somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ গোলাপী আগুন

১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ এই গল্পটি নিরীক্ষাধর্মী। একই গল্পের বর্ণনা প্রথম ও তৃতীয় পুরুষে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা পত্র পত্রিকায় ও অনলাইনে প্রকাশিত আমার লেখা প্রায় দেড় শত গল্পের মধ্যে একমাত্র। আশা করি, আপনাদের ভালো লাগবে। ]

আমার পিতৃদত্ত একটাই নাম সবুর আলি। কিন্তু লোকজনের কাছে আমার নাম দুটো। একটা হল ‘বাঙ্গাল সবুর’ আর একটা হল ‘শুকনা সবুর’। আমি ভাটি এলাকার নদীভাঙ্গা দেশের লোক। এই উজান দেশে এসে বসতি করেছি বলে এখানকার স্থানীয়রা আমায় আদর করে ‘বাঙ্গাল সবুর’ বলে ডাকে। এদেরই আবার কেউ কেউ ডাকে ‘শুকনা সবুর’ নামে। পেট পুরে খেতে না পেয়ে শুকিয়ে গেছি, চোয়ালের হাড় উঁচু হয়ে গেছে, পেটটা ভেতরের দিকে ঢুকে গেছে অথবা খালি গায়ে থাকলে আমার পাঁজরের হাড় গোনা যায় এসবের কোনটাই কিন্তু আমার এই ‘শুকনা সবুর’ নামের শানে নজুল নয়। আসলে কি জানেন, বলতে লজ্জাও হচ্ছে, আমি রোজ গাঁজা খাই। দু’বেলা ভাত না খেলেও চলবে, কিন্তু সন্ধ্যের পর সাহেব বাজারের পাইকারি মাছের আড়তের পেছনে জমজমাট আসরে বসে গাঁজার কল্কেতে দুচারটা টান না দিলে আমার জিন্দেগীটাই ফাউল হয়ে যায়। গাঁজার সাথে সাথে চলতে থাকে কমদামী কড়া সিগারেট অথবা নাসির বিড়ি। যারা বিড়ি খায় তাদের কথা হল, ‘মাংস খেলে খাসির, আর বিড়ি খেলে নাসির’। আসরের কেউ কেউ বাংলা বা চুঁয়ানিও খায়। অফার পেলে আমিও খাই। তবে কিনে খাবার সামর্থ্য নাই। আমার জন্য তাই গাঁজাই ভালো। আড়তের পালাদারি করে আমার সারাদিনের কামাই আশি নব্বই টাকা। মাছের আমদানি বেশি হলে একশো টাকা ছাড়িয়ে যায়। আড়তের পাশে রমজান মিয়ার হোটেলে খাওয়ার বিল দেই চল্লিশ পঞ্চাশ টাকা, সন্ধ্যের পর দু’পুরিয়া গাঁজার বিল কুড়ি টাকা আর সারাদিনে বিড়ি সিগারেটের জন্য আরও দশ পনের টাকা। আর জানেনই তো গাঁজা খেলে ঘন ঘন চা খেতে ইচ্ছে করে। কামাই বেশি হলে গাঁজার ডোজ এক পুরিয়া বাড়িয়ে দেই। মাঝরাতে আসর ভাঙ্গার পর পকেটে তাহলে আর কি থাকে,বলুন? বেশিরভাগ দিনই ঘরে ফিরি না। আড়তের ভেতর মাছ নামানোর শান বাঁধানো ল্যান্ডিংয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে যাই।

গাঁজা হল শুকনা নেশা। আর চুঁয়ানি, বাংলা মদ, ফেন্সিডিল এসব হল ভেজা নেশা। তো গাঁজার প্রতি আমার এই ভালোবাসা দেখে লোকে আমায় ‘শুকনা সবুর’ নামে ডাকে। রায়টের সময় ইন্ডিয়া থেকে পালিয়ে আসা বশির চাচা আড়তে বসে দিনের বেলা খাতা লেখে। আর সন্ধ্যের পর আমার খোঁজ করে বলে, ‘হাঁ গো, শুকনো সবুরটা গেল কোথায়? ওকে বল তো আমার জন্যে এক প্যাকেট সিগারেট আনতে।’

মুর্শিদাবাদের লোক। লাজ লজ্জা খুব কম। সিগারেট এনে দিলে কোনদিন টাকা দেয়, কোনদিন বলে, ‘কাল নিস্’। সেই কাল হয়ে যায় মহাকাল। আমার কল্কেতে কষে দম মেরে বলে, ‘আচ্ছা সবুর, দুনিয়াটা কি হল রে বল দেখি! গাঁজার মধ্যেও ভেজাল!’ বলতে বলতে কল্কেতে আরো দুটো টান দিয়ে সেটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে, ‘আগে এক টানে যা হতো, এখন দু’তিন টানেও তা’ হচ্ছেনা রে সবুর। কি ছাইপাশ যে খাচ্ছিস তোরা!’ আমি মনে মনে বলি, ও ছাইপাশের বেশিটাই তো সাফা করে দিলে চাচা। মুখে কিছু বলিনা। হাজার হলেও বশির চাচা আড়তের মুন্সী।

আমার নেশা ভাং খাওয়া ছাড়াতে না পেরে আমার বউ নিজেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে এক বছর আগে। পদ্মার নতুন চরে গড়ে ওঠা বস্তিতে এক রাজমিস্ত্রির যোগালদারকে বিয়ে করে অন্তত দুমুঠো ভাত পাচ্ছে সে এখন। আর মূল শহর থেকে এক মাইল পশ্চিমে পদ্মার শহর রক্ষা বাঁধের ওপর ভাঙ্গাচোরা চাটাই, ছন আর পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ঘরের বস্তি বানিয়ে অসংখ্য মানুষের সাথে আমরাও বাস করি কীট পতঙ্গের মতো। আমরা বলতে আমার অন্ধ ও বুড়ো মাসহ আমার দুটো ছেলেমেয়ে। আমার তো বেশিরভাগ রাতেই ঘরে ফেরা হয়না, ওরাও বেশিরভাগ রাতে না খেয়ে থাকে। দেশের রাজা বদল হলে রাজার লোকজন এসে আমাদের ঠেঙ্গিয়ে উঠিয়ে দেয় এই বস্তি থেকে। কিছুদিন এদিক ওদিক থেকে সময় সুযোগ মতো আবার এসে ঘর তুলি আমরা। তখন আশেপাশের মাস্তানরা এসে হাত পাতে। যারা কিছু দিতে পারে, তাদের জন্য মাস্তানদের বরাদ্দ পাছার ওপর এক লাথি। আর যারা কিছু দিতে পারেনা, তাদের জন্য চার লাথিসহ চড় থাপড়। আমার অবস্থান সব সময় দ্বিতীয় দলে। মাস্তানদের সামনে আমি ভয় পেয়ে কাঁদাকাটি করলেও ওটা আসলে আমার অভিনয়। আমার মতো ওরাও নেশাখোর। ওরা ফেন্সিডিল আর ট্যাবলেট খায়। ওসবের দাম অনেক। আমাদের মতো গরিব নেশাখোরদের জন্য ওসব হল বিলাসিতা। ভেজা খাওয়ার পয়সা নেই বলেই তো আমি ‘শুকনা সবুর’।

