আগের অধ্যায়
“প্রজেক্ট আতা” নামের খাতার দিকে আমি হতাশ হয়ে তাকিয়ে আছি। সুমনা উত্তেজিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখের ভাষা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, আমাকে এখন এই জিনিষটা পড়তে হবে।
আমি খাতার দিকে হাত বাড়ালাম, সেটা হতে নিয়ে আমি সুমনার দিকে জিজ্ঞাশার দৃষ্টিতে তাকালাম। সে বলে উঠল, “পড়ে দেখ।”
“কি আছে, সেটা কি আমি আগে জানতে পারি ?” আমি জিজ্ঞেশ করলাম।
“পড়ে দেখ তাহলে সব জানতে পারবে।”
“তবুও যদি সারসংক্ষেপ আগে জানাতে তাহলে মনে হয় আমার পুরো জিনিষ ধরতে সুবিধা হত,” আমি বলে উঠলাম।
“সব কিছু আমি গুছিয়ে লিখেছি,” সুমনা তার নাক উচু করে বলে উঠল, “সাতটা দিন তো আমি এমনি এমনি নষ্ট করে নি।”
আমি খাতার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর সুমনার দিকে আরেকবার তাকালাম তারপর খাতার প্রথম পাতা উল্টানোর পর দেখতে পেলাম বিশাল অক্ষরে লেখা, “প্রিন্সেস সোফিয়া”
“এটা কি?” আমি জিজ্ঞেশ করে উঠলাম।
“আমাদের নাটকের নাম,” সুমনা সাথে সাথে বলে উঠল।
“মিজান স্যার এটা দেখা মাত্রই ছুড়ে ফেলবে।”
“মিজান স্যারকে দেখিয়েছি তিনি রাজী আছেন এই নাটক করার জন্য।”
সুমনার এই কথা শুনে আমি অবাক হলাম। তারা কিভাবে মিজান স্যারকে রাজী করালো?
যাই হোক সেটা নিয়ে পরে চিন্তা করা যাবে এখন হাতের সামনে যে জিনিষ আছে সেটা কিভাবে ম্যানেজ করা যায় সেটাই আমি ভাবছি। আড়চোখে এদিক ওদিকে তাকালাম যদি কারো দেখা পাই তাহলে একটা বাহানা দিয়ে পাশ কাটানো যাবে।
কিন্তু সেই আশা বৃথা গেল, পরিচিত কেউই নেই। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাতার দিকে তাকালাম। এই খাতা নিয়ে আমার যেন কেমন একটা খারাপ অনুভূতি হচ্ছে।
প্রায় এক দিস্তার খাতায় কি লেখা ছিল সেটা যদি আমি এখন বর্ননা দিতে যাই তাহলে সেটা একটা উপন্যাস হয়ে যাবে, তাই সংক্ষেপে বর্ননা দিচ্ছি, বিরক্ত হলে এটা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারেন!
‘ অনেক কাল আগের কথা, এক দেশে ছিল এক রাজা আর এক রানী। তাদের রাজ্যে সুখ শান্তিতে ভরপুর থাকলেও তাদের মনে কোনো শান্তি ছিল না, কারন রাজা রানী ছিলেন নিসন্তান। একদন এক দরবেশ এসে তাদের দুঃখের কথা শুনলেন, তারপর তাদের হাতে তুলে দিলেন একটা আতা ফল!’
আমি এবার সুমনার দিকে তাকালাম।
“কি হয়েছে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?” সুমনা জিজ্ঞেশ করে উঠল।
“দরবেশ রাজা-রানীকে আতা ফল দিল?”
“গল্পটা লেখার সময় কেন যেন আতা ফলের কথাই বেশী মনে হচ্ছিল।”
“তাই বলে আতা ফল!”
“কেন আতা ফল খারাপ নাকি?”
“না, তারপরেও…”
“আরে এত কথা না বলে গল্পটা শেষ করতে দাও !”
