১৯। এইবার আসেন উদ্দেশ্যে।
একটা রাজনৈতিক চালের এক বা একাধিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আবার একটা চাল আরেকটা চালের পরিপূরক বা সম্পূরক বা বিকল্প চাল হতে পারে। এখানে সমস্যাটা হচ্ছে যে চাল চালে সেই শুধু জানতে পারে আসল উদ্দেশ্য। চালের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হওয়ার আগে অন্যরা শুধু বিশ্লেষণ ও অনুমান করতে পারে।
২০। উদ্দেশ্য ১। প্রধান বিচারপতিকে আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ দলগুলির আছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। ইতোমধ্যে এই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। বি এন পি প্রধান বিচারপতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন তাকে প্রতিপক্ষ দলগুলির আছে গ্রহণ যোগ্য করে তুলতে হবে?
উত্তর:- ভবিষ্যতে যদি তার উপর কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পিত হয়, তখন যেন আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ দলগুলি তাকে সমর্থন দেয়, অথবা নিদেনপক্ষে নরম অবস্থান নেয়।
উদ্দেশ্য ২। বর্তমান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
প্রশ্ন ১। কে চাপ সৃষ্টি করতে চায়? উত্তর:- ইন্ডিয়া এবং তার বর্তমান মিত্র বৃহৎ শক্তি।
প্রশ্ন ২। কেন চাপ সৃষ্টি করতে চায়?
উত্তর:- বিশ্বের বৃহৎ শক্তি এবার যুদ্ধ-রেখা টেনেছে দক্ষিণ এশিয়াতে।
একটা সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র চীন-ইন্ডিয়া সীমান্ত। সম্ভাব্য এই যুদ্ধে একপক্ষে থাকবে ইন্ডিয়া ও বৃহৎ শক্তি, অন্য দিকে থাকবে চীন ও পাকিস্তান। ইতোমধ্যে ডোকলামে ইন্ডিয়া ও চীনের সামরিক বাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। ইন্ডিয়া অবশ্য এখন এই যুদ্ধ করতে চাচ্ছে না। সামরিক বাহিনী শুধুমাত্র যুদ্ধ প্রস্তুতির জন্য সরকারের কাছে ২০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ চেয়েছে। এরপর সরকার একটা সর্বদলীয় সভা ডাকে। দিল্লীতে সর্বদলীয় বৈঠকে সম্মানজনক ভাবে সরে আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় সম্ভাব্য যুদ্ধক্ষেত্র পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত। এটা অনেকটা ইন্ডিয়া-পাকিস্তান-চীনের প্রক্সি যুদ্ধের মতো হবে। বৃহৎ শক্তি ইতোমধ্যে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে আফগান তালেবানদের সাহায্য না করার জন্য। আর ইন্ডিয়াকে বলেছে আফগান তালেবানদের দমনের জন্য আফগান সরকারকে সামরিক সাহায্য দিতে। ইন্ডিয়া রাজি হয়েছে। অর্থ দাঁড়াচ্ছে, তালেবান দমনের নামে আফগান সরকার ইন্ডিয়ান সামরিক বাহিনীর সমর্থন নিয়ে পাকিস্তান আক্রমণ করবে। আর পাকিস্তান চীনের সমর্থন নিয়ে মোকাবেলা করবে।
সম্ভাব্য দুইটা যুদ্ধেই বাংলাদেশের অবস্থান হবে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অবস্থান হতে পারে (১) ইন্ডিয়ার পক্ষে, (২) চীনের পক্ষে, (৩) নিরপেক্ষে। বর্তমান সরকার কখনই সরাসরি ইন্ডিয়ার বিপক্ষে আর চীনের পক্ষে যাবে না -- এটা চীন জানে। চীনের লক্ষ্য বাংলাদেশকে নিরপেক্ষ রাখা। বাংলাদেশ নিরপেক্ষ থাকলেও চীনের লাভ।
সবাই জানে বর্তমান সরকার ইন্ডিয়ার সমর্থন পুষ্ট। তা হলে ভয়টা কোথায়?
চীন বাংলাদেশকে সম্ভাব্য যুদ্ধে নিরপেক্ষ ভূমিকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য শাসকদেরকে অস্ত্র ও সাবমেরিন বিক্রির নামে বিপুল পরিমাণ কমিশন প্রদান করেছে বলে ইন্ডিয়া ও বৃহৎশক্তি মনে করে। বিষয়টা বুঝার জন্য একটা উদাহরণ দেয়া যায়। বাংলাদেশ চীন থেকে Ming-class Type 035B সাবমেরিন কিনেছে। যার দাম ধরা হয়েছে ২০ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার, টাকার অংকে ১৬২৪ কোটি। ১৯৭০ সালে নির্মিত এত মূল্যবান এই জিনিসটা দিয়ে চীন ১৯৯০সাল থেকে ছাত্রদের ট্রেনিং দিতো। এটা কত উন্নত জিনিস বোঝতে পারছেন। এটাকে এখন লোহা-লক্কড় হিসাব বিক্রি করতে হতো। নুন খেলে গুণ গাইতে হয়। টাকা পকেটে গেলে বিপক্ষে যাওয়া যায় না।
এমন একটা পরিস্থিতিতে সরকারের উপর নানামুখী চাপ সৃষ্টি করে আসন্ন সম্ভাব্য সংঘাতে বাংলাদেশকে সরাসরি ভাবে ইন্ডিয়ার পক্ষে এবং চীনের বিপক্ষে অবস্থান নিতে বাধ্য করা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৬