আমার ছেলেটির নাম বাবলু আর মেয়েটির নাম ময়না। বয়স আট আর সাত। ওদের জন্মের সন তারিখ তো আমার মতো গাঁজাখোরের মনে থাকার কথা না। বয়সের কিছু হেরফের হতে পারে। আমার মায়ের নাম আকলিমা খাতুন। একাত্তরের যুদ্ধে আমার বাবা কাশেম আলিকে রাজাকাররা মেরে ফেলার পর মায়ের নামের শেষে ‘খাতুন’ উঠে গিয়ে যোগ হল ‘বেওয়া’। ভোটার লিস্টে নাম হল আকলিমা বেওয়া। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দু’চার বছর মা চোখে এক আধটু দেখতে পেত। তারপর পুরোপুরি কানা হয়ে গেল। এখন সকাল বিকাল লাঠি নিয়ে ভিক্ষা করে বেড়ায়। সাথে থাকে বাবলু বা ময়না। এই রাজশাহী শহরের মানুষরা আগের মতো আর চাল ভিক্ষে দেয়না, দেয় সাদা রঙের এক টাকার কয়েন। এক কেজি মোটা চালের দাম এখন আটত্রিশ টাকা। আটত্রিশ জন লোকও একজন অন্ধ বুড়িকে ভিক্ষে দেয়না। এক কেজি চালও জোটে না ওদের কপালে। আধা কেজি চাল কিনে আলু, মরিচ, লবণও কিছু কিনতে হয়। তিন বেলা তো দুরের কথা, এক বেলাতেই ওদের টানাটানি। এর ওপর আবার মাঝে মধ্যে বেহায়ার মতো আমি এসে হাজির হই খালি হাতে। আমার কানা মা আমাকে শাপ শাপান্ত করে। বলে, আমি মরিনা কেন? আমি মরলে ওরা বেঁচে যায়।

হাতে টাকা পয়সা থাকলে ওদের কাছে আমি খুব কমই যাই। এমনও হয় যে, একটানা দশ পনের দিন বা একমাসও যাই না। গেলেই তো ওরা খাই খাই করে ধরে। সত্তর বছরের বুড়ো মা, তারও কত ক্ষিধে! আমি যা কামাই করি, তা’ দিয়ে নেশা খাওয়ার পর আমারই তো পেট পুরে খাওয়া জোটে না। এক পেট আধা পেট খেয়ে দিন পার করি। আমার কি দোষ? আমার মতো বউ পালানো মানুষের ছেলেপুলেরাও এক পেট আধা পেট খেয়ে বেঁচে থাকে। আমি তো পদ্মার নতুন চরের বস্তিতে ওদের মায়ের কাছে যেতে বলি। গেলে হয়তো দুটো খেতে পায়। ওরা দু’একবার গিয়েওছিল। কিন্তু ওদের সৎ বাপ কুত্তার মতো ছেই ছেই করে তাড়িয়ে দেয়। ওদের মাও ডাইনীর মতো দাঁত মুখ খিঁচিয়ে তাড়া করে। বলে, ‘ওই শুয়োরের বাচ্চারা, এহানে আইছস ক্যা? তগো বাপ শুয়োরের কাছে যাইতে পারস না?’

এখন আর ওরা যায় না। তবু ভালো যে ওদের কানা দাদী আছে। সাথে নিয়ে ভিক্ষে করে খেতে পারে। মা কানা হওয়ায় কিছু না কিছু ভিক্ষা পায়ই। বস্তির ক’জনের এই সুবিধা আছে,বলুন? তবে মায়ের সমস্যা হল, সে বেশিক্ষণ হাঁটতে পারে না। কোমর ভেঙে যাওয়ায় হাঁটতে কষ্ট হয়। ধনুকের মতো বাঁকা পিঠ নিয়ে লাঠি হাতে সে বাবলু বা ময়নার হাত ধরে সকালবেলা বাঁধের ওপর দিয়ে এক মাইল হেঁটে রাজশাহী শহরে আসে। রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড আর পথ চলতি মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু পায়। আগে বাড়ি বাড়ি গেলে কিছু চাল পাওয়া যেতো। এখন আর কেউ চাল দেয় না। তাই বাড়ি বাড়ি যাওয়া কমিয়ে দিয়েছে মা। বেশি হাঁটাহাঁটি শরীরেও কুলায় না। এখন সকালে বেরলে আর বিকালে বেরোতে পারেনা। এই করে চলছে ওদের। বৃষ্টি বাদলা বা ঝড় ঝাপটার কারণে কোনদিন যদি ভিক্ষে করা না হয় তো সেদিন বাবলু আর ময়না বাঁধ সংলগ্ন গ্রামে গিয়ে খাল বিলের পানিতে সাঁতার কেটে শাপলা ও আশেপাশে অযত্নে বেড়ে ওঠা কলমির শাক তুলে নিয়ে আসে। সেসব সেদ্ধ করে লবণ মেখে ওরা দাদীকে নিয়ে খায়। বর্ষাকালে এমন লতাপাতা সেদ্ধ খেয়ে থাকতে হয় দিনের পর দিন। বৃষ্টি ছুটে গেলে দাদীকে নিয়ে বের হয় ভিক্ষে করতে। সেদিন হয়তো একমুঠো ভাত খাওয়ার ভাগ্য হয় ওদের। শুধু লবণ মেখে সেই ভাত খেতেও কি স্বাদ!

