর ফেলা শুরু হবে।
কলিং বেল টেপা মাত্র ধাঁই করে দরজা খুলে গেল। মনে হয় টুল নিয়ে বাচ্চাসহ বউটা দরজার পাশেই বসে ছিল। দরজা খোলার সাথে সাথেই মহাদেশীয় ব্যালেস্টিক মিসাইল মারা শুরু হল। ভাবখানা এমন যেন সবকিছু ছারখার করে দেবে।
‘ফোন ধরছ না ক্যান’? ‘আবারও জাপান নয়’। ‘কবে তোমার আক্কেল হবে আমেরিকা নেওয়ার’? ‘আরো আগে টিকিট কাউন্টারে যেতে পারো না’। ‘’একটি বারের জন্যও ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ এগুলোর টিকিট ম্যানেজ করতে পারলে না’’। চিঁউ চিঁউ গলায় বললাম, ‘গুটকু ছালামের থেকে জাপানেরটা বদলে হুন্ডুরাসেরটা নিয়ে এসেছি’।
বোমা বর্ষণ শেষ হলে ক্লান্তি দূর করতে বাথরুমে ঢুকতে যাব পিচ্চি মেয়েটা বলছে, ‘বাবা, এবারেও কি আমরা মফিজ পরিবহনের পিছনের ‘জে’ নম্বর ছিটে বাড়ি যাব’।
আমি হ্যাঁ-সূচক মাথা ঝাঁকাতেই দেখলাম দুটো বাচ্চার তিড়িংবিড়িং নাচন-কোদন। মফিজ পরিবহনে উঠার আগে মহড়া দিয়ে নিচ্ছে। মর জ্বালা!!!!!
পুনশ্চঃ এবার যে রাস্তার অবস্থা ঈদে জাপান যাত্রীর খবর আছে। কুরবানি দিতে বাড়ি যেতে গিয়ে নিজেই না কুরবানি হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩৬