somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

দুর্নীতির মৌলিক উৎস:

০২ রা জুলাই, ২০২৪ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুর্নীতি দুইটি মৌলিক উৎস থেকে উৎসারিত হয়। একটি রাজনীতি আরেকটি ধর্ম।

প্রথমত রাজনীতি:
দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রাজনৈতিক উপাদানগুলোকে দুর্নীতি বা অসদাচরণকে আড়াল করার জন্য বা দুর্নীতি করার উপায় বা কার্যসিদ্ধির পন্থা হিসাবে ব্যবহার করে।

১. দেশপ্রেমের অপব্যবহার:
দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যখন সমস্যায় পড়ে বা তাদের অবৈধ ক্রিয়াকলাপ রক্ষা করার প্রয়োজন হয় তখন তারা দেশপ্রেমিক হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করে যেমন স্বাধীনতার পক্ষ-শক্তি, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী ইত্যাদি। এই দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাদের দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য এবং সাধারণ মানুষের মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে দেয়ার জন্য দেশপ্রেমের বাণী প্রচার করতে থাকে। পরিষ্কার মনে রাখবেন যে ব্যক্তি দুর্নীতি করে সে দেশপ্রেমিক তো নয় ই বরং দেশের শত্রু।

২. নৈতিক দেউলিয়াত্ব:
দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিটি যখন তার দুর্নীতির করার পিছনে কোন নৈতিক যুক্তি খুঁজে পায় না অর্থাৎ নৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে যায় তখন শেষ আশ্রয় হিসাবে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইত্যাদিতে ব্যবহার করতে থাকে। সে যখন বুঝতে পারে মানুষের কাছে তার আচরণের কোন বৈধ ন্যায্যতা নাই, মানুষ তাকে ঘৃণা করছে, তখন মানুষের সমর্থন বা সহানুভূতি অর্জনের শেষ চেষ্টা হিসাবে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইত্যাদি আপ্তবাক্য ব্যবহার করতে থাকে।

৩. অন্ধ জাতীয়তাবাদ:
দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি বা দল তাদের দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যধিক বা অন্ধ জাতীয়তাবাদের প্রচার করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড আড়াল করার চেষ্টা করে। অর্থাৎ অন্ধ জাতীয়তাবাদ অনৈতিক আচরণের মুখোশ হিসাবে কাজ করে। এই ভাবে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা সাধারণ জনগণের দৃষ্টিকে আড়াল করে দুর্নীতির পক্ষে সমর্থন আদায় করে নেয়।

৪. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
শুধু কোন একটি নিদিষ্ট দেশে নয় বরং দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিটা দেশে, সমাজে এবং ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা দেখা যায়। তাই অষ্টাদশ শতাব্দীতে স্যামুয়েল জনসন বলেছিলেন, "দেশপ্রেম হল একজন খারাপ ব্যক্তির শেষ আশ্রয়স্থল" ।

দ্বিতীয়ত ধর্ম:
১. মাফ চাইলে সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে:
দরবারী আলেমরা সব সময় অপপ্রচার করে যে একজন ব্যক্তি যত গুনাহই করুক না কেন আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে আল্লাহ মাফ করে দিবেন। এই অপব্যাখ্যা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অধিকাংশ মানুষ নির্দ্বিধায় দুর্নীতি করতে থাকে। কারণ সে বিশ্বাস করে যত অপকর্মই সে করুক না কেন আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে আল্লাহ মাফ করে দিবেন। অতএব দুর্নীতি করতে ভয় কি সে?

২. হজ করলে অতীতের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে:
দরবারী আলেমরা এই অপব্যাখ্যা সবসময় অপ্রচার করে যে হজ করলে অতীতের সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। এই অপব্যাখ্যা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক মানুষ এমন কি হজে যাওয়ার টাকাটাও দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করে। এমন কি এই কথা কিছু লোক এমন অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে যে সে হজে যাওয়ার আগে দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে দেয়।

৩. দান করলে বা ভাল কাজ করলে অতীতের সব গুনাহ এবং পাপ মাফ হয়ে যাবে:
এই অপব্যাখা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেক মানুষ নির্দ্বিধায় দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে। তারা অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ থেকে কিছু অংশ দান খায়রাত, মন্দির, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এতিমখানা ইত্যাদি নির্মাণ কাজে ব্যয় করে মনে করে যে তারা দুর্নীতির অপরাধ এবং দায় থেকে মুক্ত হয়ে গেছে। তারপর আবার দুর্নীতি আবার দানখয়রাত এই ভাবে সারা জীবন চলতে থাকে।

৪. ধর্মকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করা:
অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকে আড়াল করার জন্য ধর্মকে বর্ম হিসাবে ব্যবহার করে। কোন ধর্মের কোন ধর্মীয় পোশাক না থাকা সত্ত্বেও তারা কোন একটা পোশাককে তাদের ধর্মীয় পোশাক হিসাবে প্রচার করে। তারপর দুর্নীতি করে সেই ধর্মীয় পোশাকের আড়ালে লুকিয়ে পরে এবং ধর্মীয় পোশাকের আড়ালে নির্দ্বিধায় দুর্নীতি করতে থাকে।

সারসংক্ষেপ:
নিঃসন্দেহে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির কোন দেশপ্রেম নাই, এবং কোন ধর্ম নাই। যে ব্যক্তি দুর্নীতি করবে সে মুখে যাই বলুক বা যে বেশভূষা ধারণ করুন না কেন সেই ব্যক্তি সেই দেশের, সমাজের, মানুষের এবং ধর্মের শত্রু।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২৪ রাত ১২:৩৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×