somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষা

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাবা -মা, দুই ভাই আর এক বোন নিয়ে তাদের ছিমছাম সংসার। মানিক সবার বড়। এইচ.এস.সি পাশ করার পর থেকেই সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হয় সে।তাঁর বাবা তিন বছর ধরে অসুস্থ।ছোট ভাই এই বছরএইটে উঠল,তারও লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। ছোট্ট বোনটি হয়তো সে পর্যন্ত ও যেতে পারবে না।সে তাঁর সখাদের সাথে হেসে খেলে বেড়াতে ব্যস্ত। সকালে উঠে মক্তবে যায়। মক্তব থেকে এসেই খাওয়ার জন্য পিড়াপিড়ি শুরু করে তারপর বাবার কাছে আদর্শ লিপি নিয়ে বসে, মন চাইলে খড়ি মাটি দিয়ে অ, আ লিখে শিলেটটি বাবাকে দেখায়। একদিন কি করল ” বা বা ” শব্দটি লিখে বাবার বুকের ওপর রাখলে তার চোখ ছলছল করে উঠে।

প্যারালাইজড হয়ে যার দুই হাতই অবশ হয়ে গেছে সেকি তার ছোট্ট মেয়েকে বুঝাতে পারে এই মুহূর্তে তোমাকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরতে খুবই ইচ্ছে করছে! পরে তার মা এসে নানান ধরনের কথা শুনাতে শুনাতে তাকে নিয়ে যায়-তুর বাপের কি এই কপাল আছে?তুরে একটু আদর করবে,এই সংসারে আমার কোনদিন শান্তি হয় নাই আর মরার আগে হইব না।খোদায় আমারে কিয়ারে যে নেয় না? ইতোমধ্যে মানিক কোম্পানির চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে এক সপ্তাহ ধরে বাড়িতে। বাবার রুমের পাশের বারান্দার খুপরি রুমে সে এবং তার ছোট ভাই থাকে।মায়ের কথা শুনে বেরিয়ে এলে মা তাকে বলে-তুই আর কথা কইছ না,চাকরি একটা ছাইড়া দিয়া বইয়া রইছছ,সংসার কেমনে চলে কারওএব্যাপারে মাথাব্যথা নাই। ভাগ্যিস বাপের বাড়ি থেকে কিছু জমি আনছিলাম না অইলে ত ভিক্ষা কইরা খাইতে হইত। -ঘরে পুত অইছে প্রথম ভাবছিলাম জীবন টা ভালই হবে,তোরা কি করছ না করছ জানিনা আমি। তোরার মন যা চায় তা কর দুচোখ যেদিক যায় একদিন চইল্লা যাম! মানিক নিশ্চুপ। সে তাঁর বোন কে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।তার কান্না থামাতে আইসক্রিম’র কথা বলে দোকানে নিয়ে চলে।
দুইমাস ধরে বেতন না পাওয়ার কারনেই মানিক চাকরি ছেড়ে দেয়। একথাও কাউকে বুঝাতে পারেনি মানিক।যেখানে তাঁর মাকে পর্যন্ত বুঝাতে গিয়ে গালি শুনতে হয়েছে।পুরো সপ্তাহ জুড়ে তাঁর মা প্রায় বলত -বেতন দেয়না ত কি হইছে অন্যেরা করতাছে না? -মা, অন্যদের ত আমার মত অবস্থা না! -কইলেই পুত খালি রাগ হছ, তোর বায়ের ঔষুধ ও ঠিক মত আনতে পারছি না। আমার ভাই আমারে ঔষুধ খাওয়ার লাইগা কিছু টেহা দিছিল হেইডা ও শেষ। -হেতাগোরে আর কত জ্বালায়াম কছ না? মানিক শুধু বলত -মা, আমি ত অন্য চাকরির চেষ্টা করতাছি দেখবা সব ঠিক হয়ে গেছে।মানিক ছিল অসম্ভব বদমেজাজি। মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে বলত -আমি এর বেশি পারতাম না, এই বয়সে আমার ভার্সিটির ক্যাম্পাসে থাকার কথা, আর এখন থাকি রাস্তায় রাস্তায়, দোকানে-দোকানে মালের অর্ডার কাডি! বলেই কেদে ফেলত মানিক।