আর আমার কথা বলছেন? রমজান মিয়ার হোটেলে সকালবেলা ডাল দিয়ে দুটো পরোটা খাই। পকেটের পয়সার ওপর নির্ভর করে দুপুরে কোনদিন ভাত, কোনদিন কলাইয়ের আটার রুটি। রাতে খাওয়ার কোন ঠিক নাই। কোনদিন এক আধটা বন রুটি জোটে, কোনদিন হয়তো গাঁজা সেবনের ফাঁকে ফাঁকে খাওয়া লাল চা’তেই দফা রফা। হোটেলে খেতে বসে বাবলু বা ময়নার কথা যে মনে পড়েনা তা’ নয়। তবে গাঁজার পয়সা হাতছাড়া করে সারারাত ছট ফট করতে আমি রাজি নই। আর আমার মায়ের কথা বলছেন? বুড়ো মানুষ। জীবনে অনেক তো খাওয়া হল। এখন তার খাওয়া আর না খাওয়া একই ব্যাপার।

বস্তির কালামের মা একবার তার হাঁসের ডিম ফুটিয়ে একটা ছানা দিয়েছিল ময়নাকে। সেই হাঁসের ছানা ধীরে ধীরে বড় হল। দেখতে খুব সুন্দর। দুধসাদা পালকের ওপর খয়েরি রঙের টান। ময়নার খুশি দেখে কে? সব সময় সে তার হাঁসের সাথে সাথে থাকে। হাঁস যেদিকে যায়, ময়নাও সেদিকে যায়। আবার উল্টোটাও ঘটে। ময়না যেদিকে যায়, হাঁসটাও থপ থপ করে তার পিছে পিছে যায়। বিলের জলাভূমি থেকে উঠে আসা শামুক কুড়িয়ে নিয়ে আসে ময়না তার হাঁসের জন্যে। শামুকের খোসা ভেঙে মাংস বের করে সে হাঁসকে খাওয়ায়। নিজের পেটে ক্ষুধার জ্বালা নিয়েও হাঁসের খাওয়া দেখে তৃপ্তির হাসি হাসে ছোট মেয়েটা। রাতে হাঁসটাকে বুকের কাছে নিয়ে শোয় সে। হাঁসের জন্য তো আর আলাদা কুঠি নেই। পলিথিনের ছাউনি দেয়া জীর্ণ শীর্ণ চাটাই ঘেরা একখানা ঘর। ঘর না বলে পায়রার খোপ বললেই ভালো মানায়। ঘরে ঘুণে ধরা একখানা দড়ির খাটিয়া, একটা মাটির কলস, একটা প্লাস্টিকের ভাঙ্গা মগ আর কাপড় ঝোলানোর সুতলি দড়ি। পরনের কাপড় ছাড়া আর কোন কাপড় নাই, তাই সুতলি দড়ির ব্যবহারও নাই। মাটির মেঝেতে মলত্যাগ করে নোংরা করে ফেলে ময়নার হাঁস। ওর কানাদাদী লাঠি হাতে আন্দাজে তাড়া করে হাঁসটাকে। ময়না হাঁসটাকে বুকে চেপে ধরে পালিয়ে যায়। পদ্মার বাঁধ ছাড়িয়ে বালুচরের ওপর দিয়ে ছুটতে ছুটতে সে দক্ষিণ দিকে চলে যায় অনেক দূর, যেখানে পানির অভাবে পদ্মা নিজেই শুকিয়ে জীর্ণ শীর্ণ খালের রূপ নিয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ধুঁকছে। কালামের মায়ের হাঁস গুলো সেই নদীখালের পানিতে মনের আনন্দে চরে বেড়ায়। ময়নাও তার হাঁসের ডানা দুটো প্রসারিত করে ছেড়ে দেয় ওদের মধ্যে। তারপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীরে বসে সে তার হাঁসের খেলা দেখে। হাঁসটা কখনো পানির নিচে মাথা ডুবিয়ে এটা সেটা খুঁটে খায়, কখনো অন্য হাঁস গুলোর সাথে সার বেঁধে সাঁতার কাটে,কখনো বা দলছুট হয়ে ফিরে আসে ময়নার কাছে। গলা ফুলিয়ে প্যাঁক প্যাঁক করে কিছু হয়তো বলতে চায়। হয়তো ময়নার অনুমতি নিয়ে ওদের সাথে আরও কিছুক্ষণ খেলতে চায়। ময়না হাত ইশারা করে বোঝাতে চায়, হাঁ হা, যা না। তোকে ওদের সাথে খেলানোর জন্যেই তো নিয়ে এলাম। ময়নার মুখ দিয়ে ‘হুট’ ‘হুট’ শব্দ আর তার হাত ইশারায় সঙ্গীদের দিকে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত পেয়ে হাঁসটা ঘাড় মাথা আর পাখনা ঝাপটে পানি ঝরিয়ে আবার খুশি মনে সাঁতরে চলে যায়। ওদের ছুটোছুটি, হুটোপুটি আর সারিবদ্ধ হয়ে সাঁতার কাটা দেখে বড্ড মজা পায় ময়না। তবে কালামের মায়ের একটা হাঁস ভীষণ পাজি। হাঁসটা আচমকা ময়নার হাঁসের পিঠে উঠে বসে আর ঠোঁট দিয়ে মাথা কামড়ে ধরে পানির মধ্যে ডোবানোর চেষ্টা করে। তখন খুব রাগ হয় ময়নার। হাতের কাছে যা পায়, তাই ছুঁড়ে হুট হুট শব্দ করে সে পাজি হাঁসটাকে তাড়াতে চায়। কিন্তু পাজিটা কি সহজে ছাড়তে চায়? এক সময় ছেড়ে দিলে যেন কিচ্ছু হয়নি এমন ভাব করে ময়নার হাঁস তর তর করে সাঁতরে গিয়ে অন্যদের সাথ ধরে। ময়নার মনে হয় এটাও বোধহয় ওদের একটা খেলা।

