somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোহাম্মদ আলী আকন্দ
আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

প্রাকৃতিক ছন্দের দ্বারা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আশা এবং শক্তির আবিষ্কার

২৪ শে জুন, ২০২৪ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবন উত্থান এবং পতনের একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য। এখানে বিজয়ের মুহূর্তগুলি সংগ্রামের সময়ের সাথে জড়িত থাকে। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে মানসিক অশান্তির কারণে বিজয়ের ছবিটা দেখা যায় না। দুঃসময়ে প্রকৃতি হতে পারে অনুপ্রেরণা এবং শক্তির উৎস। প্রকৃতির অমোঘ চক্র আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সব অসুবিধা এবং ঝড়ঝঞ্ঝা অস্থায়ী। প্রকৃতিতে অসুবিধার পরেই আসে প্রশান্তি। প্রকৃতির এই নিয়ম মনে রাখলে জীবনের সবচেয়ে খারাপ মুহূর্তেও মানুষের মধ্যে সহ্য করার এবং আশা খুঁজে পাওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

সব কিছু অস্থায়ী এটাই প্রকৃতির শিক্ষা:

প্রকৃতির পুনরাবৃত্ত বা চক্রাকারে ঘুরার নিদর্শনগুলি বুঝতে পারলে জীবনের প্রতিকূলতা সম্পর্কে হতাশা দূর হবে। একটি ঝড় প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে পৃথিবীর উপর আঘাত করে সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দেয়। ঝড়ের মুহূর্তে মনে হয় এই ঝড় বুঝি কোন দিন থামবে না, সব কিছু শেষ করে দিবে। কিন্তু একসময় ঝড় থেমে যায়। তেমনি ব্যক্তি জীবনের ঝড়ও একসময় থেমে যায় এবং শান্তি ফিরে আসে। ঝড়ের সময় প্রকৃতি যেমন ঝড় থামার জন্য অপেক্ষা করে ব্যক্তি জীবনেও দুঃসময়ে সুসময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মানুষ প্রকৃতি থেকে জীবনের ঝড় মোকাবেলার শক্তি ও সাহস পেতে পারে।

ব্যথা ক্ষণস্থায়ী:

প্রকৃতির শিক্ষা হল যে কোন ব্যথা চিরস্থায়ী নয়। ঝড়ে প্রকৃতি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলেও সময়ের সাথে প্রকৃতি আবার ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে। প্রাকৃতিক ঘটনার মতই মানুষের মানসিক কষ্টও সময়ের সাথে আবদ্ধ। যদিও দুঃখ এবং হতাশা গভীর বেদনাদায়ক তবুও এইগুলি স্থায়ী নয়। সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলি জোয়ার ভাটার মত উন্মীলিত এবং নিমীলিত হতে থাকে। সময়ের সাথে ধীরে ধীরে তীব্রতা হ্রাস পায়। প্রকৃতির এই শিক্ষা তীব্র যন্ত্রণার সময় মানুষের মনে সান্ত্বনার আলোকবর্তিকা হিসাবে কাজ করে। মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে যন্ত্রণা বা অসুবিধা থেকে নিষ্কৃতি, রক্ষা বা মুক্তি সমানে অপেক্ষা করছে।

জীবনের চক্রকে মেনে নেয়া:

জীবন পরিবর্তনশীল ঋতুচক্রের মত। প্রতিটা ঋতু প্রকৃতিতে অনন্য চ্যালেঞ্জ এবং আশীর্বাদ নিয়ে আসে। বসন্ত যেমন নতুন করে শুরু করা এবং বৃদ্ধির প্রতীক, গ্রীষ্ম উষ্ণতা এবং প্রাচুর্যের প্রতীক, বর্ষা নতুন করে জেগে উঠা, প্রাচুর্য এবং জন্মের প্রতীক, শরৎ পরিবর্তন এবং প্রস্তুতির প্রতীক এবং শীতকাল হচ্ছে বিশ্রামের প্রতীক। প্রকৃতির এই চক্র মনে রাখলে জীবন চক্র বোঝা সহজ হয়ে যাবে।

একটি নতুন দিন একটি আশার প্রতীক:

রাত থেকে দিনে পরিবর্তন আবার দিন থেকে রাতের পরিবর্তন প্রকৃতির আরো একটি চক্র। এই চক্রটি মানুষের আশা এবং নতুন করে শুরু করার প্রতীক। রাত যতই দীর্ঘ এবং অন্ধকার হোক না কেন ভোর হবেই। ভোর হওয়ার সাথে সাথে আলো ধীরে ধীরে প্রস্ফুটিত হতে থাকে এবং জীবনের আরো একটি নতুন যাত্রা শুরু হয়। এই সহজ কিন্তু গভীর ঘটনাটি মানুষের জীবনে একটি শক্তিশালী অনুস্মারক। অর্থাৎ দিনরাতের এই চক্র মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে অন্ধকার সময়েও উজ্জ্বল দিনগুলি সামনে অপেক্ষা করছে। প্রকৃতির এই দিনরাতের চক্রটা অনুধাবন করতে পারলে জীবনের সত্যকে আলিঙ্গন করা সহজ হয়ে যায়। এটা ভেবে মানুষ তার জীবনের কঠিন সময় সহ্য করার শক্তি যে কষ্টের পর রয়েছে শান্তিময় স্বস্তি।

