somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

কোটা ব্যবস্থা সংবিধান পরিপন্থী

১৮ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যেকোন ধরণের কোটা ব্যবস্থা বা কোন বিশেষ শ্রেণীর জন্য কোন অধিকার সংরক্ষণ করা সংবিধানের পরিপন্থী। সংবিধানের পরিপন্থী আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কারো নাই। সংসদ বা নির্বাহী বিভাগ সংবিধানের পরিপন্থী কোন আইন প্রণয়ন করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং এই ধরণের আইনের কোন কার্যকারিতা নাই। তাই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সংরক্ষিত কোটায় যত আইন বা বিধিমালা প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করা হয়েছে এবং এই সব অসাংবিধানিক আইন এবং বিধিমালার অধীনে যত নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থী এবং বাতিল।

সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় (অনুচ্ছেদ নয়) কোটা বা সংরক্ষিত অধিকারের বিরুদ্ধে পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অনুচ্ছেদের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে:

১৯৷ (১) সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন ৷

(২) মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷

(৩) জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।


রাষ্ট্রের এই মূলনীতি খুব পরিষ্কার, নতুন করে ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন নাই।

সকল নাগরিক মানে হচ্ছে ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক বিশ্বাস, নারী-পুরুষ, অঞ্চল (অর্থাৎ জেলা উপজেল ইত্যাদি), উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় নিবিশেষে বাংলাদেশের সব নাগরিক।

সুযোগের সমতা মানে হচ্ছে যেকোন সুযোগ, যেমন চাকরির সুযোগ বা রাষ্ট্র আর যেসব সুযোগ নাগরিকদেরকে প্রদান করে তা সমান ভাবে সব নাগরিককে দিতে হবে। অর্থাৎ কোটা করে কোন বিশেষ শ্রেণীর জন্য অধিকার সংরক্ষিত করা যাবে না।

নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন কথার অর্থ হচ্ছে এই নীতির বিপরীত কোন আইন রাষ্ট্র করতে পারবে না।

১৯ ধারার (১) উপধারার পর আরো দুইটি উপধারা আছে অর্থাৎ উপধারা (২) এবং (৩); এই দুইটি উপধারা দ্বারা (১) উপধারার বক্তব্যকে আরো স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে।

(৩) উপধারার ভাষা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করুন। এই উপধারায় কিন্তু নারী অধিকার সংরক্ষণ করার কথা বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে "মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা"; অর্থাৎ কোন চাকরি বা সুযোগের ক্ষেত্রে মহিলাদেরকে বঞ্চিত করা যাবে না, পুরুষদের মত মহিলাদেরকেও অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে হবে।

সংবিধানের তৃতীয় ভাগ, মৌলিক অধিকার অনুচ্ছেদের ২৭ ধারায় বলা হয়েছে,

২৭। সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।

এই ধারার ভাষাও সম্পূর্ণ পরিষ্কার, বুঝতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা না। "সকল নাগরিক" বলতে কি বুঝায় তা আগেই উল্লেখ করেছি।

আইনের দৃষ্টিতে সমান এই কথার অর্থ ব্যাপক। এখানে ব্যাপক আলোচনায় না যেয়ে কোটা বা কোন অধিকার সংরক্ষণ প্রসঙ্গে বলা যায় যে কোটা ব্যবস্থা সংবিধানের ২৭ ধারার পরিপন্থী এবং সংবিধানের সুস্পষ্ট লংঘন। যখনই কোটা ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হবে তখনি নাগরিকরা আর আইনের দৃষ্টিতে সমান থাকবে না।

সংবিধানের ২৮ এবং ২৯ ধারায় সমান অধিকারের ধারণা অর্থাৎ কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আরো বিস্তারিত বলা হয়েছে:

২৮। (১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।

(২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারীপুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।

(৩) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।

(৪) নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।

২৯। (১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।

(২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।

(৩) এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই-

(ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হইতে,

(খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান-সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে,

(গ) যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে

রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।


২৮ এবং ২৯ ধারার ভাষা খুব পরিষ্কার নতুন করে ব্যাখ্যা করার কিছু নাই। তবে ২৮ ধারার (৪) উপধারা এবং ২৯ ছাড়ার (৩) উপধারা (ক) দফা নিয়ে বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য সামান্য একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে।

অনগ্রসর অংশ বলতে কোন নিদৃস্ট সম্প্রদায়কে সরাসরি উল্লেখ করা হয় নাই। নাগরিকদের মধ্যে কারা অনগ্রসর অংশ তা সরকার নির্ধারণ করবে।

প্রজাতন্ত্রের কর্ম বলতে বোঝায় সেই সকল কার্যক্রম, পদক্ষেপ এবং দায়িত্বসমূহ যা একটি রাষ্ট্রের সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গ্রহণ করে এবং সম্পাদন করে। এর মধ্যে থাকতে পারে শাসন কার্য অর্থাৎ প্রশাসন, বিচার এবং আইন প্রণয়নের কার্যক্রম, জনসেবা অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, পরিবহন এবং অন্যান্য মৌলিক সেবা প্রদান, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অর্থাৎ বাজেট প্রস্তুতি, কর সংগ্রহ, আর্থিক নীতি নির্ধারণ এবং অর্থনীতির উন্নয়ন ইত্যাদি।

তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন বলতে কোটা সংরক্ষণ বুঝায় না। তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়ন বলতে বুঝায় নাগরিকদের অনগ্রসর অংশটি যাতে তাদের অনগ্রসতা দূর করতে পারে সেই জন্য অনগ্রসর অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।

সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা না করলে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১২:০৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×