হাঁসের খেলা দেখতে দেখতে ক্ষিধে পায় ময়নার। আগের দিন দাদীর ভিক্ষে করে আনা শবে বরাতের হালুয়া রুটি কিছু ছিল। সকালে ওগুলোই ওরা ভাগাভাগি করে খেয়েছিল। এখন সূর্য মাথার ওপর। ময়নার পেটের মধ্যে নাড়ীভুঁড়িগুলো মোচড় দিয়ে ওঠে। এদিক ওদিক তাকিয়ে ওর সরল দু’চোখে খুশির আলো ছড়িয়ে পড়ে। কাছাকাছি দূরত্বেই বিস্তীর্ণ কাশবন। কাশের কচি ডগা আর ডাঁটা চিবিয়ে খেলে হাল্কা মিষ্টি রস পাওয়া যায়। ক্ষিধের জ্বালায় ময়না আর বাবলু কতদিন কাশবনে ঘুরে ঘুরে এই রস খেয়েছে! খেয়ে তো পেট ভরেনা, তবে ক্ষিধের জ্বালা কমে। ওদের জন্য তাই বা কম কি? আজ বাবলু নাই। সে হয়তো দাদীর সাথে শহরে ভিক্ষে করতে গেছে। বাবলু থাকলে ভালো হত।

কাশবনে ঢুকে ফুল ফোটেনি এমন গাছ খুঁজে বেড়ায় ময়না। ফুল ফোটা কাশের ডাঁটায় রস থাকেনা। ময়না তার ছোট ছোট দুর্বল হাত দিয়ে গোটা কয়েক কচি কাশের ডগা ও ডাঁটা ছিঁড়ে মাটিতে বসে চিবোতে থাকে। অপুষ্ট শরীরে শক্তির অভাব। কাশের ডাঁটা ছিঁড়ে ময়নার ক্ষুদে বুকটা হাঁপরের মতো হাঁপায়। তবু হাল্কা মিঠা কষযুক্ত কাশের রসটুকু গলা দিয়ে নামার সময় স্বর্গের সুখ দিয়ে যায় ওকে।

ময়নার হাঁসটা যেদিন প্রথম ডিম দিল, সেদিন ওর খুশি দেখে কে? বস্তির সবাইকে ওর হাঁসের ডিম পাড়ার খবর পৌঁছে দিল সে। হাঁসটা আর একটা ডিম দিলে সেটা কালামের মাকে দেবে বলে জানিয়ে এলো। বাবলু আর দাদীকে সে কতবার যে হাঁসের ডিম পাড়ার কথা জানালো তার হিসেব নেই। দূর থেকে বাবলুকে ডিমটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘সোন্দর না?’

টানা দশদিন পর বিকেল বেলা ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরে দড়ির খাটিয়ায় শুয়ে আছি আমি। মা লাঠি ঠুক ঠুক করে ঘরের মধ্যে ঘুরছে আর বক বক করে অভিশাপ দিচ্ছে আমাকে। আমি ভাবছি আজ রাতে আর আসরে যাবনা। আড়তে আজ মাছের আমদানি কম। কাজ কাম খুব পাতলা। পয়সা কড়ি তেমন হয়নি। কল্কে সেজে খাওয়ার মতো হবেনা, তবে সিগারেটের মশলা ফেলে দিয়ে দু’তিন টাকার জটা গাঁজা পুরে খাওয়া যেতো। কিন্তু জটা গাঁজায় নেশা জমেনা। তাছাড়া আসরে একটা কথা খুব চালু আছে, ‘কল্কে ছাড়া গাঁজা, সুন্দরী বউ বাঁঝা’। আজ তাই আসরে বসার খুব একটা ইচ্ছা ছিলনা। কিন্তু ময়নার হাঁস ডিম পেড়েছে শুনে আমার আর ঘরে থাকা হলনা। সবার অলক্ষ্যে ডিমটা চুরি করে লুঙ্গির কোঁছায় বেঁধে টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে পালিয়ে গেলাম আড়তে। এ কাজে আমি খুব পাকা। গত বছর মা আর বাবলু লাথি গুঁতা ধাক্কাধাক্কি খেয়ে কোনমতে একখানা জাকাতের শাড়ি যোগাড় করেছিল। শাড়িটা ঠিক এভাবেই আমি হাপিশ করে দিয়েছিলাম।

ডিমটা রমজান মিয়ার কাছে নগদ পাঁচ টাকায় বিক্রি করে সাথে আরও পাঁচ টাকা জোড়া দিয়ে শেষ পর্যন্ত কল্কে সেজে খাওয়ার মতো এক পুরিয়া হল। কল্কেতে টান দেয়ার আগে ময়নার খুশি ভরা কথাগুলো মনে পড়লো, ‘বাপজান দ্যাখো, আমার হাঁসে ডিম দিছে।’ কল্কেতে একটা টান দেওয়ার পর গোলাপী গোলাপী নেশা হল। কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকার পর কল্কেতে আর একটা টান দিয়ে মনে হল ময়না কাঁদছে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলছে, ‘ডিমটা তুমি চুরি করলা ক্যান,বাপজান?’ এরপর আর একটা টান দেয়ার পর মেয়েটার মুখ ঝাপসা হয়ে গেল আমার চোখের সামনে থেকে। নেশায় বুঁদ হয়ে আসরের যার কথা শুনছি তার কথাতেই আমি হাসছি। আহ্, কি শান্তি! সাহেব বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই দেশ ভাগের সময় ভারত থেকে আসা পাঝড়া উপজাতির মোহাজির। বংশানুক্রমে তারা এই ব্যবসা করে। স্থানীয়রা তাদের ‘মাছুয়া’ নামে ডাকে। বাংলা, উর্দু, হিন্দি মিশিয়ে আঞ্চলিক টানে একধরনের বিচিত্র ভাষায় কথা বলে তারা। আমার দিলখোলা হাসিতে মজে গিয়ে মাছুয়াদের সর্দার আমার মাথায় গাঁট্টা মেরে বলে, ‘এ সব্বুর, কা হৈল? শুক্কা পিকে এত্তা খুশ! আজ তোহার যেয়াদা আমদানি হ্যায়,কেয়া?’ সর্দারের পাশে বসে চুঁয়ানি খাচ্ছিল আর এক মাছুয়া। সে তার কাঁচের গ্লাসে কয়েন ঠুকে গান ধরল, ‘মছলি কা পয়সা জো নেহি খায়ে, জিন্দেগিকা মজা ও কেয়া পায়ে। এ সব্বুর..’
আহা, আহা! এমন জমজমাট আসর ছেড়ে উঠে যাওয়া যায়? সর্দার আসর জমিয়ে রাখে পুরাতন সিনেমার গল্প বলে। ‘ইনসানিয়াৎ’ সিনেমায় দিলিপকুমারের এ্যাকটিং, ‘শসসি’ সিনেমায় সাবিহা সন্তোষের মৃত্যু, রতনকুমারের তলোয়ারবাজি, নিলোর ‘খাইবার মেইল’। সিনেমা দেখা তো দূরের কথা, জীবনে এসব নামও শুনিনি কোনদিন। নেশায় ঝিম মেরে হাঁ করে সর্দারের গল্প শুনি। মাঝে মাঝে আসরে ঝাঁকুনি দেয়ার জন্য আচমকা হেঁড়ে গলায় কাওয়ালীর ধুন ধরে সর্দার, ‘ভর দে ঝোলি মেরি ইয়া মুহাম্মদ.......।’ তখন আমরা সবাই একসাথে গেয়ে উঠি, ‘ভর দে ঝোলি......।’ আহা, এমন মজমা ছেড়ে কে যেতে চায় বলুন?