আমার কথা শেষ করার আগেই সুমনা বলে উঠল। আমি বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার পড়া শুরু করলাম।
‘ দরবেশের দেওয়া সেই আতা ফল খেয়ে রানী গর্ভবতী হলেন। তাদের এক পুত্র সন্তান হল। তারা তাদের পুত্র সন্তানের নাম রাখলেন “আতা”। সারা রাজ্যে খুশীর বন্যা বয়ে গেল’
যা সন্দেহ করেছিলাম, মনে মনে বলে উঠলাম আমি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল এটা একটা রুপকথার গল্পের চেয়ে একটা গাজাখুরি গল্প হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। কিন্তু কেন যেন আমার কৌতুহল একটু বেড়ে গেল এই গল্পের শেষ কোথায় সেটা জানার জন্য আগ্রহ বোধ করলাম।
‘ দূর দেশের এক বিশাল রাজ্যে ঠিক একই সময়ে জন্ম নিল এক রাজকন্যা তার নাম হল “সোফিয়া”। তারা ধীরে ধীরে বড় হয়ে হতে লাগল। যখন সোফিয়া ষোলতে পা দিল তখন রাজার মনে হল তাদের সোফিয়ে অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। তার বিয়ের জন্য একটা পাত্র খুজে বের করার দরকার। রাজা তার বিশ্বস্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে নিজের এই কথা বললেন।
প্রধানমন্ত্রী এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি অনেক আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন তার একমাত্র পুত্রের সাথে রাজকন্যা সোফিয়ার বিয়ে দিয়ে রাজার সব হাতিয়ে নিবেন। এতদিনে সেই সুযোঘাতে নিলেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ঘোর প্যাচালো মানুষ ছিলেন। তার কাজই ছিল হাত ঘুরিয়ে ভাত খাওয়া!
প্রধানমন্ত্রী রাজাকে প্রস্তাব দিলেন যে বিভিন্ন রাজ্যে খবর পাঠানো হোক। রাজকুমার বা সম্ভ্রান্ত পরিবারে লোক রাজকন্যার সামেন এসে হাজির হোক, রাজকন্যা সোফিয়া যাকে পছন্দ করবে তার সাথেই বিয়ে হবে ধুম-ধাম করে।
প্রধানমন্ত্রীর এই কথা শুনে রাজা খুশী হয়ে মত দিলেন আর মন্ত্রী নাচতে নাচতে বাসায় এসে তার একমাত্র ছেলে আবিলালের সাথে কথা বললেন। আবিলাল হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র ছেলে। দেখতে খুবই সুদর্শন। কিন্তু তার চরিত্র তার ভাল না। খালি মেয়েদের সাথে ট্যা-ফো করেঘুরে বেড়ায়।”
আবিলাল!
নামটাই আমার কাছে কেমন যেন লাগল। মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগল, আর এই আবিলালকে নিয়ে আমার কেন সন্দেহ হতে লাগল!
“ আবিলাল তার বাপের কথা শুনে অনেক খুশি। সে নিজের চেহারার উপর অনেক আত্মবিশ্বাস ছিল। তাই সে অনেকটা নিশ্চিত ছিল।
আর এই খবর ভাসতে ভাসতে একসময় আতার কানে গিয়ে পৌছালো। সে তখন উঠতি কবি। এত নাম না ছড়ালেও আশেপাশের কয়েকজন তার নাম জানে। সে সিদ্ধান্ত নিল সে চান্স নিবে, তা ছাড়া রাজকন্যা সোফিয়ার গুনগান ত সে কম শুনে নি। তাই সে পুরো দুইরাত জেগে সোফিয়াকে নিয়ে একটা কবিতা লিখল। তারপর সে গিয়ে হাজির হল প্রিন্সেস সোফিয়ার রাজ্যে।
অনেক রাজপুত্র ব্যার্থ হয়ে ফিরে গেছে, এমন কি মাদের আবিলালও ব্যার্থ হয়ে বসে আছে। কাউকেই পছন্দ হচ্ছে না রাজকন্যা সোফিয়ার। আতা দুরুদুরু বুক নিয়ে নিজের লেখা সোফিয়াকে নিয়ে কবিতাটা পড়ে শোনাল। সোফিয়া তো খুশীতে বাক-বাকুম। সে তখনই আতা পছন্দ করে ফেলল।
নাখোশ হলেন প্রধানমন্ত্রী আর সোফিয়ার বাবা। তা্রা চেষ্টা করতে লাগলেন সোফিয়া সাথে তাদের বিয়ে যেন না হয়।
আমাদের আতা রাজকন্যা সোফিয়ার রাজ্যে আসল…”
আমি খাতা ঠাস করে বন্ধ করলাম। সুমনা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেশ করল, “কি ব্যাপার পুরোটা পড়লে না কেন?”
“এই গাজাখুড়ি জিনিষ কে পড়ে।”
সুমনার চেহারা দেখে বোঝা গেল সে আমার এই কথা তেমন পছন্দ করে নি। তারপর পুরোটা কি পড়বে না।
“পড়ার কোনো আগ্রহ পাচ্ছি না, যাতা লেখা,” এই বলে আমি চুপ করে করে গেলাম।
সুমনাও কিছু না বলে সে চলে যেতে লাগল, তখন আমি বলে উঠলাম, “পড়তে হয়তোবা আমি আগ্রহী না কিন্তু পুরো কাহিনী শুনতে আমার আপত্তি নাই।”
আমার এই কথা শুনে সুমনার চেহারা উজ্জ্বল হলেও চেহারায় তা না ফোটা আপ্রান চেষ্টা করতে লাগল।; সে বলে উঠল, “আচ্ছা বলছি।”
এই বলে আমার সামনে বেঞ্চে বসে পড়ল সে, তারপর বলে শুরু করল, “এরপর সোফিয়া আতার কবিতা শুনে তার প্রেমে পড়ে যাবে।”
“!”
