পাখিরা বেশ সুন্দর করে বাসা বানায়। যেন ঘর বেয়ে বেয়ে শৈল্পিকতা ঝরে পড়ে। আগের বাসার ভেন্টিলেটরে চড়ুই পাখি বাসা বেঁধেছিল। একটা একটা করে খড় কুটো জমিয়ে ছোট্ট এক গোছানো সংসার। তখন দেখে ভালোই লাগতো। আর এখন ওদের দেখে আক্ষেপ হয়। ঈর্ষাও হয়।
এখন আমার জানালার নিচে বাইরের দেয়াল ঘেঁষে বেয়ে ওঠা ছোট গাছের কোঠরে এক দম্পতি এসে ঘর বেঁধেছে। আমি এই পাখির নাম জানতাম না। পরে জানি এরা বুলবুলি পাখি। চায়ের কাপের মতো ছোট্ট বাসা। তিনটা ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়েছে। সারাদিন বাপ মা আশেপাশে ঘুর ঘুর করে বাচ্চাদের খেয়াল রাখে। আগলে রাখে। যখন বেশ ঝড় ওঠে, বাতাস বয়, আমি খুব অদ্ভুত দৃষ্টিতে এদের শৈল্পিক বাসার দিকে তাকিয়ে থাকি। বাবা- মা-বাচ্চা জড়সড়ভাবে বেশ শক্ত হয়ে বসে থাকে। আমার মনে হয় এই বুঝি ঘরটা বাতাসে উড়ে যাবে। মনে হয় যেকোনো মুহূর্তেই বাসাটা উল্টে নিচে পড়ে যাবে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে আমি দেখি বাসাটার কিছুই হয় না। সামান্য দুলতে থাকে। পড়ে যাবে যাবে মনে হয় কিন্তু বাসা থেকে একটা খড় কুটোও এদিক সেদিক হয় না। ঝড় থেমে যায়। বাতাস বন্ধ হয়। মা পাখিটা তবুও আঁকড়ে ধরে থাকে।
মানুষও সংসার বাঁধে। মানুষের জীবনেও ঝড় আসে। প্রবল ঝড়। সেই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সব। উল্টেপাল্টে যায় মানুষের এক এক করে সাজানো গোছানো খড় কুটো। বুলবুলিরা গাছের কোঠরে বছরের পর বছর সংসার কাটিয়ে দেয়। ঝড় বৃষ্টি রোদে তাদের দৈনন্দিনতা বেশ সানন্দেই কাটে। কিন্তু মানুষের কাটে না। নষ্ট হয়। সংসার ভাঙ্গে।
ইশ মানুষ যদি পাখি হতো।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:১২