এ দেশে ঋতুর হিসাব নিকাশ সব উল্টাপাল্টা। আষাঢ় শ্রাবন মাসে বৃষ্টি নাই। আশ্বিন কার্তিকে বৃষ্টি। এরা বলে ফারাক্কা নাকি সব উল্টে দিয়েছে। এ বছর শরৎকালেও দু’তিনদিন ধরে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টিতে বস্তির ঘর বার সব সমান। এই অসময়ের বৃষ্টিতে ঠাণ্ডা বেশি। বোন ময়নাকে জড়িয়ে ধরে ঠাণ্ডায় ওম দেবার চেষ্টা করে বাবলু। ভাইয়ের বুকের মধ্যে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকে ময়না। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে ঘরের কোনায় বসে ডিমে তা দেওয়া হাঁসের দিকে। আজ দু’দিন হল হাঁসটাকে তেমন কিছু খেতে দেওয়া হয়নি। বৃষ্টির জন্য শামুক কুড়াতে যাওয়া হয়নি ময়নার। অন্যান্য বছর বৃষ্টি হলে কিছু শামুক উঠে আসে বাঁধের ওপর। এ বছর তাও আসেনি। বাবা ডিম চুরি করে নিয়ে যাবার পর হাঁসটা আরো চারটা ডিম দিয়েছে। এখন ডিমে বসে তা দেয়। হাঁসটাকে কিছু খেতে দিতে না পেরে ময়নার বুকটা ছটফট করে, কিন্তু সে কোন উপায় খুঁজে পায় না। ওরা নিজেরাই অনাহারে আছে। বৃষ্টি শুরুর পর থেকে একরকম না খেয়েই থাকা। কালামের মা গতকাল সকালে দু’মুঠো পান্তা দিয়ে গিয়েছিল। ওটুকুই ভাগাভাগি করে খাওয়া। তার মধ্যে আবার নিজের ভাগ থেকে এক লোকমা আর দাদীর ভাগ থেকে চুরি করে এক লোকমা এই দুই লোকমা পান্তা হাঁসটার সামনে ছিটিয়ে দিয়েছিল ময়না। ব্যস্, ওই খেয়েই আজ সকাল অব্দি চলছে ওদের। বাবলু সকাল থেকে ঘ্যানর ঘ্যানর করছে হাঁসের ডিমগুলোর জন্য। ডিমগুলো মালেকের মুদিখানায় দিয়ে কিছু চাল আনা যায়। চাল পেলে ওরাও বাঁচে, হাঁসটাও বাঁচে। হাঁস তো আরো ডিম দেবে। কিন্তু খেতে না পেলে ঐ অবলা প্রাণীটাই বা ডিম দেবে কোত্থেকে? বাবলু ও ওর দাদী বোঝাচ্ছে ময়নাকে। কিন্তু ময়না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ডিম দিতে সে রাজি নয়। ডিম ফুটে হাঁসের বাচ্চা হবে। চার চারটে তুলতুলে নরম পালকওয়ালা হাঁসের ছানা। ওদের মায়ের সাথে ছানাগুলোকে জলাশয়ে ছেড়ে দিয়ে ওদের সাঁতার কাটা দেখবে ময়না। সে দৃশ্য যে কি মধুর সে তো শুধু ময়নাই জানে। ডিম দেবেনা সে।

কিন্তু পেটের জ্বালা! সে যে দুনিয়ার সবচে’ বড় জ্বালা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল। বৃষ্টিও থেমে গেল এক সময়। চোখের জলে বুক ভাসিয়ে হাঁসটাকে ডিমের ওপর থেকে তুলে বুকে নিল ময়না। প্লাস্টিকের ফাটা মগের মধ্যে ডিমগুলো তুলে নিয়ে এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল বাবলু। ময়না হাঁসটাকে বুকে নিয়ে উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছিল। তবুও কিভাবে যেন তার ডিম চুরি টের পেয়ে গেছে হাঁসটা। ময়নার বুক থেকে ঝপাৎ করে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়ে আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে থপ থপ করে বাবলুর পিছু নিল সে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বাবলুর নাগাল না পেয়ে প্যাঁক প্যাঁক করতে করতে ফিরে এলো ময়নার কাছে। ময়নার পায়ের চারপাশে ঘুরে ঘুরে তার কর্কশ ভাষায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে হাঁসটা। ময়না ওকে বুকে তুলে নিয়ে কাঁদতে লাগলো। ওর দাদী লাঠি ঠুকে ঠুকে কাছে এসে বলল, ‘কান্দস ক্যান? আঁসে আরো ডিম দিব তো। কান্দিস না ভইন, কান্দিস না।’ ময়না বিরক্ত হয়ে ধমক দিল, ‘চুপ কর্ বুড়ি!’

পরদিন সকালে হাঁসের জন্য শামুক কুড়াতে গিয়ে শামুকের শক্ত খোলায় পা কেটে ফেললো ময়না। ‘ভাইও’ বলে চিৎকার করে বাবলুকে ডেকে বুঝতে পারলো ওর ভুল হয়েছে। বাবলু তো আসেনি ওর সাথে। সে গেছে ওর দাদীর সাথে ভিক্ষে করতে। রক্ত ঝরছে ময়নার পায়ের গোড়ালি থেকে। ছোট্ট একফোঁটা জীবনে এভাবে রক্ত ঝরতে কখনো দেখেনি সে। দু’হাতে পা খাড়া করে ধরে মাটিতে বসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো সে। ওর সাহায্যে এগিয়ে আসার মতো আশেপাশে কেউ নেই। অনেকক্ষণ কাঁদার পর সে লক্ষ্য করলো রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে। হাতে একটু পানি নিয়ে কাটা জায়গাটা ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করলো ময়না। কিন্তু ব্যথা তাতে আরও বাড়ে দেখে পা ধোয়া বন্ধ রেখে আরো কিছুক্ষণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলো সে। তারপর ঘরে ফিরতে গিয়ে মনে পড়লো অভুক্ত হাঁসটার জন্য মোটে দুটো শামুক জোগাড় হয়েছে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে আবার খালের দিকে ফিরে চলল ময়না। বহু কষ্টে আরো কিছু শামুক ধরে খোলস ভেঙে মাংস সংগ্রহ করলো সে। তারপর ব্যথায় দাঁত চেপে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ঘরে ফিরে এলো।