“কিন্তু তাদের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াবে আবিলাল সে এক ওঝার মাধ্যমে সোফিয়াকে চিরতরে ঘুমে পাঠিয়ে দিবে।”
“এটাকে কি এক কথায় মার্ডার বলা যায় না?”
আমার প্রশ্নে সে বিরক্ত হল বলে উঠল, “গল্পের মাঝখানে বাধা দিবে না, তাহলে তাল হারিয়ে ফেলব।”
তালছাড়া গল্পকে তাল দিয়ে বলা লাগবে নাকি!
আমি এটাই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বললাম না। চুপ করে সুমনা গল্প শুনে যাওয়াই ভাল মনে করলাম।
“তারপর তারপর আশেপাশে সব রাজ্যে ডাক্তার-বদ্যি এসে চিকিৎসা করবে কিন্তু সোফিয়া কে ঘুম থেকে জাগাতে পারবে না,” এই বলে সুমনা একটা লম্বা শ্বাস নিল তারপর আবার শুরু করল, “এরপর আসল আতার পালা…”
“হাতি ঘোড়া গেল তল পিপড়া বলে কত জল!”
“কিছু বললে?”
“না।”
“তাহলে গল্প বলার মাঝখানে বাধা দিবে না,” সুমন আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, “ হুম কোথায় যেন ছিলাম?”
“আতার আসা সময় হয়েছে,” আমি মনে করিয়ে দিলাম।
“হুম, তারপর আতা এক দিন স্বপ্নে দেখল রাজকন্যা সোফিয়া তাকে বলছে আতা যেন এমন এক কবিতা তাকে শোনায় যার কারনে সোফিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়,” তারপর একটু থেমে “ও, ভালো কথা সোফিয়া স্বপ্নে বলে দিবে যে আবিলাল তাকে এই অবস্থা করেছে।”
“অ্যা, ব্যাপারতা কেমন হয়ে যায় না?” আমি বলে উঠলাম।
“কিছু করার নেই সময় শর্ট, তাই এই ব্যাবস্থা নিতে হয়েছে।”
“হুম, বুঝতে পারলাম। এরপর আতা তার বিখ্যাত কবিতা শোনাবে আর রাজকন্যা ধাপ করে উঠে যাবে তারপর তারা সুখে বসবাস করতে থাকবে।”
“হ্যা, হ্যাপি এন্ডিং হবে। আমি সবসময় হ্যাপি এন্ডিং পছন্দ করি।”
সুমনা আমার কথায় সায় দিয়ে বলল।
আমি কিছু বললাম না।
হঠাৎ করেই রুপা আর নুশরাত সুমনার পিছনে এসে দাড়াল। সুমনা ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকাল।
তাদের এই ভাবসাব আমার তেমন ভালো লাগল না। রুপার আর দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, “”রানা তোকে নাটকে একটা পার্ট দিতে চাই।”
“হ্যা, খুবই ইম্পোরটেন্ট একটা পার্ট,” নুশরাত একটা তাল দিয়ে বলল।
“আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে আবিলালে চরিত্রে অভিনয় করতে হবে।”
সুমনা একটা বোম ফাটাল যেন।
“হ্যা তোর মত একটা চার্মিং একটা ছেলেকে না নিলেই না।”
একটু আগে যে একটা খারাপ অনুভূতি বোধ করেছিলাম সেটা যেন বাস্তব হয়ে উঠল।
সুমনা এবার বলে উঠল, “আমাদের হাতে একন সময় কম তাই আমি চাচ্ছি আজকে থেকেই রিহার্সাল শুরু করে দিতে।”
“হ্যা ঠিক বলেছিস,” রুপা সায় দিল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তাহলে রেডী থাক রানা।”
আমি মনে মনে বলে উঠলাম আজকেই এবং খুব শীঘ্রই আমাকে কলেজ পালাতে হবে নাইলে আমার বারোটা বেজে যাবে!
{অনেক দেরী করে আপডেট দিলাম তাই দুঃখিত, খুবই ব্যাস্ত আমি চাকরী করার জন্য, চেষ্টা করব রেগুলার আপডেট দিতে।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৮