এ দেশে ১৬ কোটি বা তার চেয়ে বেশি মানুষ আছে। বেশির ভাগ মানুষ ব্লগ কি তা জানে না। শুক্রবার যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে সেই আন্দোলনের সাধারণ সমর্থক থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব অকপটে স্বীকার করেছে তারা নিজেরা ব্লগ দেখেনি। এটা তো ঠিক যারা ইনটারনেট ব্যবহার করে না তারা ব্লগ সম্পর্কে কিছু জানবেও না। এসব মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের ইনটারনেট দরকার পরে না, তাছাড়া ইনটারনেট সম্পর্কে তাদের ভীতিও আছে। তাই তারা কে কোথায় কীভাবে নবীকে অসম্মান করেছে সে কথা ভালো করে না জেনেই আরন্দোলনে নেমেছে।
শুক্রবারের আন্দোলনকরীরা ছাড়াও আরও সাধারণ মানুষ আছে যারা ঐ আন্দোলনে যোগ দেয়নি। তারা এসবের সাথেও নেই পাছেও নেই। তাদেরই একজন মন্তব্য করেছিল-- ঐ বলগাররা কীজানি লেখছে হেইয়া লইয়াই কাণ্ড।
নানা গ্রুপ আছে ব্লগারদের মধ্যে। ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের ভিন্ন ভিন্ন আগ্রহের বিষয় আছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত গ্রুপ-- আলোচিত বিষয় ধর্ম, রাজনীতি। এদের মধ্যে একটা গ্রুপ ধর্মের বিপক্ষে লেখালেখি করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ভীষণ উগ্র এবং তারা সংখ্যায় বেশি। এরা হঠকারী, বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এরা এসব কাজ করে। যখন ডামাডোল শুরু হয়ে গেল তখন এদের কাজের ফলটা খুব ভালোভাবে দৃশ্যমান হলো। তাদের উদ্দেশ্য সফল।
প্রচলিত সমাজেও আমরা এধরনের মানুষের উপস্থিতি দেখতে পাই। আপনারাও হয়ত দেখেছেন তাদের। চলতি পথে বাসে ঝগড়া লাগলে দেখা যায় দু-একজন খুব অতি উত্সাহী খুব উত্তেজিত কথাবার্তা ছড়াতে থাকে। কখনও কখনও তারা সফল হয় না তা নয় তবে ঠিকমত ঝারি খেলে তারা আবার উল্টা কথা বলতে শুরু করে। শুধু বাস নয় সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে তাদের অতি উত্সাহী উপস্থিতি আমরা দেখি। সংবাদপত্র জগতে এরা আছে। আছে অন্যান্য ক্ষেত্রেও। আমাদের সমাজিক কাঠামোতে এসব উগ্র লোকদের নিয়ন্ত্রণের তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা চোখে পড়ে না। এরা শুভ ও সুন্দরের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। রাষ্ট্রের উন্নয়ন বেগবান করার জন্য এদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা খুজে বের করতে হবে।
এখানে বলে রাখি ফুটপাথে উঠে পড়া মটর সাইকেল চলকদের আমি উগ্রদের দলে রাখতে চাই। এরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী। বলতে পারেন-- ধান বান তে শিবের গীত গাইছি। না, ইতিহাসের শুরু থেকেই নাস্তিক আস্তিকদের উপস্থিতি চলে আসছে। ধর্মকে গালাগালি বা নাস্তিকদের গালাগালি উগ্রতা ছাড়া আর কিছু না। জ্ঞানের চর্চা এবং তার প্রকাশে কোনো উগ্রতার স্থান নেই।
লেখাটা শুরু করেছিলাম ঐসব ব্লগারদে কথা বলার জন্য যারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজে নেমেছেন। প্রচলিত সমাজে যে অচলায়তন শিকড় গেড়ে আছে তার বিরূদ্ধে শুভ, সুন্দর, শৃঙ্খলা ও ন্যায়ের বার্তা পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। তারা এখন সব পক্ষের শত্রু। সরকার এদের বৃদ্ধি চাইবেন না কারণ এরা সত্য বলতে পিছ পা হয় না। একই কারণে বিরোধী দলগুলোও তাদের ভালো চাইবে না। এর মধ্যে শুরু হয়েছে না জানা না বোঝাদের আন্দোলন। আর বাংলার জনগণ? তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা এবং একই সঙ্গে রাজনৈতিক ঔদাসীন্য এক বিস্ময়কর উপাখ্যান। এরাই ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের মতো মহাকাব্যের কারিগর, আবার এই ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের দেশে স্বাধীনতা বিরোধী মুক্তবুদ্ধির শত্রুরা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে।
সমাজে উগ্র বিশৃঙ্খলাকারীদের বিপরীতে শৃঙ্খলা আর জ্ঞানের প্রাধান্য বাড়ুক। রাষ্ট্রে যুক্তি ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। ইতিহাস সচেতন, যুক্তিনিষ্ঠ, জ্ঞান ও ধী শক্তি সম্পন্ন ব্লগারদের জয় হোক।