হাঁসটাকে খাইয়ে নিজে অভুক্ত অবসন্ন দেহে ভাঙ্গা খাটিয়ায় শুয়ে পড়লো ময়না। হাঁসটা প্যাঁক প্যাঁক করতে করতে এগিয়ে এলো ওর কাছে। থপ থপ করে একবার ওর মাথার কাছে আর একবার ওর পায়ের কাছে হাঁটাহাঁটি করে হয়তো বলতে চাইল, কি হয়েছে তোমার? ময়না হাত ইশারা করতেই লাফ দিয়ে ভাঙ্গা খাটিয়ায় উঠে বসলো হাঁসটা। স্বভাবসুলভ কর্কশ গলায় দুটো ডাক দিয়ে ময়নার কোলের কাছে এসে চুপচাপ বসে পড়লো সে। ময়না কাত হয়ে শুয়ে ওর ছোট হাতের তালু দিয়ে হাঁসটাকে আদর করতে করতে যন্ত্রনাকাতর কণ্ঠে বলল, ‘মন খারাপ করিস না। অগো আর ডিম নিবার দিমু না, বুঝছস্? প্যাট ভরছে,সোনা?’

পায়ের কাটা জায়গাটা ব্যথায় টন টন করছে ময়নার। হাঁসটাকে কোলের মধ্যে চেপে ধরে ব্যথা ভুলে থাকার চেষ্টা করছে সে। কাটা পা নিয়ে চড়া রোদের মধ্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এতটা পথ হেঁটে এসেছে মেয়েটা। ক্ষিধেয় পেট জ্বলছে ওর। পেটে ক্ষিধে থাকলে নাকি ঘুম আসেনা। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়লো ময়না। হয়তো ঘুম নয়, হয়তো সাময়িকভাবে চেতনা হারিয়ে অন্য জগতে চলে গেল সে। হাঁসটা তখনও ওর কোলের কাছে চুপচাপ জবুথুবু হয়ে বসে আছে। নির্বাক এক মানব সন্তানকে ছেড়ে হয়তো যেতে চাচ্ছেনা আরেক অবলা প্রাণী।

শহর থেকে ভিক্ষে করে সন্ধ্যের আগে দাদীকে নিয়ে ফিরে এলো বাবলু। এক মাইল হেঁটে যাওয়া আর আসা। মাথার ওপর গনগনে সূর্যের তাপ নিয়ে শহরের অলি গলি আর পথে ঘাটে ঘোরাঘুরি। মাজা পড়ে যাওয়া সত্তর বছরের অন্ধ বুড়ি আর অপুষ্ট রোগাভোগা দেহের আট নয় বছরের শিশু। ঘরে ঢুকে ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ে ময়নার মতো শুয়ে পড়লো ওরাও। স্যাঁতসেঁতে মাটির মেঝেতে শুয়ে হাঁপাচ্ছে বাবলু। বুকের ভেতরটা ধক ধক করছে ওর। মরা লাশের মতো নিস্পন্দ শরীরে পড়ে আছে ওর দাদী। ওভাবেই পড়ে রইল ওরা অনেকক্ষণ। সন্ধ্যের পর পরিশ্রান্ত অবসন্ন দেহটা নিয়েই উঠে বসলো বাবলু। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে কুপি বাতি জ্বেলে ময়নার মুখের কাছে ধরে দেখলো বোনটা তার ঘুমিয়ে আছে। কপালে হাত দিয়ে দেখলো ভীষণ জ্বর। বাবলু ওর গায়ে আস্তে আস্তে ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘ময়না, ও ময়না, উঠ ভইন। তর লাইগা বনরুটি আর কলা আনছি। উইঠ্যা খাইয়া ল।’ ময়না তো ঠিক ঘুমায়নি, সে ছিল একটা ঘোরের মধ্যে। বাবলুর ধাক্কায় ঘোর কেটে গিয়ে উঠে বসলো সে।

যন্ত্রণাকাতর মুখ নিয়ে পায়ের কাটা গোড়ালিটা ভাইকে দেখালো ময়না। বলল, ‘খুব বিষ হইছে ভাইও।’ বাবলু সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ‘বিষ ভালা হইয়া যাইবনে,ভইন। অহন খাইয়া ল।’ কালো তেল চিটচিটে ভিক্ষের ঝুলি থেকে কলা আর বনরুটি বের করে তিনজনের জন্য ভাগাভাগি করলো সে। তার অবুঝ মনেও এই বোধশক্তি বেশ সজাগ যে, জ্বর ও কাটা পায়ের ব্যথার চেয়ে খালি পেটের জ্বালা অনেক বেশি কষ্টের। তাই আগে খেতে হবে। পেটের আগুন নিভে গেলে সব ব্যথার কষ্টই কমে যায়। দাদী ও ময়নাকে খেতে দিয়ে মাটির কলসটা নিয়ে পানি আনতে গেল বাবলু। পা ভালো থাকলে পানি আনার কাজটা ময়নাই করতো। বস্তির শেষ মাথায় কিছুদিন আগে একটা চাপকল বসিয়ে দিয়ে গেছে এন জি ওর লোকেরা। গোসল, খাওয়া, ধোয়া মোছা সব কিছুর জন্য এই চাপকলই বস্তির মানুষের এখন একমাত্র ভরসা। ক্লান্ত দেহে কল চেপে কলস ভরতে গিয়ে হাঁপিয়ে ওঠে বাবলু। ভরা কলস অনেক কষ্টে ঘাড়ে তুলে এলোমেলো পায়ে ঘরে ফিরে সে দেখে, ময়না তার রুটির এক টুকরা ছিঁড়ে নিজের মুখে আর এক টুকরা ছিঁড়ে হাঁসের মুখে দিচ্ছে।