প্রকৃতির প্রতীক থেকে শিক্ষা:

প্রকৃতি মানুষের জন্য অনেক উদাহরণ প্রতীক হিসাবে উপস্থাপন করেছে। এই উদাহরণগুলি অনুসরণ করলে মানুষ ভাল এবং খারাপ উভয় সময়ে করণীয় কাজটি করতে পারবে। প্রকৃতিতে বাতাসে গাছগুলি দোলতে থাকে এবং অনেক সময় বাঁকা হয়ে যায় কিন্তু ভেঙ্গে পরে না। গাছের এই স্থিতিস্থাপকতা থেকে দুঃসময়ে না ভেঙ্গে কি ভাবে টিকে থাকা যায় তার শিক্ষা পাওয়া যায়। একইভাবে অস্তগামী সূর্য নেমে আসার সাথে সাথে একটি সোনালী আভা ছড়িয়ে পরে এটা শান্তির প্রতিনিধিত্ব করে যা সারা দিনের কঠোর পরিশ্রমের পর বিশ্রামের আনন্দ বয়ে আনে। প্রাকৃতিক এই প্রতীকটা বুঝতে পারলে প্রশান্তি এবং আশ্বাসের একটি গভীর অনুভূতি সৃষ্টি হয়।

সহ্য শক্তি এবং ধৈর্য ধারণ করা:

মানুষ যদি জীবনের মধ্যে প্রাকৃতিক ছন্দকে বোঝতে পারে তাহলে তার সহ্য শক্তি এবং ধৈর্য ধারণ বৃদ্ধি পায়। মানুষের মধ্যে সহ্য শক্তি এবং ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা আসে প্রকৃতির স্থিতিস্থাপকতার, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার এবং পরাস্ত করার ক্ষমতাকে অনুধাবন করার মাধ্যমে। নিরাময় এবং ভাল অবস্থা ফিরে আসতে সময় নেয়। বিপদের সময় তাড়াহুড়ো করা যাবেন -- এটা মনে নিলেই সহ্য শক্তি বাড়বে এবং ধৈর্য ধারণ করা ক্ষমতাও বৃদ্ধি পারবে। জীবনের স্বাভাবিক গতির সাথে মানুষের প্রত্যাশাকে একই কাতারে আনতে পারলে মানসিক স্থিরতা আসবে এবং পরিষ্কার মন নিয়ে অসুবিধাগুলি মোকাবেলা করা সহজ হবে।

আশাই ভরসা:

আশা মানুষের জীবনের ঝড়ের সময় নোঙ্গর হিসাবে কাজ করে। আশার আলো অন্ধকারের মধ্যে মানুষকে পথ দেখায় এবং মনে করিয়ে দেয় যে দিনের আলো ফুটতে বেশি দেরি নেই। প্রকৃতির চক্রের সাথে মানুষের জীবনের চক্রকে মিলিয়ে নিলে আশাবাদ আরো শক্তিশালী হয়। মানুষ এই ভেবে আশ্বস্ত হতে পারে রাত যেমন দিনকে পথ দেখায় এবং ঝড় যেমন শান্ত হয়ে জীবনকে বিকশিত করে ঠিক তেমনি মানুষের কষ্টগুলিও একসময় ম্লান হয়ে যাবে। এই আশা মানুষকে সাহস ও সংকল্পের সাথে প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার ক্ষমতা দেয় এবং মানুষের মনে এই বিশ্বাস জন্ম দেয় যে আরও ভাল দিন সামনে রয়েছে।

সারসংক্ষেপ:

যদিও মানুষের জীবনের চ্যালেঞ্জ এবং মানসিক যন্ত্রণা কখনো তীব্র এবং অপ্রতিরোধ্য হতে পারে, তবুও এইগুলি অস্থায়ী এবং একটি বৃহত্তর প্রাকৃতিক চক্রের অংশ। অনুপ্রেরণা এবং শক্তির জন্য মানুষের উচিত প্রকৃতির দিকে তাকানো। প্রকৃতি মানুষকে গভীর আশ্বাস দেয় এবং মনে করিয়ে দেয় যে যেমন ঝড় একসময় থেমে যায় এবং রাতগুলি দিনে পরিণত হয়, ঠিক তেমনি মানুষের কষ্টগুলিও একসময় ম্লান হয়ে যায়। এই দৃষ্টিভঙ্গি মানসিক শক্তি এবং ধৈর্য ধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হতাশার মুখেও আশাকে আঁকড়ে ধরার জন্য মানুষকে আহ্বান জানায়। জীবনের প্রাকৃতিক ছন্দকে আলিঙ্গন করার মানসিকতা ভালভাবে মানুষের জীবন চলার পথকে সহজ করে দেয়। মানুষ তার জীবনে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং বার বার জেগে উঠার শক্তি খুঁজে পায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২৪ রাত ৯:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×