somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

আলি বাবা এবং চল্লিশ চোর:

২৬ শে জুন, ২০২৪ সকাল ৭:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যখন বিশ্ব মুসলিমরা গাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিক্ষোভ করছে এবং আমেরিকার মুসলিমরা বিক্ষোভের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে বাইডেনকে পরাজিত করার কৌশল আঁটছে তখন আমেরিকার নেতৃত্বে ফিলিস্তিন সহ আরব রাষ্ট্রগুলি যুদ্ধোত্তর ফিলিস্তিন (পশ্চিম তীর এবং গাজা) কাদের দ্বারা এবং কি ভাবে শাসিত হবে তা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করছে।

এই ধরণের আলোচনার ধারাবাহিকতায় গত ২৯ এপ্রিল রিয়াদে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সাইড লাইনে সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সভাপতিত্বে একটা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ঐ বৈঠকে সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান, কাতার, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এবং ফিলিস্তিনি মন্ত্রী হুসেইন আল-শেখ, যিনি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সবচেয়ে নিকটতম ব্যক্তি, উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল গাজা সহ যুদ্ধোত্তর ফিলিস্তিনের জন্য একটা ঐক্যবদ্ধ কৌশল নিয়ে আলোচনা করা।


আমেরিকা এবং আরব দেশগুলি দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি দমন এবং শাসন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষে চাপ দিয়ে আসছে। বৈঠকে এক পর্যায়ে ফিলিস্তিনি মন্ত্রী হুসেইন আল-শেখ দুর্নীতি দমন এবং সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আমেরিকা এবং আরব দেশগুলির অনুরোধ অনুসারে সংস্কার বাস্তবায়ন এবং একটি নতুন সরকার গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু এই ব্যাপারে পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তার অভাব রয়েছে।

ফিলিস্তিনি মন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যে দুর্নীতি দমন এবং সংস্কারের ব্যাপারে সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতার অভাব রয়েছে এই বলে ফিলিস্তিনি মন্ত্রীর বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেন। আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনি নেতৃত্বকে "আলি বাবা এবং চল্লিশ চোর" হিসাবে উপহাস করেন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা "অকেজো, অথর্ব, অযোগ্য" বলে উল্লেখ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, মৌলিক সংস্কার ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত কেন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সমর্থন করবে।

আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনি মন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে তা কেউ আপনাদেরকে বলে দিবে না।


আরবদের স্বভাব অনুসারে যখন আনুষ্ঠানিক আলোচনাটি কলহে রূপান্তরিত হয় তখন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ দুই পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা হিসাবে বলেন যে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ যেকোনো সংস্কারের জন্য সময় লাগে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। বৈঠকটি ইতিমধ্যেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। উভয় পক্ষ একে অপরের প্রতি ক্রুদ্ধ ভাবে চিৎকার করছিল, কোন কথা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছিলো না। এই পর্যায়ে আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সভা কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান আল-সাফাদিও মিটিং ত্যাগ করে বাইরে চলে যান। দুই আরব মন্ত্রীর মাথা ঠাণ্ডা হলে কয়েক মিনিট পরে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবার বৈঠকে ফিরে আসেন। এই ঝগড়াঝাঁটির সময়টাতে সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন নীরবে বসে ছিলেন। বৈঠকে ফিরে এসে আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরবদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জন্য সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেনের কাছে ক্ষমা চান ।

একজন আমিরাতি কর্মকর্তা ঘটনাটি স্বীকার করে বলেছেন যে, মহামান্য প্রেসিডেন্ট পরামর্শ দিয়েছেন যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ যদি ইসরায়েলের সাথে নিরাপত্তা সমন্বয়ের জন্য তার জনগণের স্বার্থের প্রতি মনোযোগ দেয়, তাহলে ফিলিস্তিনিরা অনেক ভালো অবস্থায় থাকবে। তবে ফিলিস্তিনি মন্ত্রী এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট এই ঘটনার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।

এই ঘটনার পটভূমি হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রকাশ্যে এবং অধিকাংশ আরব রাষ্ট্র অপ্রকাশ্যে বা গোপনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সাথে নানা বিরোধে জড়িয়ে আছে। আগে এই ধরণের ঘটনা প্রকাশ্যে না ঘটলেও আরব রাষ্ট্রসমূহের এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনা, ব্যক্তিগত এবং নীতিগত পার্থক্যের কারণে এই ধরণের বিরোধ এবং ঝগড়া এখন প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ (এমবিজেড) এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মধ্যে বিরোধের তীব্রতা বাড়ার কারণে তাদের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছে।

এমবিজেড-এর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা, মোহাম্মদ দাহলান, প্রেসিডেন্ট আব্বাসের একজন ঘোরতর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। এই উপদেষ্টার কারণে প্রেসিডেন্ট আব্বাস সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি আস্থাহীন। অন্যদিকে আমিরাত দীর্ঘ দিন ধরে প্রেসিডেন্ট আব্বাস ও ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে।

২০২০ সালে আমিরাত ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরে সম্পর্কের এই তিক্ততার কারণে ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে সমালোচনা করে।

প্রেসিডেন্ট আব্বাসের সাথে মতবিরোধের কারণে মুহাম্মদ আশতিয়া ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পদত্যাগ করেন। প্রেসিডেন্ট আব্বাস তার প্রতি অনুগত মোহাম্মদ মুস্তাফাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন। মোহাম্মদ মুস্তাফা আব্বাসের প্রতি যেমন অনুগত তেমনি আমিরাত বিরোধী হিসাবেও পরিচিত। আমিরাত সরকার বাইডেন প্রশাসনের কাছে লবি করেছিল যাতে প্রেসিডেন্ট আব্বাস মোহাম্মদ মুস্তাফাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ না দেয় সেই ব্যাপারে চাপ প্রদান করে। আমিরাত সরকার চেষ্টা করেছিল প্রাক্তন ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী সালাম ফায়াদকে আবারো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেয়ার জন্য। কারণ সালাম ফায়াদ আব্বাস বিরোধী হিসাবে পরিচিত।

ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আরবদের গোত্রগত বিরোধগুলি বড় প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করে। কিন্তু আলী বাবা এবং চল্লিশ চোরেরা এইগুলি গোপন করে বা জিইয়ে রাখে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২৪ রাত ৯:২৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×