পরদিন সকাল থেকে লাগাতার দু’দিন হরতাল। আড়তে চালানী মাছের আমদানি নাই। আমার আয় রোজগারও বন্ধ। ভারি ঝামেলা হল। হরতাল ছুটলে শোধ করে দেব এই শর্তে বহু কাকুতি মিনতি করে রমজান মিয়ার হোটেলে দু’বেলা বাঁকিতে খাওয়ার ব্যবস্থা হল। কিন্তু নেশার জিনিষ তো নগদ পয়সা ছাড়া দেয়না। মাছুয়ারা বলে, ‘দুনিয়া মে জুয়া কাভি কিসিকো নেহি হোগা, করজে মে যিতনা পিয়ো নাশা নেহি হোগা।’ প্রথম দিন মাছুয়া বাক্কারের কাছে পাঁচ টাকা ধার করে সন্ধ্যের পর এক কল্কে জটা খেলাম। কিন্তু জটা গাঁজায় নেশা ভালো হয়না। গাঁজা গাছের মরা শেকড় আর ফেলনা ডাঁটার গিঁট কেটে টুকরো টুকরো করে জটা গাঁজা তৈরি হয়। কল্কে সাজালে ডাঁটা ফোটার ফট ফট আওয়াজ হয় বেশি, ধোঁয়া তেমন আসেনা। একেবারে ফকিরি নেশা। আগে জটার মধ্যে দু’একটা শুকনা সিদ্ধির পাতা দিত, তাতে হালকা হালকা গোলাপী নেশা হতো। আজকাল গাঁজার চেয়ে সিদ্ধির দাম বেশি হয়ে গেছে। দেবে কোত্থেকে?

হরতালের প্রথম রাতটা তো একরকম গেল। পরদিন সকালে সিগারেট বিড়ির অভাবে আমার খুব সমস্যা হল। ঘুম থেকে উঠে একটা সিগারেট বা বিড়ি ধরিয়ে পায়খানায় যাওয়া আমার বহু দিনের অভ্যাস। মুখে বিড়ি সিগারেট কিছু না থাকলে আমার কোষ্ঠ কাটেনা। বাজারের দোকানিরা বউনির সময় ধারে বিড়ি সিগারেট দেয়না। কি মুশকিল! রাতে যেখানে আসর বসে, সেখানে খোঁজাখুঁজি করে দু’একটা সিগারেটের মোথা পাওয়া গেল। একটা মোথা ধরিয়ে আর একটা মোথা কানে গুঁজে বদনা হাতে চলে গেলাম হালকা হতে। দুটো মোথায় পাঁচটার বেশি টান হলনা। ওতে কি আর কোষ্ঠ কাটে? পেটে অস্বস্তি নিয়ে ফিরে এলাম বাজারে। হরতালের আজ দ্বিতীয় দিন। শহরের কাছাকাছি গাঁয়ের লোকেরা ছোট ছোট টুকরিতে করে কিছু খুচরা মাছ নিয়ে বাজারে এসেছে। কিন্তু চালানী মাছ আজও আসবেনা। ট্রাক না চললে চালানী মাছ আসবে কিভাবে? ট্রাক না এলে পালাদারেরও কোন কাজ নাই। আর কাজ নাই তো পয়সাও নাই। মহা মুসিবত! আজ রাতে নেশা খাওয়ার কি হবে আল্লাই জানে। একদিন ভাত না খেলে তো মরবো না, কিন্তু কল্কেতে টান না দিলে যে সবুরের দফা রফা। বিড়ি সিগারেট কেনার পয়সাও নাই। সারাদিন যে কিভাবে চলবে সে চিন্তায় সকাল থেকেই অস্থির হয়ে গেলাম।

হরতালের বাজার। ক্রেতা বিক্রেতা খুব কম। কাঁচা বাজার ছাড়া দোকানপাট প্রায় সবই বন্ধ। নিষ্প্রাণ বাজারের ভেতর শুকনা মুখে অযথা ঘুরে বেড়াচ্ছি আমি। শাক সব্জির বাজার পেরিয়ে মুরগী পট্টির ভেতর ঢুকে দেখলাম সেখানেও কাস্টমার খুব কম। আমাকে দেখে হাঁস-মুরগী বিক্রেতা খালেক মিয়া পানের পিক ফেলে বলল, ‘ফালতু ঘোরাঘুরি না করে বাড়ি যা,সবুর। একটা দিন আরাম কর।’ খালেক মিয়ার দুটো খাঁচার একটায় মুরগী আর একটায় গোটা কয়েক হাঁস। হরতালের জন্য তার খাঁচাও হালকা পাতলা। এমনিতে খালেক মিয়া কিন্তু হাঁস মুরগীর ব্যবসায়ী হিসাবে এই পট্টির বড় ব্যবসায়ীদেরই একজন।
খালেক মিয়ার হাঁসের খাঁচার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। বললাম, ‘একটা কথা কইতাম,মহাজন।’
খালেক মিয়া আবার পানের পিক ফেলে বলল, ‘কি কথা?’
‘একটা হাঁস ব্যাঁচবার চাইছিলাম। বাড়ির হাঁস। ট্যাকার খুব দরকার।’
খালেক মিয়া আমার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে ধমকের সুরে বলল, ‘এই ব্যাটা, গাঁজার টাকা দরকার, তাই না? নেশাটা ছেড়ে দে সবুর, ছেড়ে দে।’
‘তওবা, তওবা! মহাজন যে কি কন না! হরতালে মাছের চালান বনধ্। কাজ কাম নাই। ঘরে খাওন নাই, নেশা খামু ক্যামনে?’
‘তোকে বিশ্বাস নাই সবুর। টাকা পেলে তুই ঠিক গাঁজার আসরে গিয়ে বসবি। যা ভাগ, ভাগ এখান থেকে।’
আমি দু’হাতে কানের লতি ধরে জিভ দিয়ে চুক চুক শব্দ করে বললাম, ‘আল্লার কসম,মহাজন। বুইড়া মা আর ছোট ছোট পোলাপানগো লইয়া কাল থাইকা না খাইয়া আছি। বিশ্বাস করেন।’ কথার সাথে সাথে একটু কাঁদো কাঁদো ভাবের অভিনয় করলাম।
খালেক মিয়ার মন বোধহয় একটু নরম হল। সে চিন্তিত মুখে বলল, ‘হরতালে বেচাকেনা নাই রে সবুর। তোর হাঁস নিয়ে কি করবো? আচ্ছা ঠিক আছে, যা হাঁসটা নিয়ে আয়। তাড়াতাড়ি আসিস। আমি কিন্তু ও বেলা দোকান খুলবো না।’
তাড়াতাড়ির কথা কি আর খালেক মিয়াকে বলতে হয়! ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটলাম আমি। হাড্ডিসার দেহের একজন গাঁজাখোর লোক যে এত জোরে ছুটতে পারে, সে সময় আমাকে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবেনা।