এইতো যেন সেদিনের ঘটনা কিন্তু চার বছর শেষ হতে চলল। মানিক আর চাকরি ছাড়েনি।এর মধ্যে তাঁর বাবা মারা যান।সততা আর নিষ্ঠার কারনে মানিক এখন একটি কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার হয়েছে। কয়েকটি থানা সে দেখাশোনা করে। তাকে একটি মোটরসাইকেল ও দেয়া হয়েছে কোম্পানি থেকে। পোস্টিং পড়েছে জামালপুর। কাজের স্বার্থে অফিসের সাথেই বাসা নিয়ে থাকে।সারাদিন কাজ নিয়ে পড়ে থাক এখন।ছোট ভাই কে নিজের বাসায় নিয়ে আসে। তােক ভালো স্কুলে ভর্তি করে দেয়।যেই মা চাকরি ছেড়ে কয়েকটি দিন বাড়িতে থাকতে হয়েছে বলে অনেক কথাই শুনিয়েছিলেন সেই মা যখন ফোন করে -পুত বাইত আয়, তরে কতদিন দেহিনারে পুত! কিন্তু মানিক কাজের চাপে আর আসতে পারেনা। জামালপুর থেকে কুমিল্লা আসতেই একদিন চলে যায়। এমনিতেই কোম্পানির চাকরিতে ছুটি কম। মানিক মার জন্য একজন কাজের মেয়ে রেখে দেয়। তাঁর বোনকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয় এবং অংক -ইংরেজী প্রাইভেট পড়ার ও ব্যবস্থা করে দেয়। উজ্জল ছুটিতে বাড়িতে এলে তাঁর মা তার জন্য গাছের পেপে, নারিকেল, দুধ এসব দিয়ে দিত। রাতে শোবার সময় মানিক ভাইকে অবাক করে দিয়ে বলত -এসব তুই খাবি,এখন এগুলো আমার গলা দিয়ে নামতে চায় না । আর মা ফোন দিলে বলবি আমি খাইছি। -আচ্ছা। -আর উজ্জল শোন, তুই পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্র ভার্সিটি কোচিং এ ভর্তি হয়ে যাবি। আমার এক বন্ধুকে বলে দিয়েছি, পরশু ঢাকা যাবি সেই ব্যবস্থা করে দিবে। -ঠিক আছে ভাইয়া। -ভাল মত পড়, ভার্সিটিতে চান্স পা, তাহলে আমার আর কোন দুঃখ থাকবে না। -ভাইয়া পরশু না রবিবার যাই? -যা, অসুবিধা নাই। এই মুহূর্তে মানিকের মোবাইলে রিং আসায় উজ্জল তার রুম থেকে বের হয়ে যায় । ওপার থেকে ছোট্ট বোনের গলা -ভাইয়া তুমি কেমন আছ? তোমার শরীর ভালো? পেট ব্যথা কি কমছে ভাইয়া? বুঝা যাচ্ছে মা তাকে শিখিয়ে দিচ্ছে। মানিক -হ্যাঁ মুমু আমি ভাল আছি, তুই কেমন আছিস? -ভাইয়া আমি তোমার কথামতো কোরআন শরীফ এক খতম দিয়েছি ভাইয়া, তুমি কিন্তু খতম দিলে নতুন জামা কিনে দিবে বলেছিলে? -অবশ্যই পাবি, এবার উজ্জল বাড়িতে গেলেই পেয়ে যাবি কেমন। -আচ্ছা। -কোন কালার জামা কিনব? -মুমু খানিকক্ষণ চুপ করে আছে, মা তাকে বলছে “তোমার যেটা পছন্দ “-ভাইয়া তোমার যে কালার পছন্দ! (তার মুখে হাসি) -আচ্ছা, ঠিক আছে, স্কুলে যাসত ঠিকমতো! -জি ভাইয়া। তুমি কিন্তু এবার ছুটিতে বাড়িতে আসবা-এখন রাখি মুমু, ভাইয়ের একটু কাজ আছে পরে আবার মিসকল দিস। -আইচ্ছা ভাইয়া।
জামালপুর থেকে ঢাকা। “মহানগর ” বাস কাউন্টারের সামনে দাড়িয়ে আছে মানিক। যাত্রী পুর্ন হলে বাস ছেড়ে যাবে। পাশের দোকান থেকে একটি সিগারেট নিল। তার দৃষ্টি আকাশের পানে। মেঘলা আকাশে ক্ষনে ক্ষনে রং পাল্টাতে শুরু করল। মানিকের ভাবনাগুলো যেন সে রং কে ছুতে চায়। কতদিন পর বাড়ি যাচ্ছে সে। মায়ের বকুনি খেলে ও সে সময়গুলো কত মধুরই না ছিল! মা জয়নালের মাকে দিয়ে কতবার যে বিয়ের কথা বলিয়ে ছিল।পরে তাঁর কাছ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে বিয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছেন। মাকে যে কী করে বুঝাই -যে হাত বাবার রেখে যাওয়া সংসার-বাগান পরিচর্যার দায়দায়িত্ব কাধে নিয়েছে সে হাতে মেহেদি পড়লে বাগানের ফুটন্ত ফুলের সৌরভ যে আর থাকবে না মা! উজ্জল আর মুমুুর জীবনের একটি গতি না হওয়া পর্যন্ত আমাকে ক্ষমা কর মা।পৃথিবীর সকল সুখকেই তুচ্ছ মনে হয় মানিকের যখন ভাবে তাঁর আদরের বোনটি নতুন জামার অপেক্ষায়! ।গাড়িটি ছেড়ে দিল।তুমুল বৃষ্টি শুরু হল আকাশ কালো করে।


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×