বাবলুকে সাথে নিয়ে শহরে ভিক্ষে করতে গেছে ওর দাদী। ঘর্মাক্ত দেহে হাঁপাতে হাঁপাতে আমি ঘরে ঢুকে দেখি, ভাঙ্গা খাটিয়ার একপাশে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ময়না। আমার পায়ের আওয়াজ পেয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসলো সে। বলল, ‘বাপজান, আইছ?’
আমি কাছে গিয়ে বললাম, ‘কি হইছে তর? চোখ মুখ এমুন কালা ক্যান?’
আমার একটা হাত ওর দুটো কচি হাত দিয়ে ধরে কপালে ঠেকিয়ে ময়না বলল, ‘কাল থাইকা খুব জ্বর বাপজান। শামুকের খোলায় পাও কাইটা ফেলছি। পাও ফুইলা পুঁজ বাইর হইতাছে। এই দ্যাহ।’ ডান পা’টা বহু কষ্টে একটু উঁচু করে আমাকে দেখাবার চেষ্টা করলো মেয়েটা। কিন্তু আমি তখন হাঁসটার খোঁজে ঘরের চারদিকে তাকাচ্ছি। ময়নার পায়ের দিকে ভালো করে না দেখেই বললাম, ‘ঠিক হইয়া যাইব নে। ঘাবড়াইস না।’
ময়না কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, ‘পাওয়ের বিষে খুব কষ্ট লাগতাছে বাপজান। আমারে এট্টু ওষুধ আইনা দিবা?’
হাঁ, আছে হাঁসটা। ঘরের এক কোনে জবুথুবু হয়ে নিশ্চুপ বসে আছে। মনে হয় ডিমে তা দিচ্ছে ওটা। আমার চোখ দুটো চক চক করে উঠলো। বললাম, ‘ময়না,হাঁসটারে খাওন দিস নাই?’
‘ক্যামনে দিব বাপজান? পাও লইয়া তো হাঁটবার পারিনা। জ্বরে খালি মাথা ঘুরায়। আমারে এট্টু ওষুধ আইনা দাওনা বাপজান!’
আমি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলি, ‘আইচ্ছা,ওষুধ আইনা দিবানে। আগে হাঁসটারে কিছু খাওয়াইয়া নিয়া আসি। ডিম দেওয়াইনা হাঁস, খাদ্য খানা না পাইলে তো এ্যামনেই মরব। তুই ঘরে হুইয়া থাক, আমি যামু আর আমু। আওনের সময় তর ওষুধ নিয়া আমু নে।’
আমি হাঁসটাকে কোলে তুলে নিতেই কর্কশ স্বরে প্রতিবাদ করে ও আমাকে ঠোকর দিয়ে কোল থেকে ওটা নেমে যাবার চেষ্টা করলো। আমিও ওর পাখনা দুটো উল্টো মুখে প্যাঁচ দিয়ে শক্তভাবে বুকের সাথে চেপে ধরে চটজলদি ওর তা দেওয়া ডিম দুটো লুকিয়ে ফেললাম লুঙ্গির ভেতর।
ময়না ওর যন্ত্রনাকাতর ফোলা পা নিয়েই খাটিয়া থেকে নামার চেষ্টা করছে। সে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, ‘আমি অরে খাওন দিমু বাপজান। তুমি অরে রাইখা যাও।’
আমি খেঁকিয়ে উঠে বললাম, ‘তুই তো হাঁটবারই পারস না। অরে তুই খাওন দিবি ক্যামনে? কথা না কইয়া চুপচাপ হুইয়া থাক। আমি হাঁসটারে খাওয়াইয়া তর ওষুধ লইয়া এক ঘণ্টার মধ্যে আইয়া পড়ুম। বুঝছস্?’
‘না বাপজান।’ থর থর করে কাঁপছে ময়না। শুকনা ঠোঁট দুটো আরো শুকনা জিভ দিয়ে ভেজাবার চেষ্টা করছে সে। আমার দিকে না তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে সে বলল, ‘তুমি অরে নিওনা বাপজান। আমার ওষুধ লাগব না। তুমি অরে রাইখা যাও।’
আমি আর ময়নার সাথে কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত হাঁটা দিলাম। পেছন থেকে ভাঙ্গা গলায় বিলাপ করছে ময়না, ‘আমার হাঁস দিয়া যাও বাপজান। আমার ওষুধ লাগব না। আমার হাঁস দিয়া যাও।’

হরতালের দিন ভিক্ষেও তেমন জোটে না। বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, বাজার সব ফাঁকা। পথে ঘাটে লোক নেই, ভিক্ষে দেবে কে? দুপুর হতে না হতেই বাবলু ফিরে এলো ওর দাদীকে নিয়ে। আসার সময় বাঁধের উত্তর পাশের রাস্তা সংলগ্ন বদি ডাক্তারের দোকান থেকে চেয়ে চিন্তে ময়নার জন্য দুটো জ্বরের বড়ি নিয়ে এসেছে সে। বোনটাকে ওষুধ খাওয়ানোর জন্য কলস থেকে প্লাস্টিকের মগে পানি ঢেলে উঠে দাঁড়াতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেল বাবলু। মগটা ছুটে গেল ওর হাত থেকে। দাদীর গায়ে পানির ছিটা পড়ায় চেঁচিয়ে উঠলো বুড়ি, ‘কি হইল রে? পানি কিয়ের? অ বাবলু, হুনছস্?’
মাটির মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়ে আছে বাবলু। ওর অন্ধ দাদী লাঠি ঠুকে ঠুকে খুঁজছে নাতিকে, ‘অ বাবলু, কি হইল তর? কথা কস্ না ক্যান?’
দড়ির খাটিয়ায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে থেকে প্রচন্ড জ্বরে কাঁপছে ময়না। বিড় বিড় করে জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছে সে, ‘আমার ওষুধ লাগব না বাপজান। আমার হাঁস রাইখা যাও। আমার হাঁস.....।’
*******************************************************************************************************************
রি-পোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:২৬
২০টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×